রম্য গল্প: বাসর ঘরে ন্যাড়া বউ

রম্য গল্প: বাসর ঘরে ন্যাড়া বউ

বাসর রাতে বউয়ের ন্যাড়া মাথা দেখার সাথে সাথেই বাবু অজ্ঞান। বিয়ের রাতে বউয়ের মাথা যে ন্যাড়া থাকে সেটাই বা কে কবে শুনেছে? ডাক্তার নিয়ে এসে যখন বাবুর জ্ঞান ফিরানো হলো।

তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। এবাড়ি ওবাড়ি খবর যা রটানো দরকার তা রটে গেছে। আশেপাশে থাকে অনেক মানুষজন চলে এসেছে। খারাপ সংবাদ নাকি বাতাসের আগে পৌঁছায়। নানাজন নানারকম কথা বলছে বাবু আর বাবুর বউকে নিয়ে। বাবু আধুনিক ছেলে। পড়াশুনাও কম করেনি।

কিন্তু ছোটবেলা থেকে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাবার অভ্যাস আছে ওর। কিন্তু সবার মনে এক কথা। বাসর রাতে এমন কি ঘটেছে যার ফলে বাবু অজ্ঞান হয়ে গেলে। মুরুব্বীরাও এসে বাবুকে নানা রকম প্রশ্ন করছে। সবার মনে সে এক কৌতূহল। কি ঘটেছিল! বাবুই আস্তে আস্তে মুখ খুলল।

আমি যাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি তার মাথা ন্যাড়া। বাবুর কথা শুনে সবার মুখের উপরের আর নিচের চোয়ালের মধ্যে দু ইঞ্চি ফাঁক হয়ে গেলো। বাবুর মা সবার আগে বলে উঠলো। বলিস কি খোকা! আমি নিজে এই মেয়ের চুল দেখেছি। কি সুন্দর লম্বা চুল দেখেই না বলেছিলাম। এই মেয়ে অনেক ভাগ্যবতী। কি বলছিস এসব?

তাছাড়া তুইও তো আমার কাছে এই মেয়ের চুলের প্রশংসা করেছিল। এই ৬ দিনেই মাথার চুল নাই হয়ে গেলে? বাবু বলে উঠলো বিশ্বাস না হলে তোমরা নিজেরাই দেখো। কাউকে কিছু করতে হলো না। বাবুর বউ নিজ থেকেই সবার সামনে মাথার ঘোমটা ফেলে দিলো। সত্যিই নতুন বউয়ের মাথায় কোনো চুল নেই ।

কদিন আগে যে মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। সবাই এক মনে বউয়ের মাথার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা বুঝতে কারো আর বাকি রইলো না। বাড়িসুদ্ধ হইচই শুরু হয়ে গেছে। এ কেমন কথা বাপু। নতুন বউ বিয়ের আগে মাথা ন্যাড়া করেছে। তাও আবার ছেলে পক্ষকে না জানিয়ে। নানানজন নানাভাবে বাবুর বউকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কেন সে এমন কাজ করতে গেলো। কিন্তু বাবুর বউয়ের মুখে কোনো উত্তর নেই। সে নির্বাক হয়ে চোখের জল ফেলছে শুধু। বাবু বিছানা ছেড়ে উঠে বউয়ের হাত ধরে বাড়ির বাইরে চলে গেলো। সেই সাথে বলে গেলে ওদের দুজন কে একা থাকতে দিতে। বাড়ির পিছনে বড় আমগাছটার নিচে দুটি প্রাণী দাঁড়িয়ে। একজন নিশ্চুপ ভোরের আকাশ দেখছে।

আরেকজন মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর বাবু এগিয়ে গেলো বউয়ের দিকে। বউকে উদ্দেশ্য করে বলল “দেখো তুমি এখন আমার বিবাহিত স্ত্রী। এই বাড়ির বউ। কিন্তু তুমি যেটা করেছ সেটা কেউ কল্পনা করতে পারেনা।তুমি আজ আমাকে স্বামী না ভেবে বন্ধুর মতন সব খুলে বলতে পারো। কি এমন হয়েছিল যার জন্য তোমাকে মাথা ন্যাড়া করতে হলো।” স্বামীর কথা শুনে নিপা কিছুটা থেমে গেলো। চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে উঠলো তার মনের জমানো গোপন কথা।

গতবছর আমি এসএসসি পরীক্ষা খুব ভালো রেজাল্ট নিয়েই পাশ করেছিলাম। স্কুলের ম্যাডামকে কথা দিয়েছিলাম আমি একজন ডাক্তার হবো। সেই স্বপ্ন পূরণ করবার জন্য আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এর মাঝে হঠাৎ করে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন আপনার সাথে। আমি বাবা, মা বড় ভাইয়ের পা ধরে কেঁদেছি। বলেছি এখন আমি বিয়ে করতে চাই না। আমি একজন ডাক্তার হতে চাই। অথচ কেউ আমার কোনো কথা শুনল না। জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল।

তারা বলল বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকেও পড়াশুনা করা যায়। আমার প্রিয় বান্ধবীর বিয়ের সময় পাত্রপক্ষও এই একি কথা বলেছিল।অথচ বিয়ের পর আমার বান্ধবীকে একদিন কলেজ আসতে দেয়নি। বাড়ি থেকে পালাতে পারছিলাম না। কারণ আমি একজন মেয়ে। এই সমাজে মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারেনা। ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করবো। কিন্তু তাতে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না। আমি হেরে যাবো। চেষ্টা করতে লাগলাম কিভাবে বিয়ে ভাঙ্গা যায়। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষ মেশ আমার ক্লাসের ম্যাডাম বুদ্ধি দিলো মাথা ন্যাড়া করে ফেলতে। কারণ পাত্র পক্ষ যদি জানে বউয়ের মাথা ন্যাড়া তাহলে নাকি বিয়ে ভেঙ্গে যাবে। অনেক মেয়েই নাকি এইভাবে নিজের বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।

প্রথমে ভেবেছিলাম কাজটা করা ঠিক হবে না। কিন্তু আমার কাছে কোনো উপায় না থাকায় শেষমেশ মাথা ন্যাড়া করে ফেললেম। কিন্তু মা হঠাৎ করে দেখে ফেলায় বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। বাবা জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে এই ভয়ে মা তার মাথায় হাত রেখে আমাকে শপথ করায় যেন মাথা ন্যাড়া করার কথা কাউকে না জানাই। মায়ের শপথ আর বাবার ভয়ে কাউকে বলতে পারিনি আমার মনের কথা। শেষমেশ মাথা লুকিয়েই আমার বিয়ে হয়। বউয়ের কথা শুনে বাবু আশ্চর্য না হয়ে পারলো না।

আম গাছতলা থেকেই বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির দিকে রওনা হলো। শ্বশুরের হাতে বউকে তুলে দিয়ে বলল “আজ থেকে যতদিন না পর্যন্ত নিপা ডাক্তার হতে পেরেছে ততদিন সে আপনার এখানেই থাকবে। যতো খরচাপাতি লাগে সব আমি দিবো। আমি চাই আমার বউ একজন ডাক্তার হোক”। শ্বশুর বাড়ির সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবু সেখান থেকে চলে এলো।

আট বছর পরের ঘটনা……. আজ বাবু শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। নিপা কদিন আগে ডাক্তারি পাশ করেছে। লোকমুখে খবর পাঠিয়েছে। বাবু যেন ওকে এসে নিয়ে যায়। (হ্যাঁ, এটাই বাস্তব। আমাদের সমাজে এখনো মেয়েরা বাবা মায়ের ইচ্ছের কাছে নিজের ইচ্ছেকে কুরবানি দেয়। এখনো তারা বিয়ের ভয়ে যুবতী বয়সে মাথা ন্যাড়া করে। যাতে তাদের বিয়ে না হয়)

Facebook Comment

You May Also Like

About the Author: eBooks

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.