কূটকচালির দেশে – মজার গল্প

'কূটকচালির দেশে' মজার গল্প

এক ছিল ঠেটার মুল্লুক। সে মুলুকের প্রতিটি লোক কথায় কথায় প্যাচ মারতো। সোজা কথাকে বাকা করে বুঝতো। এমন উল্টা-পাল্টা বুঝের মানুষ অন্য কোন দেশে দেখা যায় না।

সেই ঠেটার দেশে গেছে এক লোক। সে লোক কূটকচালির কিছুই বুঝতো না। তো, হাটতে হাঁটতে জলতেষ্টা পাওয়ায় সে ঠেটার দেশের এক লোককে জিজ্ঞেস করে : এই যে দাদা, বড় পিপাসা লেগেছে, জল পাই কোথায়?

সে লোক হো হো করে হেসে উঠে বলে : আরে, বড়ো অদ্ভুত কথা তো বললেন মশাই! আপনি কোন্ আজব দেশের লোক? আপনাদের পানির তেষ্টা পেলে কি আপনারা জলপাই খান?
আগন্তুক বলে, না না, আমি জলপাই চাইনি। এখানে জল মিলবে কিনা, তাই জিজ্ঞেস করছি।

ঠেটার দেশের লোক বলে : মিলালেই মিলে। আমি কবি না, তবু কত মিল দিতে পারি দেখুন :
জল কচু পাতায় করে টলমল;
ফল খেয়ে খেওনা কো জল;
সমুদ্রের জল—পাবে নাকো তল;
ঢেলে ধুয়ে ফেল মল,
কি আরো মিল চাই?

আগন্তুক ভাবে, আরে এতো মহা ভেজাইলা লোক! তাই মনে মনে, ‘ধ্যাততেরি’ বলে সামনে হাঁটতে থাকে। কিছু দূর যেতেই একটা মরা নদী সামনে পড়ে। একটা জায়গা দিয়ে পার হওয়া যাবে মনে করে এক নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেস করে : এখানে কি কাপড় বাঁচে?

মাঝি বলে : কাপড় ছিড়ে, পুড়ে, টিকে শুনেছি। কাপড় বাঁচে বা মরে এমন অদ্ভুত অদ্ভুতুড়ে কথা তো শুনিনি! আগন্তুক বলে : না, সেই বাঁচামরার কথা না। আমি জিগাই, নদী পার হতে কাপড় কি ভিজবে?

লোকটি বলে : বড়ো আজব কথা তো। জলে কাপড় ভিজে না এমন কথা কোনো পাগলেও বলবে না। এই নদীর জলে আপনার কাপড় কোন ছাতু, ফকির ফাকরা, মুসাফিরের নেংটি বা কাঁথা-বালিশ, ভদ্দর লোকের লেপ-তোষক এমনকি রাজাবাদশার জড়ির কাজ করা কুর্তাসহ সব দামী পোশাকও ভিজবে।

আগন্তুক : বিরক্ত হয়ে বলে ; মাপ চাই বাপু! এখানে কত জল তাই বল?
ঠেটার দেশের বেটা : ওজন দিয়ে তো দেখিনি। কি করে বলবো?

আগন্তুক মরিয়া হয়ে কাপড় কিছুটা ভিজিয়েই নদী পার হয়। তখন রাত হয়ে গেছে। রাত্রিটা কাটবার জন্য এক বুড়ির বাড়িতে ওঠে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা হয়। খাওয়াও পাওয়া যায়। কিন্তু মশারি না দেখে আগন্তুক বুড়িকে জিজ্ঞাসা করে : এখানে মশা কেমন লাগে?

বুড়ি বলে: তা বাপু, খাওন তো কম দিইনি, তবু মশা খাওনের শখ হল? একটা ধরে খেয়ে দেখ না কেমন লাগে।

সুকুমার রায়ের অবাক জলপান অবলম্বনে

Facebook Comment

You May Also Like

About the Author: eBooks

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.