Tuesday, April 16, 2024
Homeরম্য গল্পরম্য গল্প: 'অভিমানী বউ'

রম্য গল্প: ‘অভিমানী বউ’

রম্য গল্প: 'অভিমানী বউ'

অবনি তাঁর কাপড় চোপড় ব্যাগ এ ভর্তি করছে। সে আমার সাথে আর থাকবেনা। বাপের বাড়ি চলে যাবে। এরকম মাঝে মধ্যেই করে সে। একটু ঝগড়া হলেই বাপের বাড়ির দিকে দৌড় মারে। অনেক রাগী আর অভিমানী একটা মেয়ে। তবে কখনোই যায়নি। মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত। তেমনি অবনির দৌড় দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত। তবে আজ মনে হচ্ছে দরজার চৌকাঠ পাড় হবে। আসলে মেয়েটা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

কখনো কোনো কিছু উপহার দিতে পারিনা। যা বেতন পাই তা সংসারের খঁরচ করতেই চলে যায়। এইতো সেদিন অবনির জন্মদিন গেলো। একটা শাড়ি পর্যন্ত তাকে দিতে পারিনি। তবুও সে কখনো কোনো অভিযোগ করেনি।

ঝগড়া টা খুব বড় নয়। আজকে বিকেলে অবনিকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। অফিসের ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। ঘুরতে যেতে পারিনি তারপর আবার অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছি।

এই তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?
কেনো? কোনো সন্দেহ আছে নাকি?
তোমার বউ চলে যাচ্ছে তাকে তুমি আটকাবানা?
আমি জানি তুমি দরজা পর্যন্ত গিয়ে আর যাবেনা। ফিরে আসবে। প্রায়ইতো এরকম করো। তাই আর কিছু বলছিনা।
বুঝি,বুঝি সবই বুঝি। আমি তো তোমার কাছে এখন পুরাতন হয়ে গেছি। ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তোমার মনে থাকেনা। খুব ব্যস্ত থাকো। আমার জন্য একটু সময় দিতে পারো না।

আজকে সত্যিই চলে যাবো তোমাকে মুক্তি দিয়ে।
যাবে যাও। আমাকে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছো,এটা কেমন কথা?
আর আমি কি তোমাকে বাঁধা দিয়ে রাখছি নাকি?
আমার কাছে টাকা নাই। যাবো কি করে?
তোমার বাপের বাড়ি তো বেশি দূরে না। হেঁটেই যেতে পারবা।
এতো রাতে টাকা ছাড়া কোথাও বের হয় কেউ?
আচ্ছা,মানিব্যাগ থেকে নিয়ে নাও।
আমি নেব কেনো? তুমি দাও।
আরে এতো ন্যাকামি করোনা তো।
তারপর অবনি মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাপের বাড়ির উদ্যশে রওনা হল। দরজা পর্যন্ত গিয়েই আবার পেছনে ফিরলো।
কি হল?
ফিরে এল যে।
তোমার কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই?
এতো রাতে একটা মেয়ে একা একা যেতে পারবে? কিংবা যাওয়া উচিত।
আমি জানতাম তুমি কোনো একটা অযুহাত বের করবেই।
তুমি আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসো। তাহলেই হবে। আমি একা যেতে পারবো না। দিন হলে তোমাকে আর বলতাম না।
পারবো না।
কেনো পারবেনা?
দেখছোই তো লুঙ্গি পড়ে আছি,খালি গায়ে।
তো কি হয়েছে। বাহিরে যে অন্ধকার লুঙ্গি ছাড়া গেলেও কেউ দেখবেনা।
না পেরে লুঙি পড়েই বের হই। সাথে একটা গেঞ্জি নিয়ে নিলাম।
ব্যাগটাও কি আমাকে নিতে হবে?
কেমন স্বামী তুমি?
বউ কে দিয়ে এতো ভাড়ি একটা ব্যাগ কেউ নেওয়াই?

তোমার সাথে কথায় পারা যাবেনা। দাও, ব্যাগটা আমাকে দাও। অতঃপর ব্যাগটা নিয়ে বাসস্টপ এর দিকে রওনা হলাম।

এই থামো থামো।
কোথায় যাচ্ছি আমরা?
কোথায় মানে?
যেখানে বাস থামে সেখানেই যাচ্ছি। ওখান থেকে সোজা তোমার বাপের বাড়ি মানে আমার শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে। তোমাকে দিয়ে চলে আসবো।
তুমি তো বলেছিলে,হেঁটেই যাওয়া যাবে। তাহলে আজকে হেঁটেই যাবো।
পাগল নাকি। হেঁটে যেতে মিনিমাম দুইঘন্টা সময় লাগবে।
আর ওটা আমি এমনিতেই বলেছি।
না, আমি হেঁটে হেঁটেই বাপের বাড়ি যাবো।
বউ আমার বড্ড রাগী। এখন যদি তাঁর কথা না শুনি, তাহলে রাস্তার মধ্যেই কান্নাকাটি শুরু করে দিবে। তাই বাধ্য হয়েই হাঁটা শুরু দিলাম।
আরে,তুমি কথা বলছো না কেনো?
কি বলবো?

আহারে বেচারা,বউ চলে যাবে দেখে মনটা খারাপ?
ওতো বড় বিছানায় একা থাকতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে হয়তো।
রান্না করতে হবে,কাপড় কাঁচতে হবে। কি কষ্টটাই না হবে। আমার তো এসব ভাবতেই কেমন জানি লাগছে।
আর তোমাকে তো এসব করতে হবে? তোমার খারাপ লাগবে না?
তুমি কি আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছো?
আচ্ছা, বল?
আমি একা থাকতে পারবো তোমাকে ছাড়া।
আর হোস্টেল এ থাকতে রান্না করে খেয়েছি,নিজের কাপড় নিজেই ধুয়েছি। তাই এসব নিয়ে আমাকে ভয় দেখাবানা।
আচ্ছা বাদ দাও।
ফুসকা খাবো।
এই সময় ফুসকা খাবে?
হ্যাঁ, আর তো আমাদের কখনো দেখা হবেনা। তাই আজকেই জীবনে শেষবারের মতো ফুসকা খাবো।
ফুসকা নিয়ে এসেছি। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
আমি খেতে পারবো না। তুমি নিজ হাতে খাওয়াই দাও।
সারাজীবন তুমি খাওয়াইয়া দিছো। আজকেও তুমি খাওয়াইয়া দিবা।
আচ্ছা,তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা?
হুম,পারবো।
কষ্ট হবেনা?
না হবেনা।
মিথ্যা বলো কেনো?
জানিনা।

ফুসকা শেষ করে আবার হাঁটা শুরু দিলাম।
এই এদিকে এসো। বিদায় মুহূর্তে কেউ এতো মন খারাপ করে থাকে?
সবসময় তো আমার আঁচলের নিচেই থাকতা। আজকে এতো দূরত্ব দেখাচ্ছো কেনো?

ফালতু কথা বলবানা। তোমার অাঁচলের নিচে থাকতাম সবসময়।এটা কেমন কথা?

শেষবারে মতো আমার হাতটা একটু ধরবা। তোমার কাঁধে মাথা রেখে কিছু পথ হাঁটতে চাই।
অবনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। আর আমার কাঁধে মাথা রেখে হেঁটে চলেছে।
আমি চলে গেলে তোমার ভালো লাগবে?
না।
আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার খারাপ লাগবে না?
হুম লাগবে।
তাহলে তুমি আমাকে আসতে দিলে কেনো?
জানিনা।

তুমি কি জানো? আমার দেহ,মন,প্রাণ সব তোমার ইচ্ছেতেই চলে। তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা আমি। আমার হৃদয়ের রাজা তুমি। আমার রাজ্যে তুমি ছাড়া অন্য কারো বিচরণ নেই।
তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে আসলে কেনো?
কে বলল চলে এসেছি।
রাস্তা ঘুরো। বাপের বাড়ি যামুনা।
বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাওনাই। তাই ভাবলাম কিভাবে তোমাকে নিয়ে বাহিরে বের হওয়া যায়,ফুসকা খাওয়া যায়। এমনিতেই তো এতো রাতে বাইরে বের হইতা না। তাই এরকম করলাম।
এতো কষ্ট করালে কেনো আমায়?
দুঃখিত, আমার জান পাখিটা।

চল,আজকে তো অনেক রাত বাকি। বাকি রাত টুকু তোমাকে এতো ভালোবাসা দিবো যে পৃথিবীর সব কষ্ট তুমি ভূলে যাবে।
জানি, জানি। আর বলতে হবেনা। শুধু মুখে বলো। ঘুমানোর সময়তো একটু জড়িয়েও ধরতে দাওনা। মাঝখানে কোল বালিশ রেখে দাও।

অবনি আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আচ্ছা,চল বাসায় যাই আগে। তারপর তোমাকে বুঝাবো মজা।
অবনি আবার রাগ করেছে। তবে এবার সে বাপের বাড়ি যাচ্ছেনা। স্বামীর বাড়ি যাচ্ছে।
আমি অবনির পিছু পিছু যাচ্ছি।

আসলে ভালোবাসার মানুষকে কখনো যেতে দেওয়া উচিত না। যেভাবেই হোক তাকে আটকে রাখা উচিত। কারণ সে যাওয়ার সময় একা চলে যায়না। অন্য একজনের সুখ নিয়ে যায়।

— আমিনুর রহমান

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments