ধইরা খাও – মজার গল্প

'ধইরা খাও' - মজার গল্প

এক হাড়কিপটা লোক অসুখে পড়েছিল। অনেক তাবিজ-তুম্বা-ঝাড়-ফুক করে এবং পানিপড়া খেয়েও ভাল হচ্ছিল না। তখন একদিন দেবতার বেশে শয়তান তার স্বপ্নে আসে আর তাকে বলে: “অষুধ-বিষুধ-টোটকা-পানিপড়ায় কোনো কাজই হবে না। তুই আমার নামে বড় রকমের একটা পশু বলি দেবার মানত কর, তাহলেই তোর রোগ যাবে, তা না হলে রোগমুক্তির কোন পথ নাই। তুই খুব কালো আর বড় ধরনের একটা মোষ বলি দে। নির্ঘাত ভালো হয়ে যাবি।”

যেহেতু লোকটা ছিল খুব কৃপণ। সে মনে মনে বলে : আস্ত একটা মইষ বলি দেয়া কি চাট্টখানি কথা। সে যে ম্যালা টাকাকড়ির ব্যাপার। ব্যারাম থেইকা আরাম হওনের জন্যি এত পয়সা খরচকরণ যায় নাকি?

তাই সে ব্যরামের কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু মোষ বলি দেয় না। বেশকিছু দিন পরে সে আবার স্বপ্নে দেখে শয়তানবেশি দেবতা তাকে বলছে, কই মোষ বলি দিলি না।

স্বপ্নেই সে বলে : ‘শবরি কলা দেবতার ভোগ তা খাইলে খণ্ডায় রোগ’—এই মহাজন বাক্য ছোটকাল থেইকা হুইনা আইছি। তাই তোমারে শবরি কলা-চিড়া-নারকেল-সন্দেশ-দুধ দিয়া ভোগ দিছি। তাইতে তুমি খুশি অইয়া আমার রোগ খণ্ডাইয়া দিবা এইডা সে কথা! তা না, তুমি আমারে মইষ বলি দিবার মতন অত খরচের তলে ফালাইবার চাও ক্যা!

শয়তানবেশি দেবতা বলে : তুই ভোগ দেওনেই তো সৎ পরামর্শ দিছি। রোগ তর কঠিন। কলা ফলার ভোগে ব্যারাম সারবো না। লোকটির ঘুম ভেঙে যায়। তাতে সে বিরক্ত না হয়ে খুশিই হয়।

বলে : ‘ঘুম ভাঙনে বড় বাঁচা বাঁইচা গেছি। দেবতা না কি ঘোড়ার ডিম, আমারে স্বপ্নের মধ্যে পাইয়া সে ক্যাচাল শুরু করছিল, আর কিছুক্ষণ অইলেই ধরা খাইয়া যাইতাম। বড় বাঁচন বাচছি। আমার কাছে আস্ত মইষ চায় মামার বাড়ির আবদার! আমি কি কম গিরিঙ্গিবাজ মইষ ফইস অইতো না। এক্কেরে যদি দিতেই হয় একটা ছোটমাট কালা পাঁঠা দিতারি।
দিন যায়। রোগ বাড়ে। আবার স্বপ্ন।

সেই শয়তান আবার হাযির হয়ে বলেঃ কই, মোষ বলি দিলি না?
সে সময় তার অসুখ কিছুটা সেরে গিয়েছিল।

লোকটি হাতজোড় করে বলে: দেবতা, অত যহন বলতাছেন তখন মইষ না, একটা পাঠা বলি দিবানে। তবে, শর্ত আছে। আগে আমার ব্যারাম পুরাপুরি সারাইয়া দেওন লাগবো, তারপরে ভাল অইয়া বলি দিমু।

লোকটির অসুখও সেরে যায়। এখন সে ভালো মতো হাঁটাচলা-কামকাজ করে। তার আয় উন্নতিও বাড়ে। কিন্তু সে পাঁঠা বলির নামও করে না। ওকথা সে মনেই করতে চায় না।

অনেক দিন পর স্বপ্নে আবার দেখা দেয় শয়তান। বলেঃ কইরে ভালো হয়ে গেলি সেই কবে কিন্তু বলি দিবার কোনো ব্যবস্থা করছিস না কেন?

লোকটি বলে : আমি গরিব মানুষ। একটা পাঁঠা কিনার সাধ্যি আমার নাই। আমি মানত করছি ঠিকই তবে সাধ্যে না কুলাইলে করব কি? তোমার দয়ার অন্ত নাই পাঁঠা বাদ দেও, ছোট কিছু চাও।

দেবতা : মোষ থেকে পাঠায় নামলাম, তাও দিবার পারিস না।

লোক : পারি তো না। যাউক, একটা পানির মুরগি মানে কাছিম দিলে অইব?

দেবতা : পারিস না যখন, তখন তাই দিস। তবে, কচ্ছপটা যেন বড়ো হয়।

দিন যায়। লোকটির কচ্ছপ দিবারও নাম নাই। ও কথা মনেই করে না। আবার স্বপ্নে দেখা দেয় দেবতা, বলে : আচ্ছা নচ্ছার, আর পিচলারে তুই! তোর কথার কোনো মূল্য নাই। তোর মানতের জিনিস কই?

লোক : দাবি থেইক্যা যখন নামচ, আর একটু নাম। আমি একটা ফড়িং দিব। দেবতা, রাগে বোবা হয়ে যায়। পরে বলে, তাই দে। জলদি দিবি।
দিন যায়, লোকটি ফড়িংও দেয় না। আবার স্বপ্নে দেখা দেয় দেবতা।

ক্রুদ্ধস্বরে বলে, মানতের ফড়িং কই?

লোক : তুমি নাকি দেবতা। তোমার কত শক্তি। মুলাটুণ্ডা মানুষ তো না। আমার সঙ্গে রাগ না দেখাইয়া একটা ফড়িং ধইরা কি তুমি খাইবার পার না? আমারে স্বপ্নে দিগদারি না কইরা ধইরা খাও।

Facebook Comment

You May Also Like

About the Author: eBooks

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.