Monday, September 15, 2025
Homeবাণী ও কথাঊনআশি নম্বর বাড়ি - অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

ঊনআশি নম্বর বাড়ি – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

—কত নম্বর বললেন?

—সেভেনটি নাইন। মানে ঊনআশি নম্বর।

—আপনি এক কাজ করুন, একটু এগিয়ে যান, সামনে চায়ের দোকান পাবেন, বংশী সব জানে। এদিককার সব ও জানে।

সে তবু খুঁজছে। বাড়ির নম্বর দেখছে। কিন্তু ঠিক নম্বরটা পাচ্ছে না। ঠিক বললে ভুল হবে, প্রায় একশ অঙ্কের তফাত। সে খুঁজছে ঊনআশি, একশ আটাত্তর, একশ সাতাত্তর। শুধু ঊনআশি নেই। মনে মনে পার্থর উপর চটে যাচ্ছে। ট্যাংকের ঠিক পেছনেই আমার বাড়ি।

সে মহাফাঁপড়ে পড়ে গেল। স্মৃতির গণ্ডগোল সহজে সে মেনে নিতে পারে না। স্মৃতির বিষয়েই সে নিজেকে গুরুত্ব দিতে ভালবাসে। এমন কি শরীর নিয়েও বড়াই। এই তো এত বয়েস হল, একবারও কোনো বড় অসুখে ভোগেনি। হাসপাতাল যায়নি। ডাক্তার ডাকার দরকার হয়নি। তার বন্ধুদের কেউ ব্লাডসুগারে ভুগছে, কেউ বেঢপ মোটা হয়ে গেছে বলে খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। দু’একজনতো কেটেই পড়ল। কথা নেই বার্তা নেই, ফোন, হাসপাতালে চলে এস। অবিনাশ হাসপাতালে সাদা চাদরের নিচে শুয়ে আছে।

ফুটব্রিজ পার হয়ে ডানদিকের রাস্তার প্রথম বাঁ দিকের গলি, সামনে জলের ট্যাংক। তার পেছনে বাড়ি। পার্থ নতুন বাড়ি করে উঠে এসেছে। বাড়ির নম্বর ঊনআশি। আরও দুটো বাড়ি পার হয়ে দেখল, না মিলছে না। গলিটা পার হয়ে দেখা যাক। বাড়িগুলি হাল ফ্যাশনের লোহার কারুকাজ করা গেট, বাগান, ফুল-ফলের গাছ। ছিম ছাম সাজানো ছবির প্রদর্শনীর মতো। সব আছে, কেবল ঊনআশি নম্বরের বাড়িটা নেই। লোকজন বড় একটা রাস্তায় নেই—ঘড়িতে দেখল এগারোটা বেজে দশ। ভাদ্রমাস, কড়া রোদ্দুর। ছাতা মাথায় সে হেঁটে যাচ্ছে। খুঁজছে—ঊনআশি নম্বরের বাড়িটা। কোথায়! জলের ট্যাংকের ও পাশের বাড়িগুলির নম্বর যদি কমে গিয়ে একশর নিচে নেমে যায়! সে হাঁটতে থাকল। ঘাম হচ্ছে।—না নেই।

—তুমি একদিন এস। পার্থ গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে বলেছিল। সে বলেছিল যাব। পার্থ বলেছিল, আমার বাড়ি চেনা খুব সহজ। জলের ট্যাংকের ঠিক পেছনে পার্থ পেছন বলতে কি মিন করেছে। একশ নম্বরের ফারাক। তার ধন্দ লেগে গেল পেছনে মানে ট্যাংকের উত্তরে হতে পারে, পূর্বে হতে পারে, দক্ষিণেও হতে পারে। আসলে পেছন ফিরে তাকানোর মতো। সেটা কি! বাড়ির নম্বর সে খুঁজে বের করবেই। জীবনের ক্ষেত্রে অনেক অঙ্কই মেলে না, কিন্তু এ-তো জীবন নয়, বাড়ি। এক একটা বাড়ির পেছনেই অনেক ঝড়-জলের ইতিহাস থাকে। বাড়ির পেছনে মানুষ ছুটছে। মানুষের ঘরবাড়ি বিষয়টাই খুব এলোমেলো। এই সব বাড়ি বাড়িতো নয়, প্রায় যেন এক এক জন গাছে এক একটা স্বপ্নের ডুম জ্বালিয়ে রেখেছে। জীবনের কৃতিত্ব । বাড়ি দেখে মানুষটার ইতিহাস বোঝা যায়—এমন অহঙ্কারের বীজ বপন করে যাওয়া।

—এই ভাই? সেভেনটি নাইন কোন বাড়িটা হবে?

চায়ের কেতলিতে জল ফুটছে। বাসযাত্রীর ভিড় আছে জায়গাটায়। লোকটা ব্যস্ত খুব।

—এই ভাই সেভেনটি নাইন বাড়িটা জান কোথায়!

বিরক্ত মুখে তাকে দেখল। তারপর বলল, সোজা চলে যান। অনেকটা যেতে হবে। সামনে পাখির খাঁচা পাবেন। ওদিকটায় পড়বে মনে হয়।

তা ওটাও ট্যাংকের পেছন। সোজা অনেকটা চলে যেতে হবে। সে আহাম্মকের মতো তবে আধঘণ্টা ধরে এখানটায় পার্থর বাড়ি খুঁজেছে। সে দু একজনকে নামও বলেছে, কি করে বলেছে, কাগজের লোক, চিনতে পারে ভেবে বলা। কিন্তু এখানটায় এসে সে হিসেবও গণ্ডগোল হয়ে গেল। আসলে কেউ কাউকে চেনে না। চেনার ভান করে বেঁচে থাকা।

সে ইচ্ছে করলে ফিরে যেতে পারত। এই ঠা ঠা রোদ্দুরে একটা বাড়ির নম্বর খুঁজে বের করতে পারবে না—সে এতটা পথ হেঁটে এসে ফিরে যাবে, তা-ছাড়া পার্থ অসুস্থ, খুবই কঠিন অসুখ, বন্ধু বান্ধবরা হুট হাট দু’একজন বিনা নোটিশে চলে যাবার পরই অসুখের খবর পেয়ে আজ সকালেই বের হয়ে পড়েছে। নার্সিংহোমে ভর্তি হবার কথা। ব্লাড কাউন্ট ভাল না। প্রচণ্ড অ্যানিমিয়া। অফিসে মাথা ঘুরে বিপদ সংকেত। লিউকোমিয়া কি! কেমন একটা অনড় আতঙ্ক তাকে তাড়া করছিল! পার্থর নতুন বাড়ি যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বেঁচে থাকতে হলে জড়িয়ে থাকতে হয়, সেটাই আজকাল কেমন তার শেষ হয়ে যাচ্ছে। বয়েস হয়েছে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে যাওয়ায়, তার নিজের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন সবার আলগা হয়ে গেছে টের পায়।

তবু ক্ষোভ দুঃখ অভিমান নিয়ত তাড়া করে মানুষকে। অহংকার আর এক গেরো তার। গাড়ি বাড়ি, সব আতরের গন্ধের মতো উবে যায় একদিন, মানুষ টের পায় না। এত সব সত্বেও সে আজ বাজি লড়ছে নিজের সঙ্গে—বাড়িটা খুঁজে বের করবেই।

রোদে হাঁটছিল।

নম্বর দেখছে।

পাখির খাঁচা কতদূর?

—ও ভাই পাখির খাঁচা কতদূর জানেন?

—যান, হেঁটে যান পেয়ে যাবেন।

—কোনদিকে হেঁটে যাব?

—সামনে।

—সামনেই তো হাঁটছি।

—সামনে না হাঁটলে পাবেন কি করে!

সত্যিতো লোকটা বড় আশ্চর্য খবর দিয়ে গেল।

সামনেই হাঁটতে হয়। পেছনে কেউ হাঁটে না। সে কি এই বয়সে এসে পেছনে হাঁটার কথা ভাবছে। তা না হলে, কেন মাঝে মাঝে নিজেকে একা মনে হয়, নিঃস্ব মনে হয়। তারতো কিছুর অভাব নেই। জীবনে সফল মানুষ, তবু কেন মনে হয়, সে আসলে খড়কুটো দিয়ে পাখির বাসাটি বানিয়ে এমন উড়ে অন্য কোথাও যেতে চায়। সেটা কোথায়? সেটা কি পেছনের দিকে, এক বয়সে সামনে হেঁটে যায় মানুষ, এক বয়সে মানুষকে পিছনে হাঁটতে হয়। এক বয়সে সব থাকে, এক সময় সব হারাতে হয়।

তার এখন পিছু হাঁটার পালা।

পার্থটা কি আহম্মক। পাইলস। রক্তপাতে একেবারে সাদা হয়ে গেছে শুনেছে। তার পাইপ মুখে। হেরে যাবার কথা স্বীকার করতেই ভয় পায়। পার্থ তোমার বুজরুকিতে আমি ঠ্যালা খাব ভাবছ! কিছুতেই না। অনেক দিন থেকেই, যৌবনকাল থেকেই পার্থ আর পাইলস সহ-অবস্থান করে আসছিল। এখন পাইলস আর পার্থ। পিছু হাঁটতে হয় এক বয়সে, টের পেয়ে ব্যাটা ঘরে শুয়ে আছে।

—ও ভাই পাখির খাঁচা আর কতদূর?

সামনে হেঁটে যান পেয়ে যাবেন।

—সামনে কতটা?

—সামনে যতটা পারেন, পেয়ে যাবেন।

—তো পেতেই হবে। এই রোদ্দুরে হাঁটার অভ্যাস নেই। একটা রিকসা নিলে ভাল হত। কিন্তু বাড়ির নম্বরগুলো এদিকটায় কমে আসছে। এই ভরসা। আর বাজি যখন লড়েছে, বাড়িটা সে আবিষ্কার করবেই তখন আর অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটা কেন। পাইলস আর পার্থর মতো রোদ্দুর আর সে। ভ্যাপসা গরমে ঘাম, প্যাচ প্যাচে ঘামে শরীর কুট কুট করছে। এটাও এক মজা। নিজের শরীর আর জীবনের কুটকামড়। মন্দ লাগছে না।

সে খুঁজছে। একশ দুই।

একশ এক।

একশ।

একশ মাইনাশ একুশ।

সেতো এসে গেল।

কলম্বাস আপনি কি সমুদ্রে চোখে দূরবীণ লাগিয়ে বসে আছেন!

আপনি কি মার্কোপলো?

সে নিজের সঙ্গে কথা বলছে।

লোকটা ঠিক বলেছে তো?

পাখির খাঁচা কোথায়?

রাস্তাটা বাঁক নিয়েছে। সরু হয়ে আসছে ক্রমে।

একটা পাখির খাঁচার পাশে এই নম্বরগুলি—নিরানব্বই। আটানব্বই। শ্বেত পাথরের ফলকে লেখা শ্রী সুবীর কুমার রায়—আই.এ.এস। নীল পাথরে নেম প্লেট। সবুজ পাথরে লেখা মানুষের ঘরবাড়ি। কিন্তু পাখির খাঁচাটা তো দেখতে পাচ্ছে না!

তার এখন এই নেম প্লেট দেখে হাসি পাচ্ছে। তীর্থঙ্কর রায় চার্টার্ড একাউন্টেন্ট সফল। নীলরঙের বেতের চেয়ার। অ্যালসেসিয়ান কুকুর জিভ বের করে তাকে দেখছে। বাঘের মতো বাড়িটাকে পাহারা দিচ্ছে। সে বলল, এই যে ভাই সারমেয়, তোমার মালিক কোথায়?

কুকুরটা ঘেউ করে উঠল।

—আরে বাবা চটছ কেন? পাখির খাঁচাটা কোথায়?

—হেঁটে যান পাবেন। বিরক্ত করবেন না। শুয়ে আছি।

—না ভাই বিরক্ত করছি না। এইটটি এইট।

অষ্টআশি নম্বর বাড়ির সামনে সে। এক ছোট্ট শিশু ডলপুতুল হাতে জানালায় তাকে দেখছে। কৌতুক চোখে! যেন লোকটা রাজার বাড়ি খুঁজতে বের হয়েছে। শিশুরা সব টের পায়। পার্থর বাড়ি দেখার বাসনা, আসলে পার্থ তার চেয়ে কটা বেশি ইট গেঁথেছে। বেশি না কম। অসুখের খবর পেয়ে, না পার্থ যে বাড়িটা করলো, কারণ সে আর পার্থতো একই গাঁয়ের একই ইস্কুলের একই হাডুডু খেলার সঙ্গী, একই রকম হারিকেনের আলোতে দুজনের পড়া। পার্থ কতটা এগিয়ে, তখন শিশুটি ডাকল, এই।

সে থমকে দাঁড়াল।

জানালায় দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইছে। গায়ে পাতলা লেসের ফ্রক। চুল ঘন। হাতে চকলেট ডলপুতুল দুই-ই।

মেয়েটি বলল, খাবে?

তার ইচ্ছে হল দু দণ্ড দাঁড়ায়। বাচ্চাটার সঙ্গে কথা বলে, আদর করে। কিন্তু বেলা হয়ে গেছে—কথা বলাও ঠিক হবে কি না, কারণ মানুষজনের ফারাক দুস্তর হয়ে উঠছে—বিশ্বাস নেই কে কখন কি করে বসবে।

অষ্টআশি নম্বর পার হলেই সাতাশি। সে বাড়িটা খুঁজে বার করার জন্য অস্থির হয়ে উঠছে। দাঁড়ালে চলবে না। এত রোদ্দুরে রিকশা না নিয়ে বোকামি করেছে। আসলে পার্থই নষ্টের মূলে—বাড়িটা জলের ট্যাংকের পেছনে বলার কি দরকার ছিল, এত নিশ্চিত হয়ে আসার ফলে এখন আর এত কাছে এসে রিকশা নেয় কি করে! একশ নম্বরের ফারাক খুঁজতে তার এমন হাঁপ ধরে যাবে সে অনুমানও করতে পারেনি।

আর মাত্র আটটা বাড়ি। তারপরই পার্থ। পার্থ দি গ্রেট। পার্থ এখন পাইলস নিয়ে রক্তশূন্য হয়ে আছে—তুই এসে গেছিস। বোস। এই যে শুনছ, দেখ কে এসেছে, দেখ দেখ, আমরা এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে…

এই এই আবার শুরু করলি! ইস ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে না। তুই কি রে!

আচ্ছা, বল, এর নাম ঠিক ট্যাংকের পেছনে। তুই কি মস্করা করেছিস! কোথায় জলের ট্যাংক আর কোথায় তোর বাড়ি! লোকে নম্বর বাড়িয়ে দেখে আর আমি কমিয়ে কমিয়ে আসছি। অষ্টআশি, সাতাশি, ছিয়াশি। সামনের মোড়ে পাখির খাঁচা। যাক এসে গেছি। ওফ একেবারে ইণ্ডিয়া আবিষ্কার। জল, এক গ্লাস জল।

এত কষ্ট স্বীকার করেও বাড়িটার হদিশ পেয়ে যাচ্ছে ভাবতে গিয়ে তার চোখেও জল আসার উপক্রম।

এর নাম বিজয় লাভ।

সে এগিয়ে যাচ্ছে। না পিছিয়ে যাচ্ছে। কোনটা?

পাখির খাঁচা স্পষ্ট। পাখিগুলি বন্দী, অসহায়, মুক্ত আকাশ থেকে ওরা এসে ঝুপঝাপ আত্মহত্যা করছে যেন।

এইটটি থ্রি।

বিশাল গম্বুজওয়ালা বাড়ি। সামনে কাচের দেয়াল বিশাল। ভিতরে বিশাল হলঘর। নকসা কাটা নীলরঙের কার্পেট, সাদা রঙের বেতের চেয়ার। কোনো প্রদর্শনীর মতো সাজানো। দেয়ালে বড় বড় অয়েল পেন্টিং। সিল্কের ম্যাকসি গায়ে পরী সেজে বসে আছে নারী। স্বপ্ন তৈরি করছে, না দেখছে।

আর তিনটে বাড়ি।

তারপর সেই সেভেনটি নাইন। ও হো ভাবা যায় না। এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল। বুক ছাতি শুকিয়ে গেছে। দরদর করে ঘামছে। পার্থ পার্থ! এসে গেছি! তুমি এই শালা জলের ট্যাংকের পেছনে আছ। জলের ট্যাংকের পেছন কি এত দূর! আমি দ্যাখ শালা কেমন লোক, ঠিক খুঁজে বের করেছি তোমার বাড়ি। খড়কুটো এনেছ, বৃষ্টি বাদলায় রোদ্দুরে ঝড়ে খড়কুটো এনে এতদিনে যা বানিয়েছে, তা আবিষ্কার করে ফেলেছি।

এইটটি।

বুক কাঁপছে। পার হলেই সেভেনটি নাইন। সে এবার পারলে নিজে যেন চিতা বাঘ হয়ে যেতে চায়। সে প্রায় চিৎকার করে উঠেছিল, অনিমা পার্থ কেমন আছে? পার্থকে দেখতে এয়েছি। আমরা সবাই এক সঙ্গে দৌড় শুরু করেছিলাম, পার্থটা শেষে পাইলসের গেঁড়াকলে পড়ে গেল! কেমন আছে! আর শোনো জল, এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল। ইস এর নাম, জলের ট্যাংকের পেছনে, এর নাম, আমার বাড়ি যাওয়া খুব সোজা।

আজ কলম্বাস না হলে বাড়ি খুঁজে বের করতে পারতাম না। হাঁটার অভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে, আয়েসি মানুষ। হাতের কাছে সব এনে না দিলে খাই না। নড়ি না। কুঁড়ে হয়ে গেছি। রোদ্দুরে পাঁচ ক্রোশ মামারবাড়ি গেছি, দু ক্রোশ হেঁটে রোজ ইস্কুল। এক ক্রোশ হেঁটে কাকার সঙ্গে হাট—সব, পার্থ আমাদের এখন গত জন্মের কথা। কেউ বিশ্বাসই করবে না। তোর বাড়ি খুঁজতে এসে পেছনে হেঁটে গেছিলাম, কত সব নিয়ে শুরু, কিন্তু শেষটায় তোর পাইলস, আমি বাড়িটা তোর খুঁজছি। বাড়ির নম্বর তোর ঊনআশি—আশির বাড়িটা পাশে, পার হলেই তুই তোর বউ ছেলে মেয়ে পাইলস।

এ কি! কোথায় ঊনআশি। এ যে ফাঁকা মাঠ রে!

সে সহসা বিচলিত হয়ে পড়লো ঘোরে পড়ে যায়নি তো। কেমন টলছে শরীর। যে আবার পাশের বাড়ির নম্বর দেখল, আশি, আশির পরে ঊনআশি। সে তো ঠিকই এসেছে। ফাঁকা প্লট কেন?

এইটটি তারপরই ফাঁকা প্লট। তারপর সেভেনটি এইট বাড়ির নম্বর। আশি আছে আটাত্তর আছে। ঊনআশি নেই। শুধু ফাঁকা মাঠ। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। জল তেষ্টা—নিশ্বাস নিতে কষ্ট। উন্মাদের মতো তবু তিন চারবার হেঁটে গেল। কোথায় বাড়ি। ব্লক নম্বর, জলের ট্যাংক সব তার মনে আছে—বাড়িটাই নেই। ঝোপ-জঙ্গল আগাছার ভেতর থেকে শুধু একটা কাক উড়ে গেল।

সেভেনটি নাইন বলে কি কোনো বাড়ি থাকে না। সে পাখির খাঁচার কাছে ছুটে গেল। গাছের ছায়ায় একটা লোক শুয়ে আছে।

—এই

লোকটা ঘুমচ্ছিল। ধড়ফড় করে উঠে বসল। মজুর হবে, বাড়ির কাজ টাজ করে, ইট পাহারা দিচ্ছে।

সে বলল, ওটা ঊনআশি নম্বর তো?

—হ্যাঁ বাবু। বলে লোকটা ফের শুয়ে পড়ল।

বাড়ি কোথায়। ফাঁকা মাঠ, জঙ্গল। সে রাস্তা পার হয়ে গেল। চিৎকার করে উঠল, পার্থ এই তোর বাড়ি শালা! এই তোর ঊনআশি নম্বর। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মাথা ঘুরছে। বিড় বিড় করে বকছে। সে বসে পড়ল। তারপর, তার কি হয়েছিল, সে আর জানে না। কাকটা উড়ে এসে তার মাথার কাছে বসেছিল।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments