Tuesday, April 16, 2024
Homeবাণী-কথাজয় জয়ন্তী - নবনীতা দেবসেন

জয় জয়ন্তী – নবনীতা দেবসেন

জয় জয়ন্তী - নবনীতা দেবসেন

প্রেসিডেন্সিতে কো-এডুকেশনে ভর্তি হওয়া মাত্র দুই দাদা খ্যাপাতে শুরু করল তিতলিকে।

খুব সাবধান। প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, বিশেষত প্রেসিডেন্সিতে।

আর যাদবপুরে বুঝি নেই?

ছোড়দা পড়ে যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং, দাদা পড়ে মেডিক্যাল কলেজে। দাদার গার্লফ্রেন্ড নেই, ভীষণ ব্যস্ত পড়াশুনো নিয়ে। ছোড়দার তো ছিল, সুমনা। এখনো আছে কিনা জানা নেই। যাদবপুরের ব্যাপার। তিতলি প্রেমে পড়বে না মনস্থ করেই প্রেসিডেন্সিতে গেছে। কিন্তু দাদাদের খোঁচায় সে অবশেষে পড়েই গেল প্রেমে।

বাড়ি ফিরে এসে তার মুখে জয় ছাড়া বুলি নেই। জয় আজ ক্লাসে এই বলেছে, প্রফেসর খুব খুশি হয়েছেন। ইন্টারকলেজিয়েট ডিবেটিং কম্পিটিশনে জয় আজ ফাটাফাটি ডিবেট করেছে। জয় আজ কি দারুণ ক্রিকেট খেলল, পাঁচটা বল মেরেছে পরপর, তার পরে ক্যাচ লুফেছে দুটো। জয় আজ কফি হাউস ফাটিয়ে হিন্দি গান গেয়েছে।

মাঝে তিতলির মন খারাপ, জয় কলকাতার বাইরে ইন্টার কলেজিয়েট ক্রিকেটে খেলতে গেছে। দেখা হচ্ছে না। বিরহ দশা দেখে ছোড়দা খেপিয়ে মারল। তিতলি বিরক্ত হয়ে দুই কিল বসিয়ে পালিয়ে যায়।

আস্তে আস্তে এমন হল, এক সঙ্গে পড়া, এক সঙ্গে আড্ডা, এক সঙ্গে খেলা দেখা, জয়ের সঙ্গে সব সময়েই জুড়ি বেঁধে ঘুরচে তিতলি, কিন্তু জয় কোনো দিন তিতলিদের বাড়িতে আসেনি। মা ক্রমশই উদবিগ্ন হচ্ছেন, এটা কী হল? দাদারা যতই হাসাহাসি করুক, ব্যাপারটা ফ্যালনা নয়, ফার্স্ট ইয়ারেই প্রেমে গদগদ হলে পড়াশুনোর দফা রফা। তিতলি কিন্তু বলে জয় ওদের ক্লাসে বেস্ট স্টুডেন্ট। প্রফেসরেরা খুব ভালোবাসেন। ক্লাস শুদ্ধু ওর প্রেমে গদগদ। তিতলি একলা নয়।

তিতলি ছোড়দাকে বলেছে মনের কথাটা। জয়ের সবই তার ভালো লাগে, শুধু একটা জিনিস ছাড়া। সিগারেট খাওয়া। কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না তিতলি। না ছোড়দাকে, না জয়কে। শুনে ছোড়দার উৎসাহ বেড়ে গেল। ছোড়দা আজকাল অসভ্যের মতো খেপাচ্ছে, তিতলি মাঝে মাঝে লাল হয়ে যায়।

সে যে যাই বলুক, কলেজে পা দিতে না দিতেই মেয়ের এমন জয়-জয় বাতিক মা-র কিন্তু খুবই খারাপ লাগছে। প্রেসিডেন্সিতে দিতে ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিলেন। তবে সব শুনে তো মনে হয় ছেলেটা গুণী। তবু মায়ের মনে উদবেগ, বাচ্চা মেয়ে, কিছুই জানে না পৃথিবীর। কিসের মধ্যে গিয়ে পড়ছে। ছেলেটাও তো বাচ্চাই? তাই স্বচক্ষে দেখে নিতে চান। কৌতূহল বাঁধ মানতে চায় না। বাবা বেচারা এসব কিছুই জানেন না, এ সবই মায়ের ডিপার্টমেন্ট।

জয়ধ্বনি শুনতে শুনতে মা একদিন বললেন, জয়কে একদিন নিয়ে আয় না বাড়িতে, কেমন, দেখি?

ছোড়দা রেডি। নিয়ে আয়। (আসুক একবার, কেমন ছেলে বাজিয়ে দেখে নেব ভাব)।

দাদা একটু চুপচাপ ছেলে, সেও বলে ফেলল, সত্যি, নিয়ে আয় একবার বাড়িতে। কফি হাউসে বেশি বেশি হই-হুঁল্লোড় করিস না। ভালো দেখায় না।

মা নিজেই বললেন, ছোড়দার জন্মদিনে জয়কে ডাকতে। জন্মদিন এসে গিয়েছে।

নাচতে নাচতে এসে তিতিলি ঘোষণা করল, জয় বলেছে, আসবে!

তিতলির উত্তেজনার অন্ত নেই। বাড়ি-ঘর গোছাতে লাগল। বিশেষ করে নিজের ঘরটা, যেখানে জয় বসবে।

মা কিন্তু বাদ সাধলেন।

শোবার ঘরে নিয়ে যাওয়া চলবে না জয়কে। সকলের সঙ্গে বসার ঘরেই বসবে।

জয় সাদা ফুল ভালোবাসে না, তার শ্রাদ্ধ শ্রাদ্ধ লাগে। তাই গ্ল্যাডিওলি আনল। তিতলি। লাল গোলাপি মেরুন হলুদের ম্যাজিক। ঠিক ওর মনের সঙ্গে রং মিলন্তী। ঘরটা হেসে উঠল।

ছোড়দা তো খ্যাপায়ই, দাদাও খ্যাপাতে শুরু করেছে, ওর খ্যাপামি দেখে। তিতলি আপন মনে গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর ফুল সাজাচ্ছে। যদি আর কারে ভালোবাসো যদি আর ফিরে নাহি আসো তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও…

.

ছোড়দার জন্মদিনে ছোড়দার বন্ধুরা আসবে ছটার সময়ে। জয় এসে যাবে পাঁচটায়। তাকে ফিরতে হবে তো সল্টলেকে? এই গড়িয়া থেকে? শীতকালে?

পৌনে পাঁচটা থেকে বাড়ির সবাই রেডি। ছেলেটা আশা করি পাঙ্কচুয়াল?

পাঁচটায় বেল বাজাল।

তিতলি দৌড়ে গেল, জয় এসেছে।

ছোড়দাও গেল গেট খুলতে, আফটার অল, অতিথি তো, বাড়ির ছেলেরা না গেলে হয়?

কিন্তু গেট খুলেই ছোড়দা অবাক। কই, জয় তো আসেনি? এ আবার কে? আরে, এ তো একটা ঝাকড়া চুলো জিন্স-টি শার্ট-পরা স্মার্ট মতন মিস্টি মতন মেয়ে এসেছে। জয় কই?

জয় আসেনি?

অবাক ছোড়দাকে আরও অবাক করে দিয়ে তিতলি ঝাঁপিয়ে পড়ল।

ছোড়দা, মীট জয়। দ্য গ্রেট জয়াবতী মুখার্জি। আমার ছোড়দা, যার কথা তোকে বলেছি।

হাসিমুখে জয় হাত বাড়িয়ে দিল ছোড়দার থমকে থাকা হাতের দিকে।

কৃত্তিবাস পুজো সংখ্যা ২০১৮

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments