Tuesday, September 9, 2025
Homeবাণী ও কথাঅনুবাদ গল্পমেজার ফর মেজার - উইলিয়াম শেকসপিয়র

মেজার ফর মেজার – উইলিয়াম শেকসপিয়র

মেজার ফর মেজার – উইলিয়াম শেকসপিয়র

যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বে এখনও পর্যন্ত অবিবাহিত রয়ে গেছেন ভিয়েনার শাসক ডিউক ভিনসেনসিও। দয়ালুস্বভাবের মানুষ হবার দরুন গুরুতর অপরাধ করলেও কোনও প্রজাকে তিনি কঠোর শাস্তি দিতে পারেন না। তার এই মানসিক দুর্বলতা যে রাজ্যশাসনের সহায়ক নয়, তা বেশ ভালোই জানেন ডিউক। অনেক ভেবে-চিন্তে তিনি স্থির করলেন কোনও চরিত্রবান যোগ্য সহকারীর হাতে রাজ্যের শাসন ভার ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন তিনি লুকিয়ে থাকবেন দেশের ভিতরে, সেখান থেকে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে নজর রাখবেন রাজ্যশাসন ব্যবস্থার উপর। ডিউক তার বয়স্ক সভাসদ এসকেলাসের সাথে পরামর্শ করে রাজ্যের পুরো শাসনভার তুলে দিলেন তার সুযোগ্য সহকারী অ্যাঞ্জেলোর হাতে। তারপর গোপনে তিনি কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নিলেন নগরীর প্রান্তে অবস্থিত সাধু টমাসের মঠে। কোথায় যাচ্ছেন যাবার আগে তা কাউকে বলেননি। ডিউক, এমন কি নতুন শাসক অ্যাঞ্জেলোকেও নয়। দেশের সবাই জানল কিছুদিনের জন্য পোল্যান্ডে যাচ্ছেন। ডিউক। যাবার সময় ডিউক ভিনসেনসিও অ্যাঞ্জোলাকে আশ্বাস দিয়ে গেলেন যে মাঝে মাঝে তিনি চিঠি লিখে প্রজাদের খোঁজ-খবর নেবেন।

রাজ্য ছেড়ে ডিউক চলে যাবার সামান্য কিছুদিন বাদে ভিয়েনায় এক বয়স্ক নাগরিক এসে অ্যাঞ্জেলোর কাছে অভিযোগ জানাল যে ক্লডিও নামে এক সন্ত্ৰান্ত বংশের ছেলে তার মেয়ে জুলিয়েটকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে একত্রে বসবাস করছে। ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে জুলিয়েট। ক্লডিওর এই অপরাধের দরুন তার কঠিন সাজার দাবি জানালেন জুলিয়েটের বাবা। ভিয়েনার প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ জাতীয় অপরাধের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অভিযোগ শোনার পর ক্লডিওকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিলেন অ্যাঞ্জেলো; রক্ষীরা ক্লডিওকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এল। প্রাসাদে। ব্যভিচারের অপরাধে ক্লডিওকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করলেন অ্যাঞ্জেলো। শাস্তি ঘোষণার পর রক্ষীরা কারাগারে নিয়ে গোল ক্লডিওকে।

এদিকে রাজ্য প্রতিনিধি অ্যাঞ্জেলো তার অন্তরঙ্গ বন্ধু ক্লডিওকে প্রাণদণ্ডাদেশ দিয়েছেন শুনে কারাগারে গিয়ে তার সাতে দেখা করল লুসিও। সে ক্লডিওর কাছে জানতে চাইল এমন কী অপরাধ সে করেছে যার দরুন অ্যাঞ্জেলো তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। ক্লডিও জানাল সে মোটেও তারা বাবা-মার কাছ থেকে ফুসলিয়ে আনেনি জুলিয়েটকে। বরঞ্চ তাদের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল। বিয়ের দরুন সে কিছু যৌতুক দাবি করেছিল জুলিয়েটের বাবা-মার কাছে। কিন্তু তার দাবি মতো যৌতুক দিতে রাজি হননি জুলিয়েটের মা-বাবা। এরপর সে জুলিয়েটকে গির্জায় নিয়ে গিয়ে গোপনে তাকে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতে থাকে। তারই ফলস্বরূপ গৰ্ভবতী হয়ে পড়ে জুলিয়েট। এ খবর জানাজানি হতেই জুলিয়েটের বাবা অ্যাঞ্জেলোর কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন যে তার মেয়েকে কুঁসলিয়ে নিয়ে গেছে ক্লডিও। অভিযোগের সত্যতা যাচাই না। করেই ক্লডিওকে ধরে এনে তাঁরা প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন।

আসল ঘটনা হল এই ক্লডিও বলল লুসিওকে, বন্ধু! আমার একটা উপকার করবে?

বল, আমায় কী করতে হবে, বলল লুসিও।

ইসাবেলাকে। সন্ন্যাসিনী হবার আশায় কিছুদিন আগে সে যোগ দিয়েছে মেয়েদের একটা মঠে। এখন ওর শিক্ষা-দীক্ষা চলছে। এ সময়টা ঠিকমতে কাটিয়ে দিতে পারলেই সে একজন পুরোপুরি সন্ন্যাসিনী হতে পারবে। তুমি সেই মঠে গিয়ে ইসাবেলার সাথে দেখা করে আমার সব কথা তাকে খুলে বলবে। ওকে বলো, ও যেন অ্যাঞ্জেলোর সাথে দেখা করে আমার প্রাণ ভিক্ষা চায়। যুক্তি সহকারে বোঝাবার ক্ষমতা আছেইসাবেলার। আমার বিশ্বাস ওই পারবে এ কাজ করতে।

বন্ধুর অনুরোধে সেই মঠে এসেইসাবেলাকে সব কথা জানোল লুসিও। সব শোনার পর মঠের অধ্যক্ষার অনুমতি নিয়ে ইসাবেলা গেল রাজ-প্রতিনিধি অ্যাঞ্জেলোর কাছে। তার সামনে নতজানু হয়ে ভাইয়ের প্রাণভিক্ষা চাইল সে।

ইসাবেলার আবেদন শুনে অ্যাঞ্জেলো বললেন, আমি খুব দুঃখিত। এ ব্যাপারে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। আগামীকালই ক্লডিওর প্রাণদণ্ড হবে।

শিউরে উঠে ইসাবেলা বলল, আগামীকালই প্ৰাণদণ্ড হবে?

গম্ভীর স্বরে বললেন অ্যাঞ্জেলো, হ্যা, আগামীকালই প্ৰাণদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।

কাতরকণ্ঠে বললেন ইসাবেলা, মাননীয় রাজ-প্রতিনিধি, যে অপরাধে আপনি আমার ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, সে অপরাধ এর আগেও অনেকে করেছে, কিন্তু কারও প্রাণদণ্ড হয়নি। আমি মিনতি করছি আপনি একবার চেয়ে দেখুন নিজের মনের দিকে। আমার ভাইয়ের অপরাধের কোনও বীজ যদি সেখানে লুকিয়ে থাকে, তাহলে প্ৰাণদণ্ডাদেশ কার্যকর করার আগে অন্তত তার কথা একবার বিবেচনা করে দেখবেন। ইসাবেলার এই যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো শুনে মনে মনে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লেন অ্যাঞ্জেলো।

শুনুন তাহলে, বললেন অ্যাঞ্জেলো, শুধু একটি মাত্র শর্তে আমি মুক্তি দিতে পারি আপনার ভাইকে আর তা হল, আপনার ভাই যেমন এক নারীর কৌমাৰ্য হরণ করেছে, তেমনি আপনিও যদি একরােত আমার সাথে শুয়ে নিজের কৌমাৰ্য বিসর্জন দিতে পারেন, তবেই ছাড়া পাবে ক্লডিও। আজ রাতে চলে আসুন আমার ঘরে, আমি অপেক্ষা করব আপনার জন্য।

ইসাবেলা বেজায় চটে গেল অ্যাঞ্জেলোর প্রস্তাব শুনে, কঠোর স্বরে সে তাকে বলল, আপনি যে কীরূপ জঘন্য চরিত্রের লোক তা আপনার প্রস্তাব শুনেই বোঝা গেল রাজ-প্রতিনিধি। হয় এখনই আপনি আমার ভাইয়ের মুক্তিপত্রে সই করে দিন, নইলে আমি চেঁচিয়ে সবাইকে বলে দেব আপনার কু-প্ৰস্তাবের কথা। তখন সবাই বুঝতে পারবে আপনার আসল রূপ।

এ্যাঞ্জেলো বললেন, কিন্তু ইসাবেলা, কেউ বিশ্বাস করবে না। আপনার কথা। আমি কতদূর সংযমী, নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের লোক তা জানে সবাই। তারা সবাই ধরে নোবে আপনার ভাইয়ের প্রাণ দণ্ডাদেশ দিয়েছি বলেই আপনি আমার নামে মিথ্যে কুৎসা রটাচ্ছেন। তবে এখনই বলার প্রয়োজন নেই। আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি কি না; আগামীকাল অবশ্যই উত্তর চাই আমার; মনে রাখবেন। আপনার জবাবের উপরই নির্ভর করছে ক্লডিওর জীবন।

আর কিছু বলার না পেয়ে ধীরে ধীরে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এল ইসাবেলা।

এদিকে ডিউক ভিনসেনসিওর কানেও পৌঁছে গেছে ক্লডিওর প্রাণদণ্ডাদেশের খবর। সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ভিয়েনায় ফিরে এলেন ডিউক। এসেই ক্লডিওর ধর্মগুরু পরিচয়ে কারাগারে গিয়ে দেখা করলেন তার সাথে। সে সময় ইসাবেলাও এসে গেলেন। সেখানে। কারারক্ষককে নিজের পরিচয় জানিয়ে তিনি দেখা করতে চাইলেন। ক্লডিওর সাথে। কারারক্ষক তাকে নিয়ে এলেন ক্লডিওর কাছে। ছদ্মবেশী ডিউকও চলে গেলেন পাশের ঘরে। ভাই-বোনের কথা-বার্তা শুনতে তিনি কান পাতলেন ঘরের দেওয়ালে।

ইসাবেল বলল, এবার তুমি মৃত্যুর জন্য তৈরি হওক্লডিও। কারণ কালই তোমার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।

তবে কি বাঁচার কোনও আশা নেই আমার? হতাশার সুর বেরিয়ে এল ক্লডিওর মুখ থেকে। উপায় অবশ্য একটা আছে বলল ইসাবেলা, অ্যাঞ্জেলোর কাছে আমি তোমার জীবনভিক্ষা চেয়েছিলাম। অ্যাঞ্জেলো বললেন, আমি যদি আজ রাতে তার কাছে কৌমাৰ্য বিসর্জন দেই, তবেই তিনি ছেড়ে দেবেন। তোমাকে। তার শর্তে রাজি হলে আজ রাতটা আমায় তার সাথে কাটাতে হবে। তার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার চেয়ে মৃত্যুই আমার কাছে শ্রেয়।

উত্তেজিত হয়ে ক্লডিও বলে উঠলেন, ধিক অ্যাঞ্জেলোকে! মানুষ এমন জঘন্য প্রস্তাব দিতে পারে! নাঃ নাঃ ইসাবেলা, এভাবে বাঁচতে চাই না আমি!

তাহলে মৃত্যুর জন্য তৈরি হও ক্লডিও, গভীর স্বরে বললেন ইসাবেলা। তার কথা শোনার সাথে সাথে আবার নতুন করে মৃত্যুভয় পেয়ে বসল ক্লডিওকে। কাতরস্বরে সে বলল, আচ্ছা! ইসাবেলা, এমনও তো হতে পারে অ্যাঞ্জেলো তোমার ধৈর্য পরীক্ষার জন্য এই শর্তের কথা বলেছেন! যদি তা নাও হয়, তাহলে তোমার কৌমাৰ্য বিসর্জন দিতে বাধা কোথায়?

রাগতস্বরে বললইসাবেলা, ছিঃ ক্লডিও, তুমি এত স্বার্থপর! তোমার বোন, যে কিনা সন্ন্যাসিনী হবার সংকল্প নিয়েছে, তুমি কিনা তাকে বলছি কৌমাৰ্য বিসর্জন দিতে? মৃত্যুই তোমার মতো পাপিষ্ঠের একমাত্র শাস্তি।

এ কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ল ক্লডিও। ঠিক সে সময় সেখানে এসে হাজির হলেন সন্ন্যাসীবেশী ডিউক ভিনসেনসিও।

তিনি ইসাবেলাকে বললেন, আমি ক্লডিওর ধর্মগুরু। পাশের ঘরে বসে তোমাদের সব কথা শুনেছি। আমি তোমাদের চেয়ে ভালোভাবে চিনি অ্যাঞ্জেলোকে। আমার বিশ্বাস তোমার ধৈর্য আর চরিত্র পরীক্ষার জন্যই তিনি কৌমাৰ্য বিসর্জন দেবার কথা বলেছেন তোমাকে। তোমার চরিত্রে কালি মাখাবার কোনও ইচ্ছে নেই তার। তার শর্তে রাজি না হওয়ায় উনি মনে মনে খুশিই হবেন। তোমার উপর।

ডিউক বললেন, তবে তোমার প্রাণদণ্ডাদেশ রদ হবার কোনও আশা নেই ক্লডিও। এবার মৃত্যুর জন্য তৈরি হও তুমি। তার কথা শেষ হতেই কারারক্ষক ক্লডিওকে নিয়ে গেলেন অন্যদিকে। এবার ইসাবেলাকে ডিউক বললেন, শোনা ইসাবেলা, তোমার সাথে দরকারি কথা আছে আমার। এরপর চারপোশ একবার দেখে নিয়ে তিনি বললেন, তুমি কি সত্যিই তোমার ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে চাও ইসাবেলা?

নিশ্চয়ই চাই ফাদার, বলল ইসাবেলা, তবে আপনি অ্যাঞ্জেলোকে যে সৎ এবং ধর্মপ্ৰাণ বললেন, আমি তা মেনে নিতে রাজি নই। ডিউক ফিরে এলে আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জনাব।

সে তো ভালো কথা, বললেন ছদ্মবেশী ডিউক, আমি তো শুনেছি। ডিউক সম্প্রতি দেশে ফিরে আসছেন! যাইহোক, এ মুহূর্তে ভাইকে বাঁচাতে হলে অন্য পথে এগুতে হবে তোমাকে। এবার মন দিয়ে শোন আমার কথা। আমার কথা মতো চললে একদিকে ধর্মপ্ৰাণ নারীর যথেষ্ট উপকার হবে। এমনকি কৌমার্য বিসর্জন না দিয়েও তুমি তোমার ভাইয়ের প্রাণ বঁচাতে পারবে। সেই সাথে একজন নিরপরাধ যুবতিরও যথেষ্ট উপকার হবে। এবার বল তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি কিনা?

নিশ্চয়ই রাজি, বলল ইসাবেলা, এবার বলুন কী করতে হবে আমায়?

ডিউক বললেন, তুমি নিশ্চয়ই বীর যোদ্ধা ফ্রেডারিকের নাম শুনেছ?

সেই ফ্রেডরিক, মানে যিনি জাহাজ ডুবি হয়ে মারা যান? বলল ইসাবেলা।

ডিউক বললেন, হ্যা, সেই ফ্রেডরিক। তারই ছোটেগবোন মারিয়ানার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল অ্যাঞ্জেলোর। জাহাজে করে বোনের বিয়ের যৌতুক সামগ্ৰী নিয়ে ফিরে আসছিলেন ফ্রেডরিক। কিন্তু মাঝসমুদ্রে জাহাজ ডুবে যাওয়ায় শুধু জিনিসপত্রই নয়, ডুবে মারা গেলেন ফ্রেডরিকও। ফলে বন্ধু হয়ে গেল অ্যাঞ্জেলোরা সাথে মারিয়ানার বিয়ে। আজও দুজনে অবিবাহিত রয়েছে। আমি জানি মারিয়ানা এখনও ভালোবাসে অ্যাঞ্জেলোকে। এবার তোমার যা করতে হবে তা মন দিয়ে শোন ইসাবেলা। তুমি অ্যাঞ্জেলোর সাথে দেখা করে বলবে তুমি তার শর্তে রাজি। আজ রাতে তার সাথে থাকবে তুমি।

ডিউকের কথা শুনে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল ইসাবেলা, ছিঃ ছিঃ! এ সব কী কথা বলছেন আপনি?

ডিউক বললেন, তুমি মিছেই আমায় ভুল বুঝছইসাবেলা। আগে আমার কথা শোন, তারপর যা বলার বলো। অ্যাঞ্জেলো আজকের রাতটা ঠিকই কাটাবে এক নারীর সাথে। তবে সে তুমি নও, মারিয়ানা, যার সাথে একসময় অ্যাঞ্জেলোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তুমি গোপনে মারিয়াকে নিয়ে অ্যাঞ্জেলোর কাছে গিয়ে তাকে সেখানে রেখে ফিরে আসবে। অ্যাঞ্জেলো ভাববে রাতে তুমিই তার কাছে ছিলো। এটা করলে উভয়ের মধ্যে মিলন ঘটবে। তাছাড়া ওদের বিয়ে আগেই ঠিক হয়েছিল আর মারিয়ানা আজও ভালোবাসে অ্যাঞ্জেলোকে–কাজেই একাজ করলে কোনও পাপ হবে না, তোমার ভাই ক্লডিও ছাড়া পেয়ে যাবে।

সব শুনে ইসাবেলা বলল, বেশ! আপনার কথামতেই কাজ হবে। আমি এখনই যাব অ্যাঞ্জেলোর কাছে।

ডিউক বললেন, তোমায় অজস্র ধন্যবাদ জানাই ইসাবেলা। আমি এখনই মারিয়ানার কাছে যাব। গোটা পরিকল্পনাটা তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সেই মতো তৈরি করতে হবে তাকে। আচ্ছা! ইসাবেলা! তুমি তো চেন সেন্ট লুক-এর জমিদারদের পুরনো গোলবাড়িটা! সেখানেই থাকে মারিয়ানা। তুমি অ্যাঞ্জেলোর সাথে কথা-বার্তা সেরে সেখানে চলে যাবে। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করব সেখানে।

অ্যাঞ্জেলোর সাথে দেখা করে ইসাবেলা জানাল যে সে তার শর্তে রাজি। তারপর সে চলে এল মারিয়ানার বাড়িতে। সেখানে ছদ্মবেশী ডিউক তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি মারিয়ানার সাথে ইসাবেলার পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইসাবেলা জানাল কাল রাতে সে মারিয়ানাকে নিয়ে গোপনে যাবে অ্যাঞ্জেলোর প্রাসাদের লাগোয়া বাগানে। তিনি কথা দিয়েছেন সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করবেন।

মারিয়ানাকে হাঁশিয়ার করে দিয়ে ডিউক বললেন, কখনও বেশি কথা বলবে না। অ্যাঞ্জেলোর সাথে। দেখবে, ও যেন তোমায় চিনতে না পারে। আর চলে আসার সময় ক্লডিওর প্রাণদণ্ড মকুব করার কথাটা অবশ্যই মনে করিয়ে দেবে।

মারিয়ানাকে নিয়ে ইসাবেলা চলে যাবার পর ডিউক এলেন। কারাগারে। কারাধ্যক্ষের কাছে শুনলেন আগামীকাল সকালেই নাকি ক্লডিওর কাটামুণ্ডু দেখতে চেয়েছেন অ্যাঞ্জেলো। বারনার ডাইন নামে আরও এক কয়েদিরও সেদিন প্ৰাণদণ্ড হবার কথা। ডিউক কারারক্ষককে অনুরোধ করলেন তিনি যেন ক্লডিওর পরিবর্তে বারনারডাইনের কাটা মুণ্ডুটাই পাঠিয়ে দেন। অ্যাঞ্জেলোর কাছে।

অবাক হয়ে কারাধ্যক্ষ বললেন, কী করে তা সম্ভব হবে? কারণ ওদের দুজনকেই চেনেন অ্যাঞ্জেলো। এবার ছদ্মবেশী ডিউক ভিনসেনসিওর সিলমোহর আর পাঞ্জা বের করে কারাধ্যক্ষকে দেখিয়ে বললেন, সে যদি তার কথা মতো কাজ করে তাহলে তার মঙ্গল হত। তাকে এও বললেন, ডিউক ফিরে এসে এ কাজের জন্য তাকে যথোচিত পুরস্কার দেবেন। ছদ্মবেশী সন্ন্যাসী যে ডিউকের খুব কাছের লোক, সেটা বুঝতে পেরে কারাধ্যক্ষ বললেন, এই কারাগারের এক বন্দি, জলদসু্যু র্যাগোজাইন, অনেক দিন ধরে অসুখে ভুগে ভুগে আজ সকালে মারা গেছে। অনেকটা ক্লডিওর মতো দেখতে সে।

তাহলে তো ভালোই হল, বললেন ডিউক, কাল সকালেই তার মুণ্ডুটা কেটে নিয়ে পাঠিয়ে দেবেন। অ্যাঞ্জেলোর কাছে। আর ডিউক ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি ক্লডিও আর বারনারডাইনকে এমন ভাবে লুকিয়ে রাখবেন যাতে অ্যাঞ্জেলো টের না পায়। এটুকু বলে ডিউক চলে যাবেন এমন সময় সেখানে হাজির হলেন ইসাবেলা। তিনি ডিউককে জানালেন আজ রাতে অ্যাঞ্জেলোর সাথেই প্রাসাদে রাত কাটাচ্ছে মারিয়ানা। এবার তিনি জানতে চাইলেন। ক্লডিওর প্রাণদণ্ড রদ করা হয়েছে। হয়েছে কি? উত্তরে ডিউক বললেন, না যথাযথ তার প্রাণদণ্ড বহাল আছে। ইচ্ছা করেই মিছে কথা বললেন ছদ্মবেশী ডিউক। ক্লডিওর মৃত্যুর কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ল ইসাবেলা।

ইসাবেলাকে সাস্তুনা দিয়ে ডিউক বললেন, যা হবার তা হয়ে গেছে। মিছেমিছি। আক্ষেপ করে লাভ কী! কদিন বাদেই তো ফিরে আসছেন। ডিউক। তিনি দেশে ফিরে এলে এখানে যা ঘটেছে তার পুরো বিবরণ লিখে দিয়ে অ্যাঞ্জেলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবে তার কাছে।

কবে দেশে ফিরে আসছেন তা জানিয়ে প্রতিনিধি অ্যাঞ্জেলোকে চিঠি দিলেন ডিউক ভিনসেনসিও। নির্দিষ্ট দিনে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ছেড়ে ভিয়েনায় ফিরে এলেন তিনি। তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নগরীর ভেতরে নিয়ে এলেন অ্যাঞ্জেলো। সেখানে অপেক্ষমাণ ইসাবেলা তার অভিযোগপত্র তুলে দিলেন ডিউকের হাতে। সেই সাথে সবার সামনে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, এক রাত তার সাথে কাটাতে হবে এই শর্তে তার ভাইক্লডিওর প্রাণদণ্ড মকুব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো। কিন্তু তা করা সত্ত্বেও তার ভাইয়ের প্রাণদণ্ড কার্যকর করেছেন তিনি। ডিউক বললেন অ্যাঞ্জেলোর মতো সৎচরিত্রের লোকের পক্ষে ইসাবেলাকে এমন জঘন্য শর্ত দেওয়া মোটেই সম্ভব নয়। তখন মারিয়ানা এগিয়ে এসে বলল, ইসাবেলার সাথে নয়, অ্যাঞ্জেলো রাত কাটিয়েছেন তারই সাথে। মারিয়ানাকে সমর্থন করে ইসাবেলাও বলল অ্যাঞ্জেলো তাকে ওই শর্ত দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে তিনি রাত কাটিয়েছেন মারিয়ানার সাথেই। এক বয়স্ক সন্ন্যাসীর নির্দেশে তিনি যে মারিয়ানাকে অ্যাঞ্জেলোর প্রাসাদে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সে কথাও কবুল করলেন তিনি। তখন সন্ন্যাসীর পোশাক পরে নিয়ে ডিউক দেখালেন যে তিনিই সেই সন্ন্যাসী। এবার ডিউকের নির্দেশে কারাধ্যক্ষ এনে হাজির করলেন ক্লডিওকে। ভাইকে জীবিত দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল ইসাবেলা।

এবার এল সবার বিদায়ের পালা; ডিউকের আদেশে মারিয়ানাকে স্ত্রী বলে গ্রহণ করলেন অ্যাঞ্জেলো, আর ক্লডিও ফিরে গেলেন জুলিয়েটের কাছে। সব শেষে ডিউক জানালেন, ইসাবেলার স্বভাবে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি, তাই স্ত্রী-রূপে গ্ৰহণ করতে চান তাকে। যেহেতু তখনও পুরোপুরি সন্ন্যাসিনী হননি, তাই ইসাবেলাও সানন্দে গ্ৰহণ করলেন ডিউকের প্রস্তাব!

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments