Thursday, April 25, 2024
Homeবাণী-কথাদাম্পত্য স্মৃতি - লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী

দাম্পত্য স্মৃতি – লক্ষ্মীদেবী চক্রবর্তী

dui banglar dampotto koloher shato kahini

হাতের নোয়াটা কাপড় দিয়ে বারবার ঘষছিল মাধুরী, খুব করুণভাবে তাকিয়েছিল নোয়াটির দিকে। “আর এইটুকু স্মৃতি না রাখলে কী আসে, যায়। যার জন্য পরা, সে তো মন থেকে বিস্মৃতি।“ মা বলে, “মানুষতো বেঁচে আছে, তুই দাম্পত্য স্মৃতি মুছে ফেলবি কেন? “লাভ কী মা।” মাধুরীর গলায় বেদনাজড়িত সুর। “লাভ আছে। তোর তো একটি পুত্র সন্তান আছে। তার পিতৃ পরিচয়ের জন্য তোর এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে হবে।” “সন্তানের দায়িত্ব কী সে পালন করছে। পিতামাতার উভয়ের দায়িত্ব, কর্তব্য সন্তানকে প্রতিপালন করা। তাকে বাঁচিয়ে রাখা, মানুষ করে তোলা। পিতামাতা উভয়েই ছোট্ট শিশুটিকে পৃথিবীতে এনেছে। পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে।”

মাধুরীর কতই বা বয়স জোর ত্রিশ। বছর তিনেক আগে স্বামীর ঘর থেকে শেষ বারের মতো চলে আসা। বিয়ের সানাইয়ের রাগিণী যে সুরে বাজলো। জীবনের রাগিণী সেই সুরে বাজলো না। কিসের অভাব ছিল মাধুরীর দেহে মনে। মাধুরী নামের সঙ্গে মাধুর্যের বিন্দুমাত্র ঘাটতি ছিল না। শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিত্তবান ঘরের মেয়ে। স্বামী রণধীর ও বিত্তবান ঘরের ছেলে।

বিয়ের যৌতুকপত্রে সবেমাত্র মাধুরী ঘর-সংসার সাজিয়েছিল। হাসি ঠাট্টায়, গল্প গুজবে, মাতিয়ে রাখতো রণধীর। আভিজাত্যের গরিমায় রণধীরের ভেতরে চেহারাটা তখন বোঝা যায়নি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো স্বামী রণধীর অপ্রকৃতিস্থ। অর্থাৎ পর নারীত্বে আসক্ত। যা, অভিজাত বংশের অলংকার অথবা গর্ব। “তবে, বিয়ে করেছিলে। কেন? এত রাতেই যদি বাড়ি ফিরবে। আমি তো স্বেচ্ছায় তোমাদের বাড়ি আসিনি। রীতিমতো কনে দেখে, পুত্রকে বিয়ে দিয়ে বধূমাতাকে বরণ করে গৃহে অধিকার দিয়েছে। আমি সেই অধিকারের থেকে বঞ্চিত হবে কেন?

“তুমি যখন খুশি অফিস থেকে বাড়ি ফিরবে। আর আমি সেই খুশিটা মেনে নেবো। তুমি ভাবলে কেমন করে? রুখে দাঁড়াল পিতামাতার আদরের একমাত্র কন্যা। মাধুরী।” “তুমি কী করতে চাও।” রণধীরের মুখে অনুচ্চারিত অস্ফুট, বেহাল, কথাবার্তা। “যা, করলে সংসারে শান্তি ফিরে আসে তাই করবে।” “কি অশান্তিতে তুমি এই সংসারে আছো।” “যে, মানুষটিকে নিয়ে আমার সংসার তাকে না পেলে তো অশাস্তি হবেই।” “অহ। বুঝেছি, সেই মানুষটি আমি।” জিভে জড়ানো কথা।

‘তুমি যে, পরনারীর প্রতি আসক্ত, মদ খাও সেই কথাগুলো বিয়ের আগে জানাওনি কেন?” “যদি জানতে তবে কী করতে। পুরুষরা পরনারীর প্রতি আসক্ত হবে না। মদ ছোঁবে না। তবে, এইগুলোর প্রতি আসক্ত কী তোমাদের মতো মাধুরীরা হবে আমার সঙ্গে থাকতে গেলে। এইভাবেই থাকতে হবে। আমি সুন্দরী বউর আঁচল ধরে থাকতে পারবো না। এবং সময়মতো বাড়িও ফিরতে পারবে না। অধিকরাতে বাড়ি ফেরা আমার বহুদিনের অভ্যাস। এই নিয়ে আমার বাড়িতে আমাকে কেউ কোনোদিন উপদেশ দিতে আসে না।

একবার মা আমাকে বলেছিল, “রণ’ এতরাতে বাড়ি ফিরিস এইটা কিন্তু ভালো। সংসারধর্ম করতে গেলে, বউতো এবং ব্যাপারটা মেনে নেবে না। স্বভাবটা একটু পরিবর্তন কর।” মাকে বলেছিলাম, “আমি তোমার দুগ্ধপোষ্য শিশু না। বালক থেকে, কিশোরে। কিশোর থেকে, যুবকে। যুবক থেকে পুরুষে। তুমি তোমার ভাবি বউমার চিন্তায়, আমাকে কখনো কোন উপদেশ দিতে আসবে না।” স্নেহলতা জলভরা চোখ নিয়ে ফিরে গেল। মায়ের কাছে ছেলে নাকি পুরুষ। তবুও মায়ের মন, ছেলেকে ঘর

সংসার করাতে হবে।

সব শুনে মাধুরী: ”তোমার অশালীন আচরণ আমি কিছুতেই মেনে নেব না। কেন তুমি আমার এত বড় সর্বনাশ করলে। যদি তুমি মেনে নিতে না পারো, তবে, যেখান থেকে এসেছে, সেখানে চলে যাও।” “কি, বললে,” মাধুরী শিকারহারা বাঘিনীর মতো রণধীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমাকে চলে যেতে বললে, “আমার গর্ভের আগত সন্তান। তার পিতৃ-পরিচয় কী হবে।” রণধীর অনেক কষ্টে মাধুরীর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, বাইয়ের নেশার ডাকে চলে গেল। মাধুরী কতক্ষণ এইভাবে পড়েছিল সে জানে না। তার, মনে হলো, কোথাও ভূমিকম্প হয়েছে, জীবন, সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়নি শুধু যার, যা নেশা। “আবার নতুন করে সব সাজাতে হবে।”

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments