Friday, April 19, 2024
Homeআরওলাইফস্টাইলশিশুকে বুকের দুধ খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

বুকের দুধ খাওয়ার উপকারিতা

শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নাই। এর গুরুত্ব তুলে ধরা ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রতি বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পালিত হয় মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও সপ্তাহটি পালন করা হয়। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডাব্লিউবিটিআই) কর্তৃক এ বছর বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য—‘প্রটেক্ট ব্রেস্টফিডিং, এ শেয়ারড রেসপনসিবিলিটি।’

আইবিএফএএনের তথ্য অনুযায়ী, শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ এবং জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়; বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়; দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।তাই জন্মের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ দিয়ে যেতে হবে। ছয় মাস পর্যন্ত শুধুই বুকের দুধ এবং তারপর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পানি ও অন্যান্য খাবার দিতে হবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. লুনা পারভীন জানালেন কেন একটি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

আসুন জেনে নেই শিশুর বিকাশে মাতৃদুগ্ধ কেন জরুরি-

১. মায়ের দুধে শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও শারীরিক গঠন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিন, শর্করা ও চর্বি থাকে।

২. মায়ের দুধ পান করলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে থাকা নানা রকম ইমিউনোগ্লোবিউলিন, অ্যান্টিবডি এবং রোগপ্রতিরোধক শিশুকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। যেসব শিশু প্রথম ছয় মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করেনি, তাদেরই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া প্রভৃতির সংক্রমণ বেশি হয়।

৩. শিশুর পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র মায়ের দুধের ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে ও কাজে লাগাতে সক্ষম ও প্রস্তুত। বাইরের ফর্মুলা মিল্ক বা অন্য কোনো খাবারের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই মায়ের দুধে শিশুর বদহজম বা অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি নেই।

৪. মায়ের দুধে থাকা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন ডি হরমোন তৈরিতেও সহায়ক। বর্তমানে দেখা গেছে ভিটামিন ডি-এর অভাবে নানারকম অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষের। এমনকি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও ভিটামিন ডি এর উপযোগিতা পাওয়া গেছে।

৫. মায়ের দুধের ওপর নির্ভরশীল শিশুর প্রথম বছরে তিন গুণ ওজন বাড়ে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

৬. শিশুর আকস্মিক মৃত্যু (সিডস), সর্দি–কাশি বা ফ্লু, কান পাকা, হাঁপানি, একজিমা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, দন্তরোগ, স্থূলতা, শিশুদের ক্যানসার এবং পরবর্তী জীবনে মানসিক রোগ প্রভৃতি সমস্যা প্রতিরোধে মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা অনস্বীকার্য।

৭. শিশু জন্মের পর তৃতীয় দিনে মায়ের বুকে আসল দুধ আসার আগ পর্যন্ত যে হলদেটে তরল পদার্থ বের হয়, তাকেই বলে শালদুধ। এটি নবজাতকের শ্রেষ্ঠ খাবার যা গর্ভাবস্থার শেষ দিক থেকেই স্তন থেকে নিঃসৃত হতে শুরু করে। শালদুধ পরিমাণে থাকে অল্প, কিন্তু এতে আমিষ আর শর্করার ভাগ থাকে অনেক বেশি আর চর্বি বা মাখন জাতীয় উপাদানের পরিমাণ থাকে খুব কম। ফলে নবজাতক খুব সহজেই হজম করতে পারে। এতে শিশু তাড়াতাড়ি পায়খানা করে ফলে জন্ডিস হবার সম্ভাবনাও কমে।

শালদুধে প্রচুর পরিমাণ ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ থাকে যা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শালদুধকে বলা হয় শিশুর প্রথম টিকা।

৮. মনে রাখতে হবে জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধই হবে শিশুর একমাত্র খাবার। এতেই মিটবে তার পর্যাপ্ত পুষ্টি চাহিদা। ছয় মাস থেকে অন্যান্য খাবার ও পানি শুধু হবে তাও অল্প অল্প করে। কিন্তু মাতৃদুগ্ধ পান চালিয়ে যেতে হবে দুই বছর বয়স পর্যন্ত।

৯. অসুস্থ, প্রি-ম্যাচিউরড, সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ বা কম ওজনবিশিষ্ট শিশুকে অবশ্যই মায়ের দুধ পান করাতে হবে। হাসপাতালের ইনকিউবেটর বা আইসিইউতে থাকা শিশুকেও বারবার যেয়ে দুধ পান করাতে হবে বা তার কাছে বিশেষ ব্যবস্থায় মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে খাওয়াতে হবে।

১০. বুকের দুধ পান করালে শুধুমাত্র যে শিশুরই উপকার তা নয়, মায়েরাও নানাভাবে উপকৃত হন। বুকের দুধ পান করালে মায়েদের প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত কম হয়। এছাড়াও একজন মা যত বেশি স্তন্যপান করাবেন, তত দ্রুত তার জরায়ু সংকুচিত হয়ে আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। এমনকি তার ওজনও দ্রুত কমে। মায়ের গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে শিশুকে বুকের দুধ পান করালে শর্করা কমে আসে দ্রুত। তাছাড়া বর্তমানে উদ্বেগ বাড়ানো স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments