
স্নেহার বয়স ৭ বছর। বয়স ৭ হলে হবে কী, তার কথাবার্তা ৭০ বছরের বুড়ির মতাে। তার বড় ভাই শান্তনু। শান্তনুর বয়স ৯ বছর। তাদেরকে তাদের দাদি গল্প শােনাচ্ছেন। আজ দাদি শােনাচ্ছেন ঘােড়ার ডিমের গল্প।
এক ছিল বােকা লােক। তাকে একটা চালাক লােক বলল, আমার বােঝাটা একটু বয়ে দাও না!
বােকা লােক বলল, দিতে পারি। কিন্তু তুমি আমাকে কী দেবে? চালাক লােক বলল, ঘােড়ার ডিম।
বােকা লােক কাজটা করে দিল। বলল, এবার দাও আমার ঘােড়ার ডিম।
চালাক লােক পড়ল মহামুশকিলে। কারণ, ঘােড়ার ডিম বলে তাে আসলে কিছু নেই। তাই চালাক লােক বলল, আরে ঘােড়ার ডিম
বলতে কিছু আছে নাকি।
বােকা লােক বলল, না, তুমি আমাকে বলেছ, আমাকে ঘােড়ার ডিম দেবে। এখন দাও। চালাক লােক যতই বলে, ঘােড়ার ডিম বলে কিছু নেই। বােকা লােক ততই ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে, না, ঘােড়ার ডিম দিতেই হবে। শেষে চালাক লােক করল কী, হাটে গিয়ে একটা চাল কুমড়া কিনে সেটাই দিল বােকা লােকের হাতে। বােকা লােক তাে চাল কুমড়াকে ঘােড়ার ডিম ভেবে খুশিতে আটকানা ।
সেই কুমড়া নিয়ে সে বাড়িতে গেল। কুমড়া রেখে দিল তার ভাঙা ঘরে।কুমড়াটা ছিল পচা। রাত্রিবেলা সেহ পচা কুমড়ার গন্ধ পেয়ে এলাে এক শেয়াল।
বােকা লােক দেখে, আরে ডিমের পাশে এটা কী? নিশ্চয়ই ঘােড়ার ডিম থেকে বের হয়েছে। সে এক লাফে ওঠে পড়ল শেয়ালের পিঠে। শেয়াল ছুটছে উর্ধশ্বাসে। তার পিঠে ওই বােকা লােকটা।
দাদির মুখে এই গল্প শুনে স্নেহা হাসতে হাসতে বাঁচে না।
আর শান্তনু, গম্ভীর। এখন ওই লােকটা শেয়ালের পিঠ থেকে নামবে কী করে?
এই গল্প শােনার পর থেকে শান্তনু আর স্নেহা একটু কিছু হলেই বলে, ঘােড়ার ডিম। যেমন, স্নেহা, ভাইয়া কী করছে? ঘােড়ার ডিম
স্নেহা বলল, ঘােড়ার ডিম করছে। বা শান্তনু তুমি কী নাশতা করবে?
এই চলছে।
কিন্তু হঠাৎ করে এক সকালে স্নেহা বলতে লাগল, কে বলল, ঘােড়ার ডিম মানে কিছু না। ঘােড়ার ডিম হয়। শুনে বাবা হাসেন। না মা হয় না।
মা বলেন, স্নেহা, পাগলামি করাে না। ঘােড়া তাে ডিম পাড়ে না। স্নেহা বলল, পাড়ে।
বাবা বললেন, মা এদিকে এসাে। তােমাকে বলি, কে ডিম পাড়ে। কে পাড়ে না। ডিম পাড়ে পাখি। বুঝলে?
স্নেহা বলল, বাবা মাছও তাে ডিম পাড়ে। মাছ তাে পাখি না। বাবা বললেন, আচ্ছা পাখি আর মাছ ডিম পাড়ে।
শান্তনু বলল, বাবা টিকটিকিও তাে ডিম পাড়ে।
বাবা বললেন, হ্যা। সরীসৃপ ডিম পড়ে। যেমন-সাপ। টিকটিকি। কিন্তু হাতি ঘােড়া গরু ছাগল এরা ডিম পাড়ে না।
স্নেহা বলল, কিন্তু বাবা ঘােড়া ডিম পাড়ে।
বাবা বললেন, কেমন করে।
কারণ কালকে তুমি আমাকে একটা গল্প বলেছিলে। মনে আছে!
আছে। বাবা বললেন।
সেই গল্পে রাজপুত্র কিসে চড়ে আসে।
পক্ষীরাজ ঘােড়া চড়ে আসে।
পক্ষীরাজ ঘােড়া আকাশে ওড়ে কী করে?
কী করে?
পাখা দিয়ে। যার পাখা আছে, সে কী পাখি? তাহলে পক্ষীরাজ ঘােড়া অবশ্যই ডিম পাড়ে।
বাবা বললেন, হু। তােমার কথা আমি মানলাম। কিন্তু পক্ষীরাজ ঘােড়া তাে কেবল রূপকথার গল্পে থাকে।
ঘােড়ার ডিমও কেবল রূপকথার গল্পেই থাকুক। ক্ষতি কী?
বাবা একদিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। স্নেহা শান্তনু এদিকে এসাে। তােমাদের জন্য ঘােড়ার ডিম এনেছি।
ওরা দৌড়ে গেল বাবার কাছে। বাবার হাতে একটা কাগজের প্যাকেট। কাগজের ওপরে লেখা, তিতাস কনফেকশনারী।
কাগজের প্যাকেটের ভেতর থেকে সাদা সাদা কতগুলাে জিনিস বেরুল। বাবা বললেন, কোন দুনিয়ায় আছি। ঘােড়ার ডিম নামেও খাবার বেরিয়েছে। নাও। খাও।
স্নেহা মুখেই তুলল না ঘােড়ার ডিম। কারণ কোনাে অপরিচিত খাবারই সে খায় না। শান্তনু খেল। ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি । তবে খেতে মিষ্টি লাগে।
স্নেহা বলল, ভাইয়া, কেমন লাগল খেতে।
শান্তনু বলল, ঘােড়ার ডিম লাগে।
রাতের বেলা একটা ঘটনা ঘটল। ঘুম ভেঙে গেলে স্নেহা দেখল, একটা পক্ষীরাজ ঘােড়া এসেছে তার ঘরের ভেতরে। উড়ে উড়ে এসে বলল, তােমার জন্য একটা পুরস্কার আছে।
স্নেহা বলল, কী পুরস্কার।
তােমাকে আমি আমার পিঠে তুলে চাঁদের দেশ থেকে ঘুরিয়ে আনব।
পক্ষীরাজ ঘােড়ায় চড়ে স্নেহা উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে। শেষে তারা নামল চাঁদের গায়ে। সেখানে তার দেখা হলাে অনেকগুলাে পরীর সাথে।
পরীরা তার সাথে নাচল, গাইল। শেষে তাকে দিল একটা আস্ত ঘােড়ার ডিম।
বলল, শক্ত করে ধরে রেখাে। যেন ফেলে দিও না। ফেলে দিলেই ভেঙে যাবে।
স্নেহা শক্ত করে ধরে রইল ডিমটা। সেটা হাতে নিয়েই সে উঠল পক্ষীরাজ ঘােড়ার পিঠে।
ফেরার পথে খুব বাতাস ওঠল। পক্ষীরাজ ঘােড়া টাল খেতে লাগল। ঘােড়া বলল, আমাকে শক্ত ধরে রাখাে। নইলে পড়ে যাবে।
স্নেহা বলল, আমি তােমাকে ধরে রাখতে পারছি না। কারণ আমার হাতে ঘােড়ার ডিম।
ডিম ছেড়ে দাও। আমাকে ধরাে।
স্নেহা তা করল না। সে হঠাৎ ছিটকে পড়ল পক্ষীরাজ ঘােড়ার পিঠ থেকে। মেঘ ফুড়ে সে নিচে নামতে লাগল ।
ধপাস করে পড়ল সে।
ঠিক তখনই তার ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখল সে বিছানায়। আর হাতে একটা ঘােড়ার ডিম।ডিমটা কোথেকে এলাে।