Saturday, April 20, 2024
Homeথ্রিলার গল্পরহস্য গল্পমেডেল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

মেডেল – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কয়েক বছর পূর্বে এ-ঘটনা ঘটেছে, তাই এখন মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ব্যাপারটা আগাগোড়া মিথ্যে; আমারই কোনোপ্রকার শারীরিক অসুস্থতার দরুন হয়তো চোখের ভুল দেখে থাকব বা ওইরকম কিছু। কিন্তু আমার মন বলে, তা নয়; ঘটনাটি মিথ্যে ও অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেবার কোনো কারণ ঘটেনি। আমার তখনকারের অভিজ্ঞতাই সত্যি, এখন যা ভাবছি তা-ই মিথ্যে।

ঘটনাটি খুলে বলা দরকার।

প্রসঙ্গক্রমে গোড়াতেই এ-কথা বলে রাখি যে, গত দশ বৎসরের মধ্যে আমার শরীরে কোনো রোগবালাই নেই। আমার মন বা মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সুস্থ আছে এবং যে-সময়ের কথা বলছি, এখন থেকে বছর চারেক আগে, সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। আমার স্কুলমাস্টারের জীবনে অত্যাশ্চর্য বা অবিশ্বাস্য ধরনের কখনো কিছু দেখিনি। অন্য পাঁচজন স্কুলমাস্টারের মতোই অত্যন্ত সাধারণ ও একঘেয়ে রুটিন-বাঁধা কর্তব্যের মধ্যে দিয়েই দিন কাটিয়ে চলেছি আজ বহু বৎসর।

সে বছর বর্ষাকালে, গরমের ছুটির কিছু পরে একদিন ক্লাসে পড়াচ্ছি, এমন সময় একটি ছেলে আর একটি ছেলের সঙ্গে হাত কাড়াকাড়ি করে কী একটা কেড়ে বা ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করছে, আমার চোখে পড়ল। আমি ওদের দু-জনকে অমনোযোগিতার জন্যে ধমক দিতে, অন্য একটি ছেলে বলে উঠল— স্যার, কামিখ্যে সুধীরের মেডেল কেড়ে নিচ্ছে—

—কার মেডেল? কীসের মেডেল?

সুধীর নামে ছেলেটি দাঁড়িয়ে উঠে বললে— আমার মেডেল, স্যার!

অন্য ছেলেটির দিকে চেয়ে বললুম— ওর মেডেল তুমি নিচ্ছিলে, কামিখ্যে?

কামিখ্যে ওরফে কামাখ্যাচরণ মৌলিক নামে ছেলেটি বললে— নিচ্ছিলুম না স্যার, দেখতে চাইছিলুম, তা, ও দেবে না—

—ওর মেডেল ও যদি না-দেয়, তোমার কেড়ে নেবার কী অধিকার আছে? বোসো, ওরকম আর করবে না।

কথা শেষ করে সুধীরের দিকে চেয়ে, ক্লাসের ছেলেদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃভাব ও সখ্য থাকার ঔচিত্য সম্বন্ধে নাতিদীর্ঘ একটি বত্তৃতা দেবার পরে ঈষৎ কৌতূহলের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলুম— কই, কী মেডেল দেখি? কোথায় পেলে মেডেল?

ভেবেছিলুম আজকাল কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় যে সব ব্যাডমিন্টন খেলা, সাঁতারের বা দৌড়ের প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, তারই কোনো কিছুতে সুধীর হয়তো চতুর্থস্থান বা ওই ধরনের সাফল্য লাভ করে ছোট্ট এতটুকু একটা আধুলির মতো মেডেল পেয়ে থাকবে; এবং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক যে, সে সেটা ক্লাসে এনে পাঁচজনকে গর্বভরে দেখাতে চাইবে; এমনকী এই ছুতো অবলম্বন করে ক্লাসসুদ্ধ হেডমাস্টারের কাছে দলবদ্ধ হয়ে গিয়ে এক বেলার জন্যে ছুটিও চাইতে পারে। সুতরাং মেডেলটা যখন আমার হাতে এসে পৌঁছল, তখন সেটাকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই হাত পেতে নিলুম; কিন্তু মেডেলটার দিকে একবার চেয়ে দেখেই চেয়ারে সোজা হয়ে বসলুম। না, এ-তো পাড়ার ব্যাডমিন্টন ক্লাবের বাজে মেডেল নয়! মেডেলটা পুরোনো, বড়ো ও ভারি চমৎকার গড়ন।— কী জিনিস দেখি?

মেডেলের গায়ে কী লেখা রয়েছে, আধ-অন্ধকার ক্লাসরুমে ভালো পড়তে পারলুম না; ও-পিঠ উলটে দেখি— মহারানি ভিক্টোরিয়ার অল্পবয়সের মূর্তি খোদাই করা। পকেটে চশমা নেই, মনে হল অফিস ঘরের টেবিলে ফেলে এসেছি। ইতিমধ্যে অনেকগুলি ছেলে ভিড় করেছে আমার চেয়ারের চারপাশে; মেডেল দেখবার জন্যে। তাদের ধমক দিয়ে বললুম— যাও, বসোগে সব, ভিড় করো না এখানে।

একটি ছেলেকে বললুম— কী লেখা আছে মেডেলের গায়ে পড়ো তো?

ক্লাস ফোরের ছেলে— অতিকষ্টে ধীরে ধীরে পড়লে, ক্রাইমিয়া, সিবাস্টোপোল, ভিক্টোরিয়া রেজিনা।

—ও-পিঠে?

—সার্জেন্ট এস বি পার্কিনস, সিক্সথ ড্রাগন গার্ডস আঠারো-শো চুয়ান্ন সাল…

দস্তুরমতো অবাক হয়ে গেলুম। ক্রাইমিয়ার যুদ্ধের সময় সিবাস্টোপোলের রণক্ষেত্রে কোনো সাহসের কাজ করবার জন্যে এই মেডেল দেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডের সামরিক দপ্তর থেকে ড্রাগন গার্ডস সৈন্যদলের সার্জেন্ট পার্কিনসকে। এ তো সাধারণ জিনিস মোটেই নয়!

ক্রাইমিয়া…সিবাস্টোপোল?… চার্জ অব দি লাইট ব্রিগেড! কিন্তু কলকাতার নীলমণি দাস লেনের সুধীর সাহার কাছে সে মেডেল কোথা থেকে আসে?

—এদিকে এসো। এ মেডেল কোথায় পেয়েছ?

—ওটা আমার স্যার!

—তোমার তো বুঝলুম। পেলে কোথায়?

—আমার দাদু দিয়েছেন স্যার।

—তোমার দাদু কোথায় পেয়েছিলেন জানো?

—হ্যাঁ স্যার, জানি। আমার দাদুর বাবার কাছে এক সাহেব জমা রেখে গিয়েছিল।

—কীভাবে?

—আমাদের মদের দোকান ছিল কিনা, স্যার! মদ খেয়ে টাকা কম পড়লে ওটা বাঁধা রেখে গিয়েছিল, আর নিয়ে যায়নি; দাদুর মুখে শুনেছি।

হিসাব করে দেখলুম, ছিয়াশি বছর উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে সেই বছরটি থেকে, যে-বছরে সার্জেন্ট পার্কিনস (সে যেই হোক) এ মেডেল পায়। তখন তার বয়স যদি কুড়ি বছরও হয়ে থাকে, এখন তার বয়স হওয়া উচিত এক-শো ছয়। সুতরাং সে মরে ভূত হয়ে গেছে কোন কালে।

সেদিন ছিল শনিবার, সকাল সকাল স্কুল ছুটি হবে এবং অনেকদিন পরে সেদিন দেশে যাব পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিলুম। আমার এক গ্রামসম্পর্কে জ্যাঠামশাই ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, বেশ পড়াশুনো আছে, গ্রামেই থাকেন। ভাবলুম তাঁকে মেডেলটা দেখালে খুশি হবেন খুব। সুধীরের কাছ থেকে মেডেলটা চেয়ে নিলুম, সোমবারে ফেরত দেব বললুম। স্কুলের ছুটির পরে বাসা থেকে সুটকেস নিয়ে শিয়ালদা স্টেশনে এসে আড়াইটের গাড়ি ধরলুম। দেশের স্টেশনে যখন নামলুম, তখন বেলা সাড়ে পাঁচটা। দু-মাইল রাস্তা হেঁটে বাড়ি পৌঁছুতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যার আগেই হয়তো পৌঁছুতে পারা যেত; কিন্তু আমি খুব জোরে হাঁটিনি।

ভাদ্র মাসের শেষ, অথচ বৃষ্টি তত বেশি না হওয়ায় পথঘাট বেশ শুকনো খটখটে। পথের ধারের বর্ষা-শ্যামল গাছপালা চোখে বড়ো ভালো লাগছিল অনেক দিন কলকাতা-বাসের পরে; তাই জোরে পা না-চালিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছিলুম। এখানে প্রথমেই বলি, আমার বাড়িতে কেউ থাকে না। পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধা আমি গেলে রান্না করে নিয়ে আসতেন বরাবর। আমার এক বাল্যবন্ধু, বৃন্দাবন, অনেক বছর ধরে বিদেশে থাকে। পিসিমার মুখে শুনলুম, আজ দিন পনেরো হল বৃন্দাবন বাড়ি এসেছে। শুনে বড়ো আনন্দ হল। সন্ধ্যার পরেই ওর সঙ্গে দেখা করব ঠিক করে, চা খেয়ে নদীর ধারে বেড়াতে বার হলুম। যাবার সময় সুটকেসটা খুলে মেডেলটা পকেটে নিলুম, বৃন্দাবনকেও দেখাব।

নদীর ধারে গিয়ে দেখি— বর্ষার দরুন নদীর জল ভয়ানক বেড়েছে, নদীর জল কূল ছাপিয়ে দু-ধারের মাঠে পড়েছে। অনেকক্ষণ বসে রইলুম। সন্ধ্যার অন্ধকার নামল একটু একটু, বাদুড়ের দল বাসায় ফিরছে। কেউ কোনোদিকে নেই, এক জায়গায় বর্ষার তোড়ে নদীর পাড় ভেঙে গিয়েছে। অনেকটা উঁচু পাড়, নীচে খরস্রোতা বর্ষার নদী। জায়গাটা দিয়ে যেতে যেতে একবার কীরকম ভেঙেছে দেখবার ইচ্ছা হল। পাড়ের ধারে দাঁড়িয়ে নীচে জলের আবর্ত দেখছি, পাড়টা সেখানে অনেকখানি উঁচু, জল অনেক নীচে; হঠাৎ আমার মনে একটা অদ্ভুত ইচ্ছা জেগে উঠল। আমার লাফ দিয়ে পাড় থেকে জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছা করল। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ইচ্ছাটা যেন ক্রমে বেড়ে উঠল— লাফাই— দিই লাফ—! অথচ বর্ষার খরস্রোতা নদী, কুটো ফেললে দু-খানা হয়ে যায়! আমি সাঁতার জানি না, গভীর জল পাড়ের নীচেই। ইচ্ছাটা কিছুতেই যেন সামলাতে পারছিনে! এমনকী আমার মনে হল আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাকে লাফ দিতেই হবে, নইলে আমার জীবনের সব সুখ চলে যাবে।

তাড়াতাড়ি নদীর পাড় থেকে একরকম জোর করেই চলে এলুম। কারণ, যেন মনে হচ্ছিল এরপর আমার আর যাওয়ার ক্ষমতা থাকবে না, পা দুটো যেন ক্রমশ সিসের মতো ভারী হয়ে উঠছে। এরপর ওই বিপজ্জনক নদীর পাড় থেকে পা দুটোকে নাড়াবার ক্ষমতা চলে যাবে আমার।

নদীর ধার থেকে বৃন্দাবনের বাড়ি আসবার পথে ওসব ইচ্ছে আর কিছু নেই। আমি নিজের মনোভাবে নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেলুম— কী অদ্ভুত! এরকম হওয়ার মানে কী? ট্রেনে বসে অতিমাত্রায় ধূমপান করেছিলুম মনে পড়ল। এই ভাদ্র মাসের গরমে অত ধূমপান করা ঠিক হয়নি, তার ওপর বাড়ি এসে দু-তিন পেয়ালা চা খেয়েছি। এ-সবেই ওরকমটা হয়ে থাকবে।— নিশ্চয়ই তাই।

বৃন্দাবনের বাড়ি গেলুম। বৃন্দাবনকে অনেক দিন পর দেখে সত্যিই আনন্দ হল। দু-জনে অনেক রাত পর্যন্ত বসে অনেক গল্প করলুম। অনেক বছর ধরে জমানো অনেক সুখ-দুঃখের কাহিনি। বড়ো গরম আজ, কোথাও এতটুকু বাতাস নেই। ভাদ্রমাসের গুমোট গরম। বৃন্দাবন বললে— চল ভাই, ছাদে গিয়ে বসে গল্প করি, তবুও একটু হাওয়া পাওয়া যাবে। তুই আমাদের এখানে খেয়ে যাবি, মা বলে দিয়েছেন। তোদের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়েছে।

দু-জনে ছাদে উঠলুম। বাড়িটা দোতলা। ছাদের ওপর একখানা মাত্র ঘর আছে। আমি জানতুম বৃন্দাবনের কাকা ওই ঘরটায় থাকেন। দোতলায় ছাদে উঠে দেখলুম— বাড়ির পেছন দিকটায় বাঁশের ভারি বাঁধা। বললুম— বাড়িতে রাজমিস্ত্রি খাটছে বুঝি, বৃন্দাবন?

—হ্যাঁ ভাই, কাকার ঘরটা মেরামত হবে; উত্তর দিকের দেওয়ালটার গা থেকে নোনা-ধরা ইটগুলো বার করা হচ্ছে।

বৃন্দাবন দোতলার ঘরটার মধ্যে ঢুকল। আমার কিন্তু মনে কেমন একটা অস্থির ভাব। খানিকক্ষণ ঘরের মধ্যে গল্প করে আমি একটু জল খেতে চাইলুম। বৃন্দাবন জল আনতে নীচে নেমে গেল, আমি ছাদে পায়চারি করতে লাগলুম। ছাদে কেউ নেই, অন্ধকার ছাদটা। যেদিকটায় রাজমিস্ত্রিরা ভারা-বেঁধে কাজ করছে, পায়চারি করতে করতে সেখানটাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, হঠাৎ আমার মনে হল— ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়িনে কেন?

বেশ হবে!— লাফ দেবো? প্রায় দুর্দমনীয় ইচ্ছা হল লাফ দেবার। লাফ দেওয়াই ভালো!— লাফ দিতেই হবে! দিই লাফ?— এমন সময় বৃন্দাবন ছাদের ওপর এসে বলল— আয় ঘরের মধ্যে, মা চা পাঠিয়ে দিচ্ছেন; ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?

আরও প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলবার পরে নীচে থেকে চা ও খাবার এসে পৌঁছুল। আমরা দুই বন্ধুতে অনেক রাত পর্যন্ত গল্পগুজব করলুম। তারপর বৃন্দাবন খাওয়ার কতদূর জোগাড় হল দেখতে নীচে চলে গেল।

ঘরের মধ্যে বড়ো গরম, আমি বাইরের ছাদে খোলা হাওয়ায় আবার বেড়াতে লাগলুম। রাজমিস্ত্রিদের ভারার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আমার মনে হল— লাফ এবার দিতেই হবে! কেউ নেই ছাদে। কেউ বাধা দিতে আসবে না— এই উপযুক্ত অবসর! সঙ্গে সঙ্গে আমার মনের গভীর তলায় কে যেন বলছে— লাফ দিও না, মূর্খ! লাফ দিও না, পড়ে চূর্ণ হয়ে যাবে!…আমার মাথার মধ্যে কেমন ঝিম-ঝিম করছে।

কতক্ষণ পরে জানিনে, এবং কীসে কী হল তাও জানিনে— হঠাৎ বৃন্দাবনের চিৎকারে আমার চমক ভাঙল। দেখি, বৃন্দাবন আমাকে হাত ধরে টেনে তুলছে।

—এ কী সর্বনাশ! তুই লাফ দিয়ে পড়লি দেখলুম যেন! ভাগ্যিস বাঁশে পা বেঁধে গিয়েছে তাই রক্ষে, কী হল তোর?

আমার মাথা যেন কেমন ঘুরছিল, গা ঝিম-ঝিম করছিল। বৃন্দাবনকে বললুম— আমি ভাই কিছুই জানিনে তো!

বৃন্দাবন ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আমায় শুইয়ে দিলে। সকলে বললে ট্রেনে আসার দরুন আর গরমে শরীর কীরকম খারাপ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলুম। আমি জানি মাথা ঘুরে আমি পড়ে যাইনি, লাফ আমি ইচ্ছে করেই দিয়েছিলুম… তবে ঠিক যে-সময়টাতে আমি লাফ দিয়েছি, সে সময়ের কথাটা আমি অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে করতে পারলুম না।

বিছানায় শুয়ে বেশ সুস্থ বোধ করলুম। পাশ ফিরতে হঠাৎ যেন কী একটা শক্ত জিনিস বুকের কাছে ঠেকল। পকেটে হাত দিয়ে দেখি— সুধীরের সেই মেডেলটা।

আশ্চর্য, এটার কথা এতক্ষণ একেবারেই ভুলেই গিয়েছিলুম। বৃন্দাবনকে সেটা দেখালুম। ওদের বাড়ির সকলে মেডেলটা হাতে করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলে।

রাত্তিরে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লুম। আমার বাড়িতে কেউ নেই বর্তমানে, একাই থাকি এক ঘরে। একটা জিনিস লক্ষ করছি…যখন বৃন্দাবনের বাড়ি থেকে বার হয়ে পথে পা দিয়েছি, তখন থেকেই কেমন এক ধরনের ভয় করছে আমার। বাড়িতে যখন ঢুকলুম, তখন ভয়টা যেন বাড়ল। একা ঘরে কতবার এর আগে শুয়েছি… এমন ভয় হয়নি মনে কোনোদিন। না, শরীরটা সত্যিই খারাপ। শরীর খারাপ থাকলে মনও দুর্বল হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লুম। আমার শিয়রের কাছে একটা বড়ো জানলা, জানলা দিয়ে বাড়ির পেছনের বন-বাগান চোখে পড়ে। বেশ জ্যোৎস্না উঠেছে, কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর জ্যোৎস্না। হাওয়া আসবে বলে জানলা খুলে রেখেছি। কতক্ষণ ঘুম হয়েছিল জানিনে, ঘণ্টা খানেকের বেশি হবে না; হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মনে হতে লাগল আমার শিয়রের দিকের জানলায় কে দাঁড়িয়ে! যেন মাথা তুলে সেদিকে চেয়ে দেখলেই তাকে দেখা যাবে। কথাটা মনে হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে ভীষণ ভয় হল। অথচ কীসের যে ভয় তাও জানিনে। এমন ভয় যে, কিছুতেই শিয়রের জানলার দিকে তাকাতে পারলুম না। চোখে না দেখলেও আমার বেশ মনে হল, জানলার গরাদেতে দুটো হাত রেখে কে দাঁড়িয়ে আছে, জ্বলন্ত চোখে সে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে— আমি ওদিকে চাইলেই দেখতে পাবো।

প্রাণপণে চোখ বুজে শুয়ে রইলুম, কিছুতেই চাইব না। ঘুমুবার চেষ্টা করলুম; কিন্তু ঘরের মধ্যে কোথাও কি ইঁদুর পচেছে? কীসের পচা গন্ধ? যে আয়োডিন, লিন্ট, মলম প্রভৃতির উগ্র গন্ধের সঙ্গে পচা ক্ষতের গন্ধ মেশানো? এতকাল বাড়িতে থাকা নেই, যার ওপর বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখার ভার, সে কিছুই দেখাশোনা করে না বোঝা গেল।

কে যেন আমার মনের ভেতর বলছে— চেয়ে দেখো, তোমার মাথার শিয়রের জানলার দিকে চেয়ে দেখো না!

ঘরের চারিধারে কীসের যেন একটা প্রভাব— কোনো অমঙ্গলজনক, হিংস্র, উগ্র, অশান্ত ধরনের ব্যাপার; ঠিক বলে বোঝানো যায় না। আমি যেন ভয়ানক বিপদগ্রস্ত! সে এমন বিপদ, যা আমাকে মরণের দোর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে; এমনকী সে দোরের চৌকাঠ পার করে অন্ধকার মৃত্যুপুরীর হিমশীতল নীরবতার মধ্যে ডুবিয়ে দিতেও পারে!

আমি চাইব না— কিছুতেই চাইব না শিয়রের জানলার দিকে!

কিন্তু যে-প্রভাবই হোক, আমার ঘরের মধ্যে, দেওয়ালের এ-পিঠে তার অধিকার নেই। বহুকাল ধরে পূর্বপুরুষেরা বাস্তু শালগ্রামের অর্চনা করেছেন এ ঘরে, এর মধ্যে কারও কিছু খাটবে না। আমার মনই আবার এ-কথাগুলি যেন বললে। অন্ধকার রাত্রে নির্জন ঘরে মন কত কথা কয়!

জানলার ধারে কী যেন শব্দ হল।

অদ্ভুত ধরনের শব্দটা। কে যেন জানলার গরাদের ওপর টোকা দিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে! একবার…দু-বার…তিনবার…ভয়ে আমার বুক ঢিপ-ঢিপ করতে লাগল। কাউকে ডাকব চিৎকার করে? একবার চেয়ে দেখব জানলার দিকে জিনিসটা কী? হঠাৎ আমার মনে পড়ল একটা ধাড়ি বেজি অনেক দিন থেকে বাইরের দেওয়ালে, কড়িকাঠের খোলে বাসা বেঁধে আছে। আজ বিকেলেও সেটাকে একবার দেখেছি। জানলার ওপরকার কাঠে সেটা পোকামাকড় বা জোনাকি ধরেছে— এ তারই শব্দ।

কথাটা মনে হতেই মনের মধ্যে সাহস আবার ফিরে এল। উঃ, ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেল যেন! শরীর অসুস্থ থাকলে কত সামান্য কারণ থেকে ভয় পায় মানুষ! পাশ ফিরে এবার ঘুমুবার চেষ্টা করলুম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু আমার এ ভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। এ ধারণা আমার মন থেকে কিছুতেই গেল না যে— আজ রাত্রে আমি একা নই, আরও কে এখানেই আছে! নিদ্রাহীন চোখে সে আমার ওপর খরদৃষ্টি দিয়ে পাহারা রেখেছে। আমায় সে নিরাপদে বিশ্রাম করতে দেবে না আজ।

বার বার ঘুম আসে, আবার তন্দ্রা ছুটে যায়, অমনি জেগে উঠি; কিন্তু চোখ চাইতে, বা বিছানার ওপর উঠে বসতে সাহস পায় না, আর সেই শব্দটা মাঝে মাঝে জানলার গরাদের ওপর হতে শুনি— খুব মৃদু করাঘাতের শব্দ যেন! যেন শব্দটা বলছে— চেয়ে দেখো, পেছন ফিরে জানলার দিকে চেয়ে দেখো—

ঘামে দেখি বিছানা ভেসে গিয়েছে, ভাদ্রের গুমোট গরম কিনা! দিনের আলো ফুটলে, লোকজনের শব্দ কানে যেতে রাত্রের ভয়টা মন থেকে কোথায় গেল মিলিয়ে। নিশ্চিন্ত মনে বেলা ন-টা পর্যন্ত ঘুম দিলুম। তারপর উঠে, চা খেয়ে, পাড়ায় বেড়াতে বার হওয়া গেল।

এইসময় একটা ঘটনা ঘটল— তখন আমি আর বিশেষ কোনো মূল্য দিইনি, কিন্তু পরে সব কথা মনে মনে আলোচনা করে দেখে সেটা ভারি আশ্চর্য বলে মনে হয়েছিল। ও-পাড়ার পথে আমার সেই জ্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে দেখা, তাঁকে দেখাবার জন্যে আমি মেডেলটা কাল রাত্রে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছিলাম; কিন্তু বৃন্দাবনদের বাড়িতে নিমন্ত্রণের জন্যে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি।

আমায় দেখে তিনি বললেন— এই যে সুরেন, ভালো আছো? কাল তুমি এসেছ দেখলুম, তখন অনেক রাত, তাই আর ডাকলুম না। বোধ হয় বৃন্দাবনের বাড়ি থেকে ফিরছিলে? আমি তখন ছাদে পায়চারি করছি। যে-গরম গিয়েছে বাবা কাল রাত্তিরে, তোমার সঙ্গে লোক রয়েছে দেখে আরও ডাকলুম না। ও লোকটি কে? খুব লম্বা বটে, যেন শিখ কী পাঞ্জাবির মতো লম্বা; তোমার বন্ধু বুঝি? বাঙালির মধ্যে এমন চেহারা— বেশ, বেশ!

আমি অবাক হয়ে জ্যাঠামশাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে বললুম— আমার সঙ্গে লম্বা লোক, কাল রাত্তিরে! সেকী জ্যাঠামশাই?

জ্যাঠামশাই আমার চেয়েও অবাক হয়ে বললেন— তোমার সঙ্গে লোক ছিল না বলছ? একা যাচ্ছিলে? আমার চোখের দৃষ্টি একেবারে কী এত খারাপ হয়ে যাবে বাবা—

আমি হেসে বললুম— তাই হবে জ্যাঠামশাই। চোখে কীরকম ঝাপসা দেখে থাকবেন। বয়েস হয়েছে তো? আমার সঙ্গে কেউ ছিল না, তা ছাড়া আপনাদের বাড়ির সামনের আমগাছটায় ছায়া, কীরকম আলো-আঁধার দেখেছেন চোখে— অমন ভুল হয়।

জ্যাঠামশাই যেন রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেলেন। বললেন— কী আশ্চর্য কাণ্ড! এতটা ভুল হবে চোখে? আমগাছের এদিকে যখন তুমি টর্চ জ্বাললে তখন দেখলুম তুমি আর তোমার পেছনে একজন লম্বা-মতো লোক, তারপর তুমি টর্চ নিবিয়ে আমগাছের ছায়ার মধ্যে ঢুকলে, তখনও জ্যোৎস্নার আলো আর আমগাছের ছায়ার অন্ধকারে আমি বেশ দেখতে পেলুম লোকটি তোমার পেছনে পেছনে যাচ্ছে— তোমার মাথার চেয়েও যেন এক হাত লম্বা— তোমার একেবারে ঠিক পেছনে, তবে খুব ভালো দেখতে পেলুম না— অত দূর থেকে আর আধো-অন্ধকারের মধ্যে স্পষ্ট কিছু দেখা গেল না তো? এমনকী একবার এ পর্যন্ত মনে হল তোমায় ডেকে জিজ্ঞাসা করি তোমার বন্ধুটি কে?— একেবারে এত ভুল হবে চোখের?

জ্যাঠামশাইকে পুনরায় বুঝিয়ে বললুম, আমার সঙ্গে কাল কেউ ছিল না। আমি একাই ছিলাম, সুতরাং তাঁর দৃষ্টিশক্তির গোলমাল ছাড়া এ-ব্যাপারের অন্য কোনো সিদ্ধান্ত করা চলে না।

সারাদিন বৃন্দাবনের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কাটানো গেল। গতকাল রাত্রের ভয়ের ব্যাপার দিনের আলোয় এত হাস্যকর বলে আমার নিজের কাছেই মনে হল যে, বৃন্দাবনকেও সে-কথাটা বলিনি।

রাত্রের ট্রেনে কলকাতায় ফিরব। বৃন্দাবনদের বাড়ি থেকে চা খেয়ে বাড়ি এসে সুটকেসটা নিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হয়েছি, তখনই সন্ধ্যার অন্ধকার বেশ নেমেছে। বাউরিপাড়ার বড়ো বাগানটার মধ্যে দিয়ে আসছি। বাগানটা পার হতে প্রায় পাঁচ-ছয় মিনিট লাগে, মস্ত বড়ো বাগান।

বাগানের ঠিক মাঝামাঝি এসে হঠাৎ পেছন ফিরে চাইলুম কী-ভেবে। সঙ্গেসঙ্গে আমার সারাদেহে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আচমকা ভয়ে আমার সর্বশরীর কাঠ হয়ে গেল!

কে ওটা ওখানে দাঁড়িয়ে?

রাস্তা থেকে একটু পাশে আগাছার জঙ্গলের মধ্যে আধ-অন্ধকার এক অদ্ভুত মূর্তি! খুব লম্বা, তার মাথায় ঘোড়ার বালামচির সেই এক লম্বা ধরনের টুপি, পাতলা লোহার চেন দিয়ে থুতনির সঙ্গে বাঁধা— ছবিতে গোরা সৈনিকদের মাথায় যে-ধরনের টুপি দেখা যায়! মূর্তিটা যেন নিশ্চল নিস্পন্দ অবস্থায় আমার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে। আমার কাছ থেকে মাত্র দশ গজ কী তারও কম দূরে। মরিয়ার মতো আর একটু এগিয়ে গেলুম। এই ভয়ানক কৌতূহল আমাকে চরিতার্থ করতেই হবে যেন! মূর্তি নড়ে না, যেন নিশ্চল পাথরের মূর্তি! কিন্তু বেশ স্পষ্ট দেখছি, সাত-আট গজ মাত্র দূরে তখন মূর্তিটা। আর ঘোড়ার বালামচির লম্বা টুপি ও ইস্পাতের চেনের স্ট্র্যাপ— স্পষ্ট দেখতে পেলুম।

আমার পা ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল, সারাদেহ কেমন অবশ হয়ে আসছে, মাথাটা হঠাৎ বড়ো হালকা হয়ে গিয়েছে। বোধ হয় আর আধ মিনিট এভাবে থাকলে মূর্ছিত হয়ে পড়ে যেতুম; কারণ সেই ভীষণ মূর্তিটার মুখোমুখি আমি দাঁড়িয়ে— আমার পা দুটো বেজায় ভারী হয়েছে— নড়বার উপায় নেই মূর্তির সামনে থেকে—

কিন্তু ঠিক সেইসময়ে বাউরিবাগানের পথে লণ্ঠন নিয়ে কারা ঢুকল। দু-তিন জন লোকের গলার শব্দ শুনে আমার সাহস ফিরে এল। আমিও ওদের ডাক দিলুম চিৎকার করে। ওরা ছুটে এল। আমায় ওখানে বনের মধ্যে দেখে খুব আশ্চর্য হয়ে বললে— ওখানে কী বাবু? কী হয়েছে?

তারপর লণ্ঠন তুলে ওরা আমার মুখ দেখে বললে— ও, আপনি? কী হয়েছে আপনার? মুখ একেবারে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে, ভয়-টয় পেলেন নাকি? বাউরিবাগান জায়গাটা ভালো না। সন্ধের পর এখানে অনেকে ভয় পায়।

ওদের লণ্ঠনটা যখন উঁচু করে তুলে ধরলে আমার মুখে, সেই আলোয় দেখলুম— সামনের মূর্তিটা তখনও সেখানে ঠিক সেইরকম দাঁড়িয়ে। একজন বললে— কী দেখছিলেন এখানে দাঁড়িয়ে বাবু— এই ষাঁড়া গাছটা?

আর একজন বললে— গাছটায় ডালপালা কেটে মাথায় ঝোপের মতো করে রেখেছে, যেন মানুষ বলে অন্ধকারে ভুল হয় বটে, চলে আসুন বাবু। আমিও দেখলাম ষাঁড়া গাছই বটে। মাথার দিকের পাতাগুলো ছেঁটে গাছটাকে দেখতে হয়েছে ঠিক হর্সগার্ডসদের ঘোড়ার বালামচির টুপি। লোকের চোখের কী ভুলই হয়! কাল আমি আবার জ্যাঠামশাইকে চশমা নিতে বলেছিলুম! ভেবে লজ্জা হল মনে মনে। তিনি বৃদ্ধ লোক, তাঁর চোখের ভুল তো হতেই পারে— আমারই যখন এই অবস্থা!

ওরা আমায় আলো ধরে স্টেশনে পৌঁছে দিলে।

পরের দিন সুধীরের মেডেলটা ফেরত দিলুম।

সুধীর বললে— আপনাকে একবার দাদু ডেকেছেন, আমার সঙ্গে ছুটির পর আমাদের বাড়ি আসুন। নিয়ে যেতে বলেছেন।

সুধীরের দাদু বললেন— যাক, আমার বড়ো ভয় হয়েছিল মাস্টারবাবু! সুধীরের কাছ থেকে মেডেলটা নিয়ে গিয়েছেন দেশে শুনলুম কিনা। আপনার দেশের ঠিকানা জানতুম না; তাহলে একটা তার করে দিতুম। ও-মেডেলটা আমার বাবাকে একজন গোরা সৈন্য দিয়ে যায়, আমি তখন জন্মাইনি। বাঁধা দিয়েছিল, আর উদ্ধার করতে পারেনি। বেজায় মাতাল আর গোঁয়ার ছিল লোকটা। ও-মেডেলের বিপদ হচ্ছে, আমাদের বংশের লোক ছাড়া অন্য কেউ নিলে তার বড়ো বিপদ ঘটে। আমার এক ভগ্নিপতি একবার কিছুতেই শুনলে না। অনেক কাল আগের কথা, বাড়ি নিয়ে গেল মেডেল দেখাতে; সেইদিনই সন্ধ্যার সময় ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল। মৃতদেহের পকেট থেকে মেডেল বেরুল।

আমি কলের পুতুলের মতো শুধু বললুম— ছাদ থেকে? পকেটে মেডেল পাওয়া গেল?

—হ্যাঁ মাস্টারবাবু, আমার নিজের ভগ্নিপতি, মিথ্যে কথা তো বলব না। আজ সাতাশ-আঠাশ বছর আগের কথা। ওটা আরও দু-একজন নিয়েছে, তক্ষুনি ফেরত দিয়ে গিয়েছে। বলে রাত্রে ভয় পায়, গা ছম-ছম করে। কে যেন পেছনে ফলো করছে বলে মনে হয়। ও বাইরের লোকের সহ্য হয় না। প্রাণ পর্যন্ত বিপন্ন হয়। তাই ভাবছিলুম একটা তার করে দেবো—

একটা কথা বলা দরকার। মাস খানেক পরে আমি আবার দেশে যাই। বাউরিবাগানে ঢুকে যেখানে সে-রাত্রে ভয় পেয়েছিলুম, সেদিকে চেয়ে দেখে সে ষাঁড়া গাছটা কোথাও আমার চোখে পড়ল না। যে-আমগাছটার ধারে ষাঁড়া গাছটা দেখেছিলাম, সেখানে দিনমানে বেশ ভালো করে দেখেছি; কোথাও সে ষাঁড়া গাছ নেই, বা গাছ কেটে দিলে যে গুঁড়িটা থাকবে, তারও কোনো চিহ্ন নেই। কস্মিনকালে সেখানে একটা বড়ো ষাঁড়া গাছ ছিল বলে মনেও হয় না জায়গাটা দেখে।

আশ্বিন ১৩৪৭, মায়ামুকুর শারদ সংকলন

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments