Monday, August 18, 2025
Homeলাইফস্টাইল৫৬ বছর বয়েসী আমির খানকে এক সাক্ষাৎকারে

৫৬ বছর বয়েসী আমির খানকে এক সাক্ষাৎকারে

৫৬ বছর বয়েসী আমির খানকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তার এই চির যুবা চেহারা ধরে রাখার রহস্য কি?

আমির খান এই বয়েসেও থ্রি ইউয়টসে কলেজের চ্যাংড়া ছাত্রের অভিনয় করে সবার মন জয় করেছেন, করেছেন যুদ্ধবীরের অভিনয়। কাজেই প্রশ্ন যুক্তিসঙ্গত।

প্রশ্ন শুনে আমির খান মিটি মিটি হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, আটঘন্টার ঘুম! দুনিয়া উল্টে যাক, কিন্তু এর হেরফের হবে না।

চীনে গিয়ে এই রকম ঘুমপ্রীতির নমুনা পেয়েছিলাম। রাতের বেলায় সঠিক মাপেতো বটেই, দুপুরে পাওয়ার ন্যাপের ব্যাপারেও তারা বিখ্যাত। দিনদুপুরেই যেন পুরো শহর ঘুমিয়ে পড়েছে।

কিছুদিন আগে একটা ভিডিওতে দেখেছিলাম উঁচু টাওয়ারের কাজ চলছে। ফ্রেমে একটা হুকে লাগিয়ে সব কর্মীরা ঠিকই ঘুমের কাজ সেরে নিচ্ছে। একেবারে এলাহী কারবার!

চীনারা পরিশ্রমের জন্য খ্যাতির পেছনে এই ঘুমের একটা যোগ আছে সম্ভবত।

পৃথিবী সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনষ্টাইনও দিনে দশ ঘন্টা ঘুমাতেন। এই বাইরেও দিনের বেলায় হালকা ন্যাপতো নিতেনই।

ঘুম সম্ভবত সবচাইতে আন্ডাররেটেড বিষয়গুলোর একটি।

আমাদের যতো ব্যস্ততা আর দায়িত্ব কুলিয়ে উঠতে না পারলে ঘুম মেরে কেটে চালিয়ে দিই। অনেকের ধারণা, দিনে আট ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটানো মানে জীবনের তিনভাগের একভাগই অসার কাটিয়ে দেয়া।

কথাটা আসলে ঠিক না। সঠিক ঘুমের সাথে বাকী ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার সময়টার গুনগন পার্থক্য ব্যাপক। শুধু কাজের দক্ষতাই নয়, সুস্থতার সাথে এর সরাসরি যোগ আছে।

ইন্টেলের উঁচু পদের এক কর্মকর্তা বক্তৃতার মাঝখানেই মৃত্যুবরণ করেন। সবাই অবাক। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ, নিয়মিত জিমেও যান। তার অবস্থা এমন হবার কথা না।

পরে ডাক্তারেরা জানালেন আসল কারণ তিনি দীর্ঘদিন খুব কম ঘুমাতেন।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আটঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। এর চাইতে কম ঘুমালে প্রতিদিনই সেই ঘাটতি জমতে থাকে, যেটা একসময় শরীরের উপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

অনেকের ধারণা সফল ব্যক্তিরা কম ঘুমান।
প্রথম কথা হলো, বেশীর ভাগ সফল ব্যক্তির জন্য এটি সঠিক নয়।

দ্বিতিয়ত, বাদ বাকী যাদের কথা বলা হচ্ছে কম ঘুমান, যতো ব্যস্ততাই থাকুক, এদের বেশীর ভাগই কোন না কোন উপায়ে ঘুমের অভাব পুষিয়ে নেন।

চার্চিল প্রতিদিন বিকেলে দু’ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতেন দিনের বাকী কাজ করার আগে। তার মতে রাতের ঘুমের পাশাপাশি এই ঘুমটা একদিনে দেড়দিনের সমান কাজ করার এনার্জি দেয়।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি রাতে টানা ঘুমের বদলে ফাঁকে ফাঁকে অনেকগুলো পাওয়ার ন্যাপ দিয়ে ঘুমের চাহিদা পোষাতেন।
কেউ আবার সপ্তাহে কাজের দিনগুলোয় কম ঘুমালেও উইকেন্ডে সে ঘুম কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে নেন।

ঘুমের এই দরকারি ভূমিকার কারণেই গুগলের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানে স্লিপিং পড থাকে (তবে এই বস্তু আমাদের সরকারী অফিসগুলোতে থাকলে কি হতো কে জানে!)।

শুধু অফিসেই নয়, ভার্জিন একটিভের মতো শরীর চর্চার জিমগুলোতেও স্লিপিং পড জায়গা করে নিয়েছে। পরিশ্রমের পর শরীরকে আরামদায়ক বিশ্রাম দেয়া মন্দ নয়।

অনেকের ধারণা খুব বুদ্ধিমান মানুষদের সহজে ঘুম আসে না। এটা সম্ভবত সত্যি। ঘুমের আগে মোবাইল বা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এমনটা হতে পারে। আসলে ঘুমের আগে মস্তিষ্ক খুব একটিভ থাকলে ঘুম সহজে আসে না।

ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে অনেকে আবার ভেড়া গুনতে থাকেন। ভেড়া গুনতে গুনতে মস্তিষ্ক একসময় বোর হয়ে ঘুমের সিগন্যাল পাঠাবে, এই হলো যুক্তি।

আমার মতো অনেকেরই এটা অবশ্য খুব কাজে দেয়নি। ভেড়া গুনতে গুনতেই দেখি দুই একটা দৌড় দিয়ে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে! তাদের ধরে এনে গুনতে গিয়ে দেখি আগে কতো পর্যন্ত গুনেছি সেটা ভুলে গেছি। আবার শুরু করা প্রথম থেকে।

ভেড়া গণনার মাঝখানে যত্রতত্র ভেড়াগুলো যেন না পালিয়ে যায়, সেটার জন্য নতুন ব্যবস্থা করলাম। একশ’ ভেড়াকে কাঠের বেড়া দিয়ে আটকে রাখলাম। নট নড়ন চড়ন। তারপরেও দেখি একটা সাথে আরেকটা মিলিয়ে ফেলি। প্রতিটা ভেড়াকে আলাদা কালার দেয়ার চেষ্টা করলাম। একশ’টা কালার কোড বসাতে গিয়ে মস্তিষ্ক দ্বিগুন ব্যস্ত হয়ে যায়। ঘুম আর আসে না।

কী মুসিবত!

খুব কঠিন ট্রেনিংয়ের জন্য নেভী সিলরা বিখ্যাত। হাত পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়ার পর সেখান থেকে নিজেকে উদ্ধার করা এর একটি উদাহরণ।

সেই নেভি সিলদের এক মিনিটেরও কম সময়ে ঘুমানোর একটা কৌশল শেখানো হয়। এটা অবশ্য কাজে লাগে আমার মাঝে মাঝে।

কৌশলটা হলো চোখ বন্ধ করে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে গুনতে দম নেয়া, তারপর একই সময় পর্যন্ত দম বন্ধ করে আবার এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে দম ছাড়তে থাকা।

এভাবে কয়েকবার করলেই ঘুম চলে আসে।

এতে সুবিধা হলো গুনতে গুনতে মন বিক্ষিপ্ত ভাবনা থেকে একাগ্র হয়, দম বন্ধ রাখার কারণে ক্লান্ত হতে থাকে। দম ছাড়ার কারণে একধরণের আয়েশী বিশ্রামের দিকে আগ্রহী হয়।

অন্যান্য কৌশলের মতো এই পদ্ধতিও চর্চার সাথে সাথে উন্নত হয়।

সফলতার জন্য কম ঘুমানো আমার কাছে বার্ধক্যের জন্য ভ্রমণ জমিয়ে রাখার মতো মনে হয়।

কোন এলার্ম ছাড়া প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠতে পারাটাই একটা বড় সাফল্য – অর্জন করতে পারি না পারি এটাই আমার এম্বিশান।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments