
আজ পাঁচ বছর হলো আমাদের বিয়ের। এই পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচটি জন্মদিন গেছে আমার বউয়ের। পাঁচ বছরে পাঁচটা এনিভার্সেরি গেছে আমাদের। কিন্তু একটাও পালন করা হলো না।
আমি ওর জন্মদিন এই পাঁচ বছর ধরেই মনে রেখেছি। কোন দিন ভুলি নাই কিন্তু ওর জন্মদিন টা সেইভাবে সেলিব্রেট করাও হয় না।সেলিব্রেট করবো দূরের কথা ওকে আমি উইশ পর্যন্ত করি না। এই পাঁচ বছর অর্থাৎ ১৮২৫ দিন, ৪৩৮০০ ঘন্টা,২৬,২৮,০০০ মিনিটে একটিবার ও ওকে বলাই হয় নি “আমি তোমায় ভালবাসি। “
মেয়েটি আমার ভিতর জমে থাকা শক্ত হৃদয়টাকে ভেঙ্গে একদম নরম করে দিয়েছে। বিয়ের প্রথম দিন আমি আমি ওর সাথে শুই নি। ও একটি শব্দ ও করে নি। পরেরদিন থেকে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে লাগলো। অবাক হলাম। অবাক হওয়ার ই বিষয়।
সারারাত যখন বারান্দায় বসে সিগারেট খেতাম,মদ খেতাম ও চুপ মেরে ভিতরে বসে থাকতো। মদ খেয়ে যখন বারান্দায় লুটিয়ে পড়তাম আমার কিছুই মনে থাকতো না। পরেরদিন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতাম। অথচ আমার এই মাতলামি নিয়ে ওর কোন অভিযোগ ছিলো না।
এই পাঁচ বছরে ও আমার কাছে একবার কোন আবদার করেনি কিছু সম্পর্কে। মুখ ফুটে ওর সাথে ভালো করে কথা বলিনি প্রায় ১ বছর। মেয়েটি হয়ত আমার এসব ব্যবহারের জন্য অনেক চোখের জল ফেলেছে কিন্তু আমার বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ কখনো কারও কাছে করেনি। ভাবতাম মেয়েটি হয়ত আমাকে মেনে নিবে না। ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে। না মেয়েটি আমাকে ছেড়েনি। মাঝেমধ্যে ওকে আমার অনেক বোকা মনে হয়। ও আসলেই বোকা।
প্রায় ৬ বছর একটা মেয়েকে ভালবেসেছিলাম। প্রত্যেক ঘন্টায় ঘন্টায় ওকে “I love you” বলতে হতো। প্রত্যেক জন্মদিনে ওর টিএসসিতে সেলিব্রেট করতে হতো বন্ধুবান্ধব এর সাথে। চুন থেকে পান খসলেই ওই মেয়েটির অনেক ন্যাকামো সহ্য করতে হতো আমাকে। কিন্তু তবুও মেয়েটিকে আমি ভালবাসছিলাম।
বলতে গেলে রীতিমত পাগল ছিলাম। মেয়েটি যখন আমাকে ছেড়ে যায় আমার প্রায় ২ বছর লেগে যায় নর্মাল হতে।
আসলে আমি ওর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। ও যদি ছেড়ে না যেতো আমার বউ এর মত কাওকে আমি পেতাম না। যে মেয়েটা আমাকে বুঝিয়েছে ভালবাসা মানে কি? এই পাঁচ বছরে ওর জন্মদিন আমি পার্টি দিয়ে সেলিব্রেট করি না। সারারাত মসজিদে কাটায় আমি। নামাজ পড়ি তার জন্য দোয়া করি। সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করি সে যেনও আমার মৃত্যু পর্যন্ত আমার পাশে থাকে। চিৎকার করে বলি “আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি ” কিন্তু ওকে শুনতে দেয় না হারাবার ভয়ে।
মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, সিগারেট ও ধরতে হয় না। যখন এইগুলা হাতে নেই ওর ছবি ভেসে উঠে। আর খেতে পারি না তখন। পাগলীটা নিজেও জানে না ও আমার জীবনজুড়ে কতটা বিস্তৃত।