রম্য গল্প: মায়ের ভালোবাসা

রম্য গল্প: মায়ের ভালোবাসা

নতুন শশুর বাড়িতে বেড়ানোর পরে বাড়ি ফিরলো ছেলে।
মা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা শশুর বাড়ির লোক জন কেমন লাগলো ?
ছেলেঃ ভালো মা।
মাঃ তোমার শাশুড়ী কেমন আদর যত্ন করলো ?
ছেলেঃ সেটা বললে তো তুমি আবার রাগ করবা।
মাঃ না রাগ করবোনা, বল।

ছেলেঃ আমার শাশুড়ী তোমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসেন আমায়। তুমিতো একটা মুরগী রাধলে আমাকে ছোট একটা টুকরো দেও! আমার শাশুড়ী আমাকে আস্ত একটা মুরগী দেয়, কতো রকম পিঠা, খেতে বসলে পাশে বসে বাতাস করেন। এক কথায় তোমার থেকে অনেক গুন বেশি ভালোবাসে আমাকে! আসার সময় তো আসতে দিতেই চাননি। বললেন আর কটা দিন থেকে যাও। তবুও জোর করে চলে আসলাম। দুর দেখা যায় পথের দিগে তাকিয়ে ছিলেন।

মা মনে কষ্ট পেলেও মুখে হাসি রেখে বললেন, বাবা তোমার শাশুড়ীর মতো অতো ভালোবাসতে আমি শিখিনি। বাবা আমার একটা কথা রাখবি?
ছেলেঃ বলো মা রাখবো।
মাঃ এখন তুই আবার তোর শশুর বাড়ি চলে যা। ঠিক ছয় মাস পরে বাড়ি ফিরবি। এক দিন আগেও আসবিনা।

ছেলে এইটা তো খুব ভালো সুযোগ। আমার শাশুড়ী আমায় যতো ভালোবাসে তাতে ছয় মাস কেন ছয় বছর বেড়ালেও বেড়ানোর মজা শেষ হবেনা। মা বললেন ঠিক আছে বাবা তাহলে তুমি যাও।
ছেলে বউকে নিয়ে শশুর বাড়ি ফিরে গেল।

শাশুড়ী জামাইকে দেখে বললে কি বাবাজি বাড়িতে গেলেনা? গিয়ে ছিলাম আবার আপনার কথা মনে পরলো তাই চলে এলাম। শাশুড়ী একগাল হাসি নিয়ে বললো ভালো করেছো। শশুর মশাই বাড়ি ফিরে দেখলো জামাই ঘরে। ঘরে ঢুকে বউকে বললো কিগো তোমার জামাই বাড়ি যায়নি? তিনি উত্তরে বললো গিয়েছিলো আবার ফিরে এসেছে আমার কথা নাকি খুব মনে পরছিলো। শশুর বললো কেমন বেয়াক্কেল জামাই এই এক সপ্তাহ বেড়িয়ে সকালে গেল আবার বিকেলেই চলে এলো। শাশুড়ী বললো চুপ করো শুনতে পাবে। দু এক দিনেই তো আবার চলে যাবে। জামাই বেচারা সব কথা শুনে ফেললো। ভাবছে এইটুক সময়ের মধ্যে এতো পরিবর্তন! হোক ছয় মাস বেড়াতে হবে।

এখন আর আগের মতো আস্ত মুরগী তো দুরের কথা নিয়মিত মাছ ভাতও জুটেনা। কয়েক দিন পর সকাল বেলা একটা জাল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, বাবা খালি বসে বসে খাবে কি দিয়ে? কয়টা মাছ ধরে নিয়ে আসো। পরে দিন গরুর দড়ি হাতে দিয়ে বললো, যাও গরুটা বেধে রেখে আসো। পরে হাতে কাচি ধরিয়ে দিয়ে বললো যাও ঘাস কেটে আনো। এতে জামাই বাবাজি বিব্রত হলেও কিছু বলতে পাছেনা। এক দিন জামাই বাবার খুব জ্বর এলো মেয়ে পাশে বসে মাথায় পানি দিচ্ছে তাছাড়া গলায় অনেক ব্যাথা- কথা বলতে পারচ্ছে না। শাশুড়ী একবারও দেখতে যাওয়াতো দুরের কথা। মেয়েকে বললো কিরে তোর জামাই শুইয়া রইছে আর আকাইম্মাডার মাথায় পানি দাও। উঠ যাইয়া ঘরের কাম কাইজ কর।

বউ বললো, আর কতো অপমান সহ্য করব? চলো বাড়ি যাই। এখনো চার মাস পরে যাবো। এই কথা শুনে শাশুড়ী বললো, আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও গিয়া বদলা খেটে খাও। আমারে মুক্তি দাও বাপু। এর থেকে ঘর জামাই রাখলে বিয়ের বাড়তি খরচটা অন্তত বাচতো।

এভাবে প্রতি দিন যা তা ব্যাবহার করছে আর সহ্য করা যায়না। রেগে গিয়ে বউকে একটা চর মারলো। এতে যা হবার হলো; শাশুড়ী এক রকম ঝাটা পেটা করে ঘর থেকে বের করে দিলো আদরের জামাই বাবাজিকে।

ছেলে এতো দিনে হারে হারে বুজতে পারলো। মায়ের থেকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারেনা।
এখন মাত্র তিন মাস হলো এর মধ্যেই এই আচরন। মা তো ত্রিশ বছরেও এমন আচরন করেনি। অসুখ হলে রাতের পর রাত জেগে থাকতেন। পাশে বসে কেঁদে কেঁদে দোয়া করতেন।

ছেলে বাড়ি গিয়ে মায়ের পায়ের উপর পড়ে বললো, মায়ের মত আপন পৃথিবীতে কেউ হতে পারে না। আমাকে মাফ করে দাও।
হে আল্লাহ তুমি পৃথিবীর সকল মাকে সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

You May Also Like

About the Author: Anuprerona

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.