অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় | Atin Bandyopadhyay Biography

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ই নভেম্বর (২২শে কার্তিক ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ) বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার আড়াই হাজার থানার রাইনাদি গ্রামে। তার পিতা অভিমন্যু বন্দ্যোপাধ্যায় মুড়াগাছা জমিদারের অধীনে কাজ করতেন। মাতার নাম লাবণ্যপ্রভা দেবী। তার শৈশব কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়িতে যৌথ পরিবারে। স্কুলের পড়াশোনা সোনারগাঁও এর পানাম স্কুলে। কিন্তু দেশভাগের পর ছিন্নমূল হয়ে তারা চলে আসেন ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের বানজেটিয়া গ্রামে গড়ে ওঠা মণীন্দ্র কলোনিতে পিতার বাড়িতে কিছুকাল থিতু হয়ে থাকেন। এখান থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। তারপর যাযাবরের ন্যায় কেটেছে তার যৌবন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.কম.পাশ করেন ও পরে বি.টি. পাশ করেন। বি.টি.পড়ার সময়ই আলাপ হয় সহপাঠী ‘মমতা’র সাথে। পরে তাকে বিবাহ করেন।

এরপর কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়লেন। কখনো নাবিকরূপে সারা পৃথিবী পর্যটন, আবার কখনো বা ট্রাক-ক্লিনারের কাজে লেগে পড়া। পরে এক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। অল্প কিছু দিন মুর্শিদাবাদ জেলার চৌরীগাছা স্টেশন নিকটস্থ সাটুই সিনিয়ার বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। তিন-চার বৎসর সাটুইয়ে থাকার পর ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন কলকাতায়। কখনো হলেন কারখানার ম্যানেজার, কখনো বা প্রকাশনা সংস্থার উপদেষ্টা। পরে অমিতাভ চৌধুরীর আহ্বানে যোগ দেন কলকাতার ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজে এবং সেখান থেকেই কর্মে অবসর নেন।

বিভিন্ন পেশার মধ্যে থেকেও লেখালেখি করে গেছেন তিনি। তবে কলেজে পড়ার সময় থেকেই তার সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মে যায়। আর পেশার তাগিদে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তাই স্থান পেয়েছে তার সাহিত্যকর্মে। তার প্রথম গল্প ওয়েলসের বন্দর শহর নিয়ে লেখা ‘কার্ডিফের রাজপথ’ প্রকাশিত হয় বহরমপুরের “অবসর” পত্রিকায়। তার এর পরের গল্প ছিল ‘বাদশা মিঞা’। বহরমপুরের কলেজের বন্ধুদের আগ্রহে’উল্টোরথ’পত্রিকায় উপন্যাস প্রতিযোগিতায় জাহাজের জীবন নিয়ে প্রথম উপন্যাস “সমুদ্র মানুষ” লিখেই ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘মানিক-স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি। এরপর তিনি তার অর্থসঙ্কট মেটাতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে লিখে গেছেন বহু উপন্যাস। ছোট-কিশোর ও বড়দের সবার জন্যই তিনি লিখেছেন। তবে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাসটি হল ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’। এটি মূলতঃ চারটি সিরিজে বিন্যস্ত। প্রথম পর্ব ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’,দ্বিতীয় পর্ব ‘মানুষের ঘরবাড়ি’,তৃতীয় পর্ব ‘অলৌকিক জলযান’ এবং চতুর্থ পর্ব হল ‘ঈশ্বরের বাগান’। দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে ছিন্নমূল মানুষের জীবন,তাদের সংগ্রামী বিষয় এবং পটভূমিসহ জীবনের রোমাঞ্চকর অভিযানের লৌকিক অলৌকিক উপলব্ধি সুন্দরভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। তার এই রচনা কেবল বাংলা সাহিত্যকে নয়,ভারতীয় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারতের ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে ক্লাসিক পর্যায়ে বারোটি মূল ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে গ্রাম বাংলার জীবনও অনেক বেশি করে ধরা দিয়েছে। তাই তার মধ্যে অনেকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকার খুঁজে পান।

Facebook Comment

You May Also Like

About the Author: eBooks

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.