Wednesday, April 17, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পদ্য ক্যাট অ্যান্ড দ্য ডেভল - জেমস জয়েস

দ্য ক্যাট অ্যান্ড দ্য ডেভল – জেমস জয়েস

দ্য ক্যাট অ্যান্ড দ্য ডেভল - জেমস জয়েস

১০ অগাস্ট, ১৯৩৬

প্রিয় স্টিভ,

কিছুদিন আগে তোমাকে ছোট্ট একটা মিষ্টি বেড়াল পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বুজেনসির বেড়ালের ওই গল্পটা তুমি হয়তো এখনও শোননি।

ফ্রান্সের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী লোয়ার, তার তীরে ছোট্ট শহর বুজেনসি। হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর উপত্যকায় আছে আঙুরক্ষেত, আর আছে অনেক পুরনো প্রাসাদ।

কিন্তু অনেকদিন আগে নদী পার হতে বুজেনসির মানুষের খুব কষ্ট হতো। এখনকার মতো এতো আধুনিক ব্যবস্থা সেসময় ছিলো না। মানুষ নৌকায় করে নদী পার হতো, কখনও তা-ও পাওয়া যেতো না। একটা নৌকা ঘাট ছেড়ে গেলে আরেকটা নৌকার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকতে হতো। নদীর ওপর ছিলো না কোন সেতু।

তখন বুজেনসিতে ছিলো এক দৈত্য। সে আবার সবসময় খবরের কাগজ পড়তো। একদিন পত্রিকার পাতায় বুজেনসির মানুষের দুর্দশার কথা জানলো সে। পোশাক পরে সাজগোজ করে তৈরি হলো বুজেনসির মহামান্য মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে।

দৈত্য জানালো, এমন এক সেতু সে বানাবে যা এর আগে কেউ কোনদিন দেখেনি এবং এটা বানানো মাত্র এক রাতে।

মেয়র ছিলেন জনাব আলফ্রেড বার্ন। তিনিও সাজগোজ পছন্দ করতেন। পরতেন টকটকা লাল অঙ্গরাখা। সবসময় তার গলায় ঝুলতো ইয়া লম্বা এক সোনার মালা। এমনকি তিনি যখন গভীর ঘুমে বিছানায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে থাকতেন তখনও তার গলায় মালাটা থাকতো।

মেয়রের সামনে উপস্থিত হয়ে দৈত্য সবকিছু খুলে বললো। সে বললো, বুজেনসির মানুষের দুর্দশা কাটাতে সে সাহায্য করতে চায়। লোয়ার নদীর ওপর একটা সেতু বানিয়ে দিতে চাইলো সে, যেন মানুষ যতোবার খুশি ততোবার সেতু দিয়ে নদী পার হতে পারে। বললো, এমন এক সেতু বানাবে যা এর আগে কেউ কোনদিন দেখেনি এবং এটা সে বানাবে মাত্র এক রাতে।

দৈত্যের কাছে মেয়র জানতে চাইলো এমন সেতু তৈরি করতে তার কতো টাকা চাই। ‘কোন টাকা চাই না’, দৈত্য বললো- ‘আমি শুধু চাই প্রথম যে এ সেতু পার হয়ে আসবে সে আমার হয়ে যাবে।’

‘বেশ, তাই হবে’, মেয়র বললো।

বুজেনসি শহরে রাত নেমে এলো। ছেলেবুড়ো সবাই যার যার বাড়িতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। সবার মনে একটাই প্রশ্ন আঁকিবুঁকি করতে লাগলো, এক রাতে কী করে এতো বড় সেতু বানিয়ে ফেলা সম্ভব! ভাবতে ভাবতে তাদের চোখে ঘুম চলে এলো আর ঘুমিয়ে পড়লো।

ঘর থেকে ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়ি সবাই ছুটে এলো সেতু দেখতে। নদীর ওপর সুন্দর পাথরে বুকভরা গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।

পরদিন যথারীতি লোয়ার নদীর পূর্ব পারে সূর্য উঠলো। সূর্যের লাল আভায় টকটক করতে লাগলো জল। সেই সকালবেলা চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে সবাই যখন জানালায় এলো, চিৎকার করে উঠলো- ‘এ কী কাণ্ড!’ লোয়ারের দুই পার নিয়ে তৈরি হয়ে আছে চমৎকার এক সেতু!

ঘর থেকে ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়ি সবাই ছুটে এলো সেতু দেখতে। নদীর ওপর সুন্দর পাথরে বুকভরা গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। সবাই সেতুর চারপাশটা দেখতে থাকলো, হইহুল্লোড় লেগে গেলো প্রায়।

কথামতো সেতুর অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে দৈত্য। অপেক্ষায় আছে তার যে সবার প্রথম এই সেতু পেরিয়ে আসবে। যে-ই আসবে তাকে-ই সে চিরদিনের জন্য নিয়ে নেবে। কিন্তু দৈত্যের ভয়ে কেউ-ই সেতু পার হচ্ছিলো না।

বেড়ালটি চোখ তুলে তাকালো মেয়রের দিকে। বুজেনসি শহরে তখন এ নিয়ম ছিলো যে বেড়ালও মহামান্য মেয়রের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে।

এমন সময় বিউগল বেজে উঠলো। এর মানে হলো এখন সবাইকে চুপ থাকতে হবে। তখন বিখ্যাত সেই লাল অঙ্গরাখা আর গলায় সোনার মোটা মালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে এলো মাননীয় নগরকর্তা আলফ্রেড বার্ন। জনতার ভিড় পেরিয়ে সামনে আসতে লাগলেন, এক হাতে এক বালতি পানি আর অন্য হাতে একটা বেড়াল নিয়ে তিনি এসে দাঁড়ালেন।

মেয়রকে দেখে সেতুর ওপারে থাকা দৈত্য এবার নাচানাচি থামালো। দূরবীনটি তুলে নিয়ে তার ভেতর চোখ গলিয়ে তাকালো। জড়ো হওয়া লোকজন নিজেদের মধ্যে কানাকানি শুরু করে দিলো।

বেড়ালটি চোখ তুলে তাকালো মেয়রের দিকে। বুজেনসি শহরে তখন এ নিয়ম ছিলো যে বেড়ালও মহামান্য মেয়রের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে। কিন্তু মেয়রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় বিরক্ত হয়ে গেলো বেড়ালটি, তারপর মেয়রের গলায় সোনার মালা নিয়ে খেলতে শুরু করে দিলো।

মেয়র এসে দাঁড়ালেন সেতুর মুখে। মহামান্য এসেছেন বলে লোকেদের নিঃশ্বাসও থেমে গেছে, মেয়েদের কানাকানি বন্ধ। মুহূর্তের মধ্যে বেড়ালের গায়ে বালতির সবটুকু পানি ঢেলে দিলেন মেয়র, তারপর ছেড়ে দিলেন সেতুর এক মাথা থেকে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বেড়াল দৌড় লাগালো সেতুর অন্য প্রান্তে থাকা দৈত্যের দিকে, কান দুটো পেছনে পেতে গায়ের ভেজা লোম খাড়া করে সে ছুটছে বাতাসের বেগে।

তাই দেখে দৈত্য গেলো ক্ষেপে, দৈত্যরা যেমন গজগজ করে ক্ষেপে থাকে আরকি! ‘ও হে বুজেনসির মানুষ’, চিৎকার শুরু করে দিলো সে- ‘আজ থেকে বেড়ালের আত্মার মানুষ বলে সবাই তোমাদের ডাকবে’।

তারপর বেড়ালের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এসো ছোট্ট সোনা, এদিকে এসো। তোমার কি ঠান্ডা লেগেছে, ও আমার ছোট্ট সোনা। আমি তোমাকে নরকে নিয়ে যাবো, ঠিক আছে! সেখানে আমি তুমি দু’জনই উষ্ণতা পাবো।’

রাগে খিটমিট করতে করতে বেড়ালটিকে নিয়ে সেই দৈত্য চলে গেলো। তখন থেকে এ শহরের লোকেদের বলা হয় ‘বুজেনসির বেড়াল’।

সেতুটি কিন্তু এখনও আছে। বুজেনসির ছেলেমেয়েরা এ সেতুতে হাঁটে, চড়ে আর খেলা করে।

আশা করি গল্পটি তোমার ভালো লেগেছে।

ইতি

তোমার দাদু।

অনুবাদ: মাজহার সরকার

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments