যার হাত ধরে বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার এসেছিল

যার হাত ধরে বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার এসেছিল

গল্পটা ১৯৬৪ সালের। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৯৫ শতাংশ জনগণ টেলিভিশন কী বস্তু, তা-ই জানেন না। সে সময় জাহাজে চড়ে তৎকালীন পাকিস্তানে এলো ঢাউস আকৃতির এক কম্পিউটার। শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে সেটি পাঠিয়েছে বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। আইবিএমের মেইন ফ্রেম ১৬২০ কম্পিউটার ছিল সেটি।

আকারে প্রমাণসাইজের একটি ঘরের চেয়ে বড়। যন্ত্র তো দেশে এলো; কিন্তু বাধল বিপত্তি যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে। তৎকালীন শাসকরা পড়লেন মহাবিপদে। যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতায় যন্ত্র পাওয়া গেছে বটে, শেষে কি যন্ত্র চালাতেও তাদেরই শরণাপন্ন হতে হবে! কেউ কি নেই দেশে, যে চালাতে পারবে ওই যন্তর-মন্তর! অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল একজনকে। তাঁর নাম মো. হানিফউদ্দিন মিয়া। পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা।

তিনি এই কম্পিউটারের ব্যবহার জানেন। কেননা, অ্যানালগ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বিষয়ে ট্রেনিং করেছেন তিনি। অগত্যা ডাক পড়ল তাঁর। পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে এই কম্পিউটারের ব্যবহারের আহ্বানও জানানো হলো তাঁকে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু বেঁকে বসলেন হানিফউদ্দিন। নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না তিনি। কী আর করা! অবশেষে ঢাউস আকৃতির কম্পিউটারটিকে এনে বসানো হলো ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যালয়ে। হানিফউদ্দিনের হাত ধরেই শুরু হলো সেটার ব্যবহার।

হানিফউদ্দিন মিয়ার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. শরীফ হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, হানিফউদ্দিনের বাড়ি নাটোরের সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামে। ১৯২৯ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা মানুষটি মারা যান ২০০৭ সালের ১১ মার্চ। প্রথম কম্পিউটার আসার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘যখন প্রথম কম্পিউটার এ দেশে এসেছে, তখন আমরা অনেক ছোট। আণবিক শক্তি কমিশনে বাবার কার্যালয়ে আমরা নিজেরাও সেই কম্পিউটারে অনেক সময় কাটাকাটি খেলতাম।’

Facebook Comment

You May Also Like