Saturday, April 20, 2024
Homeথ্রিলার গল্পভৌতিক গল্পরোমাঞ্চকর গল্প : ভূতুড়ে বাড়ি

রোমাঞ্চকর গল্প : ভূতুড়ে বাড়ি

'ভূতুড়ে বাড়ি' ভৌতিক গল্প

আমার অফিসের বস তার বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি জোরদার পার্টির আয়োজন করেছিলেন। তখন রাত প্রায় ৩ টে। আমি আর সুলেখা রাস্তায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও কোনো গাড়ির দেখা পেলাম না। শহরের রাস্তা সারারাত গাড়ি চলে। কিন্তু শীতের জন্য গাড়ি খুবই কম। আমরা ঠিক করি হেঁটেই বাড়িতে ফিরব। এখান থেকে আমাদের বাড়ি বেশি দূরে নয়। প্রায় ৭-৮ কি.মি রাস্তা। আমি হাঁটতে পারব ঠিকই, কিন্তু সমস্যাটা হল সুলেখাকে নিয়ে। ও বেশিদূর হাঁটতে পারবে না। কিন্তু এখানে তো আর অপেক্ষা করা যায় না! তাই রাস্তায় নামলাম।

জানুয়ারির কনকনে শীত আর জনমানব শূন্য রাস্তায় ভেসে আসা ঠাণ্ডা হাওয়া হাড়ের কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। হুম যেমনটা ভেবেছিলাম, ঠিক তেমনটাই হল। সুলেখা প্রায় ২ কি.মি হাঁটার পরই হাঁপিয়ে গেল। আশেপাশে কোথাও কোনো বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। আবার আকাশের মতি-গতিও ভালো নেই। যদিও শীতের দিনে তেমন বৃষ্টি হয়না। কিন্তু আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ। এদিকে সুলেখা রাস্তায় বসে পড়েছে।

যদিও এত রাতে একজন যুবতী মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বের হওয়াটা আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু সুলেখা নাছোড়বান্দা। সে আর পার্টিতে থাকবে না। আমার সঙ্গে বাড়ি যাবে। এইসব চিন্তা করতে করতেই হাঁতে যেন কিছু একটা এসে পড়ল। অনেক অনেক ঠাণ্ডা অনুভূত হল। মোবাইলের ফ্লাশ লাইটটা দিয়ে দেখলাম বৃষ্টির ফোঁটা। সর্বনাশ। এই শীতে বৃষ্টিতে ভিজলে অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। কি করব, কোথায় লুকাব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

এদিক ওদিক দেখতেই দেখলাম, আমাদের থেকে কিছু দূরেই একটি বড় বাড়ির মত দেখা যাচ্ছে। সুলেখা উঠতে নারাজ। জোর করেই তাকে উঠিয়ে, তাড়াতাড়ি দৌড়ে চলে গেলাম সেই বাড়িটির কাছে। উঁহু বাড়ি নয়। পরিত্যক্ত গুদাম ঘর। যাক এখানে আর ভিজবো না আমরা।

শুরু হয়ে গেল মুষলধারে বৃষ্টি। শীতের দিনে এমন বৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি। এদিকে আমরা অনেকটা ভিজে গেছি। ভিজে অবস্থাতেই সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। এই গুদামটা অনেক পুরনো। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছিলাম বৈকি, কিন্তু কখনো ভিতরে প্রবেশ করি নি। এত বড় একটি গুদাম অথচ তালা ছাড়াই পড়ে আছে। হাওয়ার সাথে সাথে মাঝে মাঝেই বাদুড়ের বিচ্ছিরি গন্ধ ভেসে আসছে।


হঠাৎই সুলেখা চেঁচিয়ে উঠল- “অসীম দেখ, ওখানে যেন কে?” কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পেলাম না। আমি তার কথার কোনো উত্তর দিলাম না। কয়েক সেকেন্ড পরে আবার সে চেঁচিয়ে বলল- “অসীম আমাদের কেউ দেখছে, আমাদের কেউ ফলো করছে। আমি এই মাত্র একটি ছায়ার মত কিছু ওই দেওয়াল থেকে সরে যেতে দেখলাম।“

সুলেখা আমাকে অফিসেও মাঝে মধ্যে নানান বিষয় নিয়ে ভয় দেখায়। আমি বললাম- “তুই এই পরিস্থিতিতেও আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস কেন বলত? কখন বৃষ্টি ছাড়বে, কখন বাড়ি ফিরব কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে তোর? সবসময় এই রকম মজা করবি না তো!“
সুলেখা- “বিশ্বাস কর, আমি মজা করছি না।“ আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তার মুখের দিকে তাকালাম। কিন্তু আমার দৃষ্টি তার মুখের দিকে নয়, চলে গেল তার পেছনের দেওয়ালের দিকে। হ্যাঁ সে ঠিকই বলেছে, আমাদের কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। ব্যাপারটা কেমন যেন, বিদঘুটে মনে হল। এ আবার চোর নয় তো!

আমি- “হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস, আমিও তোর পিছনের দেওয়ালে ছায়ার মত কিছু একটা দেখলাম। চোর মনে হয়। তুই এখানে একটু দাড়া আমি দেখে আসি।“

সুলেখা- “এই না না, আমিও যাব, আমার ভয় করছে।“ দুইজনে সেই দেওয়ালটার পাশে গেলাম, কিন্তু না কিছুই নেই। শুধু শুধু ভিজলাম আবার।

আমরা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসলাম। সুলেখা ভয়ে আমার হাত ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর মনে হল সুলেখা খুব জোরে আমার হাত চেপে ধরছে। আমি কিছুই বললাম না। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে ততই সে আমার হাত বেশি চেপে ধরছে, এদিকে আমার হাঁতে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। আমি বললাম- “আরে এত চাপ দিচ্ছিস কেন? ছাড় হাত ছাড়।“ কিন্তু সে কিছুই বলল না। হাতও ছাড়ছে না। এরপর আমি নিজেই তার হাত সড়াতে চাইলাম। কিন্তু সে অনেক শক্ত ভাবে ধরে রেখেছে। আমি কিছুতেই খুলতে পারছি না তার হাত।

“উফ ছাড়, তোর হলটা কি?“ এবার তার মুখের দিকে তাকাতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তার চোখ যেন ঠিকরে বাইরে বেড়িয়ে আসছে। শরীর একেবারে কাঠ হয়ে আছে তার। মুখে কেমন যেন রাগী রাগী ভাব। আমি ভাবলাম হাত সড়াতে বলেছি তাই রাগ করছে হয়ত। কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে অন্যরকম মনে হল। উঁহু বিষয়টা কিছুতেই ভালো ঠেকছে না।

হঠাৎ করেই সে আমাকে একটি জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে আমার উপর চড়াও হল। আমি উঠে বসার আগেই সটান এসে আমার গলা চেপে ধরল।

আমি- “আরে তুই করছিস টা কি? কি হল তোর। কি করলাম আমি।“

সুলেখার গলা থেকে কর্কশ পুরুষের কণ্ঠে আওয়াজ এল- “আমি বিচার চাই, ন্যায্য বিচার।“ এমন আওয়াজ শুনে শীতের দিনেও আমি ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। তার হাত কিছুতেই আমার গলা থেকে সড়াতে পারছি না। এদিকে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তবে আমিও কিন্তু কম নই, ৩ বছর ক্যারাটে শিখেছি আমি। কায়দা করে সুলেখাকে ফেলে দিলাম মাটিতে। যদিও মেয়েদের উপর হাত উঠানো অন্যায়। কিন্তু নিজের বাঁচার তাগিদে এটুকু করা যেতেই পাড়ে। তাছাড়াও সুলেখার উপড়ে আর ওর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনো এক শক্তি তার শরীরে প্রবেশ করেছে।

এদিকে ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কারণ সুলেখার কিছু হয়ে গেলে। আমার আর রক্ষে নেই। একরকম জোর করেই তাকে ধরে একটি খুঁটিতে বেঁধে দিলাম। এবার মোবাইলের ফ্লাশ লাইট সরাসরি তার চোখে ধরলাম। সে চিৎকার করতে থাকল। আমি জানতে চাইলাম এই সবের পিছনে কারণটা কি? আবার সেই কর্কশ গলা থেকে আওয়াজ এল-

“আমি এই গুদামের একজন কর্মী ছিলাম। আমার নাম পলাশ। কয়েক বছর আগে গুদামে কাজ করার সময়, উপর থেকে কয়েক বস্তা লবণ আমার উপড়ে ফেলে দেয় দুইজন ব্যাক্তি। অত উপর থেকে আমার উপড়ে লবণের বস্তা এসে পড়ায়, আমার হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায় এবং মাথাতে প্রবল চোট পাই আমি। এরপর সেখানেই আমি মারা যাই। কিন্তু আমাকে যারা হত্যা করল তারা আজও ঘুরছে। এখানে যারা আসে তারা আর ফিরে যেতে পাড়ে না।“

আমি অনেকটা ভয় পেয়ে যাই, সাথে সাথে নিজের জীবন নিয়েও চিন্তা হতে লাগল। কিন্তু দমবার পাত্র আমি নই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম- “তারা তোমাকে কেন মেরেছিল?”

-“টাঁকা টাঁকা, টাকার জন্য মেরেছিল। আমার কেউ নেই, কিন্তু আমার জমানো অনেক টাঁকা ছিল। আমাকে হত্যা করার পড় এই টাকার পুরোটাই তারা নিয়ে নিয়েছে। এখন আমি ন্যায্য বিচার চাই।“

আমি- “সে নাহয় বুঝলাম, কিন্তু তুমি সুলেখার ভিতরে কেন প্রবেশ করেছো?”
-“এই মেয়েটি আমার কবরের উপর পা রেখেছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছে।“

আমি-“ও না জেনে এই সব কাজ করেছে। ওকে ছেড়ে দাও, যারা তোমাকে মেরেছে, তাদের কিছু করতে পারছ না, আর একজন নিরীহ মেয়ের জীবন নিয়ে এভাবে খেলছ কেন?”

-“আমি ছেড়ে দিতে পারিস,

কিন্তু আমার ন্যায্য বিচার লাগবেই লাগবে।“

এরপর তাকে ন্যায্য বিচার দেওয়ার কথা বলতেই। সে সুলেখাকে ছেড়ে দেয়। এদিকে সকাল হয়ে গেছে। গাড়ি চলাচলাও শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পড় সুলেখার জ্ঞান ফিরতেই, সে বলল- “আজ দারুন ঘুম হয়েছে আমার।“

কিন্তু কি নিদারুন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই কয়েকটা ঘণ্টা কাটল, তা শুধু আমিই জানি। পড়ে সুলেখাকে আর কখনো সেই ভয়ংকর রাতের কথা বলি নি। বললেও সে বিশ্বাস করত না। কিন্তু সেই ভয়ংকর রাতের ঘটনা আমার মনের ব্ল্যাক বক্সে চিরতরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। এখনও সেই গুদাম ঘরের পাশ দিয়ে গেলে বুকটা কেঁপে উঠে, কারণ পলাশকে ন্যায্য বিচার পাইয়ে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি আমি দিয়েছিলাম, সেটি পূর্ণ করতে পারিনি, প্রমানের অভাবে।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments