Thursday, March 28, 2024
Homeইসলামনবীদের জীবনীহযরত আদম (আঃ)-এর জীবনী

হযরত আদম (আঃ)-এর জীবনী

হযরত আদম (আঃ)-এর জীবনী

আদম (আ.)-এর মাধ্যমে মানবসভ্যতার সূচনা হয়েছিল। তিনি ছিলেন প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী। আসমানি ধর্মগুলোর (ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি) বিশ্বাস হলো, পৃথিবীর সব মানুষ আদম (আ.)-এর বংশধর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কোরো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তাঁর স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন।

’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১)
পরিবার গঠন : উল্লিখিত আয়াত থেকে বোঝা যায়, আদম (আ.)-এর স্ত্রী হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল তাঁর থেকেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দেবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড় বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের উত্তম উপদেশ দিতে থাকো। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৩১)

ইমাম তাবারি (রহ.) উল্লেখ করেন, ‘আদম (আ.)-কে জান্নাতে বাস করতে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তিনি একাকী উদাস হয়ে থাকতেন। তাঁর কোনো স্ত্রী ছিল না, যার কাছে তিনি প্রশান্তি পেতে পারেন। একবার তিনি ঘুমালেন এবং ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তাঁর মাথার কাছে একজন নারী বসে আছেন। আল্লাহ সে নারীকে তাঁর পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আদম (আ.) জানতে চাইলেন, তুমি কে? তিনি বলেন, আমি নারী। আদম (আ.) বলেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? হাওয়া (আ.) বলেন, যেন আপনি আমার কাছে প্রশান্তি লাভ করেন। ’ (তাফসিরে তাবারি)

সন্তান লাভ :

কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে আদম ও হাওয়া (আ.) জান্নাতে কোনো সন্তান লাভ করেননি। পৃথিবীতে আগমনের পর তারা সন্তান লাভ করেন। এ জন্য পবিত্র কোরআনে শুধু তাদের দুজনকে লক্ষ করে বলা হয়েছে, ‘আমি বললাম, হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কোরো এবং যেখানে ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কোরো; কিন্তু তোমরা দুজন এই গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু শয়তান তা থেকে তাদের দুজনের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দুজন যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদের বহিষ্কৃত করল। …’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৫-৩৬)

হাদিসে এসেছে, জান্নাতে আদম (আ.) তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেননি। পৃথিবীতে আসার পর জিবরাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে সহবাসের নির্দেশ নিয়ে আসেন এবং পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১৯৮)

হাওয়া (আ.)-এর গর্ভধারণ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন সে তার সঙ্গে সংগত হয়, তখন সে এক লঘু গর্ভধারণ করে এবং তা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন গুরুভার হয়, তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদের এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দেন তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবই। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮৯)

সন্তানের সংখ্যা :

আদম ও হাওয়া (আ.) দম্পতির কতজন সন্তান ছিল সে বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা পাওয়া যায় না। তবে ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় দুটি মত প্রাধান্য পেয়েছে। তা হলো—এক. ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারির (রহ.) বলেন, ‘হাওয়া (আ.) ২০ বার গর্ভধারণ করেন এবং ৪০টি সন্তান প্রসব করেন। প্রত্যেকবার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করত। সন্তানদের মধ্যে প্রথম জোড়ায় ছিল কাবিল ও তার বোন ইকলিমা, আর শেষ জোড়ায় ছিল আবদুল মুগিস ও তার বোন উম্মুল মুগিস। ’ (নবুওয়াতু আদম ওয়া রিসালাতুহু, পৃষ্ঠা ১১৫)

দুই. কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, ‘হাওয়া (আ.) ১২০ বার গর্ভধারণ করেন এবং প্রতিবার দুটি সন্তান (একটি ছেলে ও একটি মেয়ে) প্রসব করেন। ’ ঐতিহাসিকদের দাবি, আদম (আ.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর সন্তান ও পরিবারের সদস্যসংখ্যা চার লাখে উন্নীত হয়। (মুজাজুত-তারিখিল ইসলামী : ২/১৩)

কোরআন-হাদিসে সন্তানদের নাম :

আদম (আ.)-এর বহুসংখ্যক সন্তান থাকলেও তাদের মধ্যে শুধু তিনজনের নাম কোরআন ও হাদিসে এসেছে। হাবিল, কাবিল ও শিস (আ.)। কোরআনে কাবিল কর্তৃক হাবিল নিহত হওয়ার বিবরণে বলা হয়েছে, ‘আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদের যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কবুল হলো না। সে বলল, আমি তোমাকে হত্যা করবই। অন্যজন বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন। ’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২৭)

আদম (আ.)-এর উত্তরাধিকারী :

আদম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে শিস (আ.) ছিলেন নবী ও ধর্মীয় নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী। পবিত্র কোরআনে তাঁর আলোচনা না থাকলেও একাধিক হাদিসে তাঁর উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহাসিকরা শিস (আ.)-এর নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করেন।

১. আদম (আ.)-এর অসিয়ত অনুসারে তাঁর মৃত্যুর পর শিস (আ.) পরিবার ও সমাজের অভিভাবক হন।

২. দৈহিক বৈশিষ্ট্যে তিনি আদম (আ.)-এর সবচেয়ে বেশি সদৃশ ছিলেন।

৩. আদম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে শুধু শিস (আ.)-এর বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে।

৪. আল্লাহ তাঁকে ৫০টি সহিফা (অপ্রধান ঐশী গ্রন্থ) দান করেন।

৫. তিনি সর্বপ্রথম কাবা নির্মাণ করেন। (কানজুদ্দুরার ওয়া জামিউল গুরার : ২/৬৪)

আদম ও হাওয়া (আ.)-এর মৃত্যু :

আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর মৃত্যু সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, কোনো এক শুক্রবার আদম (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়। তাঁর মৃত্যুর পর ফেরেশতারা জান্নাতি কাপড় ও সুগন্ধি নিয়ে হাজির হন এবং তারা তাঁর কাফন, দাফন ও জানাজার নামাজ আদায় করেন। তারপর তাঁরা বলেন, হে আদম সন্তান, এই হলো তোমাদের দাফনের নিয়ম। আদম (আ.)-এর মৃত্যুর এক বছর পর হাওয়া (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়। তবে আদম (আ.)-কে কোথায় দাফন করা হয় তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। প্রসিদ্ধ তিনটি মত হলো—ক. ভারতবর্ষের যে পাহাড়ে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, খ. মক্কার জাবালে আবু কুবাইস, গ. বায়তুল মুকাদ্দাস। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর এক বর্ণনায় এসেছে মৃত্যুকালে আদম (আ.)-এর বয়স হয়েছিল এক হাজার বছর। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১২৬-১২৯)

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments