Monday, August 18, 2025
Homeরম্য গল্পশিয়াল ও সিংগাড়া - মজার গল্প

শিয়াল ও সিংগাড়া – মজার গল্প

একটি বিরাট পাহাড়। পাহাড়ের উঁচুতে ছিল একটি কুটির। সেখানে বাস করতো এক গেরস্থ আর তার বউ। একদিন গেরস্তের বউ তিনটি সিংগাড়া তৈরি করলো। একটি বড়ো, একটি মাঝারি আর একটি ছোট। তিনটি সিংগাড়া ভাল করে ভেজে গিন্নি সেগুলো রেখে দিলো জানালার ধারে মিটসেফের ওপর একটি বারকোশে।

তিনটি সিংগাড়ার মধ্যে ছোটটি ছিল খুবই চালাক। কড়াইয়ের কড়া ভাজায় তার মেজাজটাও হয়ে উঠেছিল তিরিক্ষি। গায়ের রংটা ছিল বাদামী। লোভনীয় ঘ্রাণ ছুটছিল তার শরীর থেকে। নিজের সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণে নিজেই চমৎকৃত হলো সে। সিংগাড়া মনে মনে ভাবলো, কি সুন্দর আমি! আমার রূপের কোন জুড়ি নেই। আমার পক্ষে বারকোশে শুয়ে থাকা এবং অচিরেই মানুষের পেটে যাওয়া উচিত নয়। নিশ্চয়ই আমার রূপ আর সৌন্দর্য নিয়ে বাইরে গেলে আমি যথেষ্ট সমাদর লাভ করতে পারবো।

যেই না ভাবা সেই না কাজ। সিংগাড়া এক লাফ মেরে জানালা গলিয়ে বাইরে নামলো। পাহাড়ের গা বেয়ে দ্রুত ছুটলো সে।

‘হ্যা, খুব দ্রুত এসেছি। আমার কোন ত্রুটি হয়নি।’

আনন্দে নেচে উঠলো তার মন। পাহাড়ের পাদদেশে আকাবাঁকা পথ বেয়ে খানিকটা এগিয়ে গেলো সে। সামনেই পড়লো একটা ছোট্ট নদী। নদীর ওপারে যাওয়ার কৌশল খুঁজলো সিংগাড়া। তখন পাশের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল একটি শিয়াল। সিংগাড়া ভাবলো, ওকেই জিজ্ঞেস করা যাক না নদী পারাপারের কথা।

আগু পিছু না ভেবেই সিংগাড়া ডাকলো শিয়ালকে। বললোঃ শেয়াল ভাই, আমি নদীর ওপার যেতে চাই। ধূর্ত শিয়াল খানিকটা কেশে পুরোপুরি ভালো মানুষের ভাব দেখালো। তারপর ভেবে চিন্তে বললোঃ এই অবেলায় কেমন করে যে ওপারে যাবে, ভেবে পাইনে। তবে লোকের ডাকেতো সাড়া না দিয়ে পারিনে। তুমি চাওতো, আমি পার করে দিই।

সিংগাড়া কি যেন একটু ভাবলো। তারপর বললোঃ আমিতো যেতেই চাই ভাই। কোন বিপদ হবে নাতো।

‘কি যে বলো বাপু, মানুষের উপকার করে করে বুড়ো হয়ে গেলাম। তুমি চাওতো এক্ষুনি পার করে দেই।’ এক গাল হাসলো শিয়াল।

শিয়ালের কথায় রাজী হলো সিংগাড়া। বসলো গিয়ে শিয়ালের পিঠের ওপর। নদীপথে পাড়ি জমালো তারা। কিছুদূর গিয়ে শিয়াল তার শরীর খানিকটা ডুবিয়ে দিল।

শিয়াল বললোঃ সিংগাড়া, বন্ধু তুমি আমার ঘাড়ে এসে বসো। এখানে খুব বেশী পানি। তাই শরীর ভিজে যাচ্ছে।

সিংগাড়া শিয়ালের কথায় তার ঘাড়ের ওপর গিয়ে বসলো। ভাবলো, যাক বাঁচা গেলো। খানিকটা এগিয়ে শিয়াল করলো কি, তার ঘাড়ও পনিতে ডুবিয়ে দিলো। ভয় পেয়ে গেলো সিংগাড়া।

শিয়াল বললোঃ এখানে পানি খুব বেশী, তাই ডুবে যাচ্ছি। তুমি আমার মাথার ওপর বসো। সিংগাড়া শিয়ালের মাথায় গিয়ে বসলো। শিয়াল পথ চললো। নদীর বেশীর ভাগ পার হয়ে এলো তারা। এমন সময় শিয়াল তার নাক উচু করে মাথা ডুবিয়ে দিলো। আবার ভয় পেয়ে গেলো সিংগাড়া। শিয়াল তাকে অভয় দিয়ে বললোঃ এখানে আরো গভীর পনি। তুমি আমার নাকের ডগায় বসো। না হলে ডুবে যাবে। সিংগাড়া নাকের ডগায় বসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নদীর কিনারে এসে গেলো।

‘প্রিয়, দোস্ত, এবারে তুমি আমার পেটে এসো’–এই বলে শিয়াল সিংগাড়াকে খপ্‌ করে কামড়ে ধরলো।

নদীর কুলে এসে সিংগাড়ার আর কোন চিহৃই পাওয়া গেল না। চাটুকারের কথায় পড়লে এভাবেই মরতে হয়।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments