Friday, March 29, 2024
Homeঅনুপ্রেরণাসফলতার গল্পসফলতার ছোট গল্প: একজন সফল উদ্যোক্তা আলেপ

সফলতার ছোট গল্প: একজন সফল উদ্যোক্তা আলেপ

সফলতার ছোট গল্প: একজন সফল উদ্যোক্তা আলেপ

পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে। স্নাতকোত্তর পাশ করে এনজিও সংস্থায় চাকরি শুরু করেন। কিন্তু স্বপ্ন যার আকাশ ছোঁয়া সে কি আর আর স্বল্প বেতনে চাকরি করতে পারেন? চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। কাজ নেই, উপার্জন নেই; হতাশা জেঁকে বসে মনে। এরমধ্যে পরিবার থেকে তাকে আলাদা করে দেয়া হয়।

বাবার দেয়া এক বিঘা জমি ও একটি বকনা বাছুর সম্বল। বাড়ির সামনে কুঁড়ে ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস। সেই একটি বকনা বাছুর থেকে আজ ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫২টি উন্নত জাতের গরুর মালিক তিনি। বাড়ির সামনে গড়ে তুলছেন বিশাল গরুর খামার। করেছেন আলিশান বাড়ি।

বলছি পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের পৈলানপুর গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে আলেপ হোসেনের কথা। তার দেখাদেখি এখন গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার উন্নত জাতের গরু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পরিশ্রম করলে কোন কিছুই যে বাধা হতে পারে না তার জ্বলন্ত উদাহারণ আলেপ হোসেন।

২০০৭ সালে পাবনার এ্যডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করা আলেপ হোসেনের খামারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনেই গড়ে তুলেছেন বিশাল গরুর খামার।

দুই শ্রমিককে নিয়ে গরুকে গোসল করানো, ঘাস কাটা, খাবার দেয়া, দুধ দহন করা, বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে দুগ্ধ শীতলীকরণ সেন্টারে পাঠানো থেকে শুরু করে সব কাজ নিজেই করেন আলেপ হোসেন। বসে নেই তার স্ত্রী শিল্পীয়ারা পারভীনও। খামার পরিচর্যায় তিনিও বেশ ব্যস্ত। বাড়ির মানুষের কাছে গরুগুলোই যেন সবকিছু।

শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির ব্যবহারও করেছেন খামারে। লাগিয়েছেন সেন্সর। গরুর পেটের মধ্যে বসানো হয়েছে ‘সেন্সর চিপ’। এই সেন্সরই আলেপ হোসেনকে মোবাইলের মাধ্যমে জানাবে কখন গরুকে খাবার দেয়া প্রয়োজন। গরু অসুস্থ হলেও সেই সেন্সরের মাধ্যমে জানা যাবে।

আর গরু ‘চুরি’ সে তো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার! সেই সেন্সরের মাধ্যমে আলেপ হোসেন জানতে পারবেন গরু কোথায় আছে? শুধু গরু পালনই নয়, গ্রামের অন্য খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করে সেগুলো একজায়গায় করে চিলিং সেন্টারে বিক্রিও করেন তিনি।

বাড়িতে স্থাপন করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। রেখেছেন দুই জন শ্রমিক। তাদের প্রতিমাসে বেতন দিতে হয় ২৩ হাজার টাকা। বড় মেয়ে আইরিন সুলতানা সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। ছোট মেয়ে সুমাইয়া আফরিন জান্নাতি’র বয়স ৩ বছর।

আলেপ হোসেন জানান, বাবা পৃথক করে দেওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। বেকার হয়ে বসে না থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে বিক্রি করা শুরু করি। এরমধ্যে আমার বকনা বাছুরও বড় হয়ে দুধ দেয়া শুরু করে।

পরে টাকা জমিয়ে গাভী গরু কেনা শুরু করি। এতে খামারে বাড়তে থাকে গরুর সংখ্যা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে এখন গড় আয় হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও বড় খামার গড়ে তুলতে পারবেন বলে জানান।

এক সময়ের ভ্যান চালক (বর্তমানে গরুর খামারের মালিক) একই এলাকার গোলাম মোস্তফা ও মজিবর রহমান জানান, ‘গরু আলেপ ও তার পরিবারকে নতুন জীবন দিয়েছে। খামারটি এলাকার আদর্শ খামার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমরা একসময় ভ্যান চালাতাম। কিন্তু আলেপের দেখাদেখি ও তার পরামর্শে আমরাও এখন বেশ কিছু গরুর মালিক। তার খামার দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন লোকজন আসে।’

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। তবে তার (আলেপ) ব্যাপারে জেনেছি। তিনি গ্রামের অনেক মানুষকে অনপ্রেরণা দিয়েছেন। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সবসময় তার পাশে থাকবে। এছাড়া সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা আলেপ হোসেনকে বার্ষিক সম্মাননা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments