Friday, April 19, 2024
Homeবাণী-কথানুহাশ এবং সে - হুমায়ূন আহমেদ

নুহাশ এবং সে – হুমায়ূন আহমেদ

মাঝে মাঝে খুব সাধারণ কিছু দৃশ্য আমাকে অভিভূত করে। দারুণ মন খারাপ করিয়ে দেয়। বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় আসছি। সাধারণত ঢাকা-বরিশাল লঞ্চগুলি রাতে চলাচল করে। এক সময় দিনেও লঞ্চ ছিল। আমি নদীর দু’পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে আসব ভেবে দিনের লঞ্চ নিয়েছি। বসেছি ছাদে। প্রচুর বাতাস, প্রচুর রোদ গায়ে মাখছি, চমৎকার লাগছে। হাওয়া এবং রোদ বোধহয় ক্ষুধা বৃদ্ধিতে কাজ করে। দুপুর একটায় ক্ষুধার্ত হয়ে নিচে নামলাম। গরম ভাত, টাটকা ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে দুপুরের খাবার সারলাম। লঞ্চের রান্নার কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে–হোটেলের মত এরা প্রচুর মশলা দেয় না। কম মশলায় রাঁধে এবং যত্ন করে রাঁধে। ভরপেট খাবার পরেও খিদে থাকে।

আমি তৃপ্তি করে খেলাম। খাবার পর ডবল পান মুখে দিলাম, সিগারেট ধরালাম, আর তখনি অভিভূত হবার মত দৃশ্যটি দেখলাম। একজন দরিদ্র যাত্রী দুপুরের খাবার। খাচ্ছে। একটা পাউরুটি তার হাতে। পাউরুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছে। অভিভূত হবার মত কোন দৃশ্য নয়। আমাদের এই হতদরিদ্র দেশে শুধু ভাত, শুধু রুটি দিয়ে দুপুরের খাবার অনেকেই খায়। এই দৃশ্য কোন অপরিচিত দৃশ্য নয়। আমরা সব সময় দেখছি। কিন্তু আজকের দৃশ্যটিতে অন্য ব্যাপার আছে। প্রথমত, মানুষটি পাউরুটি খুব আগ্রহ করে খাচ্ছে। তার সমস্ত চিন্তা-চেতনা পাউরুটিতে সীমাবদ্ধ। আশেপাশের জগৎ থেকে সে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তাকে দেখেই মনে হয়–এই শুকনো পাউরুটি চিবিয়ে সে প্রচুর আনন্দ পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মানুষটি খেতে বসেছে বেশ আয়োজন করে। তার সামনে কাঁচের গ্লাস ভর্তি পানি। গ্লাসটার উপর একটা পিরিচ বসানো। সেই পিরিচে এক খিলি সাজানো পান।

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত লোকটির খাওয়া দেখলাম। খাওয়া শেষে গভীর তৃপ্তিতে তার পানি খাওয়া দেখলাম। পান মুখে পুরতে দেখলাম। পান মুখে দেয়া মানুষটিকে মনে হল এই পৃথিবীর সুখী মানুষদের একজন। আমার কাছে মনে হতে লাগল, আহা, এই মানুষটা যদি ইলিশ মাছের টাটকা ঝোল দিয়ে গরম গরম ভাত খেতে পারত তাহলে কি গভীর আনন্দেই না সে খেত! এই ঘটনা আমি অনেককে বলেছি, তাদের কেউই বুঝতে পারেনি অভিভূত হবার মত এর মধ্যে কি আছে? আমার এক বন্ধু বললেন–এটা। হচ্ছে এক ধরনের দুঃখবিলাস।, দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে উচ্চবিত্তের মিথ্যা দুঃখ। শখের দুঃখ।

আমি বললাম, মিথ্যা হবে কেন?

সে বলল, মিথ্যা, কারণ তুমি যদি এতই অভিভূত, তাহলে তুমি তাকে বলতে পারতে–ভাই, আপনি আসুন তো, ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাবেন। আমি পয়সা দেব। তুমি তা বলনি। তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছ। অন্যের দুঃখ নিয়ে বিলাস করেছ।

বন্ধুর সঙ্গে আমি তর্কে যাইনি। যেতে পারতাম। ফট করে একজনকে বলা যায় না–আপনি ভাত খান, আমি পয়সা দেব। এই কাজটি তখন করা যায় যখন কেউ খেতে চায়। তাছাড়া ঐ মানুষটি নিজের অর্থে কেনা সামান্য খাবার অতি আগ্রহ করে খাচ্ছে–সেখানে আমি উপদ্রবের মত উপস্থিত হয়ে তার খাওয়া নষ্ট করতে পারি না। আমার প্রস্তাবে লোকটি বলে বসতে পারত–আপনি আমাকে খাওয়াবেন কেন? আপনি। কে? আমি কি আপনার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি?

কেউ হয়ত আমার সঙ্গে একমত হবেন না, কিন্তু তবু আমার সব সময় মনে হয় দয়া দেখানোর মধ্যেও এক ধরনের দীনতা আছে। আমি দয়া দেখাচ্ছি, কারণ আমার অনেক আছে। ‘আমার অনেক আছে’–চিন্তাটাই তো এক ধরনের দীনতা।

আমার ছোটভাই গত বছর আমেরিকা থেকে আমার মা’র নামে এক হাজার ডলার পাঠিয়ে দিল। ডলারের সঙ্গে একটা ছোট্ট চিঠি।

আম্মা, আপনাকে এক হাজার ডলার পাঠালাম। একটা বিশেষ উদ্দেশে ডলার পাঠানো হয়েছে। আমি অনেকদিন দেশের বাইরে আছি। এখানে দান-খয়রাতের তেমন সুযোগ নেই। কেন জানি কিছু দান করতে ইচ্ছা করছে–আপনি ডলার ভাঙিয়ে যে টাকা পাবেন তা দরিদ্র মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেবেন। তবে আমাদের দরিদ্র আত্মীয়স্বজনদের এই টাকাটা দেবেন না। আমি টাকা পাঠিয়েছি যারা সত্যিকার অর্থেই ভিক্ষুক–তাদের জন্যে।

মা ডলার ভাঙিয়ে প্রায় আটত্রিশ হাজার টাকার মত পেলেন। অনেক টাকা। ফকিরকে ভিক্ষা দেয়ার জন্যে তো প্রচুরই বলা চলে। এক সপ্তাহ ধরে মা সেই টাকা বিলি করলেন। মা’কে সাহায্য করল আমার সবচে’ ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। দু’জনকেই দেখলাম ব্যাপারটায় প্রচুর আনন্দ পাচ্ছে। ফকির ভিক্ষা চাইতে আসে। তার চেহারা, কাপড়-চোপড় দেখে বিবেচনা করা হয় কি পরিমাণ সাহায্য তাকে দেয়া যায়। কেউ পায় ৫০ টাকা, কেউ একশ’। দু’-একজন মহাসৌভাগ্যবান পায় ৫০০ টাকা। এসব ক্ষেত্রে যা হয়–দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে–এবং হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। মহা বিশৃঙ্খলা, মহা ভিড়ে–কেউ কেউ মারাও যায়। আমিও আশংকা করেছিলাম এরকম কিছু হবে। কেন জানি হল না। মা এক জায়গা থেকে টাকা না দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিলেন বলেই খবরটা তেমন জানাজানি হল না।

টাকা বিলি শেষ হবার পর একদিন মা’র কাছে গিয়েছি। তিনি খুব উৎসাহ নিয়ে গল্প করছেন–টাকা পাবার পর একেক জনের কি অবস্থা হল। আমার তখন মনে। হল–এই দানে যে আনন্দ আমার মা পেলেন তা অন্যকে সাহায্য করার আনন্দ নয়। ক্ষমতার আনন্দ, এই আনন্দের সঙ্গে কিছুটা হলেও দীনতা মিশে আছে।

অন্যের দুঃখে অভিভূত হয়ে যে দান করা হয় তাতে দীনতার গ্লানি থাকে না। সেই আনন্দের ভাগ আমাদের ভাগ্যে জুটে না বললেই হয়। আমি দেখেছি, অন্যের দুঃখে অভিভূত হয়ে যে দান করা হয় তার বড় অংশই করা হয় সাময়িক ঝোঁকের মাথায়। ঝোঁক কেটে গেলে মনে হয়–এটা কি করলাম?

উদাহরণ দেই–আমার এক দূর সম্পর্কের মামার গল্প। তিনি একবার গুলিস্তান থেকে রিকশা করে ফিরছেন–প্রচণ্ড শীতের রাত। হঠাৎ লক্ষ করলেন, ফুটপাতে এক ভিখিরি-পরিবার ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে শুয়ে আছে। তাদের সম্বল একটামাত্র কাঁথা। কাঁথায় সবার হচ্ছে না। তারা টানাটানি করছে। মামার মন খুব খারাপ হল। বাসায় পৌঁছে কাউকে কিছু না বলে তাঁর নিজের লেপ নিয়ে রওনা হলেন। মামী বললেন, কি করছ তুমি? লেপ নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? তিনি বললেন, চুপ করে থাক। কথা বলবে না। তিনি ওদের লেপ দিয়ে এসে বাসায় ফিরলেন। ততক্ষণে তাঁর ঝোঁক কেটে গেছে। তিনি হায় হায় করছেন–ছয়শ’ টাকা খরচ করে নতুন লেপ বানানো হয়েছে–লেপটা দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। ত্রিশ টাকা দিয়ে একটা পুরানো কম্বল কিনে দিলেই যথেষ্ট হত।

এ জাতীয় ঘটনা আমার নিজের বেলাতেও ঘটেছে। তখন শহীদুল্লাহ হলে থাকি। সন্ধ্যাবেলায় একজন অন্ধ ছেলে এসে উপস্থিত। আমার কাছে সে নালিশ করতে। এসেছে। নালিশ করতে এসেছে অন্ধ কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে। সে বল পয়েন্টের ব্যবসা করে। বল পয়েন্ট কিনে ছাত্রদের কাছে বিক্রি করে। অন্ধ কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি তাঁকে বলেছিলেন–ব্যবসার জন্যে টাকা দেবেন। এখন দিচ্ছেন না। আমি যদি সেক্রেটারিকে কিছু বলে দেই তাহলে সে টাকাটা পায়। কারণ সেক্রেটারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অন্ধ ছাত্র। আমি দেখলাম–বিরাট যন্ত্রণা। সেক্রেটারীকে কিভাবে পাব? তাকে বলবই বা কি? অন্ধ ছেলেটির জন্যেও মায়া লাগছে। বেচারা কাঁদতে শুরু করেছে। আমি বললাম, ব্যবসা করতে ক্যাপিটেল কত লাগে?

সে বলল, তিনশ’ টাকা স্যার।

আমি বিস্মিত। মাত্র তিনশ’ টাকা ক্যাপিটেলে ব্যবসা? মানিব্যাগ খুলে তিনশ’র বদলে তাকে পাঁচশ টাকা দিয়ে দিলাম। সে খুশি হয়ে কাঁদতে কাঁদতেই বিদেয় হল। তখন আমার মনে হল–তিনশ’ দিলেই তো হত। দুশ টাকা বাড়তি কেন দিলাম? মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগল।

কেন আমাদের মধ্যে এই ক্ষুদ্রতা? আমরা কি এই ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে উঠতে পারি না? কেন পারি না?

এক দুপুরের কথা। দরজার কড়া নড়ছে। দরজা খুলে দেখি তিনজন ভিখিরি শিশু। সবচে’ বড়টির বয়স সাত-আটের বেশি না। তার কোলে দু’বছর বয়সী একজন। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে তিনজনের মুখই আনন্দে উদ্ভাসিত। তারা জানালো, ভাত লাগবে না। তাদের প্রচুর ভাত আছে। শুধু তরকারি হলেই তারা এখানে বসে খেয়ে নেবে। তরকারি না হলেও অসুবিধা নেই–ডাল দিলেই হবে। তাদের তরকারি দেয়া হল। ইতিমধ্যে আমাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়েছে। ওদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল এখনো তাদের খাওয়া হয়নি। ডাল এবং তরকারি নিয়ে বসে আছে। সমস্যাটা কি?

সমস্যা হল ভাত নিয়ে। এদের ভাত আছে ঠিকই–কিন্তু তারা খেতে পারছে না, কারণ ভাত বরফের মত শক্ত হয়ে আছে। এক দলা ভাত, ডীপ ফ্রীজে রাখায় জমে পাথর হয়ে আছে। দু-তিন ঘণ্টার আগে এই ভাত মুখে দেয়া যাবে না। বাচ্চারা বরফের দলায় কামড় বসানোর চেষ্টা করেছে–লাভ হয়নি। দাঁত বসানো যাচ্ছে না।

আমাদের বাসায় দেবার মত ভাত নেই। দিতে হলে নতুন করে ভাত চড়াতে হবে। আমি তাই করতে বললাম। হোক গরম ভাত, রান্না হোক–এরা এক বেলা অন্তত। আরাম করে খাক। ভাত রান্না করে দেয়া হল। কিন্তু এর মধ্যে এরা ডাল এবং তরকারি চেটেপুটে খেয়ে ফেলেছে। তাতে এদের অসুবিধা হল না–গরম ভাতই শুধু শুধু মুখ ভর্তি করে খাচ্ছে। দু’বছরের শিশুটিও মহানন্দে ভাত চিবুচ্ছে। এ কোন অদ্ভুত পৃথিবী!

আমরা বিশ্বাস করি–পৃথিবীর সব মানুষ একই বাব-মাসন্তান। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম, আদি মাতা বিবি হাওয়া। একই বাবা-মা’র সন্তান হয়েও আজ আমরা এমনভাবে আলাদা হয়ে পড়লাম কি করে? একদলের কাপড় প্যারিস থেকে ধুইয়ে আনতে হয়, আরেকদলের কোন কাপড়ই নেই।

কাপড় প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বলি–আমার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান নুহাশ-এর জন্ম হয়। শীতকালে। মাঘ মাসের দুর্দান্ত শীত। শীতের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থা নেয়া হল। দুটি রুম হিটার। নরম লেপ, মাথায় কান-ঢাকা টুপি, হাতে-পায়ে নরম উলের মোজা। সাধ্য কি শীত তাকে স্পর্শ করে? তবু সারাক্ষণ ভয়–এই বুঝি ঠাণ্ডা লেগে গেল। এই বুঝি বুকে কফ বসে গেল। আরো গরম কাপড় দরকার। খবর পাওয়া গেল, গুলশান মার্কেটে স্লীপিং ব্যাগ জাতীয় এক ধরনের কম্বল পাওয়া যায়। বাচ্চাকে ভেতরে ঢুকিয়ে বোতাম লাগিয়ে দিলে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত।

গেলাম ব্যাগ কিনতে। ফেরার পথে দেখি ঠিক আমার ছেলের বয়েসী একটি ছেলেকে তার মা মেঝেতে শুইয়ে রেখেছে। বাচ্চাটা আছে চটের বস্তার ভেতর। বস্তায় একটা ফুটো করা হয়েছে। ফুটোর ভেতর দিয়ে বাচ্চাটার ফর্সা মুখ বের হয়ে আছে–সে চোখ বড় বড় করে দেখছে চারপাশের অকরুণ পৃথিবী।

আমার প্রচণ্ড ইচ্ছা হল–নতুন কেনা স্লীপিং ব্যাগ জাতীয় কম্বলটি এই বাচ্চাটিকে দিয়ে দেই। তারই এটি বেশি দরকার। মা তার বাচ্চাটিকে এর ভেতর ভরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারবে। তারা থাকবে খোলা বারান্দায়–শীতের প্রচণ্ড হাওয়া এই ব্যাগ ভেদ করে বাচ্চাটির গায়ে পৌঁছতে পারবে না।

আমি নিজেকে সামলে নিলাম। নিজেকে বুঝালাম, এদের এই জিনিস দিয়ে কোন লাভ হবে না। ভিখিরী-মা সঙ্গে সঙ্গে অন্যের কাছে এটা বিক্রি করে দেবে। তাছাড়া বাচ্চাটির শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হওয়া দরকার–কারণ তার জন্যে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

নিতান্তই বাজে যুক্তি। নিজের অপরাধবোধ ঢাকার জন্যে তৈরি করা মিথ্যা যুক্তি। তারপরেও মনটা খারাপ হয়ে রইল। গরম কাপড়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা আমার বাচ্চাটির দিকে তাকালেই মনে হত, আরেকটি শিশু আছে যে দেখতে ঠিক তার মত, হয়ত জন্মও হয়েছে একই দিনে–সে খালি গায়ে বাস করছে। তার হতদরিদ্র মা তার শরীরের সবটুক উত্তাপ বাচ্চাটিকে দিতে চেষ্টা করছে। আজকের অতি আধুনিক, সুসভ্য পৃথিবীতে ঐ শিশুটির সম্বল শুধু মা’র বুকের সামান্য উত্তাপ।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments