Friday, March 29, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পলিও টলস্টয়: একজন মানুষের কতটা জমি দরকার

লিও টলস্টয়: একজন মানুষের কতটা জমি দরকার

লিও টলস্টয়: একজন মানুষের কতটা জমি দরকার

লিও টলস্টয় রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক; এমনকি তাকে বিশ্ব সাহিত্যেরও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জ্ঞানার্জনে অসীম আগ্রহী; অদম্য অনুসন্ধিৎসু, অফুরন্ত জীবনীশক্তির অধিকারী ও কর্মোদ্যমী এই বিখ্যাত মানুষটির জন্ম ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার টুলা প্রদেশে। টলস্টয়ের পুরো নাম কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ টলস্টয়

তিনি মানুষের মধ্যে জীবনবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, নীতিবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। টলস্টয় তাঁর সময়ের বিশিষ্ট প্রগতিবাদী বৈপ্লবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ।

একজন মানুষের কতটা জমি দরকার

গল্পটি রাশিয়ার এক লোভী লোক পাহমকে নিয়ে। যার জমি কেনার দিকে ঝোঁক বেশি। কারো কাছে জমির কথা শুনলেই তার চোখ চকচক করে উঠে। কম দামে জমি বিক্রি হলে তিনি তা কিনতে মরিয়া হয়ে পড়েন। জমির জন্য ছুটে যান এখানে সেখানে। সস্তায় যেখানে জমি পাওয়া যায় সেখানেই গিয়ে পরিবারসহ হাজির হন পাহম। জীবনযাপন শুরু করেন।

এভাবে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা ঘুরতে ঘুরতে পাহম এমন এক এলাকার সন্ধান পান যেখানকার মানুষ খুবই সহজ-সরল। তাদের থেকে খুবই কম দামে জমি কেনা যায়। তারাও খুব আন্তরিক। পাহম তার পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। সেখানকার উর্বর জমি থেকে তার আয় দিন দিন বাড়তেই থাকে। কিন্তু জমি নিজের করে নেয়ার যে লোভ, তা থেকে তিনি বেড়িয়ে আসতেই পারেন না। ক্রমেই চক্রে পড়ে যান। আরও জমি লাগবে তার। জমির চিন্তা তাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না।

এমনই চিন্তার সময় তার কাছে খবর আসে অনেক দূরে উর্বর এক এলাকা রয়েছে। সেখানে জমির দাম এখানকার থেকেও অনেক অনেক সস্তা। ফসলও বেশ ভালোই ফলবে। এতে করে আরও আরামে থাকতে পারবে পাহম। জমি নিয়ে তার এত দুশ্চিন্তাও থাকবে না। অনেক চিন্তাভাবনা করে পাহম সিদ্ধান্ত নেন সেখানে পাড়ি জমাবেন। জমি তার দরকার।

সেখানে গিয়ে কথা হয় কর্তৃপক্ষের সাথে। জমির দাম একদিনে মাত্র এক হাজার রুবল। কিন্তু হিসাবটা বুঝে উঠতে পারে না পাহম। দিনের হিসাবে কী করে জমি বিক্রি করা হয় তা তার জানা নেই। তখন তিনি জানতে পারেন, একদিনে তিনি যতদূর জমি ঘুরে আসতে পারবেন ততদূর জমিই তার হবে! এর জন্য তাকে দিতে হবে মাত্র এক হাজার রুবল। তবে যেখান থেকে শুরু করেছে সেখানে এসেই শেষ করতে হবে যাত্রা। এবং তা সূর্য ডুবে যাবার আগেই।

আনন্দে আত্মহারা হয় পাহমের মন। এতদিনে তিনি মনের মত কম দামে জমি পাচ্ছেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না তিনি। প্রফুল্ল মন শুধু আনন্দ করতে চায়। জমি পাওয়ার সময়ের জন্য তার তর সইছে না। ভোরে তন্দ্রার মতো আসে। সেখানে স্বপ্নে তিনি নিজের মরদেহই নিজের চোখের সামনে দেখতে পান। ভড়কে যান পাহম। কিন্তু এসব ভেবে এখন কোনো লাভ নেই। সকাল শুরু হয়ে যাচ্ছে।

পাহম পাহাড়ে থাকা লোকদের কাছে গিয়ে হাজির হন। তার মাথায় থাকা টুপিতে এক হাজার রুবল রেখে যাত্রা শুরু করেন তিনি। যাত্রার শুরু থেকেই বেছে বেছে ফসলের জন্য উপযোগী জমিগুলোতে চিহ্ন দেন। মাঝে কিছুটা বিশ্রাম নিলেও তখন বসে পড়েন না তিনি। বসে পড়লে যদি ঘুম পায় তখন সব শেষ হয়ে যাবে। জমির লোভে এগোতেই থাকেন পাহম। একটার পর একটা জায়গা তার নিজের জন্য চাই।

কিন্তু হায়! সূর্য তো অস্ত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন তাকে ফিরতেই হবে। কিন্তু দৌড়েও টুপিটার কাছে ফিরতে পারবেন না বলে মনে হয় তার। তাই কষ্ট করে হলেও জোরে পা চালান পাহম। এতে তার প্রচুর কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না তার। অবশেষে সবার উৎসাহ পেয়ে শুরুর জায়গায় এসে পড়ে যান পাহম। সবাই বাহবা দিতে থাকে তাকে। অনেক জমি পেয়েছে সে। যা অনেকটাই কল্পনাতীত।

কিন্তু তার মুখ তুলে দেখা যায় মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মারা গেছে পাহম। এত জমি আর তার কাছে গেলো না। তার তখন জায়গা হলো পা থেকে মাথা পর্যন্ত মাটির জায়গা অর্থাৎ মাত্র ছয় ফুট।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments