মজার গল্প: বাঁইচা থাইক গরুর ঠ্যাং

'বাঁইচা থাইক গরুর ঠ্যাং' মজার গল্প

একটি গ্রাম। তার অদূরে নদী। নদীতে যাওয়ার পথের একদিকে লোকালয়, আর একদিকে বন। মাঝখান দিয়ে একটি চওড়া রাস্তা নদীতে গিয়ে মিশেছে। রাস্তার যে দিকটায় বন সেদিকে কিছুটা খালি মাঠ পড়ে আছে। বালিতে সেখানটা ভরে আছে। ঝড় হলে ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। সেখানটায় রোদের তাপে বালি প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়। তাই ওই জায়গাটায় কোন গাছপালা জন্মায় না। তবে জায়গাটির ব্যাস বেশি বড়ো না। দুই-তিন একর বা তার সামান্য কিছু বেশি। তারপরেই দুআশলা উর্বর মাটি এবং বনের শুরু। কিছুটা বড়ো বড়ো গাছপালার পরই একটা ক্ষুদ্র জলাশয়।

তার অপর পার থেকেই ঘনজঙ্গলের শুরু। ওই জলাশয়ের ধারে একটা বড়ো গাছের খোড়লে থাকে একটা সাপ। আর জলাশয়ের কলমিলতা ও ঝোপঝাড়ের মাঝে থাকে একটা ব্যাঙ আর জলাশয়ের পানিতে একটা কাছিম। পারস্পরিক সুবিধা এবং কথাবার্তায় আনন্দে থাকার জন্য এই তিন প্রাণীর মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে। সাপ আর ব্যাঙের বন্ধুত্বও বাঁচার তাগিতে সম্ভবপর হয়েছে। জলাশয়টা চৈত্র মাসে প্রায় শুকিয়ে যায়। তখন ব্যাঙ আর কাছিমের খুব অসুবিধা হয়। আর খরা ও প্রখর রোদে চারদিকের ঘাস ও গাছপালা মরে যাওয়ায় তিন প্রাণীরই খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। কোনক্রমে তারা এই সময়টা কাটিয়ে দেয়। বর্ষা এলেই তিন প্রাণীরই আনন্দ।

তো, একবার বনে দাবানল লেগে গেল। চড়চড় করে মাটির ঘাস পুড়ে ছাই হয়ে আগুন ধেয়ে আসছে জলাশয়ের দিকে। বিপদ দেখে তিন বন্ধু বাঁচার বুদ্ধি করে।

সাপ বলে, আমার অসুবিধা নেই, গাছের ওপরের ডালে যেয়ে আশ্রয় নেব;
কাছিম বলেঃ আমি পানির নিচে যাব।

ব্যাঙ বলেঃ দেখি কী করা যায়! আমার জন্য তোমরা চিন্তা করো না। তোমরা বাঁচ।

ধীরে ধীরে শুরু হল আগুনের মহাতাণ্ডব। সবকিছু তাতে ভস্মীভূত। আগুন যখন নিভল তখন কুনি ব্যাঙ লাফাতে লাফাতে অগ্নিদগ্ধ বিরান প্রান্তরে এসে দেখে, কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকে।

পরে ছড়া কেটে বলেঃ
বেশি বুদ্ধি নলরবলর
গম্ভীরা বুদ্ধি চাইর ঠ্যাং চিত্তর
অল্প বুদ্ধির কুনি ব্যাঙ
বাঁইচা থাইক গরুর ঠ্যাং।

এই ছড়ার শানেনজুল হচ্ছেঃ- সাপ নিজেকে বেশি বুদ্ধির জীব মনে করে গাছের মগডালে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখার ঊর্ধ্বমুখী বিস্তারে তার জীবনলীলা সাঙ্গ হয়েছে। তার প্রাণহীন দেহ নরবলর (নড়বড়ে) অবস্থায় গাছের নিচের ডালে আটকে ঝুলছে। অন্যদিকে আগুনের প্রচণ্ড তাপে জলাশয়ের সামান্য পানি উত্তপ্ত হয়ে কাছিমেরও পঞ্চত্ব প্রাপ্তি (মৃত্যু) ঘটেছে। চার ঠ্যাং ওপরে তুলে ‘চিত্তর’ (চিৎ হয়ে) হয়ে পানিতে পড়ে আছে গম্ভীর বুদ্ধির কচ্ছপটি। আর অল্পবুদ্ধির কুনি ব্যাঙ লাফাতে লাফাতে বালির এলাকা ছাড়িয়ে মূল চওড়া রাস্তায় যেয়ে গোম্পদের জলাশয়ে অর্থাৎ গরুর পায়ের চাপে সৃষ্ট তার জন্য উপযোগী ক্ষুদ্র জলাশয়ে এসে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে গেছে। বালি ও বৃক্ষশূন্য স্থান বলে এদিকে আগুন আসেনি। তাই ‘গরুর ঠ্যাং’কে বেঁচে থাকার প্রার্থনা জানিয়ে সে ওই ছড়া কাটে।

Facebook Comment

You May Also Like

About the Author: eBooks

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.