Wednesday, August 20, 2025
Homeরম্য গল্পমজার গল্পমোচার ঘণ্ট - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

মোচার ঘণ্ট – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

দরজা খুলতে এগোচ্ছেন আধুনিকা গৃহিণী, সামনেই দুই ভদ্রলোক।

ভদ্রলোকদ্বয়: আসতে পারি?

মহিলা: কে আপনারা?

উত্তর : আমরা আসি—ফ্রম ডোমেস্টিক এইডস ইনকরপোরেট, একটি সমাজসেবী সংস্থা।

মহিলা: আসুন, তবে বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা কী? কাপড় কাচার পাউডার? ভ্যাকুয়াম ক্লিনার? ওয়াশিং মেশিন?

উত্তর : ওসব বাজারচলতি ব্যাপার নয়, ম্যাডাম, আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। সেঞ্চুরি টপকে গেছি। একেবারে নিউ আইডিয়া।

দ্বিতীয় ভদ্রলোক:দাঁড়ান, আমি বলছি, একেবারে জলবৎ তরলং করে দিচ্ছি, বসতে পারি ম্যাডাম?

হ্যাঁ হ্যাঁ, বসুন।

ম্যাডাম! ব্যাপারটা হল, আপনার ইচ্ছে আছে উপায় নেই। একটু Explain করি। ধরুন ইচ্ছে করছে মোচার ঘণ্ট খাবেন। ঠাকুমা-দিদিমার আমলের প্রাচীন পদ। পদাবলী কীর্তনের মতো। আপনি মোচার ড্রেসিং জানেন না। জাস্ট ডায়াল দিস নাম্বার। ভট ভট ভট ভট। লাল। মোটরবাইকে যন্ত্রপাতি নিয়ে আমাদের ট্রেন্ড কর্মী হাজির। পনেরো মিনিটের মধ্যে মোচার ড্রেসিং কমপ্লিট করে দিয়ে চলে যাবে। প্রসেস জানা না থাকলে সেটাও দিয়ে যাবে। কতটা নারকেল কোরা, ছোলা কতটা, ফোড়ন, বাকিটা আপনার পার্সোনাল টাচ। ইউ গেট ইওর মোচার ঘ্যান্ট।

এর পরে ধরুন কোনওদিন ইচ্ছে হল থোড় ঘণ্ট। হোড় হেঁচকি। কেলেঙ্কারি কাণ্ড। ভেরি ডিফিকাল্ট ম্যানিপুলেশান। ভীষণ উপকারী। যাকে বলে, লোহার কারখানা। দেখতে সাদা, কিন্তু পুরোটাই লোহা। লোহার ডান্ডা। অ্যানিমিয়ার যম। কে কাটবে! লাস্ট সেঞ্চুরির শাশুড়িকে তো খেদিয়ে দিয়েছেন! থোড় আবার সুতোকল। একটা করে চাকা কেটে আঙুলে সুতো জড়াতে হয়। আধ্যাত্মিক জিনিস। জপের মালার মতো। একশো আটবার জপ করতে হয়। ঘোরাচ্ছেন, ঘোরাচ্ছেন আর বীজমন্ত্র জপ করছেন! একফুট থোড়ে এক হাজার জপ। পারবেন আপনি? নেলপালিশ করা সোনার আঙুল কালো হয়ে যাবে। লিফট ইওর ফোন, ডায়াল আওয়ার নাম্বার। আধঘণ্টার মধ্যে শুদ্ধ সাদা কাপড় পরা এক বৃদ্ধা এসে যাবেন। দীক্ষিতা। বউমা,বলে বসে পড়বেন। এক-এক চাকা কাটবেন, আঙুলে সুতো জড়াতে জড়াতে জপ চালিয়ে যাবেন।

মহিলা বললেন, কিন্তু! আমি ওইসব রাবিশ থোড়, মোচার লাইনে যাব কেন?

কেন যাবেন? আপনার গ্ল্যামার বাড়াবে। সারপ্রাইজ ডিশ সার্ভ করবেন আপনার গেস্টদের। তাঁরা বাহবা, বাহবা করবেন। বলতে থাকবেন, আপনি ডয়েন অফ বঙ্গ সংস্কৃতি।লুপ্তপদ উদ্ধার করেছেন। এইবার ধরুন, রাতে লুচি, রুটি, পরোটা খাবেন, আমরা আপনাকে ময়দার তাল সাপ্লাই করব। ময়দা ঠাসার বিরক্তিকর জঘন্য কাজটা আপনাকে আর করতে হল না। ও। সময়টায় আপনি টিভি সিরিয়াল দেখবেন। লুচি, রুটির গোলটা আপনার হাতে আসে না। বেঁকে তেড়ে যায়। লজ্জার কিছু নেই। আমাদের কর্মী এসে স্যাটাস্যাট মাল নামিয়ে দেবে।

আপনার ইচ্ছে হল, হোমমেড বড়ি খাবেন। একটা লুপ্ত শিল্প। কাঁথাবড়ি, কাসুন্দি, মালপো, পুলিপিঠে, সরুচাকলি। আপনার ইচ্ছেটা শুধু টেলিফোনে জানান। আমাদের পালোয়ান ডিভিশান থেকে এক পালোয়ান এসে ডাল বেটে দিয়ে যাবে। আপনি ছাদে বসে গুনগুন করে গান গাইবেন আর টুপুস, টুপুস করে বড়ি পাড়বেন। আপনার স্বামী অবাক হয়ে ভাববেন—এ আমার আধুনিকা বউ, না প্রাচীনা কোনও শাশুড়ি। তিনি হয়তো গেয়ে উঠবেন, একই অঙ্গে এত গুণ দেখিনি তো আগে।

এ সব ব্যাপার যদি আপনার পছন্দ না হয়, আমাদের অন্য সার্ভিস-ও আছে। পাশের ফ্ল্যাটের মুখরা বউ কিংবা আপনার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ায় এঁটে উঠতে পারছেন না। জাস্ট ডায়াল আওয়ার নাম্বার। আমাদের ঝগড়াটে দিদি সেকশন থেকে একজন চলে আসবেন। সবরকম ঝগড়া এবং মুখের শব্দে ট্রেন্ড, ডিপ্লোমা প্রাপ্ত। আটরকমের গলার শব্দ। আপনি শুধু ইস্যুটা ধরিয়ে দেবেন। ব্যস, তারপর দেখবেন! ঝগড়ার চেহারাটাই পালটে যাবে। ঘণ্টা কিলো রেট।

ঘণ্টা কিলো রেট মানে?

গাড়ি ভাড়ার মতো। গাড়ি কী বলে? রেট ষাট টাকা ঘণ্টা। সেই রকম, ঝগড়ার ঘণ্টা। ঘণ্টা বেসিস। শুরু থেকে শেষ, সময়টা দেখে রাখবেন। ঝগড়া অনেক সময় টানা চলে না। মাঝে মাঝে গ্যাপ থাকে। চা খাবার বিরতি হতে পারে। নোট করে রাখবেন। ওই সময়টাই গাড়ির মিটারের মতো—ওয়েটিং চার্জ। আর কিলো রেট হল, আপনি যদি স্বামীর দিকে কিছু ছুঁড়তে চান— পেপার ওয়েটের এক রেট, চামচের এক রেট। বই ছোড়ার এক রেট। উলের গোলার কোনও চার্জ নেই—ফ্রি।

এর পর আরও আছে। আমাদের রিসার্চ উইং মাথা খাঁটিয়ে সব বের করেছে বটে। হ্যাটস অফ টু দেম। ধরুন, প্রবলতম উত্তেজনার মুহূর্তে, আপনি আপনার স্বামীর মাথার চুল ধরে টেনে। আনতে চাইছেন, সারা ঘরে ঘুরপাক খাওয়াতে চাইছেন, চারটে দেয়ালে বারবার ঠকাঠক মাথা ঠুকে দিতে চাইছেন, আমাদের এইডস-এ আছে কোড নেম অপারেশান হিড়িম্বা। তখন চার্জ হবে কিলো ওয়েট-এ। ককিলো ওজনের স্বামী? ভাষা আপনার, অ্যাকশান আমাদের। আপনি আমাদের হাতে অ্যাকশান ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে প্রাণ যা চায় বলে যান—জাম্বুমান, সেলফিশ, ক্যারাকটারলেস, খগেন, পেটমোটা খালাসি, মাথামোটা পাঁঠা, যমদূত, ষণ্ড, পাষণ্ড। এর সঙ্গে সেফটি ডিভাইসও জোড়া আছে। আপনার স্বামী যদি তেড়ে মারতে আসেন, হার্ড পাঞ্চ, সঙ্গে সঙ্গে আপনার কোমরের কাছ থেকে একটু বেলুন ফুলে উঠবে। বিদেশি মোটরকারে এই ব্যবস্থা থাকে স্টিয়ারিং-এর কাছে। আমরা এটা পেটেন্ট করেছি—

গৃহিণীর উত্তর—ঢং।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments