Saturday, April 20, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পবুনোফল - রাসকিন বন্ড

বুনোফল – রাসকিন বন্ড

বুনোফল - রাসকিন বন্ড

দীর্ঘপথ হেঁটে ছেলেটিকে স্কুলে যেতে হয়। পাহাড়ের নিচ দিয়ে, পাইন বনের মধ্য দিয়ে, সবুজ ধানখেতের মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা। আরেকটু গেলেই শহর ও ছোট্ট একটি বাজার।

বাজার পার হলেই স্কুল। বাজারে ফলের দোকানগুলোতে কমলালেবু, পেয়ারা, কাঁঠাল, কলা এবং আপেল সাজানো থাকে।

ছেলেটি স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই কমলার দিকে তাকিয়ে থাকে। বনের উৎপাদিত কমলা দোকানে যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। গ্রীষ্মেও কাঁঠালের গন্ধ তার নাকে ভেসে আসে। সে কখনও কখনও আঙ্গুল দিয়ে কমলা স্পর্শ করে দেখত। ব্যস ওটুকুই। কারণ ওগুলো কেনার টাকা তার কাছে থাকে না।

ছেলেটির নাম বিজয়, মুসৌরির কাছে পাহাড়ি গ্রামে থাকে সে। তার বাবা-মা পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ করে।
সে প্রতিদিন সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খাবার খায়। আবার সন্ধ্যা সাতটায় স্কুল থেকে ফিরে দ্বিতীয়বার খাবার খায়। ক্লাসে প্রায়ই স্যার যখন সততা, সাহস এবং কর্তব্য নিয়ে কথা বলেন- তখন ওর খুব ক্ষুধা পায়। তবে সমস্যা হয় না। কারণ, স্কুলে যাওয়ার পথে বা বাড়ি ফেরার পথে সে প্রায়ই কিছু না কিছু বুনোফল পেত। তা খেয়েই ওর পেট ভরে যেত।

ছেলেটির নাম বিজয়, মুসৌরির কাছে পাহাড়ি গ্রামে থাকে সে। তার বাবা-মা পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ করে। তারা আলু, পেঁয়াজ, বার্লি, ভুট্টা চাষ করে। তবে সেগুলো নিজেদের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিজয়ের বাবা-মা পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু বই কেনা ছাড়া তাদের খুব বেশি খরচ হয়নি। কিন্তু স্কুলটি তাদের টিলা থেকে চার মাইল দূরে। আর এই দীর্ঘ পথ হাঁটতে গিয়ে বিজয়ের খুব ক্ষুধা লাগে।

প্রায় সারাবছরই পাহাড়ে বা বনের মধ্যে বুনোফল পাওয়া যায়। কাঁটাযুক্ত বিলবেরি, ঝোপের বেগুনি বেরি, সবুজ ঘাসের ওপর বুনো স্ট্রবেরি, ছোট টক চেরি ইত্যাদি ফল। বিজয়ের শক্ত দাঁত ও জিহ্বা এসব ফল খুব মজা করে খায়।

বিজয়ের খুব পছন্দ রডোডেনড্রন ফুল। ওর মা রডোডেনড্রন দিয়ে জ্যাম বানায়। কিন্তু বিজয় এর পাপড়ি মুখের মধ্যে নিয়ে চিবিয়ে মিষ্টি রস খায়। তবে নভেম্বরে কোনো বুনোফল পাওয়া যায় না। তখন পাহাড়ে যেসব ফল হয় সেগুলো তিতা লাগে, তা কেবল বানরেরা খেতে পারে।

তখন নভেম্বর মাস। বিজয় খুব ক্ষুধার্ত। সে বাজারের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সে যে ক্ষুধার্ত কাউকে বুঝতে দিল না। তাকে যথেষ্ট সুস্থ লাগছিল।

কিন্তু ছেলেটির সঙ্গে বিজয়ের আবার দেখা হয়ে গেল। সে একটি চকলেট চুষছে, আবার মুখের মধ্যে সেটি ঘুরাচ্ছে। বিজয়কে লোভ দেখাচ্ছিল।

বিজয় ফলের দোকান পার হলো। তখন ভাবছিল এতো ফল কারা খাবে আর যে ফলটি নষ্ট হয়ে গেছে সেটিরও বা কী হবে! সে মিষ্টির দোকান পার হলো। সেখানে গরম ভাজা জিলাপিগুলো গোল করে সাজানো। জিলাপি দেখে তো বিজয়ের মুখে পানি চলে এলো। কিন্তু সে চোখ বন্ধ করে মিষ্টির দোকান পার হলো। এবার কনফেকশনারির দোকান পার হচ্ছে। সেখানে কাচের বয়ামে চকলেট, পিপারমিন্ট আর টফি সাজানো। চকলেটগুলো রঙিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো।

একটি ছেলে মাত্র সেখান থেকে এক বাক্স চকলেট কিনল। তার মুখে একটি চকলেট ছিল। বিজয় তার দিকে তাকাল। ছেলেটি বিজয়ের দিকে তাকিয়ে হাসল এবং সরে গেল।

রাস্তায় তাদের আবার দেখা হলো। ছেলেটি আবারও হাসল। তাকে দেখে মনে হলো সে বিজয়কে একটি চকলেট উপহার দেবে। কিন্তু বিজয় লাজুকভাবে অন্যদিকে তাকাল। কারণ ও চায়নি সে যে ক্ষুধার্ত ছেলেটি বুঝতে পারুক।

কিন্তু ছেলেটির সঙ্গে বিজয়ের আবার দেখা হয়ে গেল। সে একটি চকলেট চুষছে, আবার মুখের মধ্যে সেটি ঘুরাচ্ছে। বিজয়কে লোভ দেখাচ্ছিল। সম্ভবত ছেলেটির চকলেটের বাক্স প্রায় খালি হয়ে গেছে।

শহর পার হয়ে পাহাড়ের পথ ধরেই বিজয় বাক্সটি খুলল। বাক্সে রঙিন কাগজে মোড়ানো চকলেটগুলো তার হাতের তালুতে জ্বলজ্বল করছে।

বিজয় সিদ্ধান্ত নিলো ছেলেটিকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। চকলেটের লোভ ভুলে ওকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। তখন বিজয় দেখল ছেলেটি তার বাক্স একটি বেঞ্চে রেখে গেছে। আর তার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।

বিজয় একবার ভাবল, বক্সটি খালি নাকি কিছু চকলেট আছে! কিন্তু খালি হলে তো বাতাসে উড়ে যেত! তাহলে নিশ্চয়ই ওর মধ্যে কিছু চকলেট আছে। বিজয় বাক্সটি হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করল। কারণ তার দেরি হয়ে যাচ্ছে এবং অন্ধকার নামার আগে বাড়িতে ফিরতে হবে।

শহর পার হয়ে পাহাড়ের পথ ধরেই বিজয় বাক্সটি খুলল। বাক্সে রঙিন কাগজে মোড়ানো চকলেটগুলো তার হাতের তালুতে জ্বলজ্বল করছে। সাবধানে সে একটি মোড়ক খুলল। কিন্তু, ভেতরে কোনো চকলেট নেই। সেখানে পাওয়া গেলো কেবল একটি গোল পাথর।

বিজয় সব মোড়কে পাথর খুঁজে পেল। তার চোখে বাজারে ছেলেটির হাসিমুখ ভেসে উঠল। একটি ছেলে মিষ্টি করে হাসছিল, কিন্তু বাক্সে মিষ্টির বদলে পাথর রেখে গেছে। বিজয়ের নিজের ওপর খুব রাগ হলো। সে পাথরগুলো পাহাড়ের নিচে ফেলে দিলো। তারপর বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরল।

তখন মাটিতে বরফের টুকরো পড়ছিল। ঘাসগুলো শুকিয়ে বাদামি হয়ে গেছে। বনের ঝোপঝাড়ে কোনো ফল ছিল না। কারণ নভেম্বরে কোনো বুনোফল পাওয়া যায় না। তাই বিজয়ের স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে কিছু খাওয়া হতো না।

অনুবাদ: রবিউল কমল

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments