
সুদর্শনা ধার্মিক মেয়ে আশা। নিয়মিত নামাজ-কালাম আর ইসলামিক ভাবে জীবন-যাপন করে। এজন্য-ই ‘হৃদয়ের বাবা ‘আশার সাথে হৃদয়ের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ ‘হৃদয় ছিলো আধুনিক মন মানুষিকতার, নামাজ-কালাম কিছুই পড়ত না, সারাক্ষন বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডা দিতো, এবং বিভিন্ন নেশায় যুক্ত হয়ে পরেছিল।
হৃদয়ের বাবা তাকে অনেক বুঝিয়েছে “এসব ভালো না, এসব খারাপ, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবুও কোন কাজ হয়নি! হৃদয়ের কোন পরিবর্তন হয়নি।
একটা সময় হৃদয়ের বাবা ভাবলো “ধার্মিক মেয়ের সাথে তার বিয়ে দিবে। ‘ধার্মিক মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে ‘হয়তো হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটবে।
তারপর হৃদয়ের বাবা তার বন্ধুর মেয়ে ‘আশার সাথে বিয়ে ঠিক করল। এবং হৃদয় ও বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো, কারণ আশা দেখতে খুব সুন্দর ছিলো।
অত:পর তাদের বিয়ে হলো। কিন্তু আফসোস ‘বিয়ের এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও! ‘হৃদয়ের কোন পরিবর্তন হলো না।
তবে হৃদয় ‘আশাকে খুব ভালবাসতো, আশার সবকথা শুনতো। কিন্তু নামাজ-কালাম কিছুই ঠিকমতো আদায় করতো না, সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডায় মেতে থাকতো।
একদিন রাতে ‘হৃদয় শোফাতে বসে ‘আপন মনে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিল!। “হৃদয়ের এমন ‘সিগারেট খাওয়া দেখে! আশার চোখে অশ্রু চলে আসে।
আশার চোখে অশ্রু দেখে হৃদয় বলল..
– কি হলো!! তুমি কান্না করছো কেন?
আশা চোখের জল মুছে বলল!
– তোমার কাছে আমার একটা জিনিস চাওয়ার আছে?
– একটা চাওয়া কেন!! তোমার হাজারো চাওয়া পূর্ণ করতে রাজি আমি। বলো কি চাও তুমি?
– তোমার মূল্যবান সময়ের ‘একমাস’ চাই!
– মানে?
– মানে, ‘একমাস’ তুমি শুধু আমার কথা মতো চলবে। আমি যেটা বলবো ‘সেটাই করবে।
– হা হা, এটা আবার কোন চাওয়া নাকি?
– হ্যা! এটাই আমার চাওয়া। বলো তুমি রাজি?
– আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আমি রাজি, এখন একটু হাসো!!
হঠাৎ তখনি এশার আযার এর আওয়াজ শুনা গেলো। তারপর আশা ‘হৃদয়কে ওযু করতে বলল, এবং রুম থেকে ‘পান্জাবি নিয়ে এসে! হৃদয়কে পান্জাবিটা পড়তে বলল, আর “মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে আসতে বলল।
কিন্তু হৃদয় মসজিদে না গিয়ে! বন্ধুদের আড্ডায় চলে গেলো। তারপর জামায়াত শেষ হলে ‘বাসায় ফিরে এলো।
হৃদয় প্রতিদিন’ই এমন করতো.. “বাসা থেকে নামাজের উদ্দশ্যে বেড় হতো! তারপর মসজিদে না গিয়ে, রাস্তায় রাস্তায় আড্ডা দিতো। এবং ‘জামায়াত শেষ হলে ‘বাসায় ফিরতো, আর বলতো ‘নামাজ পড়েছি।
এভাবে ৭/৮দিন চলার পর! হৃদয় ভাবলো “এভাবে আর মিথ্যা বলা সম্ভব না। পাঞ্জাবি-টুপি গায়ে দিয়ে চোরের মতো রাস্তায় থাকাটা কষ্টকর, তারচেয়ে ভাল মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করি। ‘মাত্র একটা মাস-ইই তো! তারপর নামাজ না পড়লেও আশা কিছু বলবে না।।
এইকথা ভেবে হৃদয় মসজিদে প্রবেশ করলো। এবং নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরল। তারপর থেকে ‘হৃদয় প্রতিদিন ‘৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, এবং মনে মনে ভাবতো ‘একমাস পর আর নামাজ পড়তে হবে না।
হৃদয় এখন সিগারেট খায়না। কারণ আশা বারণ করেছে, একমাস সিগারেট না খেতে। যদিওবা “হৃদয় প্রথমে ভাবেছিল ‘একটা মাস-ই তো। ঘরের মধ্যে সিগারেট না খেয়ে বাহিরে খাব। আশা দেখবে না। কিন্তু সেটাও আর বেশি দিন হলো না। কয়েকদিন পর নিজেই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলো। আর নিয়মিত নামাজও পড়তে লাগলো।
আজ ৩০ দিন পূর্ণ হলো।
হৃদয় এখন আর ‘আগের মতো নেই। এই একমাসে অনেক পরিবর্তন সে। আগে টেনশন হলে ‘সিগারেট খেতো!! আর “এখন টেনশন হলে ‘নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। নয়তো তাসবীহ পাঠ করে করে ‘টেনশন দূর করে।
ফজরের আজান দেয়ার সাথে সাথে ঘুম ভেংগে যায় হৃদয়ের, এখন এটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তার। অভ্যাস বড়ই ভয়ানক জিনিস। একবার কোনকিছুর অভ্যাস হয়ে গেলে! সে অভ্যাস ত্যাগ করা বড়ই কঠিন।
অত:পর হৃদয় বিছানা থেকে উঠে, প্রতিদিনের মত মসজিদে চলে গেলো। আশা শুয়ে শুয়ে সব-ইই দেখছিল। হৃদয়ের এমন পরিবর্তন দেখে, “আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল।
হৃদয় নামাজ পড়ে এসে বললো।
– আশা! আজতো ৩০দিন হয়েছে, তোমার চাওয়া আমি পূরণ করছি। এখন আমার চাওয়া আছে তোমার কাছে!!
– কি চাওয়া?
– তুমি ‘বলেছিলে না! ‘একমাস তোমার কথা মতো চলতে! “আজ আমি সারাজীবন তোমার কথামতো চলতে চাই। আল্লাহ আমাকে যতদিন হায়াত দিয়েছে ততটা দিন-ই ‘আমি তোমার কথামতো চলতে চাই। আর এটাই আমার চাওয়া। তুমি আমার চাওয়া রাখবে?
হৃদয়ের এমন কথা শুনে ‘আশার চোখে অশ্রু চলে এলো। তবে এই অশ্রু- সেই অশ্রু না। এই অশ্রু- দু:খের অশ্রু না।
এই অশ্রু “মনের ইচ্ছা পূর্ণ হওয়া” অশ্রু।
এই অশ্রু সুখের অশ্রু।
পুনশ্চ:
“একটা সৎ, ভদ্র, উত্তম চরিত্র ও নামাজি বউ পাওয়া! একটা ছেলের জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত। একমাত্র ভাগ্যেবানদের নসিবেই জুটে এমন বউ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামিক জীবন-যাপন করার তৌফিক দান করুক, আমিন।