Friday, April 19, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পএ সার্ভিস অব লাভ - ও. হেনরী

এ সার্ভিস অব লাভ – ও. হেনরী

এ সার্ভিস অব লাভ - ও. হেনরী

কেউ যখন কারো শৈল্পিকতাকে ভালোবাসে, তখন (তার জন্যে) কোন কর্তব্যসাধনকেই তার কঠিন মনে হয় না।

এটাই হল আমাদের আজকের গল্পের মূল বিষয়। এখান থেকেই আমাদের আজকের গল্পের একটা উপসংহার টানা হবে। আবার একই সাথে এটাও দেখানো হবে যে আমাদের গল্পের মূল সূত্রটি ভুল। এটা হবে তর্ক শাস্ত্রে এক নতুন বিষয় এবং গল্প বলার ক্ষেত্রে হবে এক নতুন কৌশল যা চীনের মহা প্রাচীর থেকেও প্রাচীন।

চিত্রকলার অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জো ল্যারাবি (Joe Larrabee) জন্মেছিল পশ্চিমাঞ্চলের এক ওক-কাঠের বাড়িতে। ছয় বছর বয়সে একটি ছবি একেছিল সে, ছবিটার বিষয় ছিল শহরের একজন গণ্যমান্য লোক হনহনিয়ে চলেছে জলের পাম্পের পাশ দিয়ে। এক ওষুধের দোকানদার জানালার শিশি-বোতলের পাশে ছবিখানা বাঁধাই করে ঝুলিয়ে রেখেছিল। একুশ বছর বয়সে রঙচঙে নেকটাই পরে আর বুকপকেটে গোটাকয় টাকা সম্বল করে নিউইয়র্কের পথে পা বাড়িয়েছিল সে।

দক্ষিণের পাইন-ঘেরা গাঁয়ের উৎসব-অনুষ্ঠানে ডেলিয়া ক্যারুথারস (Delia Caruthers) পিয়ানোতে (six octaves) এত বেশি নাম করেছিল যে তার আত্মীয়-স্বজনরা বেশকিছু মোটা পয়সা দিয়ে তাকে উত্তরে পাঠিয়ে দিল পোক্ত হয়ে আসার জন্যে।

চারুকলা ও সঙ্গীতের ছাত্রছাত্রীরা একদিন এক শিল্পকর্মশালাতে (atelier) আলো আধারী ও রঙের ব্যবহার, ওয়াগনার, সঙ্গীত, রেক্টার চিত্র, ছবি, ওয়ালদেন্তেফেল, দেয়ালের কাগজ, চফিন আর উলং (chiaroscuro, Wagner, music, Rembrandt’s works, pictures, Waldteufel, wall paper, Chopin and Oolong) নিয়ে বারোয়ারি আলোচনা করছিল।

এখানেই প্রথম দেখা জো আর ডেলিয়ার। খুব তাড়াতাড়িই পরস্পরের তারা গুণমুগ্ধ হয়ে উঠে ও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। কারণ কেউ যখন কারো শৈল্পিকতাকে ভালোবাসে, তখন (তার জন্যে) কোন কর্তব্যসাধনকেই তার কঠিন মনে হয় না। শহরের একান্তে নিরিবিলি এক ফ্ল্যাটে শুরু হয়েছিল জনাব ও জনাবা ল্যারাবির সংসারযাত্রা। সুখি হয়েছিল তারা, কারণ শিল্পচর্চার পাশাপাশি পরস্পরকে তারা পেয়েছিল। ফ্ল্যাটে যারা থেকেছেন তারা নিশ্চয়ই আমার কথায় সায় দেবেন যে এদের চাইতে সুখি আর কেউ হতে পারে না। ঘরে যদি সুখ থাকে তাহলে ফ্ল্যাটটা একটু ঘিঞ্জি হলেও এমন আর কী এসে যায়? কাপড় রাখার আলমারিটাকে ধরে নেয়া যায় বিলিয়ার্ড টেবিল বলে, তাকটাকে ভাবা যায় নৌকো বাইবার দাড় হিশেবে আর লেখার ডেস্কটাকে ধরা যায় শয়নকক্ষ হিসেবে (the escritoire to a spare bedchamber), হাত ধোয়ার বেসিনটাকে ধরা যায় একটা উপরনিচ পিয়ানো। চার দেয়ালটাকেই তোমার কাছে পৃথিবী মনে হবে। দরজাটিকে মনে হবে গোল্ডেন গেটের মত, হ্যাট রাখবে তুমি হ্যাটেরাস উপদ্বীপে (নর্থ ক্যারোলিনায় অবস্থিত) আর ক্যাপ রাখবে কেপ হর্ণে (দক্ষিন চিলিতে অবস্থিত অন্তরীপ) আর বেরিয়ে যাবে ল্যাব্রাডর (কানাডার একটি রাজ্য) দিয়ে।

বিখ্যাত শিক্ষকের (Magister) কাছে ছবি আঁকা শিখছিল জো। নামটা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন আপনি। বেতন তার যেমন উচু, পড়ার চাপটা তেমনি নিচু। ডেলিয়ার শিক্ষক ছিলেন রোজেনস্টক (Rosenstock)। পিয়ানোর চাবিগুলোকে তার চাইতে বেশি বিরক্ত আর কেউ করে নি-এ-কথাও আশা করি আপনার জানা।

যে কয়দিন টাকা ছিল পকেটে, বেশ সুখেই কেটেছিল তাদের। যেমন আর দশজনের কাটে তেমনি—কিন্তু তাই বলে ঠাট্টা করছি না। তাদের লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার, দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ। শিগগিরই জো এমন সব ছবি আঁকবে যা কেনার জন্যে বিরল-কেশ আর মোটা পকেটওয়ালা বুড়ো ভদ্রলোকেরা বালির বস্তার মতো থপথপ করে নাজিল হবে তার স্টুডিওতে। ডেলিয়া সঙ্গীত-শাস্ত্রের সাথে পরিচিত আর সঙ্গীতের প্রতি বিরক্ত হতে থাকল যাতে বেশি দামের আসনগুলো খালি দেখলে সহজেই গলা ব্যথার ভান করে রেস্তোরায় বসে বাগদা চিংড়ি গলাধঃকরণে বাধা না পড়ে।

আমার মতে এর চাইতেও রসালো ব্যাপার ছিল ছোট্ট ফ্ল্যাটটাতে ওদের দাম্পত্য-জীবন—দিনের কাজের শেষে ঘন হয়ে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাকপটু (voluble) আলাপ, সুস্বাদু নৈশভোজ আর ধূমায়িত প্রাতরাশে আনন্দময়; পরস্পরকে ঘিরে ভবিষ্যতের স্বপ্নের জাল বোনা আর মাফ করবেন আমার রসজ্ঞানহীনতা—রাত এগারোটায় পুরুষ্ট জলপাই আর পনিরের স্যান্ডউইচ।

কিন্তু শিল্পের ঘোড়া চাবুক খেয়ে থেমে গেলো দিন কয়েকের মধ্যেই। চাবকাবার লোক না থাকলেও এমনটি মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। চাষা-ভুষো লোকেরা বলে থাকে, যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, আসবার নামটি নেই। মি. ম্যাজিস্টার আর হের রোজেনস্টকের বেতনের টাকায় টান পড়ল একসময়। ভালোবাসার জন্যে অদেয় কিছু নেই। সুতরাং ডেলিয়া বলল, শূন্যায়মান থালা পূর্ণ রাখতে গান-বাজনা শেখা ছেড়ে দেবে সে।

দু-তিন দিন ছাত্রী খুঁজে বেড়াবার পর এক সন্ধেয় আহ্লাদে আটখানা হয়ে ঘরে ফিরে এল সে।

‘জো, জো, শোন প্রিয়তম। ছাত্রী পেয়েছি একটা! ওহ! কী চমৎকার লোক ওরা!’ জেনারেল……. জেনারেল এ. বি. পিঙ্কনির (A. B. Pinkney) মেয়ে-একাত্তর নম্বর রাস্তায় থাকে। কী সুন্দর বাড়ি, জো—তুমি যদি দেখতে! তুমি হয়ত বলবে বাইজান্টাইন (Byzantine) ধাচের। সামনের দরোজাটা তোমার দেখা উচিত। আর ভেতর! এমন বাড়ি আর দেখি নি, জো!

‘আমার ছাত্রী হল তাঁর মেয়ে ক্লিমেন্টিনা (Clementina)। এর ভেতর ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। রোগী মেয়ে সাদাসিধে পোশাকে মোড়া, আর কী সুন্দর মিষ্টি ব্যবহার! মাত্র আঠার বছর বয়েস। সপ্তাহে তিন দিন করে গান শেখাতে হবে ওকে, আর দেখ—রোজ পাঁচ ডলার করে। একটুও খারাপ লাগছে না আমার। এমনি আরো গোটা দু-তিন ছাত্রী পেলে হের রোজেনস্টকের কাছে আবার যাব। ও কী! কপাল কুঁচকালে কেন, প্রিয়? এসো আজ জাকজমক করে খাওয়া যাক। কাঁটা-চামচ দিয়ে ভাজা মটরের থালাটায় চড়াও হয়ে জো বললে, ‘তোমার তো হল, কিন্তু আমার? তুমি কি ভাবছ তোমাকে চাকরি করতে দিয়ে শিল্পের উচ্চাকাশে লাটসায়েবের মতো পায়চারি করব আমি? বেনভেনুতো সিলিনির (Benvenuto Cellini) হাড়ের কসম, ও আমি পারব না। খবরের কাগজ বিক্রি বা রাস্তায় পাথর বিছিয়েও কি দু-এক ডলার রোজগার করতে পারব না আমি?’ তার গলা জড়িয়ে ধরল ডেলিয়া।

‘জো, প্রিয় আমার! বোকামি কর না। তোমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেই হবে। গান-বাজনা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ তো কিছু করছি না আর। শেখাতে শেখাতে শিখব আমি। আর সপ্তাহে ১৫ ডলারে রোজাগার হলে ভালোই কাটবে আমাদের। তুমি কিন্তু মি. ম্যাজিস্টারকে ছাড়তে পারবে না।’

তরকারির বাটির দিকে হাত বাড়িয়ে জো বলল, বেশ, কিন্তু তোমার ছাত্রী ঠেঙিয়ে বেড়ানোটাও আমার কিন্তু ভালো লাগবে না। এটা শিল্প নয়। তবু লক্ষ্মী মেয়ে তুমি।’

‘শিল্পকে কেউ ভালোবাসলে কোনো ত্যাগ স্বীকারই তার সাধ্যাতীত নয়,’ ডেলিয়া বলল।

‘পার্কে বসে সেদিন যে ছবিটা এঁকেছিলাম তার আকাশটার প্রশংসা করেছে আমার শিক্ষক। ছবির দোকানি টিঙ্কল (Tinkle) ওর দোকানে ছবিটা টাঙাতেও রাজি হয়েছে টাকাওয়ালা কোনো আহম্মকের চোখে পড়লে বিক্রিও হয়ে যেতে পারে ছবিটা।’

মিষ্টি হেসে ডেলিয়া বলল, ‘আমি বলছি বিক্রি হবেই ছবিটি। এবারে এস জেনারেল পিঙ্কনি আর কচি বাছুরের মাংসটার প্রতি কৃতজ্ঞ হই।’

পরের সপ্তাহে ল্যারাবি-দম্পতি প্রাতরাশ খেল খুব ভোরে। সেন্ট্রাল পার্কে ভোরের ছবি আঁকায় জো-র খুব উৎসাহ দেখা গেল। সাতটার ভেত্বরই ওকে খাইয়ে-দাইয়ে চুমু খেয়ে বিদায় করে দিত ডেলিয়া। শিল্পকর্ম কাজটা খুব পরিশ্রমের প্রায়ই সাতটার আগে ফেরা হত না ওর।

সপ্তাহের শেষে বিজয়িনীর ভঙ্গিতে ১৫ ডলারের নোট এনে রাখল ডেলিয়া ৮ x ১০ ফুট ঘরের ৮ x ১০ ইঞ্চি টেবিলে। কিছুটা ক্লান্ত-সুরে সে বলল, মাঝে মাঝে এত বিরক্তও করে ক্লিমেন্টিনা। বাড়িতে অভ্যেস করবে না মোটে, একই জিনিস বারবার বলে দিতে হয়। আর ওই সবসময় সাদা কাপড়-বড্ড একঘেয়ে। কী চমৎকার লোক বুড়ো জেনারেল পিঙ্কনি। দেখতে যদি ওঁকে! মাঝে-মাঝে যখন ক্লিমেন্টিনাকে পিয়ানো বাজানো শেখাই, বুড়ো আসেন—বলেছি বোধ হয়, তিনি বিপত্নীক—সিগারেট খেতে-খেতে এমন মিষ্টি করে হাসেন! আর প্রায়ই জিজ্ঞেস করেন, আপনার সপ্তম-পঞ্চমের (demisemiquavers) কাজ কতদূর এগুলো?’

‘জো, তুমি যদি ওঁদের বৈঠকখানার আসবাব দেখতে! মেঝেয় কি বাহারের আস্ত্রাখান কার্পেট! আর ক্লিমেন্টিনা সারাদিন খুকখুক করে কাশছে তো কাশছেই। বড্ড রোগা ও। বুঝলে জো, মেয়েটার ওপর বড্ড আদর পড়ে গিয়েছে আমার। এত ভদ্র ও! জেনারেল পিঙ্কনির ভাই এক সময় বলিভিয়ায় রাষ্ট্রদূত ছিলেন।’

এতক্ষণে জো মন্টি ক্রিস্টোর (Monte Cristo) মতো বীরদর্পে পকেট থেকে একখানা করে দশ, পাঁচ, দুই আর এক ডলারের নোট বের করে ডেলিয়ার উপার্জনের পাশে রাখল।

‘সেই জলরঙের স্বারক ছবি (obelisk) বিক্রি হয়ে গেছে । কিনেছে পিওরিয়ার ((Peoria)) একজন লোক’—ভারিক্কি
চালে বলল সে।

ঠাট্টা কর না ডেলিয়া বলল, ‘নিশ্চয়ই পিওরিয়ার লোক নয়।’

‘একশ বার পিওরিয়ার! ওকে দেখলে তোমার হাসি পেত, ডেল। হাতির মতো মোটা, গলায় মাফলার আর সারাক্ষণ দাঁত খোঁচাচ্ছে। টিঙ্কলের দোকানে ছবিটা দেখে ও ভেবেছিল উইন্ড মিলের ছবি। যাক, কিনেছে তবু। একদম চিড়িয়া-মার্কা লোক।

লাকাওয়ানা জাহাজ-ঘাটার আর-একখানা ছবির ফরমায়েশ দিয়ে গেছে—সঙ্গে নিয়ে যাবে। যাক, তোমার গানের মাস্টারিটা মন্দ না, অন্তত শিল্পের কিছুটা ছোঁয়াচ আছে।’

আপ্যায়িত হয়ে ডেলিয়া বলল, ‘তুমি যে ছবি আঁকা শেখা ছাড়োনি তাতে বড় খুশি হয়েছি আমি। সাফল্য তোমার সুনিশ্চিত, বুঝলে প্রিয়? তেত্রিশ ডলার! একসঙ্গে খরচ করবার মতো এত টাকা আর পাই নি আমরা। আজ রাতে ঝিনুক খাওয়া যাবে।’

‘আর চিংড়ির কাটলেট’, বলল জো। ‘আচার তোলার কাঁটাটা কই গো?’
পরের শনিবারে জো আগে ঘরে ফিরল। টেবিলের ওপর ১৮ ডলারের নোট রেখে হাত থেকে ধুয়ে ফেলল এমন এক বস্তু, যাকে কালো রঙ বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।

আরো আধঘন্টা পর ফিরল ডেলিয়া—ডান হাতটায় তার পটি বাধা। স্বাভাবিক অভিনন্দন বিনিময়ের পর জোয়ের নজর পড়ল সেদিকে। ‘এটা কী?’—বলল সে। ডেলিয়া হাসল, কিন্তু খুব আনন্দে নয়। ‘গান শেখার পর ক্লিমেন্টিনার পনির-দেয়া গরম রুটি খাবার ইচ্ছে হল! অদ্ভুত মেয়ে। জেনারেলও ছিলেন সেখানে। রুটি-পনির আনার জন্যে কী দৌড়টাই তিনি দিলেন! বাড়িতে যেন চাকর-বাকর নেই কেউ! ক্লিমেন্টিনারের স্বাস্থ্য ভালো নয় জানতাম, কিন্তু এত নড়বড়ে সে! টগবগে গরম পানির খানিকটা দিল হাতে ঢেলে। কী জ্বালাটাই না করছিল। শুকিয়ে এতটুকুন হয়ে গেল মেয়েটা। আর জেনারেল পিঙ্কনি! লোকটা যেন খেপে গেল জো। ছুটে গিয়ে কাকে যেন পাঠাল ওষুধের দোকানে। শেষ পর্যন্ত কী যেন একটা তেল এনে হাতটা বেঁধে দিয়েছে। এখন আর অবশ্যি তেমন জ্বালা করছে না।’

ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ব্যাভেজের নিচের দিকটা দেখিয়ে জো বলল, ‘এটা কী?’
কী জানি নরম মতো কী যেন, তেলের সাথে মেশানো। আর-একটা ছবি বেচেছ, জো?’ টেবিলের ওপরের নোট ক-খানার ওপর ওর নজর পড়েছিল।

‘পিওরিয়ার সেই লোকটাকেই না হয় জিজ্ঞেস কর। জাহাজ-ঘাটার ছবিটা আজ নিয়ে গেছে । পার্কের আর-একটা ছবি আর হাডসন নদীর একটা দৃশ্যও কিনতে পারে বলেছে। আচ্ছা হাতটা তোমার কখন পুড়ল, ডেল?’
ডেলিয়া অন্যমনস্কভাবে জবাব দিল, ‘পাঁচটার দিকে হবে বোধ করি। ইস্ত্রিটা মানে রুটিটা ও-সময়ই চুলো থেকে নামানো হয়েছিল কি না? তুমি যদি জেনারেল পিঙ্কনিকে তখন—–’

‘এখানে একটু বসো তো, ডেল,’ বলল জো! কৌচের ওপর বসে পড়ে ওকে টেনে নিল জো, ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল : ‘গত দু-সপ্তাহ ধরে কী করছ সত্যি করে বল তো?’

গোড়াতে কথাটা উড়িয়েই দিতে চাচ্ছিল ডেলিয়া। বার-দুই বিড়বিড় করে জেনারেল পিঙ্কনি সম্বন্ধে কী যেন বলতে চাইল, তারপর মাথাটা নুয়ে এল আপনা থেকেই, আর বেরিয়ে এল সত্যি কথাটা।

‘অনেক চেষ্টা করেও ছাত্রী জোটাতে পারি নি। তোমাকে ছবি আঁকা শেখা ছাড়তে হবে, সেও সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই ২৪ নম্বর রাস্তার বড় লন্ড্রিটাতে কাপড় ইস্ত্রি করার চাকরি নিয়েছি। জেনারেল পিঙ্কনি আর ক্লিমেন্টিনার গল্পটা বেশ বানিয়েছিলাম যা হোক, কী বল, জো? আজ বিকেলে একটা মেয়ে গরম ইস্ত্রি যখন হাতের ওপর ফেলে দিল তখন থেকেই মনে-মনে রুটি-পনিরের গল্পটা তৈরী করলাম। রাগ করনি তো, প্রিয়তম জো? তাছাড়া চাকরি না নিলে হয়তো পিওরিয়ার লোকটার কাছে তোমার ছবি বিক্রি করাও হত না।’
‘ওর বাড়ি পিওরিয়ায় নয়’, ধীরে ধীরে বলল জো।

‘তাতে কী এসে যায়? কী চালাক তুমি, আচ্ছা বলো তো কী করে তোমার সন্দেহ হল আমি ক্লিমেন্টিনাকে গান শেখাতে যাইনি?’

আজ রাতের আগে সন্দেহ করি নি। ইন্ত্রি পড়ে নিচের তলার একটা মেয়ের হাত পুড়ে গিয়েছে শুনে ইঞ্জিনঘর থেকে আজ বিকেলে ব্যান্ডেজ ও তেলটা যদি নিজ হাতে না পাঠাতাম তাহলে আজো হয়তো সন্দেহ করতাম না। ঐ একই লন্ড্রির ইঞ্জিনে দুই সপ্তাহ ধরে কয়লা দিচ্ছি আমি।’
‘তাহলে তুমি—–’

‘আমার পিওরিয়ার ক্রেতা,’ জো বলল, ‘আর তোমার জেনারেল পিঙ্কনি একই শিল্পের সৃষ্টি—তাই বলে একে তুমি গান বা ছবি আঁকা কোনোটাই বলতে পারবে না।’

দুজনে বেশ কিছুক্ষন হেসে নিল, তারপর বলতে শুরু করল জো, কেউ যখন কারো শৈল্পিকতাকে ভালোবাসে, তখন (তার জন্যে) কোন কর্তব্যসাধনকেই——–।’

ডেলিয়া তাড়াতাড়ি ওর ঠোটে আঙুল চেপে ধরে থামিয়ে দিল। বলল, ‘না, এভাবে না, শুধু যখন কেউ প্রেমে পড়ে।’

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments