Saturday, April 20, 2024
Homeবাণী-কথাআলট্রা মডার্ণ - অসীমানন্দ মহারাজ

আলট্রা মডার্ণ – অসীমানন্দ মহারাজ

dui banglar dampotto koloher shato kahini

হর্ষ চিন্তা করছিল, কী সে পেল আর কী সে হারাল। যা হারাল, তার চেয়ে যা পেল, তা-ই কি জীবনের পরম পাওয়া? হর্ষ কিন্তু তা মেনে নিতে পারছিল না। তাই তার মধ্যে প্রফুল্লতার অভাব ছিল।

হর্ষের স্ত্রী বীথি যে তা টের পেত না, এমন নয়। তাদের পাঁচ বছর বয়সের মেয়ে মৌলির আলাদা ঘরে শোয়ার বন্দোবস্ত করেও হর্ষের আদরের মাত্রা বাড়াতে সে অপারগ হল।

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বদ্ধঘরে শোভন শয্যায় দেহবাস আরও শিথিল করে স্বামীর দিকে আরও এগিয়ে এসে বীথি বলল, তুমি তো সজাগই আছ, দেখছি। তোমার ভেতরের পশুটা কি এখনও ঘুমাচ্ছে?

তাই হবে হয়তো। হর্ষের কণ্ঠস্বর বড়ই উদাস।

বীথি বলে উঠল, তাকে জাগাও। পশুটা বুঝুক, তাকে সে অনেক সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, যা সে আগে কখনও পায়নি।

বীথির সে কথা মিথ্যে নয়। হর্ষ ইচ্ছে করলে তার ভেতরের পশুকে আজকাল অনেক বেশি পরিতৃপ্ত করতে পারে।

কয়েকদিন আগেও তা পারত না, যখন সে স্ত্রী কন্যা সহ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত নিজেদের বাড়িতে।

মৌলির বয়স তখন সাড়ে চার। শিশু হলেও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী সে। মুখখানা যেন কথার ফোয়ারা। তাকে একই ঘরে রেখে স্বামী স্ত্রী নিশ্চিন্তে খেলা করে কি করে? তবু তাকে আলাদা ঘরে শোয়াবার বন্দোবস্ত করার কথাটা গুরুজনদের কাছে তুলতে পারেনি কেউ।

তার ওপর ছিল ভোর হতে না হতে বদ্ধ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বুড়ো বাপের বিরক্তিকর কাশির আওয়াজ, যার একটা অর্থও বুঝি ছিল, ওঠ, ওঠ, এত ঘুম ভাল নয়। সূর্য ওঠার আগে উঠতে হয়। Early to bed and Early to rise makes a man healthy, wealthy and fine. কথাটা কি ভুলে গেলে?

না, ভুলে যায় নি কেউ। সু সুখের শয্যা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করত না কারও। ঘুমাতও অবশ্য অনেক দেরিতে। গভীর রাতে আওয়াজ বন্ধ করে উত্তেজক ছবি দেখতে দেখতে নিজেরাও উন্মত্তের মত আচরণ করত। শরীরের ক্লান্তি তাই সহজে কাটতে চাইত না। সে কথা বলাও যেত না গুরুজনদের কাছে। অথচ বদ্ধ দরজার ওপারে গুরুজনের সশব্দ উপস্থিতি এপারে কামচরিতার্থতায় বাধা সৃষ্টি করত।

কিছুক্ষণ বাদে হর্ষের মা এসে দরজার কড়া নাড়াতেন, যার অর্থ, মৌলিকে তুলে দিতে হবে। সে স্কুলে যাবে। সাড়ে ছটার মধ্যে তার বেরিয়ে পড়া চাই।

মৌলিকে যথাসময়ে স্কুলে পাঠাবার দায়িত্বভার যদিও নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন ঠাকুর মা, তু মেয়েকে ঘরের বার করে দিয়েই আবার দরজা বন্ধ করে দিতে উভয়েই সংকোচ বোধ করত।

সেসব অসুবিধে আজ আর নেই। যতক্ষণই তারা ঘুমিয়ে থাক বা সম্ভোগে লিপ্ত থাক না কেন, কেউ এসে বিঘ্ন সৃষ্টি করে না। হর্ষকে বলে বলে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে কোম্পানির দেওয়া ফ্ল্যাটেতে উঠে আসা হয়েছে, অন্তত বীথি তা ভালই মনে করে।

সে এখন অনেক স্বাধীন। শ্বশুর শাশুড়ির উপদেশ মেনে চলার প্রয়োজন নেই। স্বামীকে তুষ্ট রাখতে পারলে কোনও সমস্যাই তার থাকে না। শ্বশুর বাড়ি থাকতে যাদের সে কখনও ফোন করতেই সাহস পেত না, স্বামীর ফ্ল্যাটে আজ সে তাদের যখন খুশি চলে আসারও আমন্ত্রণ জানায়। দু চারজন মদ্যপ বন্ধুর কথা ভেবে ফ্রিজে সে মদের বোতল পর্যন্ত এনে রাখে।

ফ্রিজে মদের বোতল দেখে হর্ষ অবশ্য বলেছে, এ কাজটা তুমি ঠিক কর নি, বীথি। মৌলি না বুঝলেও আমার বাবা মার চোখে যদি পড়ে যায় কখনও, তাদের কি ধারণা হবে, ভাবতে পার?

বীথি হেসে উত্তর দিয়েছে, গোপন জায়গা যা সংরক্ষিত থাকে, অতিথিদের তা চোখে পড়ার কথা নয়। তারা বড় জোর ডাইনিংরুমে বসে, কিচেনে ঘোরাফেরা করে না।

হর্ষ বলে উঠেছে, আমার বাবা মাও কি—

বীথি বলেছে, আমার সংসারে অতিথি বই কী। সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার অধিকার তাদের আমি দেব না। এতকাল মুক্তির স্বাদ পেতে যারা দেয় নি, তাদের এবার শাস্তি তো পেতেই হবে।

হর্ষ জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলেছে, আমার বাবা মা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অন্যায় কখনও করে নি। তারা আমাদের যত ভালবাসে, নিজেদেরও তত ভালবাসে না।

বীথি বলে উঠেছে, তুমি তা টের পাও কি করে? তোমার রক্তপ্রবাহের মধ্যে নাকি? তা-ই যদি হয়, আমাকে তুমি দোষ দিতে পার না। তাদের রক্ত তো আর আমার ধমনীতে বইছে না। সে কারণে তাদের দোষও আমি দেখতে পাই, তুমি যা। দেখতে পাও না। পুত্রস্নেহে অন্ধ পিতামাতার মত তুমিও তোমার পিতামাতার প্রতি ভক্তিতে অন্ধ।

বীথির কথাগুলির খুব একটা প্রবািদ করতে না পারলেও হর্ষের শুনতে মোটই ভাল লাগেনি। বুঝতে তার ভু হয়নি, বীথি নিজের খুশিমত জীবন যাপন করতে চায় বলেই গুরুজনেরা তার কাছে অসহ্য।

পতিও তো পরম গুরু। কিন্তু হর্ষকে গুরু বলে কখনও কি মনে করে বীথি? একেবারেই না। নাম ধরে তো ডাকেই, তাছাড়া তাচ্ছিল্যও কম করে না। পাঁঠা ও কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে কথাও শোনায় কখনও কখনও। হর্ষ ভাবে, হায়, দিন কালের এ কী পরিবর্তন!

.

২.

শীতের সকাল। ঘুম ভেঙে গেলেও ওঠার ইচ্ছে হয় না সহজে। তবু হর্ষ উঠেই পড়ল। মেয়ে মৌলিকে তৈরি করে কাজের বৌটি যখন তাকে স্কুলে নিয়ে যায়, সে সময়টার মৌলির মনের অবস্থা কেমন থাকে, অনেকদিন তা লক্ষই করা হয় নি যে।

হর্ষ চলে এল সে-ঘরে, যে ঘরে মৌলিকে নিয়ে কাজের বৌটি ঘুমায়।

আয়নার সামনে মৌলিকে সে একাই দেখল। অপটু হাতে নিজের সাজ নিজেই করছে।

হর্ষ জিজ্ঞেস করল, তোর পারুল মাসি কোথায়?

মৌলি বলল, আমিও অনেকক্ষণ দেখছি না। ও আমাকে ঠিকমত সাজাতে পারে, বাপি, তুমি ঠাকুরমাকে এখানে নিয়ে এস।

তোর মা যদি সাজিয়ে দেয়, রাজি তো? হর্ষ মেয়ের চোখে চোখে তাকাল।

মৌলি বলল, না, বাপি। মা কোনও দিন আমার চুলও আঁচড়ে দেয়নি। আমার ব্যাপারে মাকে তুমি কিছু বোলো না। ঠাকুরমার হাতে সাজতেই আমার সবচেয়ে ভাল লাগত। তারপর ঠাকুরদা যখন আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যেত, মনেই হত না, আমি পথে হাঁটছি। সুন্দর সুন্দর গল্প শুনতে শুনতেই সময় কেটে যেত। বাপি, তোমরা যখন আমাকে তোমাদের কাছে নিচ্ছ না, আমাকেই রং ঠাকুরমা ঠাকুরদার কাছে পাঠিয়ে দাও। সেখানেই আমি ভাল থাকব।

মেয়ের কথা শুনতে শুনতে হর্ষের বুক ব্যথায় যেন ফেটে যাওয়ার উপক্রম হল। কোনও রকমে চোখের জল সামাল নিয়ে সে বলল, মৌলি, সবুর কর। আমিই তোকে সাজিয়ে দেব। তারপর স্কুলেও পৌঁছে দিয়ে আসব। তোকে বলার জন্য কত গল্পই না আমার মনে জমা হয়ে আছে রে।

মৌলি তার বাপির মুখের দিকে তাকাল একবার। তারপর হঠাৎই বলে উঠল,, বাপি, তুমি কখনও ঠাকুরদার মত গল্প বলতে পারবে না। তোমাকে দেখলেই আমার মনে হয়, তুমি শুধু হিসেব কষছ। তুমি কি করে আমাকে আনন্দ দেবে? ঠাকুরদা ঠাকুরমাকে রেখে যখনই এখানে চলে এলে, তখন থেকেই আমার মুখে আর হাসি আসে না, গলাতেও গান আসে না, বাপি। শুধু মাকে বড় হাসিখুশি দেখি। দুপুরে যখন মামা কাকারা আসে, মায়ের সে কী হাসি!

হর্ষ যেন তড়িতাহত হল। তার অনুপস্থিতিতে নির্জন দুপুরে নিজেদের শয়নকক্ষে বীথি তাহলে পুরুষ সঙ্গ করে!

মেয়েকে সে প্রশ্ন করল, মামা কাকারা তোকে আদর করে তো, মৌলি?

মৌলি বলল, আমি তাদের কাছে কখনও যাই না, বাপি। স্কুল থেকে ফিরেও আমাকে এইঘরেই থাকতে হয়। উঁকি ঝুঁকি দেওয়াও মা পছন্দ করে না। জোর ধমক দেয়। আজকাল দরজাই বন্ধ করে রাখে। আমি শুধু আওয়াজ শুনে বুঝি, কত আনন্দই না করছে। আমার কেবলই কান্না আসে, বাপি।

হুম। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় ভেঙে পড়া হর্ষের মুখ থেকে আর কোনও শব্দ বের হল না।

সেসময়ে কাজের বৌটি এসে বলল, আপনি সরুন, দাদা। মৌলিকে আমি ঠিক সময়েই স্কুলে পৌঁছে দিতে পারব। ও আজকাল বেশ জোরেই হাঁটতে পারে।

হর্ষ গম্ভীর স্বরে বলল, তুমি দেরি করবে আর মৌলিকে জোরে হাঁটাবে, এটা ঠিক নয়, পারুল। এ সময়ে গিয়েছিলে কোথায়!

পারুল মৌলির চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বলল, একজন কাজে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে গেল। সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম।

কে সে? তোমার স্বামী?

না, দাদা। সে আমার স্বামীর বন্ধু। যতবলি, এখন ব্যস্ত আছি, সে তবু ছাড়তে চায় না। পর পুরুষগুলি একেবারে জোঁকের মত। বিরক্তি ধরে গেলে সে কথাই ভাবতে হয়। তা না হলে অবশ্য আনন্দের সঙ্গীও হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন, বৌদির বন্ধুরা তার আনন্দের সঙ্গী। সেঁক নয়। তাই তো অমন হাসিঠাট্টা চলে। আমি কিন্তু আমার স্বামীর বন্ধুকে ঝামটা মেরে চলে এসেছি।

তাই তো আসবে। তুমি পরের বাড়িতে কাজ কর, লোকটা তা চিন্তা করবে না কেন? হর্ষ তার বক্তব্য ব্যক্ত করে পুনরায় বলল, পারুলের কি দুপুরে ঘুম হয় না?

পারুল বলল, দুপুরে ঘুমের অভ্যাস আমার নেই, দাদা। বৌদি তাই মাঝে মাঝেই দুপুরে আমাকে সিনেমা দেখতে পাঠায়। যতবলি, আজকাল টিভির সামনে এত বসি যে, হলে বসতে আর ইচ্ছে হয় না, বৌদি সেকথা শুনতেই চায় না। তবে আমি বেরিয়ে গিয়ে সব সময়েই যে হলে বসি, তা নয়। আমার স্বামীর কাজের জায়গায় গিয়ে মাঝে মাঝেই তাকে সাহায্য করি।

আর মৌলি তার ঘরে একা পড়ে থাকে! হর্ষের কণ্ঠস্বরে যেন মেঘের মৃদু গর্জন।

পারুল বলল, একা পড়ে থাকলেও লেখাপড়াই করে, দাদা। আপনার মেয়েটি কিন্তু খুবই ভাল।

কথা বলতে বলতেই পারুল মৌলির যাবতীয় কাজ শেষ করে তাকে নিয়ে দ্রুত পা বাড়াল। হর্ষ বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে দেখল, পারুল সে ভাবে মৌলিকে নিয়ে। স্কুলের দিকে ছুটছে, তাতে মৌলির নরম পায়ের যথেষ্টই ক্ষতি হতে পারে।

শরীরের আলস্য ঝাড়তে ঝাড়তে বীথি এসে দাঁড়াল হর্ষের পাশে। কি এত কথা বলছিল পারুল তোমাকে?

হর্ষ বলল, সে অনেক কথা। তারপর থেকে ভাবছি, এ ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে আবার বাবা মায়ের কাছে গিয়েই থাকব। মৌলিও তাতে ভাল থাকবে। আমাকে সে বলেছে।

বীথি যেন জ্বলে উঠে বলল, আমারও তা ভাল লাগবে কিনা, তা জিজ্ঞেস করারও বুঝি প্রয়োজন বোধ করছ না?

হর্ষ বলল, তিনজনের মধ্যে দুজন মত দিলে তা অনুমোদিত হয়ে যায়, বীথি। তোমার ভাল না লাগলেও ভাল লাগাতে হবে। এছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

বীথি হঠাৎ রুক্ষস্বরেই বলল, বাপ মেয়ে থাক গিয়ে সেখানে। আমি কিন্তু এখান থেকে নড়ছি না।

বীথির চোখে চোখে তাকিয়ে হর্ষ বলল, এতই তোমার এখানে থাকার ইচ্ছে?

বীথি বলল, হ্যাঁ। জীবন বড় ছোট। স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিলে এ জীবনে নিজের খুশিমত ব্যয় করার জন্য আর সময় পাওয়া যাবে না। নিজের জন্য যে সময় আমি কেড়ে নিতে চাই, তাতে আর কারও বাধা আমার সহ্য হবে না, এমন কী মৌলির বাধাও না। আমি এ-ও ভেবে নিয়েছি। মৌলি এখানে থাকলে আগামী শিক্ষা বর্ষে সে দুপুরের স্কুলেই পড়বে। পারুলকেও সব সময়ের জন্য রাখার প্রয়োজন হবে না।

হর্ষ না বলে পারল না, কিন্তু নির্জন দুপুরে অভাগেদের যে বড় আনাগোনা বাড়ে, বীথি। আমার সম্পত্তি যে লুট হয়ে যাবে। বীথি বলল, তোমার লুঠ করার মত সম্পত্তি কীই বা থাকে ঘরে সবই তো থাকে লকারে। হর্ষ খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু লকারে যাকে রাখা যায় না, সেই যে আমার সেরা সম্পদ। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে আসায় হর্ষের কথাগুলি বীথি স্পষ্ট শুনতে পেল না।

কি বললে? চড়া গলাতেই প্রশ্ন করল বীথি।

হর্ষ বলল, সে কথা আর একদিন শুনো। আজ শুনে কাজ নেই।

.

৩.

একটি নির্জন দুপুর বীথি বড় সুখে কাটাচ্ছিল। অবশ্য একা নয়, আর একজনের সঙ্গে। সেই আর একজন হর্ষের কাছে অভাগার হলেও বীথির কাছে বড়ই বাঞ্ছিত জন।

সেই দুপুরে হর্ষ অফিসের কাজে মন বসাতে পারছিল না। অর্ধদিবস ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বাস ধরে ফিরছিল নিজের আস্তানার দিকে। নামার স্টপ ক্রমে এগিয়ে আসছিল। সিট ছেড়ে উঠবে উঠবে ভাবছে, এমন সময়ে বাসের জানালা দিয়ে সহসা তার চোখে পড়ল, একটি মঞ্চের দিকে মৌলিকে নিয়ে পারুল এগোচ্ছে। সেখানে ম্যাজিক দেখানো হবে।

হর্ষের বুকটা দ্যাৎ করে উঠল। মৌলি ম্যাজিক দেখবে, পারুলও ম্যাজিক দেখবে, সেকথা ঠিক। কিন্তু নিজের আস্তানায় গিয়ে সে কি দেখবে? যা দেখবে, তারপর নিজেকে স্থির রাখতে পারবে তো?

হর্ষ বাস থেকে নামল। ততক্ষণে মৌলিকে নিয়ে পারুল মঞ্চে ঢুকে গেছে। হর্ষ তাদের পিছু না নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দিকেই এগিয়ে চলল।

কোলাপসিবেল গেটে তালা ঝুলছিল ভেত্র থেকে। তার অর্থ, ভেতরে কেউ আছে। হর্ষ লু কলিং বেল না বাজিয়ে গেটের তালাটা ঘুরিয়ে দিয়ে নিজের কাছে রাখা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খুলে ফেলল। তারপর গেটটা দুদিকে সরিয়ে দিয়ে দরজার হাতলে চাপ দিল। দরজা তালাবদ্ধ না থাকা খুলে গেল। হর্ষ নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকল। জুতো মোজা খুলে যথাস্থানে রেখে সে নিজের শয়নকক্ষের দিকে এগিয়ে চলল।

বীথির হাসি যেন গলিত লাভার মত তাকে স্পর্শ করল। শয়নকক্ষও অর্গল বদ্ধ ছিল না। তাই হাতের সামান্য ঠেলাতেই দরজা উন্মুক্ত হল।

সেখানে হর্ষ থাক দেখুক, বীথি কিন্তু ভূত দেখার মত চমকে উঠল না।

আর বীথির বান্ধবটিও চোরের মত নিঃশব্দে পলায়ন করল না।

সে তার পোশাক আশাক নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।

বীথি তার স্বামীর সামনেই বেশ বাস পরে নিল, যা তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। হর্ষের দুই চোখে ক্রোধ বহ্নি জ্বলে উঠলেও তা স্থায়ী হল না। তাতে বর্ষার সজলতাই পরিস্ফুট হয়ে উঠল।

বীথির বান্ধবটি বাথরুম থেকে পোশাক পরে বেরিয়ে এসে বলল, তোমার হাজব্যান্ড যখন চলেই এসেছেন, আমি তাহলে আজ চলি।

হ্যাঁ, এস।

সে চলে যেতেই বীথি হর্ষকে বলল, খুব ব্যথা দিলাম, মনে হচ্ছে? কিন্তু তোমার মত আধুনিক যুবক এ ব্যাপারে কেন ব্যথা পাবে, সেটাই তো বুঝি না। তুমি কি জানো না, প্রতি মানুষই পৃথিবীতে একবার জন্মায়? সেই একবারের জন্মকে সার্থক করতে হয় পরিতৃপ্তির মাধ্যমে? আমি পরিতৃপ্ত। তাই আমার জন্ম সার্থক।

হর্ষ গম্ভীর স্বরে বলল, এবার বুঝলাম, কেন তোমার এমন একটি আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিল।

বীথি বলল, ঠিকই বুঝেছ। এর জন্য আমি লজ্জিতও নই। পরাক্রান্ত পুরুষেরাই কেবল বসুন্ধরাকে ভোগ করবে কেন? নারীরাও যে পারে, আজ তা দেখিয়ে দেওয়ার দিন এসেছে।

এইভাবে? সংসারের ইজ্জৎ লুণ্ঠিত হতে দিয়ে? আমি তা মানতে পারছি না, বীথি। তাই ঠিক করে ফেললাম, আজই আমি মৌলিকে নিয়ে আমার বাবা-মায়ের কাছে চলে যাব। তবে তোমাকে আমি নিরাশ্রয় করে যাব না। আমাকে দেওয়া কোম্পানির ফ্ল্যাট তোমারই থাকবে। বিয়ের মন্ত্র তুমিও উচ্চারণ করেছিলে, বীথি। তবু তুমি তার মূল্য দাও নি।

অগ্নিকে সাক্ষী রেখে শালগ্রাম শিলার সামনে আমি তোমার খাওয়া, পরা ও থাকার ভার নেওয়ার শপথ নিয়ে ছিলাম, সে-শপথ আমি ভাঙি কি করে, বল?

কথাগুলো বলতে বলতে হর্ষ তাদের শয়নকক্ষ ছেড়ে চলে যাচ্ছিল।

বীথি বলে উঠল, শোনো। তোমার গার্লফ্রেন্ড যদি না থাকে তো কলগার্লদের নিয়েও ফুর্তি করতে পার। আমি আপত্তি করব না।

তবু হর্ষ আর ফিরে তাকাল না।

হয়তো পরে ফিরবে মৌলিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments