Thursday, April 25, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পআইকি সোয়েনস্টাইনের ভালোবাসার ঔষধ - ও. হেনরী

আইকি সোয়েনস্টাইনের ভালোবাসার ঔষধ – ও. হেনরী

'আইকি সোয়েনস্টাইনের ভালোবাসার ঔষধ' - ও. হেনরী

ব্লু লাইট ড্রাগ স্টোরটি শহরের একেবারে কেন্দ্রে কুঞ্জবন (Bowery) ও ফার্স্ট অ্যাভিনিউ এর মাঝখানে এবং পাশের দুটি রাস্তা থেকে সমান দূরত্বে অবস্থিত। ব্লু লাইট কখনো ঔষধালয়কে টুকটাক ঔষধ (bric–a–brac,), সুগন্ধি ও আইসক্রিম সোডার দোকান মনে করে না। যদি তুমি কোন ব্যাথা-নাশক ঔষধ চাও তাহলে তোমাকে রঙ্গিন মিস্টি লজেন্স (bonbon) দেয়া হবে না।

ব্লু লাইট আধুনিক ঔষধালয় গুলোর কাজ বাচানো ফাঁকিবাজিকে (labour–saving arts) অবজ্ঞার চোখে দেখে। আফিম ভিজিয়ে নরম করা (macerate) অথবা আফিমের আরক (laudanum) বা বেদনানাশক (paregoric) ঔষধ পরিশ্রুত (percolate) করা ইত্যাদি কাজ নিজের হাতেই করে থাকে।

এখনও পর্যন্ত লম্বা-লম্বা প্রেসক্রিপশনের যাবতীয় ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে এদের। ডেস্কের পেছনেই এদের বড়ি তৈরির পাথরের পিড়ির ওপর ওষুধগুলো মাড়াই করে ছুরি দিয়ে ভাগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। তারপর আঙুল দিয়ে গোল করে ভষ্ম ম্যাগনেশিয়ায় (dusted with calcined magnesia) ডুবিয়ে পিজবোর্ডের তৈরি গোলাকার ছোট-ছোট বড়ি রাখার বাক্সে করে সেগুলো সরবরাহ করা হয়। এদের দোকানটা কোণের দিকে। আশেপাশে ময়লা ছেঁড়া কাপড়-পরা দুর্দান্ত ছেলেমেয়েরা (coveys of ragged–plumed hilarious children) খেলা করে, আর মাঝে-মধ্যে দৌড়ে এসে কয়েক ফোঁটা কাশির ওষুধ বা সিরাপ চেয়ে খায়।

আইকি সোয়েনস্টাইন (Ikey Schoenstein) ব্লু লাইটের রাতের কেরানি। খদ্দেরদের অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু সে। এখানে ড্রাগিস্ট হলেন একাধারে পরামর্শদাতা, ধর্ম-উপদেষ্টা এবং অভিজ্ঞ ও উৎসুক প্রচারক এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক (a counsellor, a confessor, an adviser, an able and willing missionary and mentor)। কাজেই আইকির চোঙাকৃতি চশমা-পরা নাক (corniform, be–spectacled nose), আর বিজ্ঞজনোচিত শীর্ণদেহ ব্লু লাইটের আশেপাশের (vicinity) সবারই পরিচিত। তার উপদেশ এবং অনুগ্রহ তাই সবারই কাম্য।

দুই কাইক (squares) দূরেই মিসেস রিডল (Mrs. Riddle) এর বাড়িতে আইকি খাওয়া – দাওয়া করে। চা খাওয়ার কাজও সে সেখানে সারে। মিসেস রিডল-এর মেয়ের নাম রোজি। অনর্থক কথা বাড়িয়ে (circumlocution) লাভ নেই – তোমরা অবশ্যই বুঝে গেছো – আইকি মনে মনে রোজিকে পসন্দ করে। তার সমস্ত চিন্তায় রঙের ছোঁয়াচ (tinctured) লাগিয়েছিল রোজি। তার কাছে রাসায়নিক পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার মূর্ত প্রতীক (chemically pure and officinal) ছিল রোজি। ওষুধ প্রস্তুত প্রণালী’ বইখানাতেও তার সঙ্গে তুলনা করা যায় এমন কিছুর নিতান্তই অভাব। কিন্তু আইকি এত বেশি ভীরু যে তার কুণ্ঠিত ও ভীত মানসিকতার সঙ্গে মনের আকাঙ্ক্ষাকে সে কিছুতেই খাপ খাওয়াতে পারে না (his hopes remained insoluble in the menstruum(-সর্বদ্রাবক) of his backwardness and fears.)।
কাউন্টারের পেছনে সে নিজের জ্ঞানবত্তা ও গাম্ভীর্য সম্পর্কে সদা-সচেতন উঁচুস্তরের মানুষ। কিন্তু বাইরে এলেই তার রূপ যেত বদলে। তখন তাকে দেখলেই মনে হত দুর্বল এবং প্রায় অন্ধ (purblind); যেন মোটর চালকদের অভিশাপ পাওয়া পথচারী একজন (rambler)। কাপড়-চোপড় বেমানান-তো বটেই, তার ওপর তা প্রায় সবসময়েই নানারকমের রাসায়নিক পদার্থে রঞ্জিত আর তা থেকে বেরোয় সকোট্রিন অ্যালো এবং অ্যামোনিয়ার বিশ্রী গন্ধ( smelling of socotrine aloes and valerianate of ammonia)।

আইকির আশার মলমে মাছি (fly in Ikey’s ointment) হয়ে বসেছিল চাঙ্ক ম্যাকগাওয়ান।

আইকির মতোই মি. ম্যাকগোয়ানও (Chunk McGowan) রোজির মুখের উজ্জ্বল হাসিকে লুফে নেবার, অর্থাৎ তাকে নিজের করে পাবার জন্য সচেষ্ট ছিল। কিন্তু আইকির মতো মাঠের বাইরের খেলোয়াড় সে নয়, ব্যাট থেকে বলটা তুলে নিতেই সে উদ্যোগী। এদিকে সে আবার আইকির বন্ধু এবং খরিদ্দার। সন্ধ্যা বেলায় বনের দিকে হৈ-হল্লায় কাটাবার পর প্রায়ই আইকির দ্বারস্থ হত সে। কখনো-বা আহত স্থানে আয়োডিন বুলিয়ে (bruise painted with iodine) অথবা রাবার-প্লাস্টার করাতে।
একদিন বিকেলে স্বাভাবিক শান্ত ও সহজভাবে ব্লু-লাইট-এ ঢুকল সে। ঢুকেই একটা টুল টেনে নিয়ে বসল। গম্ভীর, মিষ্টি অথচ কর্তব্যকঠোর ও অদম্য। আইকি তার হামানদিস্তা দিয়ে তার উল্টোদিকে বসে গাম বেনজয়েন (gum benzoin) গুঁড়ো করতে শুরু করেছিল।

মুখ খুলল ম্যাকগোয়ান। ‘আইকি,’ বলল সে। ‘দয়া করে মন দিয়ে শোন। আমার কথাটা ভালো করে বুঝে ওষুধ দিতে হবে, বুঝলে?’ বৃথাই আইকি তার সারা দেহে (countenance) চোখ বুলায় প্রত্যাশিত আঘাতের চিহ্নের খোজে।’
‘কোট খোল,’ আদেশের সুরে বলল সে, ‘নিশ্চয়ই পাঁজরাটা তোমার গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কতবার আমি তোমাকে বলেছি, ঐ ভেঁপো ছোকরাগুলো তোমাকে শেষ করবে।’
ম্যাকগোয়ান হাসল, ‘তারা নয়,’ সে বলল, ‘ভেঁপো ছোকরারা কিছু করেনি। রোগের মূলটা কিন্তু তুমি ঠিকই ধরেছ। সেটা আমার কোটের নিচে পাঁজরার কাছেই বটে। আর ভূমিকা করব না, সোজাসুজিই বলছি—আজ রাতেই রোজ আর আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করব ঠিক করেছি।’

কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মর্টারের সজোর আঘাতে আইকির বাঁ হাতের একটা আঙুল একদম থেঁতলে গেল, কিন্তু সে কিছুই টের পেল না। ইতিমধ্যে ম্যাকগাওয়ানের মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়ে সেখানে দেখা দিয়েছে এক হতবুদ্ধিভাব ও বিষন্নতা।

‘অবশ্যি,’ বলে চলল সে। ‘যদি ইতিমধ্যে তার মত না বদলায়! আজ দুই সপ্তাহ ধরে আমরা পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি করছি। সকালে রাজি হলে সন্ধ্যাবেলাতেই আবার তার মত বদলে যায়। শেষপর্যন্ত আমরা আজ রাতে পালানো ঠিক করেছি। রোজি-ও পুরো দু-দিন ধরে হ্যা বলছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের এখনও পাচ ঘণ্টা বাকি। আমার ভয় হয় সে বোধ হয় শেষ মুহূর্তে আবার বেঁকে দাঁড়াবে।’

‘তুমি বলেছিলে তোমার ওষুধ লাগবে!’—বলল (remarked) আইকি।
ম্যাকগোয়ান একটু অস্বস্তি বোধ করল, একটু বিব্রতও হয়তো—যা তার স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। অকারণ সতর্কতার সাথে একখানা পেটেন্ট ওষুধের বিজ্ঞাপন সে গোল করে পাকাতে লাগল আঙুলে।

‘লাখ টাকা দিলেও আজকের রাতের অভিযানকে এ-সব বাধার অজুহাতে ব্যর্থ করতে আমি রাজি নই,’ বলল সে। ‘এর মধ্যেই আমি হার্লেমে (Harlem) ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি। ক্রিসানথিমাম (chrysanthemums) দিয়ে টেবিল সাজিয়েছি। পানির কেটলি পর্যন্ত তৈরী। এখন পানি ফোটালেই হয়। একজন পাদ্রিকে ঠিক সাড়ে নটায় তার বাড়িতে প্রস্তুত থাকতে বলেছি। এ-চেষ্টা সার্থক হবে আশাকরি যদি রোজি আবার তার মত না বদলায়।’

সন্দেহের দ্বন্দ্বে ম্যাকগোয়ান থামল।

‘আমি এখনও বুঝছি না,’ সংক্ষেপে বলল আইকি, ‘কেনই-বা তুমি ওষুধের কথা বলেছিলে?’

‘বুড়ো রিডল আমাকে একেবারেই পছন্দ করে না,’ দ্বিধাগ্রস্ত প্রেমিক তার যুক্তিগুলোকে পরপর সাজাতে লাগল। একসপ্তাহ ধরে সে রোজিকে দরজার বাইরে পা বাড়াতেও দেয় না। একজন বোর্ডারকে হারাবার ভয় না থাকলে বহু আগেই সে আমাকে নিশ্চয়ই ঘাড় ধরে বের করে দিত। বর্তমানে আমি সপ্তাহে ২০ ডলার করে রোজগার করছি। চাঙ্ক ম্যাকগোয়ানের সাথে পালাবার জন্য রোজিকে কোনোদিন অনুতাপ করতে হবে না।’

‘আমায় মাফ কর চাঙ্ক,’ আইকি বলল। ‘আমাকে এক্ষুনি একটা জরুরি প্রেসক্রিপশনের ওষুধ তৈরি করতে হবে।’
‘আচ্ছা,’ হঠাৎ ম্যাকগোয়ান মুখ তুলে তাকাল। ‘আচ্ছা আইকি, এমন কোনো ওষুধ নেই, মানে এমন কোনো গুড়ো যা কোনো মেয়েকে খাওয়াতে পারলে সে আরো বেশি করে পসন্দ করবে?’

উচ্চতর জ্ঞান সম্বন্ধে সচেতন আইকির ঠোট অবজ্ঞায় কুঁচকে উঠল কিন্তু সে কিছু বলার আগেই ম্যাকগোয়ান আবার শুরু করল, ‘টিম লেসি (Tim Lacy) আমাকে বলেছে, শহরতলির একজন হাতুড়ের কাছ থেকে সে একবার ঐ ওষুধ কিনেছিল। সেটা সোডা ওয়াটারের সাথে তার প্রিয়াকে খাওয়াতেই তার চোখে টিমই হল সব। আর সবাই হল কানাকড়ির সামিল। দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাদের বিয়ে হয়ে গেল।’

কী বলিষ্ঠ অথচ কী সরল এই ম্যাকগাওয়ান। লোক-চরিত্র সম্বন্ধে আইকি যদি আরো একটু অভিজ্ঞ হত, তাহলে সে অনায়াসেই বুঝত যে, তার দেহের কঠিন কাঠামোটি মনের সঙ্গে সূক্ষ্ম তারে বাঁধা। শক্ররাজ্য আক্রমণোদ্যত কোনো ভালো সেনাপতির মতো সেও সম্ভাবিত প্রতিটি ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করে নিচ্ছে।

‘আমি ভাবছি,’ আশার সুরে বলল চাঙ্ক, ‘যদি আমি ঐরকম কোনো পাউডার রাতের খাবারের সথে রোজিকে খাইয়ে দিতে পারি, তবে হয়তো সেটা ওর মনে একটু জোর এনে দিতে পারে তাতে করে সে আর তার প্রতিজ্ঞা (proposition) থেকে পিছিয়ে পড়বে (reneging) না। আমি অবশ্যি মনে করি না যে তাকে টেনে আনবার জন্য খচ্চরের দলের (mule team) দরকার, তবে এটা ঠিক যে ওদের নিজেদের চলতে দেবার চেয়ে চালিয়ে নেয়াই বেশি ভালো। যদি ওষুধটা মাত্র দু-ঘন্টার জন্যও কাজ করে, তবেই আমি কেল্লাফতে করতে পারি।

‘তোমাদের পালিয়ে যাওয়ার বোকামিটা কখন ঘটবে?’ আইকি জানতে চাইল।

‘রাত ন-টায়। রাতের খাওয়া হবে ঠিক সাতটায়। আটটায় রোজি মাথা-ধরার অজুহাতে শুতে যাবে। রাত নটায় বুড়ো পারভেনযানো (Parvenzano) আমাকে তার পেছনের উঠোনে ঢুকিয়ে নেবে। ঐ উঠোনের পাশেই রিডল-এর বেড়ার একটা কাঠ নেই। সেইপথে রোজির জানালার নিচে গিয়ে ফায়ার-এসকেপ দিয়ে তাকে নামিয়ে আনব। তাড়াতাড়ি কাজ সারতে না পারলে পাদ্রিকে ধরা যাবে না। শেষমুহূর্তে রোজি যদি পিছিয়ে না যায়, তবে কাজটা কিছুই কঠিন নয়। তুমি কি আমাকে একটা ওষুধ দিতে পার আইকি?’

আইকি সোয়েনস্টাইন তার নাকটা আস্তে আস্তে ঘষতে লাগল। ‘চাঙ্ক, এই সমস্ত ওষুধ সম্বন্ধেই ড্রাগিস্টদের সবচেয়ে সতর্ক হতে হয়। আমার পরিচিতদের মধ্যে একমাত্র তোমাকেই আমি এই ধরনের ওষুধ বিশ্বাস করে দিতে পারি। শুধু তোমার জন্যই এটা তৈরি করতে আমি রাজি। এই ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় রোজি কীভাবে তোমার চিন্তায় মগ্ন হয় দেখ।’

আইকি প্রেসক্রিপশনসহ ডেস্কের পেছনে চলে গেল। এমন দুটো বড়ি সে বেছে নিল যাদের প্রত্যেকটির মধ্যে সিকি-গ্রেন মর্ফিয়া (morphia) আছে। বড়ি দুটো গুড়ো করে অল্প একটু সুগার-অফ-মিল্ক মেশাল। তারপর সবকিছু পরিচ্ছন্নভাবে সাদা কাগজে জড়াল। বয়স্ক লোকের এতে বিপদাশঙ্কা না থাকলেও যে খাবে তাকে ঘণ্টা-কয়েক নিঃসাড়ে ঘুমাতে হবে,’ ওষুধটা চাঙ্কের হাতে দিয়ে সে বলল, ‘যদি সম্ভব হয় তবে ওটা যেন কোনো তরল পদার্থে মিশিয়ে দেয়া হয়।’

প্রচুর ধন্যবাদ দিয়ে ম্যাকগোয়ান বিদায় নিল। আইকির পরবর্তী কাজেই তার ফন্দি পরিষ্কার বোঝা গেল। লোক পাঠিয়ে মি. রিডলকে ডেকে আনাল সে। রোজি ও ম্যাকগোয়ানের পালাবার পুরো প্ল্যানটা খুলে বলল তাঁকে। মি. রিডল বলিষ্ঠ দেহের তামাটে রঙের মানুষ এবং করিতকর্মাও বটেন।

‘বাধিত হলাম,’ আইকিকে বললেন তিনি। হতভাগা আলসে আইরিশ বদমাশ। আমার ঘরটা রোজির ঘরের ঠিক ওপরেই। খাওয়ার ঠিক পরেই সেখানে গিয়ে বন্দুকে গুলি ভরে অপেক্ষা করব আমি। যদি সে সত্যিই আসে তবে তাকে বিয়ের গাড়ির বদলে অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে বেরোতে হবে!’

কয়েক ঘণ্টার জন্য গভীর নিদ্রামগ্ন রোজি আর প্রতীক্ষারত, সতর্কীকৃত ও সশস্ত্র পিতা—আইকি উপভোগ করল তার প্রতিদ্বন্দ্বীর আসন্ন পরাজয়ের গ্লানি। দুর্ঘটনার খবর পাবার জন্য সে সারারাত অপেক্ষা করল, কিন্তু কোনো খবরই এল না। পরদিন সকাল আটটায় দিনের কেরানি এল। আইকিও সঙ্গে সঙ্গে মি. রিডল-এর বাড়ির দিকে পা বাড়াল। রাতের ঘটনা সম্বন্ধে কৌতূহলের অন্ত ছিল না তার। কিন্তু পথে নামতেই একটা ট্যাক্সি থেকে কে যেন লাফিয়ে নেমে তার হাত চেপে ধরল। আরে এ-যে ম্যাকগোয়ান। তার মুখে বিজয়ীর হাসি। মনের উল্লাস যেন চেপে রাখতে পারছে না।’

‘সব ঠিকমতোই হয়ে গেছে,’ চাঙ্ক এমনভাবে বলল যেন সে স্বপ্নেরভূমি হাতে পেয়েছে।

নির্দিষ্ট মুহূর্তে রোজি বেরিয়ে এসেছে। ঠিক নয়টা সোয়া তিরিশ মিনিটে আমরা পাদ্রির কাছে হাজির হয়েছি। রোজি আমার ফ্ল্যাটে আছে, সকালে সে নীল রঙের কিমোনো (kimono) পরে ডিম রান্না করেছে। হায় আল্লাহ! আমার মতো ভাগ্য কার? আইকি, তুমি কিন্তু একদিন এসে আমাদের সাথে খাবে, কেমন? আমি পুলের কাছে একটা কাজ পেয়েছি, এখন সেখানেই যাচ্ছি।’

‘পা-পা-পাউডারটা?’ তোৎলাতে (stammered ) লাগল আইকি।

‘ওহ! যেটা তুমি আমাকে দিয়েছিলে?’ আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলল চাঙ্কে। ‘ভাল, ব্যাপারটা হল এই। কাল রাতে রিডলদের টেবিলে তো খেতে বসলাম। রোজির দিকে তাকাতেই মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। মনে-মনে নিজেকে বললাম–দেখ চাঙ্ক, তুমি যদি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাও, সোজাসুজিই পেতে চেষ্টা কর। ওর মতো মেয়ের সাথে কোনো বাটপারি কর না।’

তখন ওষুধটা আমার পকেটেই রইল। একটু পরে আমার দৃষ্টি উপস্থিত আর একজনের ওপর পড়ল। আমার মনে হল সে তার ভবিষ্যৎ জামাতার প্রতি সঠিক ভালোবাসা দেখাতে ব্যর্থ। তখনি আমার সুযোগটা চোখে পড়ল। তারপর বুড়ো রিডলের কফির কাপে গুড়ো গুলো মিশিয়ে দিলাম। দেখেছ!

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments