Sunday, August 24, 2025
Homeবাণী ও কথাঅনুবাদ গল্পনাম-চোর বানর - হারুকি মুরাকামি

নাম-চোর বানর – হারুকি মুরাকামি

ইদানীং নিজের নাম মনে রাখতে অসুবিধা হয় তার। অপ্রত্যাশিতভাবে যখন কেউ তার নাম জিজ্ঞেস করে বসে তখন সমস্যায় পড়ে সে। তখন একমাত্র ভরসা নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স। ওটি বের করে চটজলদি নিজের নাম বলে দিতে পারে। ব্যাপারটিতে স্বভাবতই প্রশ্নকারীর মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। টেলিফোনেও তাই ঘটে। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পার্স হাতড়াতে থাকে। টেলিফোনের অপর প্রান্তে যে থাকে, এই অকারণ নীরবতায় ক্রমাগত অবাক হতে থাকে।

নিজের নামটি ছাড়া অবশ্য অন্য সবকিছুই মনে রাখতে পারে সে। আশপাশের লোকজনের নামধাম ঠোঁটের আগায় থাকে সব সময়। নিজের ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ এমনকি পাসপোর্ট নম্বর মনে রাখতেও কোনো সমস্যা হয় না তার। বন্ধুবান্ধব কিংবা ক্লায়েন্টদের ফোন নম্বর মনে রাখতে বেগ পেতে হয় না তাকে। তার স্মরণশক্তিও খুব ভাল।

বিয়ের আগে তার নাম ছিল ওজাওয়া। বিয়ের পরে হয়েছে মিজুকি আনদো। কোনোটিই আহামরি কিছু নয়, তারপরেও শত ব্যস্ততার ভেতর নাম কেন স্মৃতি থেকে উধাও হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না।

তাকাশি আনদো নামের এক ভদ্রলোককে বিয়ে করে তিন বছর যাবৎ সে মিজুকি আনদো হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। প্রথম প্রথম নামটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারতো না। উচ্চারণও যথার্থ বলে মনে হত না তার কাছে, এখন শুনতে শুনতে আর সই করতে করতে অনেকটা ধাতস্থ হয়ে উঠেছে।

পার্স সঙ্গে থাকলে কোনো অসুবিধা হয় না; কিন্তু ওটা যদি হারিয়ে যায়, তখন কী হবে? সে-ও তো তাহলে হারিয়ে যাবে। ভরসা এই যে, একেবারে হারিয়ে যাবে।, কেননা নিজের ঠিকানা আর ফোন নম্বর মনে রাখতে পারে। তবে নাম ভুলে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক নিঃসন্দেহে। নামহীন জীবন হচ্ছে স্বপ্ন দেখে আর কোনো দিন ঘুম থেকে জেগে না ওঠার মতো একটা ব্যাপার।

একটা বুদ্ধি বের করল মিজুকি। সোনার দোকান থেকে একটা ব্রেসলেট কিনে এনে তার ওপর নিজের নামটি খোদাই করে নিল সে। নিজেকে তখন কুকুর বেড়ালের মতো মনে হলো তার। বাড়ি থেকে বেরুনোর আগে ওটা পরতে ভুলত না। এখন নিজের নাম মনে করতে না পারলে চট করে ব্রেসলেটের দিকে তাকায়, তড়িঘড়ি করে ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করতে হয় না। লোকজনও অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকায় না।

সমস্যার ব্যাপারটি সে তার স্বামীকে জানায়নি। পাছে তার স্বামী না ভাবে ওর সঙ্গে বিয়ে হয়ে সুখী হতে পারেনি। অবশ্য ওর স্বামী সব ব্যাপারেই যুক্তি মেনে চলে। এই ব্যাপারটিকে হয়ত সে ক্ষতিকর একটা কিছু না-ও ভাবতে পারত। ভদ্রলোক খুব বেশি কথা বলে, একবার কোনো প্রসঙ্গের অবতারণা করলে সহজে থামতে চায় না। এ কারণে মিজুকি ব্যাপারটা নিজের মধ্যেই রেখেছে। বিবাহিত জীবনে অসুখী নয় সে। মাঝে মধ্যে স্বামীর বাড়াবাড়ি রকমের যুক্তিবাদিতা মোকাবিলা করতে হয় তাকে। এ ছাড়া আর কোনো অভিযোগ নেই তার।

মিজুকিরা সম্প্রতি সিনাগাওয়া এলাকায় নবনির্মিত একটা ভবনে ফ্ল্যাট কিনেছে। মিজুকির স্বামীর বয়স ৩০। একটা ওষুধ কোম্পানির ল্যাবরেটরিতে কাজ করে সে। মিজুকির বয়স ২৬। সে কাজ করে হোন্ডা কোম্পানির ডিলারের দোকনে। ফোনটোন এলে ধরে, খদ্দেরদের জন্য কফি বানায়, ফটোকপি ও ফাঁইলিং করে আর ক্লায়েন্টদের ডাটাবেজ আপডেট রাখে। টোকিওর একটি জুনিয়র কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করার পর ওর চাচা যিনি হোন্ডা কোম্পানির এক্সিকিউটিভ, তাকে চাকরিটা জোগাড় করে দেয়। আকর্ষণীয় চাকরি নয় বটে, তবে দায়দায়িত্ব আছে- সব মিলিয়ে তেমন একটা খারাপ লাগে না মিজুকির। কোনো সেলসম্যান বাইরে থাকলে সে নিজেই ক্রেতাদের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়। কথাবার্তায় খুব চটপটে সে। তার চমৎকার হাসি সবার মন কাড়ে, ক্রেতারা স্বচ্ছন্দ অনুভব করে। প্রতিটি ক্রেতার ব্যক্তিত্ব পর্যবেক্ষণ করে তার সঙ্গে কী ভাবে কথা বলতে হবে তা দ্রুত বুঝে উঠতে পারে। তবে বিজনেস ডিল বা দাম কমানো-বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো হাত নেই তার। ক্রেতাকে জিনিস কিনতে রাজি করানোর পর্যায়ে নিয়ে কোনো সেলসম্যানের দ্বারস্থ হতে হয় তাকে, যে কমিশনের একটা ভাগ অনায়াসেই পকেটস্থ করে। তবে একেবারে খালি হাতে বিদায় করা হয় না তাকে, সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ডিনারের আমন্ত্রণ পায়। আপ্যায়নের ব্যয় হওয়া টাকাটা কমিশন থেকে মেটানো হয়।

মাঝে মাঝে তার মনে হয় বিক্রির ক্ষমতা পেলে আরও অনেক বেশি বেচতে পারত সে। সে সৌভাগ্য কখনোই আসে না, কারণ কোম্পানি চলে তার নিজস্ব নিয়মে। বিক্রির কাজ করে সেলস ডিপার্টমেন্ট আর অন্য কাজ ক্লারিক্যাল বিভাগের কর্মীরা। এ সব নিয়ে খুব একটা ভাবে না মিজুকি, তেমন একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার নেই। নিয়ম মাফিক ন’টা-পাঁচটা অফিস করে, দরকার পড়লে ছুটি নেয়।

কর্মস্থলে সে বিয়ের আগের নামটিই ব্যবহার করে, কারণ কম্পিউটার সিস্টেমে পরিবর্তনের ঝামেলায় যেতে চায় না। ট্যাক্স সংক্রান্ত কারণে কাগজপত্রে বিবাহিত মহিলা হিসেবে দেখানো হলেও নামটা আছে আগেরই। কাজেই বিজনেস ও টাইম কার্ডে তার নাম মিজুকি ওজাওয়া।

নাম ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে এক সময় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে মিজুকি। ভাবে, এটা কোনো রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। হয়ত আলঝেইমারের পূর্বাভাস। দুনিয়াটাতো এখন অপ্রত্যাশিত আর মারাত্মক সব রোগে ভরা। সে দেরি না করে বড় একটা হাসপাতালে চলে যায় আর নিজের অবস্থা ব্যাখ্যা করে। ওখানকার অল্পবয়সী ডাক্তার, যাকে খুব মলিন আর ফ্যাকাশে লাগে। ডাক্তারের চেয়ে তাকে বেশি মনে হয় রোগী বলে। মিজুকির সমস্যাটা পাত্তাই দিতে চান না।

“নিজের নাম ছাড়া কি অন্য কিছুও ভুলে যান?” জিজ্ঞেস করেন তিনি।

“না।”

“শুধু নামটাই ভুলে যান, তাই তো! হুম। মানসিক রোগের লক্ষণ বলে মনে। হচ্ছে।” ডাক্তারের কণ্ঠে আগ্রহ বা সহানুভূতির কোনো ছাপ নেই।

“নাম ছাড়া অন্যকিছু ভুলে গেলে আবার আসবেন। তখন কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। আপনার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর রোগী নিয়ে এখন ব্যস্ত আমরা।” ডাক্তারের সাফ জবাব।

একদিন স্থানীয় ওয়ার্ডের নিউজলেটার পড়ে মিজুকি জানতে পারল, ওয়ার্ড অফিসে নানা ধরনের রোগীর জন্য একটা পরামর্শ কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। মাসে দু’দিন খোলা থাকবে। আঠার আর তার চেয়ে বেশি বয়সের রোগীর জন্য কেন্দ্রটি উন্মুক্ত আর ওখানকার সব বিষয় গোপন রাখা হবে।

পরামর্শ কেন্দ্রে গিয়ে সুফল পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করল সে। তবে সিদ্ধান্ত নিল একবার যাবে ওখানে।

পরামর্শ কেন্দ্রে গিয়ে মিজুকি বুঝল সে-ই ওখানকার একমাত্র রোগী। রিসেপশনিস্ট বলল, “হঠাৎ করেই চালু হয়েছে এটি। লোকজন এখনও ঠিক মতো জানে না এর খবর। জানার পরে ভিড় বেড়ে যাবে নির্ঘাত।”

পরামর্শদাত্রীর নাম চেতমুকো সাকাকি। হাসিখুশি, নাদুস-নুদুস সুন্দরী। বয়স চল্লিশের কোঠায়। ঠোঁটে লেগে আছে স্নিগ্ধ হাসি। ছোট করে ছাঁটা চুলগুলো তার বাদামি রঙের। ধূসর রঙের সামার স্যুট পরে আছেন। গলায় পরেছেন নকল মুক্তোর মালা। দেখে ডাক্তার বলে মনে হয় না- যেন পাশের বাড়ির হাস্যময়ী গৃহবধূ। আলাপ-পরিচয় করার ভঙ্গিমায় বললেন, “আমার স্বামী কাজ করেন ওয়ার্ডের দফতরে। গণপূর্ত বিভাগের প্রধান তিনি। তাদের আর্থিক সহায়তা নিয়েই এ কেন্দ্রটি দাঁড় করিয়েছি আমরা। আপনিই আমাদের প্রথম রোগী, আপনাকে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। আজ আর কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই আমার, কাজেই আসুন মন’ খুলে কথা বলি।”

“আপনার সঙ্গে কথা বলে আমারও খুব ভাল লাগছে।” তবে সে মনে মনে ভাবল, এ ধরনের মানুষ আমার জন্য কতটা করতে পারবেন কে জানে।

“পরামর্শ দান বিষয়ে ডিগ্রি আছে আমার। এ কাজে আমার অভিজ্ঞতা বিস্তর।” মিজুকির মনের কথা যেন পড়তে পেরেছেন এমন ভঙ্গিমায় বললেন মহিলা। খুব মন। দিয়ে মিজুকির কথা শুনতে লাগলেন তিনি। তার মুখ ভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন নেই। ঠোঁটে লেগে আছে বসন্ত-রাতের চাঁদের মতো মৃদু হাসি।

মিজুকির কথা শেষ হতেই বললেন, “ব্রেসলেটে নাম লিখে রাখার আইডিয়াটা চমৎকার। যেভাবে বিষয়টা আপনি মোকাবিলা করেছেন তা পছন্দ হয়েছে আমার।

“আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে বাস্তব একটা সমাধান খুঁজে বের করা, যাতে অসুবিধা কমিয়ে আনা যায়। আপনি যথেষ্ট চালাক চতুর। আপনার ব্রেসলেটটাও সুন্দর। হাতে বেশ মানিয়েছে।”

মিজুকি বলল, “নাম ভুলে যাওয়ার সাথে গুরুতর কোনো রোগের সম্পর্ক আছে। কি? এ রকম কোনো কেস কি আগে পেয়েছেন?”

“আমার মনে হয় না এটা কোনো রোগের পূর্বলক্ষণ।” বললেন মিসেস সাকাকি, “এটা কোনো ধরনের বিস্মৃতি হতে পারে। এখন আমাদের দেখতে হবে ব্যাপারটার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল।”

এরপর মিসেস সাকাকি তাকে মৌলিক কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। এই যেমন, কতদিন যাবৎ তার বিয়ে হয়েছে। সে কী কাজ করে। তার স্বাস্থ্য কেমন ইত্যাদি।

তিনি ওর বাল্যকাল, পরিবার, স্কুল জীবন, ভাললাগা-মন্দলাগা ইত্যাদি বিষয়েও প্রশ্ন করলেন। মিজুকি সাধুতার সাথে ও যথাসম্ভব কম সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করল।

মিজুকির জন্ম একটি সাধারণ পরিবারে। ওর বাবা বড় একটা বীমা কোম্পানিতে, চাকরি করতেন। বাবা ছিলেন সিরিয়াস প্রকৃতির মানুষ। মা নরম প্রকৃতির মানুষ হলেও লোকজনের খুঁত ধরার স্বভাব ছিল তার। ওর বড় বোন ক্লাসে সব সময় ফাস্ট হতো। তারপরও মিজুকির মনে হতো ওর বোনের মাথা কিঞ্চিৎ মোটা। আবার ছিঁচকে চুরির অভ্যাসও ছিল তার। তবে পরিবারের কাউকে নিয়ে ওর বিশেষ কোনো সমস্যা ছিল না। তাদের কারও সাথে ঝগড়া ঝাটিও হতো না। তবে সবকিছুতে হার স্বীকার করার মতো মেয়ে সে নয়। রোগ বালাইও তেমন একটা তার হতো না। সুন্দরী বলে পরিচিত ছিল তার। তবে নিজেকে সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি বলে মনে করত। স্কুলে ভাল ক’জন বান্ধবীও ছিল। অধিকাংশই এখন বিবাহিত ও নানা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের কারও সঙ্গে এখন তেমন একটা যোগাযোগ নেই।

বিয়ের ব্যাপারেও খুব একটা মন্দ কিছু বলবার নেই তার। নব পরিণীতারা যে ধরনের ভুলটুল করে প্রথম দিকে সে-ও তাই করেছে। তবে আস্তে আস্তে শুধরে নিয়েছে। এখন তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। ওর স্বামী ভদ্রলোকটিকে পূর্ণাঙ্গ ভাল লোক বলা যাবে না, তবে তার ভেতর অনেক সৎ গুণাবলী আছে। সে দয়ালু, দায়িত্বশীল, পরিচ্ছন্ন, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোনো বাছবিচার নেই। সহকর্মী ও কর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক আছে তার।

মিজুকি জানে রোগীর সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শোনা পরামর্শ দানকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবুও তার জীবনের একঘেঁয়ে সব কাহিনী পরম ধৈর্যের সঙ্গে এই মহিলাকে শুনতে হচ্ছিল বলে তার জন্য ওর মায়া হলো। মিজুকি ভাবল, ওকে যদি এসব শুনতে হতো, নির্ঘাত বিরক্ত হতো সে।

মিসেস সাকাকি মন দিয়ে সবকিছু শুনলেন। কিছু কিছু নোটও নিলেন। যখন কথা বললেন, কণ্ঠস্বরে ছিল না কোনো বিরক্তির ছাপ। বরং রোগীদের জন্য ছিল উষ্ণতা আর যথার্থ উদ্বেগ। তার ভেতর আশ্চর্য রকমের ধীরতা লক্ষ্য করল মিজুকি। তার মতো এ রকম ধৈর্য সহকারে মিজুকির কথা আগে কেউ শোনেনি। ঘন্টাখানেক পর যখন ওই সাক্ষাৎকার শেষ হলো, মিজুকি অনুভব করল তার মাথা থেকে ভারী একটা বোঝা নেমে গেছে। সবশেষে মিসেস সাকাকি মস্তো একটা হাসি দিয়ে বললেন, “আগামী বুধবার একই সময়ে আসতে পারবেন তো মিসেস আনদো?” মিজুকি বলল, “আপনার কোনো অসুবিধা না থাকলে অবশ্যই পারব।”

.

সাক্ষাৎকারের জন্য দ্বিতীয়বার এলে মিসেস সাকাকি তাকে বললেন, “নাম নিয়ে ঘটেছে অতীতের এ রকম কোনো ঘটনার কথা বলতে পারেন আমাকে? এই যেমন আপনার নিজের নাম, অন্য কারও নাম, জায়গার নাম বা পোষা কোনো জন্তু জানোয়ারের নাম, কিংবা এসব নিয়ে কোনো স্মৃতি? একবার মনে করবার চেষ্টা করুন না।”

“এমন কোনো স্মৃতি মনে আসছে না এই মুহূর্তে। ও, দাঁড়ান একটু…হ্যাঁ, মনে পড়েছে নামের ট্যাগের ব্যাপারে একটা স্মৃতি আছে আমার।”

“খুব ভাল কথা, বলুন আমাকে।”

“তবে ওটা আমার নামের ট্যাগ ছিল না, ছিল অন্য একজনের।”

“তাতে কিছু যায় না আসে না, ঘটনাটা বলুন।” মিসেস সাকাকি বললেন।

“আমি নাগোইয়ার মেয়ে হলেও পড়তাম ইয়াকোহোমার একটা স্কুলে। থাকতাম স্কুলের ডরমেটরিতে। উইকএন্ডে বাড়িতে যেতাম। রোববার রাতে স্কুলে ফিরতাম ট্রেনে করে।”

“নাগোইয়াতে ভাল স্কুল ছিল না? দূরের শহর ইয়াকোহোমাতে পড়তে গেলেন কেন?”

“আমার মা পড়তেন ওই স্কুলে। তিনি চেয়েছিলেন তার একটি মেয়ে ওখানে পড়ুক। ভেবেছিলাম ভালই হবে। বাবা-মার কাছ থেকে দূরে থাকা যাবে। মিশনারিদের স্কুল হলেও যথেষ্ট উদার ছিল তারা। ওখানে বেশ ক’জন ভাল বন্ধু জুটে ছিল আমার। ওরা সবাই ছিল আমারই মতো। ছ’বছর পড়েছিলাম ওখানে। অনেক আনন্দে কেটেছে স্কুলের ওই দিনগুলো। তবে ওখানকার খাবার-দাবার ছিল খুব বাজে।”

মিসেস সাকাকি হাসলেন। বললেন, “আপনি বলেছিলেন আপনার একটা বড় বোন ছিল।”

“হ্যাঁ। সে আমার চেয়ে দু’ বছরের বড় ছিল।”

“সে কেন ওই স্কুলে পড়েনি?”

“খুব ঘরকুনো ছিল সে। তাছাড়া স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যা ছিল তার। স্থানীয় একটা স্কুলে পড়ত। বাড়িতেই থাকত। ওর চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা আমি ভোগ করেছি। এলিমেন্টারি স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন করার পর বাবা-মা যখন জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়াকোহামায় পড়তে যাবি?” আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। প্রতি সপ্তাহান্তে শিনকাশেন ট্রেনে চড়াটা ছিল খুবই একসাইটিং একটা ব্যাপার।

“অধিকাংশ সময়-ই একজন রুমমেটের সঙ্গে থাকতে হয়েছে আমাকে। সিনিয়রিটি অর্জন করার পর আলাদা রুম পাই। আমাদের ডরমেটরির ছাত্রী-প্রতিনিধি ছিলাম আমি। ডরমেটরির প্রতিটি ছাত্রীরই নামের ট্যাগ ছিল। ভবনে ঢোকার পথে একটা বোর্ডে ঝোলান থাকত ওগুলো। ট্যাগের সামনের দিকে কালো কালিতে নাম লেখা থাকত, পেছন দিকটা হতো লাল। কখনো বাইরে গেলে ট্যাগটি উল্টো করে রেখে যেতে হতো। ফিরে এলে সোজা করা হতো। কালো দিকটা সামনে থাকলে বোঝা যেত ছাত্রীটি রুমে আছে, আর লাল দিক দেখা গেলে ধরে নিতে হতো সে এখন বাইরে। কেউ বাইরে রাত যাপন করলে কিংবা ছুটি নিলে নামের ট্যাগ বোর্ড থেকে খুলে নিতে হতো। ওটাই ছিল নিয়ম।

“সে যা-ই হোক, ব্যাপারটা ঘটে অক্টোবর মাসে। এক রাতে ডিনারের আগে : রুমে ছিলাম আমি। হোম ওয়ার্ক করছিলাম বসে বসে। তখন জুনিয়র একটা মেয়ে এল আমার কাছে। ওর নাম য়ুকো মাতসুনাকা। সে-ই ছিল ওই ডরমেটরির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। নরম কোমল ত্বক, দীর্ঘকেশ আর পুতুলের মতো ছোটখাট শরীরের অধিকারী ছিল সে। ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে। আমাদের ক্লাসে পড়ত না সে। যতদূর জানতাম ওর রেজাল্ট ছিল খুব ভাল। অনেক যুবকই পছন্দ করত তাকে। শুধু পছন্দ করত বললে ভুল হবে, রীতিমতো পূজো করত। মাতসুনাকা অহংকারী ছিল না, সবার সঙ্গেই ওর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সব সময় চুপচাপ থাকত। নিজের অনুভূতির কথা কারও কাছে প্রকাশ করত না। তার মনে কী ছিল জানা ছিল না। আমার; যুবতী মেয়েরাও তার সান্নিধ্য কামনা করত। তবে আমার ধারণা তার। কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল না।”

মিজুকি ডরমেটরির দরজা খুলতেই দেখেছিল মাতসুনাকা দাঁড়িয়ে আছে। পরনে টাইট সোয়েটার ও জিন্স। বলেছিল, “একটা মিনিট কথা বলতে চাই আপনার সঙ্গে।” মিজুকি অবাক হয়ে বলেছিল, “অবশ্যই।”

“আচ্ছা মিজুকি আপনি কি কখনো কারো প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়েছেন?”

“আমার মনে হয় না।”

“একবারও না?”

মিজুকি মাথা নাড়িয়ে বলল, “হঠাৎ করে এমন কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়া কঠিন, তবে আমার ধারণা কখনো কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হইনি। কী ধরনের ঈর্ষার কথা বলছ তুমি?”

“এই ধরুন আপনি কাউকে ভালবাসেন; কিন্তু সে ভালবাসে অন্য কাউকে। আপনি কাউকে ভীষণভাবে কামনা করেন, কিন্তু অন্য কেউ হয়ত তা গ্রাস করে ফেলেছে। আপনি কিছু একটা করতে বদ্ধপরিকর, কিন্তু অন্য কেউ কোনো রকম চেষ্টা ছাড়াই বড় ধরনের সাফল্য পেয়ে যাচ্ছে- এই রকম আর কি ব্যাপারটা….”

“না আমার বেলায় এ ধরনের কিছু ঘটেনি। তোমার ঘটেছে নাকি?” কী বলবে ভেবে পায়নি মিজুকি। এ ধরনের একটা মেয়ের কী-ই বা প্রত্যাশা থাকতে পারে। দেখতে সুন্দরী। বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে। পড়াশোনায় ভাল। সবাই ওকে চেনে। ওর প্রতি বাবা-মার অসীম ভালবাসা। মিজুকি শুনেছে, সে নাকি এক কলেজ ছাত্রের সঙ্গে ডেটিং করে। এরকম যার অবস্থা সে কার প্রতি ঈর্ষান্বিত হবে? তবুও মিজুকি ওকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার বেলায় কখন কীভাবে ঈর্ষার ব্যাপারটা এসেছে আমাকে বুঝিয়ে বল।”

“থাক, এত গভীরে যেতে চাইনে, কী হবে আর! ঈর্ষা ব্যাপারটি যে কী, যে কখনো তা অনুভব করেনি তাকে বোঝান খুব কঠিন। তবে একটি জিনিস ভাল করে বুঝি, ঈর্ষা নিয়ে জীবনযাপন করাটা সহজ ব্যাপার নয়। দিনের পর দিন নিজের ভেতর নরক বয়ে বেড়ানোর মতো একটা বিষয়।… ভাগ্যিস এ রকম কিছু আপনার জীবনে নেই।”

কথা শেষ করে হাসল মাতসুনাকা। সত্যিই সে খুব সুন্দরী। ভাবল মিজুকি। কিন্তু ওর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হতে পারল না একটিবারও।

“আমাকে বাড়ি যেতে হবে একবার। আমার এক আত্মীয় মারা গেছে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে হবে। এর মধ্যেই আমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি। সোমবার সকালের মধ্যে ফিরব। আমার নামের ট্যাগটা আপনার জিম্মায় রেখে যেতে চাই, যদি অনুমতি…”

“কোনো আপত্তি নেই আমার। কিন্তু আমাকে কেন দিয়ে যাচ্ছ ওটা। একটা ড্রয়ারের ভেতর রেখে গেলেই তো হয়।” ট্যাগটা আমার হাতে দিয়ে বলল, “শুধু একটিবারের জন্য ওটা রাখতে চাই আপনার কছে। একটা ব্যাপারে আমি বিব্রত; কাজেই আমার রুমে এটা রাখতে চাইনে।”

“ঠিক আছে।”

“আমি চাই না আমি চলে যাওয়ার পর বানর এটা নিয়ে যাক।”

“আমার তো মনে হয় বানর-টানরের অস্তিত্ব এখানে নেই।” দৃঢ়তার সাথে বলল মিজুকি।

না-ছোঁয়া এক কাপ চা, নামের ট্যাগ, যেখানে সে বসেছিল সেখানকার সেই খালি জায়গা পেছনে ফেলে মাতসুনাকা বিদায় নিল।

“সোমবার দিন মাতসুনাকা ডরমেটরিতে ফিরে আসেনি।”

মিসেস সাকাকিকে বলল মিজুকি, “ওর ক্লাশের শিক্ষক চিন্তিত হয়ে পড়েন আর ওর অভিভাবকদের ফোন করেন। তখন জানা যায়, সে বাড়িতে যায়নি বা ওদের পরিবারের কেউ মারা যায়নি। কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও হয়নি। মিথ্যে বলেছে সে।

“সপ্তাহখানেক পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। নাগোইয়া থেকে পরের রোববার ডরমেটরিতে ফিরে এসে সব জানতে পারি। সে ওর কব্জির রগ কেটে ফেলেছিল বনের মধ্যে গিয়ে। এই কাণ্ড সে কেন করেছে কেউ জানে না। কোনো নোটও রেখে যায়নি। তার রুমমেট জানিয়েছিল, বরাবরই ওরকম ছিল সে। কাউকে কিছু না জানিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।”

মিসেস সাকাকি বললেন, “কিন্তু সে যখন আপনার রুমে আসে তখন কিছু বলার চেষ্টা করেনি? ওই যে ঈর্ষা নিয়ে কী যেন বলেছিল তখন আপনাকে?”

“হ্যাঁ, ঈর্ষা নিয়ে অনেক কথাই সে বলেছিল; কিন্তু তখন তো আমি ভাল করে বুঝিনি। পরে আমার মনে হয়েছে, মৃত্যুর আগে অবশ্যই সে কাউকে সবকিছু জানিয়ে যেতে চেয়েছিল।”

“সে যে আপনার কাছে এসেছিল তা কাউকে বলেছিল কি?”

“না।”

“কিন্তু কেন?”

মিজুকি তার মাথাটা তুলল, একটু ভাবল তারপরে বলল, “এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে হয়ত আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো। মনে হয় না লোকজন বুঝত এ সব।”

“অর্থাৎ আপনার ধারণা ঈর্ষা এই আত্মহত্যার কারণ হতে পারে।”

“ঠিক তাই। পৃথিবীতে এমন কে আছে যে মাতসুনাকার মতো মেয়েকে ঈর্ষা করতে পারে? তখন সবাই এতো বেশি মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিল যে, আমার মনে হয়েছিল সবকিছু নিজের মধ্যে রাখাই শ্রেয়। ডরমেটরির মেয়েদের অবস্থা কেমন হয়েছিল ভাবুন একবার। সেই সময় এ সব কথা বলা মানে গ্যাস ভর্তি ঘরে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে দেয়া, তাই না?”

“নামের ট্যাগের কী অবস্থা হয়েছিল?”

“ওটি আমার কাছেই আছে। নিজেরটার সঙ্গে একটা বাক্সে ভরে ক্লোসেটে রেখে দিয়েছি।”

“এখনও ওটা রেখেছেন কেন?”

“ব্যাপারটা নিয়ে এত হৈচৈ হয়েছে যে, ওটা ফেরৎ দেয়ার সুযোগই পাইনি। সুযোগের জন্য যত অপেক্ষা করেছি ততই ফেরৎ দেওয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে আমার জন্য। ফেলেও দিতে পারিনি জিনিসটা। কখনো কখনো আমার মনে হয়েছে, মাতসুনাকা হয়ত চেয়েছিল ওটা আমার কাছেই থাক। কেন যে সে আমাকে বেছে নিয়েছিল জানিনে।”

বাসায় ফিরে ক্লোসেটের ভেতরে রাখা বাক্সটা বের করল মিজুকি। এই বাক্সেই রাখা আছে তার যাবতীয় স্মৃতিচিহ্ন- চিঠিপত্র, ডাইরি, ছবি, রিপোর্ট কার্ড আর তার ও মাতসুনাকার ট্যাগ। একটা খামের ভেতরে রেখেছে ট্যাগ দু’টো।

বাক্সটা বের করল; কিন্তু ট্যাগের খামটা সেখানে খুঁজে পেল না। বাসা বদল করে যখন এই ফ্ল্যাটে এসে ওঠে, মিজুকির স্পষ্ট মনে আছে খামটি তখনও এখানেই ছিল। কিন্তু গেল কোথায় ওটা?

পরামর্শ গ্রহণের ব্যাপারটা স্বামীর কাছে গোপন রেখেছে মিজুকি। সবকিছু বিবেচনা করে তার মনে হয়েছে বিষয়টা তাকে না বলাই ভালো। কারণ তার স্বামী ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ না-ও করতে পারে।

নামের ট্যাগ খোয়া যাওয়ার ব্যাপারটাও গোপন রাখল। ভাবল, পরামর্শ গ্রহণের সাথে এর সম্পর্ক নেই কোনো। মিসেস সাকাকিকে না জানালেও চলবে।

এমনি করে দু’মাস কেটে গেল। মিজুকি প্রতি বুধবার পরামর্শ নিতে মিসেস সাকাকির কাছে যায়। ওখানে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ওর জন্য বরাদ্দকৃত সময়সীমা এক ঘন্টা থেকে কমিয়ে আধা ঘন্টা করা হয়েছে। মিজুকির মনে হয়, আরো বেশি সময় ধরে আলাপ করতে পারলে ভাল হতো; কিন্তু এত কম। ফিসে এর চেয়ে বেশি সময় প্রত্যাশা করে কী করে?

সে দিন সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগে মিসেস সাকাকি বললেন, “এটা আমাদের কাউন্সেলিংয়ের নবম অধিবেশন। এখন তো আপনি আগের মতো নিজের নাম ভুলে যান না। সব কিছু এখন আগের চেয়ে ভাল, তাই না?”

“হ্যাঁ।”

“খুব ভাল। আগামী সপ্তাহে হয়ত অবস্থার আরো উন্নতি হবে।”

“তার মানে নাম ভুলে যাওয়ার বিষয়ে…?”

“ঠিক তাই। পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু এগুলে আপনার সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে সক্ষম হবো আর তা আপনাকে দেখাতেও পারব।”

“নাম ভুলে যাওয়ার কারণটাতো জানাবেন?”

“সংক্ষেপে বলতে গেলে তাই।”

কী ঘটতে যাচ্ছে ধরতে পারল না মিজুকি। বলল, “সুনির্দিষ্ট কারণটা আমাকে কখন জানাবেন… আপনি বলতে চান এটা এমন একটা কিছু যা দেখা যায়?”

আত্মসন্তুষ্টিতে নিজের হাত দুটো কচলে মিসেস সাকাকি বললেন, “আগামী সপ্তাহের আগে বিস্তারিত বলা যাবে না। এখনো বুঝতে পারছি না এটা কাজ করবে কিনা। আমার অবশ্য ধারণা কাজ করবে।”

পরের সপ্তাহে মিজুকি মিসেস সাকাকির রুমে ঢুকতেই তিনি বিশাল একটা হাসি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালেন। এ রকম হাসি তার মুখে আগে কখনো দেখা যায়নি।

“কী কারণে আপনি নিজের নাম ভুলে যাচ্ছেন খুঁজে পেয়েছি। এর একটা সমাধানও বের করেছি।”

“তার মানে আর নিজের নাম ভুলে যাব না?”

“ঠিক তাই। আপনি আর নিজের নাম ভুলে যাবেন না।”

কালো একটা ব্যাগ থেকে কিছু জিনিস বের করে টেবিলের ওপর রাখলেন মিসেস সাকাকি। বললেন, “আমার বিশ্বাস এই জিনিসগুলো আপনার।”

মিজুকি সোফা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গিয়ে দেখল দু’টি নামের ট্যাগ একটি ওর নিজের অন্যটি মাতসুনাকার। ওর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে পড়ল। সোফায় গিয়ে নির্বাক বসে রইল সে। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢাকল।

“আপনার অবাক হবারই কথা। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” বললেন মিসেস সাকাকি।

“কিন্তু আপনি কি করে…”

“নামের ট্যাগগুলো পেলাম?” মিজুকি মাথা নাড়াল।

“আপনার কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে,” বললেন তিনি, “এই ট্যাগগুলো চুরি যাওয়াতেই নিজের নাম ভুলে যাচ্ছিলেন আপনি।”

“কিন্তু ওগুলো চুরি করল কে?”

“বরং জিজ্ঞেস করা উচিত ওই চুরির জন্যে কে দায়ী? কিংবা কী কারণে আপনার বাসা থেকে ওগুলো চুরি করা হয়েছে।”

মিজুকি অবাক হয়ে বলল, “কে করেছে? তার নামটা বলবেন আমাকে?”

“অবশ্যই বলব। আমরা তাকে আটক করেছি। নামের ট্যাগ দুটো তার কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আমি তাকে পাকড়াও করিনি। কাজটা করেছেন আমার স্বামী ও তার এক সহকর্মী। মনে আছে, আমি আপনাকে বলেছিলাম আমার স্বামী গণপূর্ত বিভাগের প্রধান। তাহলে চলুন সত্যিকার অপরাধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যাক। আপনার মনোভাব সামনা সামনি জানাতে পারবেন ওকে।”

মিসেস সাকাকির পেছনে পেছনে গেল মিজুকি। এলিভেটরে বেসমেন্টে নেমে এল, তারপর অনেকটা ফাঁকা করিডোর অতিক্রম করে একটি দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। ভেতরে ঢুকে তারা লম্বা শীর্ণ পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের এক ভদ্রলোক আর বিশোর্ধ্ব মোটাসোটা আর এক ব্যক্তির দেখা পেল। দু’জনের পরনেই হালকা খাকি রঙের পোশাক। বয়স্ক ভদ্রলোকের বুকে লাগান নামের ট্যাগ ‘সাকাকি’। অল্প বয়স্ক লোকটার নামের ট্যাগে লেখা ‘সাকুরান্দা।

“আমার অনুমান আপনি মিসেস আনদো,” মি. সাকাকি বললেন, “আমার নাম ইওশিও সাকাকি, তেতসুকোর স্বামী, আর ইনি মি. সাকুরান্দা আমার সঙ্গে কাজ করেন।”

“আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুব খুশি হলাম।”

মিসেস সাকাকি তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন- ও কি তোমাদের খুব বিরক্ত করেছে?

“না, আমার মনে হয় পরিস্থিতির ওপর নিজেকে সমর্পণ করেছে সে। সাকুরান্দা সারা সকাল ওর ওপর নজর রেখেছে। চল আমরা এগুই।”

তারা একটা স্টোররুমে গিয়ে ঢুকল। একটি মাত্র চেয়ার পাতা ঘরটাতে, যার ওপর একটা বানর বসে আছে। সাধারণ বানরদের চেয়ে এর আকৃতি অনেক বড়; তবে মানুষের চেয়ে ছোট। প্রাইমারি স্কুলের শিশু-ছাত্রদের মতো। সাধারণ বানরদের চেয়ে গায়ের লোম বড়। বয়স বলা কঠিন; তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, তরুণ বা যুবক বয়সের নয় সে। বানরটার হাত-পা চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা। লম্বা লেজটা মেঝের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। মিজুকি ঘরে ঢুকতেই তার দিকে তাকাল আর মেঝেতে নামতে চাইল।

মিজুকি আশ্চর্য হয়ে বলল, “এতো একটা বানর!”

“ঠিক তাই। একটা বানরই আপনার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নামের ট্যাগ চুরি করেছিল আর তখন থেকেই আপনি নিজের নাম ভুলে যাচ্ছিলেন।”

আমি চাই না কোনো বানর আমার নামের ট্যাগ চুরি করে নিয়ে যাক মাতসুনাকার এই কথাটা মনে পড়ে গেল মিজুকির। ভাবল, কথাটা নিছক ঠাট্টা ছিল না। সে তার শিরদাঁড়ার ভেতর শীতল স্পর্শ অনুভব করল।

“আমি খুবই দুঃখিত।” বানরটা বলল। গলার স্বর নিচু হলেও উদ্দীপনা ছিল তার ভেতর। মিজুকি অবাক হয়ে বলল, “কথাও বলতে পারে দেখছি।”

বানর বলল, “হ্যাঁ, কথা বলতে পারি। একটা বিষয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইবার আছে- নামের ট্যাগ দুটো ছাড়া অন্য কিছু চুরি করার মতলব ছিল না আমার;— কিন্তু ভীষণ ক্ষুধার্ত থাকায় প্লেটে রাখা দুটো কলাও গলাধঃকরণ করতে হয়েছিল।”

ব্যাটার নার্ভ খুব শক্ত- এ কথা বলে মি. সুকুরান্দা কালো একটা লাঠি দিয়ে ওর হাতে কয়েকটা খোঁচা মারলেন। মি. সাকাকি তাকে নিরস্ত করে বললেন, “সব কিছু নিজে থেকেই স্বীকার করছে ও। এভাবে ওকে আঘাত করা উচিত হয়নি তোমার। একটা বানর এমন করে আটকে রেখেছি এ কথা জানাজানি হয়ে গেলে বিপদ হবে।”

মিজুকি বলল, “নামের ট্যাগ চুরি করতে গেলে কেন তুমি?”

“সব সময়ই এই কাজ করি। বানর মানুষের নাম চুরি করে এক ধরনের রোগ বলতে পারেন। অবশ্য সব নাম করি না, কেবল যেটা পছন্দ হয় সেটা করি। জানি কাজটা ঠিক নয়; কিন্তু কি করব বলুন নিজেকে সামলাতে পারি না।”

“আমাদের ডরমেটরিতে ঢুকে মাতসুনাকার ট্যাগ চুরির চেষ্টা করেছিলে?”

“হ্যাঁ। মিস মাতসুনাকার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এর আগে কারও প্রতি এত আকৃষ্ট হইনি। ভাবলাম জীবনে তো তাকে পাওয়া সম্ভব নয়, তার নামটাই না হয় আমার হোক। তার নামটা গ্রহণ করতে পারলে আমার ভেতর একটা সন্তুষ্টি আসত, কিন্তু আমার পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার আগেই সে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়…।”

“আত্মহত্যার পথ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কিছু করার ছিল না তোমার?”

“না, কিছুই করার ছিল না,” বলল বানর, “ভেতরের অন্ধকার তাকে গ্রাস করেছিল।”

“ওর ট্যাগটা যে আমার কাছে আছে তা জানলে কি করে?”

“ওটার সন্ধান পেতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। ওর মৃত্যুর পর বুলেটিন বোর্ড থেকে ওটা পাওয়ার চেষ্টা নেই, কিন্তু ততদিনে ওটা ওখানে ছিল না। ওটা কোথায় কেউ তা জানত না। খুঁজে বের করতে সাধ্যমতো চেষ্টা তদবির চালালাম। কিছুতেই ওটার সন্ধান পেলাম না। শেষে একদিন আমার মনে হলো, আপনি যখন ওর ঘনিষ্ঠ কেউ ছিলেন না, কাজেই আপনার কাছে সে ওটা রেখে যেতে পারে।”

মিজুকি বলল, “ধরেছ ঠিকই।”

“গেল বসন্তে আমার ভেতর একটা উদ্দীপনার জন্ম নিল। দেখাই যাক না আপনার কাছে ওটা পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু আপনাকে খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এখন আপনার নাম হয়েছে মিজুকি আনদো। থাকেন মিনাগাওয়ার এক ফ্ল্যাটে।

“যা-ই হোক মওলা আলি বলে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর খুঁজতে খুঁজতে একদিন অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গেলাম।”

“কিন্তু ওর ট্যাগের সঙ্গে আমারটাও কেন নিয়েছিলে? জান, এ জন্যে আমাকে। কতো দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।”

“আমি যারপরনাই দুঃখিত ম্যাডাম,” লজ্জায় মাথা নুইয়ে বানর বলল, “কোনো নাম পছন্দ করে সেটি না নেয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হই না। খুবই অস্বস্তিকর একটি ব্যাপার। কিন্তু আপনার নামটাও আমার ক্ষুদ্র হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। আগেই বলেছি, এটা আমার এক ধরনের অসুখ। বাসনার দ্বারা আক্রান্ত হই, নিজেকে সামলাতে পারি না। জানি, এটা ঠিক নয়; কিন্তু কেমন করে যে কি হয়ে যায় বলতে পারব না। আপনার সমস্যা সৃষ্টি করার জন্যে করজোড়ে ক্ষমা চাই।”

সাকুরান্দা বলল, “তাকানাওয়া অঞ্চলের নিমপ্রান্তে এইসব বানরদের একটা গুপ্ত ঘটি আছে যেখানে বসে এরা গোটা টোকিও শহরে অভিযান চালায়।”

বানর বলল “এই নগরে বসবাসের কোনো জায়গাই আমাদের নেই। দিনের বেলা বিচরণের জন্য কয়েকটা মাত্র গাছ আছে, নেই কোনো ছায়াঘেরা স্থান। মাটিতে নামলে লোকজন আমাদের তাড়া করে, ধরতে আসে। বাচ্চারা এটা ওটা ছুঁড়ে দেয়। বিবি গান দিয়ে গুলি করে। কুকুর ধাওয়া করে আমাদের।

“টিভি ক্রুরা তীব্র আলো ফেলে আমাদের গায়। কাজেই মাটির নিচে আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না তখন।”

মিজুকি বলল, “এখন এই বানরটাকে আপনারা কী করবেন?” সাকুরান্দা বলল, “ওকে আর বাঁচতে দেয়া যায় না। ও যা-ই বলুক না কেন, এ ধরনের বদ অভ্যাস যখন একবার ওদের চরিত্রে বাসা বেঁধেছে তখন সারাজীবন ধরেই চলবে…”

“এখন এসব করতে যেও না, এনিম্যাল রাইট গ্রুপের কানে গেলে রক্ষা থাকবে না। শহরে কাক নিধন অভিযান চালানোর পর ওরা কী কাণ্ড করেছিল মনে নেই তোমার?” বললেন মি. সাকাকি।

বানরটা কাতর হয়ে বলল, “আপনাদের পায়ে পড়ি, দয়া করে জানে মারবেন না আমাকে। আমি যা করেছি তা সব ভুল। আমার ভুল আমি বুঝতে পেরেছি। আপনাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। তর্কে যাওয়ার কোনো সাহস আমার নেই, তবে আমার কার্যকলাপের কিছু ভাল ফলও আছে।”

মি. সাকাকি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “মানুষের নাম চুরির মধ্যে আবার ভাল কী থাকতে পারে হে?”

“মানুষের নাম চুরি করি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ওই নামগুলোর সাথে যে নেতিবাচক উপাদান থাকে তা দূর হয়ে যায়। গর্ব করছি না, কিন্তু আমি যদি আগেই মাতসুনাকার নামের ট্যাগটা চুরি করতে পারতাম তাহলে হয়ত সে আত্মহননের পথ বেছে নিত না।”

মিজুকি বলল, “এ কথা কেন বলছ?”

“ওই নামটার সাথে আমি হয়ত তার মনের ভেতর জমে থাকা কালিমা অপসারণ করতে পারতাম।” বানর উত্তরে বলল।

সাকুরান্দা বলল, “তোমার একথা বাজারে বিকাবে না হে। জান যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তো তাই নিজের সাফাই গাইছ।” মিসেস সাকাকি বললেন, “হতেও পারে। ওরও যুক্তি থাকতে পারে। যখন তুমি কারো নাম চুরি কর তখন তার ভালমন্দ দুটোই নিয়ে যাও।”

মিজুকি তখন বানরকে বলল, “আমার নামের সঙ্গে খারাপ কিছু আছে?”

বানর বলল, “এ সব না বলাই ভাল।”

“আহা বলই না। প্লিজ। আমার কথার জবাব দিলে ওদেরকে বলব তোমাকে মাফ করে দিতে।”

“সত্যিই জানতে চান? এ সব শুনলে ভীষণ আঘাত পাবেন আপনি।”

“বল তুমি, সবকিছু শুনতে আমি প্রস্তুত।”

“শুনুন তবে, আপনার মা আপনাকে একটুও ভালবাসেন না। আপনার জন্মের পর কখনোই তিনি আপনাকে ভালবাসেননি, এক মিনিটের জন্যেও না। এর কারণ আমার জানা নেই, তবে কথাটা ঠিক।

“আপনার বড় বোনও পছন্দ করে না আপনাকে। আপনার হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য আপনার মা আপনাকে ইয়াকোহোমায় পাঠান। আপনাকে তিনি যতোটা সম্ভব দূরে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। আপনার বাবা অবশ্য খারাপ লোক ছিলেন না। তবে খুব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষও বলা যায় না তাকে। তিনি আপনার পাশে দাঁড়াতে পারেননি। আর এ কারণেই বাল্যকাল থেকে স্নেহ-ভালবাসা আপনার কপালে জোটেনি। আপনি অবশ্য এ সব আঁচ করতে পারেন; কিন্তু ইচ্ছে করেই ও সব থেকে চোখ সরিয়ে রেখেছেন। এই সব বেদনাদায়ক বাস্তবতা আপনি আপনার হৃদয়ের গভীরে ছোট্ট একটা কুঠুরিতে লুকিয়ে রেখেছেন।

“যে কোনো নেতিবাচক অনুভূতি দমনের চেষ্টা করেন আপনি। এ সব প্রতিরক্ষামূলক মনোভঙ্গি আপনার সত্তার একটা অংশে পরিণত হয়েছে। এ সব কারণে কাউকে গভীরভাবে ভালবাসা সম্ভব হয়ে ওঠে না আপনার পক্ষে।”

মিজুকি নীরবে শুনতে থাকে সব কথা।

“আপনার বিবাহিত জীবন আপাতদৃষ্টিতে সমস্যামুক্ত। কিন্তু স্বামীকে সত্যিকার ভালবাসেন না। আমি ঠিক বলেছি কি? আপনার সন্তান হলে ওর বেলাতেও তা-ই হবে।”

চুপ করে রইল মিজুকি। চোখ বুজে ফেলল। মনে হলো তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ত্বক, হাত-পা, নাক-মুখ, চোখ-কান আর হাড়গোড় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে যেন। নিজের নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।

সাকুরান্দা বলল, “কী সব ভয়ঙ্কর কথা বলছে বানরটা। আমার অসহ্য লাগছে। স্যার হুকুম করেন তো ব্যাটার ভবলীলা একেবারে সাঙ্গ করে দেই।”

মিজুকি বলল, “চুপ করুন তো আপনি। ও যা বলছে সবই সত্যি। অনেক দিন থেকেই সব জানি আমি। ইচ্ছে করেই চোখ-কান বন্ধ রেখেছি। মাফ করে দিন বানরটাকে। পাহাড়ের ওপরে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসুন। আপনাদের কাছে এই আমার অনুরোধ।”

মিসেস সাকাকি ওর কাঁধে হাত রেখে বললেন, “ওকে ছেড়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে? আপনি নিশ্চিত তো?”

“হ্যাঁ। নামটি ফেরৎ পেয়েছি এই আমার জন্য যথেষ্ট। সবকিছু মেনে নিয়েই জীবন কাটাতে হবে আমাকে। ওটা আমার-ই নাম, ওটাই আমার জীবন।”

বানরের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় মিজুকি মাতসুনাকার নামের ট্যাগ বানরের হাতে দিয়ে বলল, “যত্ন করে রাখবে এই নাম। আর কোনো দিন কারও নাম চুরি করবে না।”

“প্রতিজ্ঞা করছি সযত্নে সংরক্ষণ করব এই নাম আর ভবিষ্যতে কারো নাম চুরি করব না।” বানর বলল, তার চেহারায় ঐকান্তিকতার ছাপ।

‘“তুমি কি জানো মৃত্যুর আগে মাতসুনাকা কেন এই ট্যাগ আমার কাছে রেখে গিয়েছিল? কেন সে আমাকে বেছে নিয়েছিল?”

বানর বলল, “না ম্যাডাম। তবে এ কাজটি করেছিল বলেই আপনার সঙ্গে আমার দেখা হলো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বলতে পারেন।”

মিজুকি বলল, “হয়ত তোমার কথাই ঠিক।”

“আমার কথায় কি আঘাত পেয়েছেন?”

“তা-তো পেয়েছি-ই। খুব বড় ধরনের আঘাত।”

“আমি দুঃখিত; কিন্তু আমিতো বলতে চাইনি ম্যাডাম।”

“না না ঠিক আছে। আমি আগে থেকেই জানতাম সব। একদিন-না-একদিন আমাকে এ সবের মুখোমুখি হতেই হবে।”

“আপনার কথা শুনে শান্তি পেলাম।”

মিজুকি বলল, “তাহলে বিদায়। মনে হয় না আবার আমাদের দেখা হবে।” বানর বলল, “নিজের যত্ন নিতে ভুলবেন না। এই তুচ্ছ প্রাণীর জীবন রক্ষার জন্য ধন্যবাদ।”

সাকুরান্দা বলল, “মিনাগাওয়া এলাকায় তোমার চেহারা যেন আর দেখা না যায়। স্যারের কথায় তোমাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে; কিন্তু আবার ধরতে পারলে একেবারে জানে মেরে ফেলব, বুঝলে?”

.

বাড়ি ফিরে মিজুকি তার নামের ট্যাগ ও ব্রেসলেট খুলে একট বাদামি খামে ঢুকিয়ে রাখল। তারপর ওটা কার্ডবোর্ডের বাক্সে রেখে ক্লোসেটের মধ্যে ভরে দিল।

শেষ পর্যন্ত নিজের নামটি ফিরে পেয়েছে মিজুকি। নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় সে। হয়ত সব কিছু ঠিকঠাক চলবে, হয়ত চলবে না। কিন্তু নিজের নামটাতো ওর কাছে সংরক্ষিত আছে- যা শুধু ওর একার।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments