প্রাণ উৎসর্গকারী পাখি ‘স্যান্ডগ্রাউস বার্ড’

প্রাণ উৎসর্গকারী পাখি 'স্যান্ডগ্রাউস বার্ড'

আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে কখনও বা কালাহারি মরুভূমিতে দেখা মিলে স্যান্ডগ্রাউস প্রজাতির পাখি। সেখানে আকাশ থাকে সবসময় ঝকঝকে, মেঘমুক্ত, রুক্ষ। বৃষ্টি হয় অনেক দিন পর পর। তার মানে বুঝতেই পারছেন গরম ঠিক কতখানি।

কখনও কখনও দীর্ঘসময় ধরে প্রবাহিত হয় লু হাওয়া (মানে গায়ের ত্বক জ্বালা করানোর মতো গরম বাতাস)। এদিকে, অনাবৃষ্টির কারণে পানিও পাওয়া যায় না সহসা।

মা স্যান্ডগ্রাউস যখন ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে তখন দরকার পড়ে পানির। কিন্তু শিকারি প্রাণির আনাগোনা আর তীব্র রোদ থেকে বাঁচাতে মা স্যান্ডগ্রাউসকে তার দুই ডানা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় ছানা গুলোকে।

দিকে বাবা স্যান্ডগ্রাউস পাখিরা দলবেঁধে উড়ে যায় জলাশয়ের খোঁজে। এই দীর্ঘপথে কখনও কখনও বাজপাখিদের সাথে যুদ্ধে অনেক বাবা স্যান্ডগ্রাউস মারাও পড়ে। তারপরও যে কয়টি বাবা স্যান্ডগ্রাউস বেঁচে যায়, তারা পানির কাছে গিয়ে তৃপ্তি ভরে প্রথমে নিজেরা পান করে। তারপর নিজেদের পালকের ভেতরে ছানাদের জন্যে পানি ভরে শুরু করে উড়াল।

ওই অতিরিক্ত ভারী শরীর বাবা বহন করে নিয়ে আসে ৬০ মাইল! বাবা জল নিয়ে আসলে বাবার বুকের পালকের ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে জল পান করতে লাগে ছোট্ট ছোট্ট ছানারা।

এভাবেই ছানা জন্মের পর দু মাস পর্যন্ত তাদেরকে পানি পান করানোর মতো কঠিন কাজটিই মা আর বাবা স্যান্ডগ্রাউস করে খুব আনন্দের সাথে। কারণ, চোখের সামনে ছানাদের বেড়ে ওঠা দেখতে দেখতে তাদের চোখ জুড়িয়ে যায়।

তবে, এই পুরো প্রক্রিয়াটা মোটেও সহজ নয় কোনও দিক দিয়েই। প্রচুর সময় সাপেক্ষও বটে। গস বাজপাখি, যারা মূলত এই স্যান্ডগ্রাউসের শিকার করে থাকে, তারা তখন এসে হামলা করতে থাকে স্যান্ডগ্রাউসের উপর। ঠোকরাতে থাকে তাদের। ছিঁড়ে খায় তাদের শরীর!

তবুও বার বার প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিজের পালকের ভেতরে পানি ভরতে থাকে বাবা স্যান্ডগ্রাউস। যত বেশি পানি নেয়া যায় ততই ভালো। এইদিকে শিকারির দল শিকারের সন্ধানে ওত পেতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও শুধুমাত্র সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার উদ্দেশ্যে প্রাণের বলি দিতেও রাজি বাবা!

প্রতিদিন কত কত স্যান্ডগ্রাউসের মৃত্যু হয় এই পানি আনতে গিয়ে, আর তার সাথে মৃত্যু ঘটে তাদের সন্তানের, তাদের পরিবারের। সেসব পারোয়া না করেও প্রত্যেকদিন ঝাঁকে ঝাঁকে স্যান্ডগ্রাউসের বাবারা পৌঁছে যায় পানি আনতে। এই ধরণের ছোট ছোট উদাহরণ বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, মা বাবার তুলনা শুধু মা বাবাই!

পাখি তার ছানাদের জন্যে যা করে, তারচেয়ে কত কত গুণ বেশি করে মানুষেরা তাদের সন্তানের জন্যে। এই করার মধ্যে থাকে আনন্দ, তৃপ্তি আর সুখ।

আজ পর্যন্ত কোনো মা-কে আমরা খুঁজে পাই না, যিনি কোনও মজার খাবার নিজে আগে খান, সন্তানদের কথা না ভেবে। বরং একটু টেস্ট করে যদি দেখেন যে, খাবারটা ভালো হয়েছে। নিজের ভাগেরটাও রেখে দেন সন্তানদের জন্যে। শুধু নিজের সন্তান, পরিজন নয়; প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, এমনকি অজানা অচেনা মানুষের জন্যেও মানুষ কখনও কখনও অনেক কিছু করেন।

You May Also Like

About the Author: Anuprerona

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.