Wednesday, April 24, 2024
Homeবাণী-কথাবাঁধ - জহির রায়হান

বাঁধ – জহির রায়হান

'বাঁধ' - জহির রায়হান

আর কিছু নয়, গফরগাঁ থাইকা পীর সাহেবেরে নিয়া আস তােমরা। অনেক ভেবে চিন্তে বললেন রহিম সর্দার। তাই করেন হুজুর, তাই করেন। একবাক্যে সায় দিল চাষিরা। গফরগাঁ থেকে জবরদাস্ত পীর মনােয়ার হাজিকেই নিয়ে আসবে ওরা। দেশজোড়া নাম মনােয়ার হাজির। অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি তিনি। মুমূর্ষ রােগীকেও এক ফুয়ে ভালাে করেছেন এমন দৃষ্টান্তও আছে।

সেবার করিমগঞ্জে যখন ওলাবিবি এসে ঘরকে ঘর উজাড় করে দিচ্ছিল তখন এই মনােয়ার হাজি -ই রক্ষা করেছিলেন গাঁটাকে। সাধ্য কি ওলাবিবির মনােয়ার হাজির ফুয়ের সামনে দাঁড়ায়। দিন দুয়েকের মধ্যে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালিয়ে গেল ওলাবিবি, দু’দশ গাঁ ছেড়ে। এমন ক্ষমতা রাখেন মনােয়ার হাজি।

গাঁয়ের লােক খুশি হয়ে অজস্র টাকা পয়সা আর অজস্র জিনিসপত্র ভেট দিয়েছিল তাঁকে।

কেউ দিয়েছিল বাগানের শাক-সবজি। কেউ দিয়েছিল পুকুরের মাছ। কেউ মােরগ হাঁস। আবার কেউ দিয়েছিল নগদ টাকা।

দুধের গরুও নাকি কয়েকটা পেয়েছিলেন তিনি। এত ভেট পেয়েছিলেন যে, সেগুলাে বাড়ি নিতে নাকি তিন তিনটি গরুর গাড়ি লেগেছিল তাঁর।

সেই সৌভাগ্যবান পীর মনােয়ার হাজি! তাকেই আনবে বলে ঠিক করল গায়ের মাতব্বরেরা, চাষি আর ক্ষেত মজুররা। বললে, চাদা দিমু? কিসের লাইগা দিমু? ওই লােকড়ার পিছে ব্যয় করবার লাইগা?

মতি মাসটারের কথায় দাতে জিভ কাটল জমির মুন্সি।

তওবা, তওবা, কহেন কি মাস্টার সাব। খােদাভক্ত পীর, আল্লার ওলি মানুষ। দশ গাঁয়ে যারে মানে, তার নামে এত বড় কুৎসা! ভালা কাজ করলা না মাস্টার, ভালা কাজ করলা না। ঘন ঘন মাথা নাড়লেন জমির ব্যাপারী। পীরের বদ দোয়ায় ছাই অইয়া যাইবা! কথা শুনে সশব্দে হেসে উঠল মতি মাস্টার। কি যে কও চাচা, তােমাগাে কথা শুনলে হাসি পায়।

হাসি পাইবাে না, লেখাপড়া শিখা তাে এহন বড় মানুষ অইয়া গেছ। মুখ ভেংচিয়ে বললেন জমির ব্যাপারী। চাঁদা দিলে দিবা না দিলে নাই, এত বাহাত্তরি কথা ক্যান?

কিন্তু, বাহাত্তরি কথা আরাে একজনের কাছ থেকে শুনতে হলাে তাদের। শােনালাে দৌলত কাজির মেজ ছেলে রশিদ। শহরে থেকে কলেজে পড়ে। ছুটিতে বাড়িতে এসেছে বেড়াতে। চাঁদা তােলার ইতিবৃত্ত শুনে সে বলল, পাগল আর কি, পীর আইনা বন্যা রুখবাে! এ একটা কথা অইলাে?

কথা নয় হারামজাদা। জমির মুন্সি কোন জবাব দেবার আগেই গর্জে উঠলেন দৌলত কাজি নিজে। আল্লাহর ওলি, পীর দরবেশ; ইচ্ছা করলে সব কিছু করতে পারে। সব কিছু করতে পারে তারা। এই বলে নূহ নবি আর মহাপ্লাবনের ইতিকথাটা ছেলেকে শুনিয়ে দিলেন তিনি।

খবরটা রহিম সর্দারের কানে যেতে দেরি হলাে না। দু-দশ গাঁয়ের মাতব্বর রহিম সর্দার। পঞ্চাশ বিঘে খাস আবাদি জমির মালিক। একবার রাগলে, সে রাগ সহজে পড়ে না তাঁর। জমির মুন্সির কাছ থেকে কথাটা শুনে রাগে থরথর করে কেঁপে উঠলেন তিনি, এ্যা! খােদার পীরের ঠাট্টা তামাসা । আচ্ছা, মতি মাস্টারের মাস্টারি আমি দেইখা নিমু। দেইখা নিমু মইত্যা এ গেরামে কেমন কইরা থাহে। অত্যন্ত রেগে গেলেও একেবারে হুঁশ হারাননি রহিম সর্দার। কাজির ছেলে রশিদের নামটা অতি সন্তর্পণে এড়িয়ে গেলেন তিনি। কাজি বাড়ি কুটুম্ব বাড়ি, বেয়াই বেয়াই সম্পর্ক, তাই।

পীর সাহেবের নূরানি সুরত দেখে গায়ে ছেলে-বুড়ােরা অবাক হলাে। আহা! এমন যার সুরত, গুণতার কত বড়, কে জানে। ভক্তি সহকারে পীর সাহেবের পায়ের ধুলাে নিল সবাই। গরিব মানুষ হুজুর! মইরা গেলাম, বাঁচান। হুজুরের পা জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলেন জমির ব্যাপারী।

জমির ব্যাপারী বােকা নন। বােঝেন সব। খােদার মন টলাতে হলে আগে পীর সাহেবের মন গলাতে হবে। পীর সাহেবের মন গললে এ হতভাগাদের জন্যে খােদার কাছে প্রার্থনা করবেন তিনি। তারপরেই
খােদা মুখ তুলে তাকাবেন ওদের দিকে।

পীর সাহেব এসে পৌঁছলেন সকালে। আর ঘটা করে বৃষ্টি নামল বিকেলে।

বৃষ্টি, বৃষ্টি আর বৃষ্টি। সারাটা বিকেল বৃষ্টি হলাে। সারা রাত চললাে তার একটানা ঝপঝপ ঝনঝন শব্দ। সকালেও তার বিরাম নেই। প্রতি বছর এ সময়ে শ্রাবণ মাসের ডাক্তর। কেউ কেউ বলে বুড়াে বুড়ির ‘ডাত্তর’। এই ডাত্তরের আয়ুষ্কাল পনের দিন। এই পনের দিন একটানা ঝড় বৃষ্টি হবে। জোরে বাতাস বইবে। বাতাস যদি বেশি থাকে আর অমাবস্যা কি পূর্ণিমার জোয়ারের যদি নাগাল পায় তাহলে সর্বনাশ। নির্ঘাত বন্যা। ‘খােদা, রক্ষা কর! রক্ষা কর খােদা! রহম কর এই অধমগুলাের ওপর! কান্নায় ভেঙে পড়লেন জমির ব্যাপারী। মনে মনে মানত করলেন। যদি ফসল নষ্ট না হয় তাহলে হালের গরু জোড়া পীর সাহেবকে ভেট দেবেন তিনি। গম্ভীর পীর সাহেব চুলে ঢুলে তছবি পড়েন আর খােদার মহিমা বর্ণনা করেন সবার কাছে। খােদার মহিমা বর্ণনা শেষ হলে পীর সাহেবের মহিমা বর্ণনা প্রসঙ্গে অসংখ্য আজগুবি ঘটনার অবতারণা করেন তাঁর সাকরেদরা।

মনে আশা জাগে চাষিদের। আনন্দে চক্‌চক্ করে ওঠে কোটরে ঢােকা চোখগুলাে। ভিড়ের মাঝ থেকে গনিমােল্লা ফিসফিসিয়ে বললেন, কই নাই মনার পাে? এই পীর যেই সেই পীর নয়, খােদার খাস পীর! যারা শুনেছে তারা মাথা নেড়ে সায় দিল, হা, কথাটা সত্যি। আর যারা শােনেনি তারাও সেই মুহূর্তে বিশ্বাস করল কথাটা। পীর সাহেব সব পারেন। কিন্তু, থামাচ্ছেন না, প্রয়ােজনবােধে থামাবেন তাই।।

কিন্তু, মতি মাস্টার বিশ্বাস করল না কথাটা। হেসে উড়িয়ে দিল। বললাে, ঝড় থামাবে ওই বুড়ােটি? মন্তর পড়ে ঝড় থামাবে?

হ্যা, থামাবে। আলবত থামাবে। আকাশভেদী হুংকার ছাড়লেন গনি মােল্লা। চোখ রাঙিয়ে ফতােয়া ও দিলেন। এই নাফরমান বেদীনগুলাে গাঁয়ে আছে দেইখাই তাে গাঁয়ের এই দুরবস্থা।

হ্যা, ঠিক কইছ মােল্লার পাে। তাঁকে সমর্থন করলেন বুড়াে তিনজী মিঞা। এই কাফেরগুলােরে গাঁ থাইকা না তাড়াইলে গাঁয়ের শান্তি নাই।

কিন্তু গাঁয়ের শান্তি রক্ষার চাইতে ‘ঢল’ রােখাটাই এখন বড় প্রশ্ন। প্রকৃতি উন্মাদ হয়ে পড়েছে। ক্ষুব্ধ বাতাস বারবার সাবধান করছে। ঢল হইব, ঢল। পানি ভরা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনজী মিঞা। রক্ত দিয়ে বােনা সােনার ফসল।

হায়রে ফসল।

হঠাৎ পাগলের মতাে চিৎকার করে ওঠেন তিনি, খােদা!

মসজিদে আজান পড়ছে। পীর সাহেব ডাকছেন সবাইকে। এস মিলাদ পড়তে এস। এস মঙ্গলের জন্য এস। টুপিটাকে মাথায় চড়িয়ে বৃষ্টির ভেতর ভিজে ভিজেই মসজিদের দিকে ছুট দিলেন জমির ব্যাপারী। যাবার সময় ঘরের বৌ-ঝিদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলেন, এ রাত ঘুমাইবার রাত নয়। বুঝলা? অজু কইরা বইসা খােদারে ডাক।

অজুটা সেরে উঠে দাঁড়াতেই কার একটা হাত এসে পড়ল ছকু মুন্সির কাঁধের ওপর। জমির মন্সির ছেলে ছকু মুন্সি। গাট্টাগােট্টা জোয়ান মানুষ। প্রথমটায় ভয়ে আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলাে, কে? ভয় নাই আমি মতি মাস্টার।

ব্যাপার কি? এ রাত্তির বেলা? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলে ছকু। মতি মাস্টার বললাে, যাও কনহানে? যাই মসজিদে। ছকু জবাব দিল। ক্যান তােমরা যাইবা না?

স্বল্প থেমে মতি মাস্টার বললাে। এক কাজ কর ছকু। মসজিদে যাওয়া এহন রাখ। ঘর থাইকা কোদাল নিয়া বাইর অইয়া আয়। যা জলদি কর। কোদাল দিয়া কি অইবাে? রীতিমতাে ঘাবড়ে গেল ছকু মুন্সি। যা ছকা। কোদাল আন। পেছন থেকে বললাে মন্তু শেখ।

এতক্ষণে পুরাে দলটার দিকে চোখ পড়লাে ছকু মুন্সির। একজন দুজন নয়, অনেক। অন্তত জন পঞ্চাশেক হবে। সবার হাতে কোদাল আর ঝুড়ি।

মতি মাস্টার এত লােক জোটাল কেমন করে? কাজি বাড়ির পড়ুয়া ছেলে রশিদকে দলের মধ্যে দেখে আরাে একটু অবাক হলে ছকু।

ব্যাপারটা অনেক দূর আঁচ করতে পারল সে। গতকাল এ নিয়েই কাজি পাড়ায় বুড়াে কাজির সঙ্গে তর্ক করছিল মতি মাস্টার। গত কয়েক বছর কি খােদারে ডাকেন নাই আপনারা? হ্যা, ডাকছিলেন। কিন্তু ফল কি হয়েছে ? ফসল কি বাচছে আপনাগাে? বাঁচে নাই। তাই কইতে আছলাম কেবল বইসা বইসা খােদারে ডাকলে চলবে না। এ কয়টা গায়ে মানুষ তাে আমরা কম নই। সবাই মিলে বাঁধটারে যদি পাহারা দিই, সাধ্য কি বাঁধ ভাঙে?

মতি মাস্টারের কথা শুনে দাঁত খিচিয়ে তেড়ে এসেছিলেন বুড়াে কাজি। অশ্রাব্য গালি-গালাজ করেছিলেন তাকে। সে কাল বিকেলের কথা। মসজিদে আজান হচ্ছে। পীর সাহেব ডাকছেন সবাইকে, এস মিলাদ পড়তে এস। এস মঙ্গলের জন্য এস।

ও সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল ছকু। তারপর টুপিটাকে মাথায় চড়িয়ে মসজিদের দিকে পা * বাড়ালাে সে। খপ করে একখানা হাত চেপে ধরলে রশিদ, ছকু।

এই ছকা। ক্ষেপে উঠলাে পণ্ডিত বাড়ির চাদু।

অগত্যা, কোদাল আর ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে এল চকু মুন্সি।

মাইল খানেক হাঁটতে হবে ওদের। তারপর বাঁধ।

নবীন কবিরাজের পুকুরপাড়ে এসে পৌঁছতেই জোরে বিদ্যুৎ চমকে উঠে প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ল একটা।

ভয়ে আঁতকে উঠে থমকে দাঁড়াল ছকু। খােদা সাবধান করছে তাদের। খবরদার যাইও না।

যাইও না মাস্টার। থামাে, থামাে! হঠাৎ চিৎকার করে উঠলাে ছকু মুন্সি। খােদা নারাজ হইবাে, মসজিদে চল সবাই।

ইস, চুপ কর ছকু। বৃষ্টিতে ভিজে কাপছে মতি মাস্টার। এখন কথা কইবার সময় না। জলদি চল।। আবার চলতে শুরু করল ওরা।

দূরে মসজিদ থেকে দরুদের শব্দ ভেসে আসছে। পীর সাহেবের সঙ্গে গলা মিলিয়ে দরুদ পড়ছে তিনজী মিঞা, জমির ব্যাপারী, রহিম সর্দার ও আরাে কয়েকশ জোয়ান জোয়ান মানুষ। অসহায়ের মত উর্ধ্বে হাত তুলে চিৎকার করছে তারা। হে আসমান জমিনের মালিক! হে রহমানের রহিম! তুমিই সব। তুমি রক্ষা কর আমাদের!

ওদিকে মরিয়া হয়ে কোদাল চালাচ্ছে মতি মাস্টারের দল। এ বাঁধ ভাঙতে দেবে না তারা। কিছুতেই না। তাদের সােনার ফসল ডুতে দেবে না তারা কিছুতেই। কখনই না।

ঝা-বিক্ষুব্ধ আকশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে বাজ পড়ছে। সোঁ সোঁ শব্দে বাতাস বইছে। খরস্রোতা নদী ফুলে ফেঁপে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। অমাবস্যার জোয়ার। নির্ঘাত বাঁধ ভেঙে পড়বে।

হায় খােদা! ঘরের বৌ-ঝিয়েরা করুণ আর্তনাদ করে ফরিয়াদ জানায় আকাশের দিকে চেয়ে। দুনিয়াতে ইমান বলে কিছু নেই, তাই, খােদা রাগ করেছেন। মানুষ গরু সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবেন তিনি। ধ্বংস করে দেবেন এই পৃথিবীটাকে, পাপে ভরা এই পৃথিবী।

দুরু দুরু বুক কাঁপছে তিনজী মিঞার। চোখের জলে ভাসছেন জমির ব্যাপারী। আর টুলে চুলে
তছবি পড়ছেন।

হায়রে ফসল।
সােনার ফসল।
এ ফসল নষ্ট হতে পারে না।
টর্চ হাতে ছুটোছুটি করছে মতি মাস্টার।
কোদাল চালাও! আরাে জোরে।
বাঁধে ফাটল ধরেছে। এ ফাটল বন্ধ করতেই হবে।
অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে কোদাল চালাচ্ছে ওরা।
মন্তু শেখ চিৎকার করে বললে, আলির নাম নাও ভাইয়া, আলির নাম নাও।।
আলির নামে কাম হইবাে শেখের পাে? বললে বুড়াে কেরামত ।
তারছে একডা গান গাও। গায়ে। জোস আইবাে। মন্ত শেখ গান ধরলাে।

গানের শব্দ ছাপিয়ে হঠাৎ বাজ পড়লাে একটা কাছে কোথায়। কোদাল চালাতে চালাতে মতি মাস্টারকে আর তার চৌদ্দ পুরুষকে মনে মনে গাল দিতে লাগলাে দুকু মুন্সি, খােদার সঙ্গে লাঠালাঠি। হা-খােদা, এই কি জমানা আইছে। খােদা, এই অধমের কোনাে দোষ নাই। এই অধমেরে মাপ কইরা দিও। ঝুড়ি মাথায় বিড়বিড় করে উঠলাে পণ্ডিত বাড়ির চাদু, হাত-পা গুটাইয়া মসজিদে বইসা বইসা ঢল রুখবাে না আমার মাথা রুখবাে। তারপর হঠাৎ এক সময়ে মতি মাস্টারের গলার শব্দ শােনা গেল, আর ভয় নাই চাঁদু। আর ভয় নাই। এবার তােরা একটু জিরাইয়া নে! এতক্ষণে হাসি ফুটলাে সবার মুখে। শ্রান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বাঁধের ওপর এলিয়ে পড়লাে অবশ দেহগুলাে। পঞ্চাশটি ক্লান্ত মানুষ। সূর্য তখন পুব আকাশে উঁকি মারছে।

আধাে আলাে অন্ধকার আকাশ বেয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। মৃদুমন্দ বাতাসের তালে তালে নাচছে সােনালি ফসল। মসজিদ থেকে বেরিয়ে হঠাৎ সেদিকে চোখ পড়তে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাে
জমির বেপারী। ডােবেনি। ডুবতে দেননি পীর সাহেব।

খুশিতে চক করে উঠলাে জমির মুন্সির চোখ দুটো। দৌড়ে এসে পীর সাহেবের পায়ে চুমু খেলেন গনি মােল্লা। ডডাবেনি ডােবেনি। ফসল তাদের ডােবেনি। ডুবতে দেননি পীর সাহেব। এক মুহূর্তে যেন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সমস্ত গা-টা। ছেলে বুড়াে সবাই হুমড়ি খেয়ে ধেয়ে আসছে পীর সাহেবের পায়ে চুমু খাবার জন্যে। ঘুম চোখে তখনও চুলছেন পীর সাহেব। স্বল্প হেসে বললেন, খােদার কুদরতের শান কে বলতে পারে। সাকরেদরা সমস্বরে বলে উঠলাে, সারারাত না ঘুমাইয়া খােদারে ডাকছেন আমাগাে পীর সাব। বাঁধ ভাঙ্গে সাধ্য কি? পীর সাহেব তখনাে হাসছেন। স্বল্প পরিমিত হাসি আপেলের রক্তিমাভার মতাে ফেটে ছড়িয়ে পড়ছে মুখের সর্বত্র।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments