
রাজশাহীর বাঘায় শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকায় দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘ তিন বছর থেকে এ খাদ্য সরবরাহ করে আসছেন আড়ানী পৌর বাজারের তালতলায় অন্নপূর্ণা হোটেল এ- রেস্টুরেন্টের মালিক বিপ্লব সরকার।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে তার বাবা শ্যামল সরকার আড়ানী বাজারে একটি খাবার হোটেল দেন। এ হোটেলে ৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের শ্যামল সরকার কোন কোন সময় খাবার সরবরাহ করতেন। তার ছেলে বিপ্লব সরকার এ কাজটি করে আসছেন তিন বছর থেকে। তবে প্রথম দিকে তার বাবাকে না জানিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার সরবরাহ করতো। তার বাবা এ বিষয়ে মাঝে মধ্যে বকাও দিত। কিন্তু বিপ্লব সরকার এ কাজ থেকে সরে আসেনি। বিপ্লবের বাবা যখন দুপুরে দিকে বাড়িতে চলে যায়। এ সময় বিপ্লব দোকানে বসেন। টিফিনের সময় আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয় ও আড়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার খায়। ৫ টাকার বিনিময়ে পরিমান মতো ভাত, ডাল, একটু ভাজি ও ভর্তা দেয়া হয়। তবে সপ্তাহে এক দিন মাছ ও মাংস দেয়া হয়। যারা স্কুল ড্রেস পরে আসে শুধু তাদের মাঝে ৫ টাকার বিনিময়ে এ খাবার দেয়া হয়। যারা ড্রেস পরে আসে না তাদের খাবার দেয়া হয় না।
এ বিষয়ে বিপ্লব সরকার বলেন, ছাত্ররা প্রায় দিন টিফিনের সময় দুপুরে হোটেলে সিংগাড়া খেতে আসতো। তৈলাক্ত জিনিস খেলে সমস্যা হবে ভেবে তাদের কাছে থেকে ৫ টাকা নিয়ে ভাত খেতে দিতাম। কিছু কিছু সময় অবাক হয়ে ছাত্ররা খেয়ে চলে যেত। এভাবে ছাত্রদের সিংগাড়া না দিয়ে ভাত খেতে দিতাম। এখনো দিচ্ছি। তবে প্রতিদিন তার হোটেলে ৬০ থেকে ৮০ জন ছাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে ভাত খায়। আমি অর্থনৈতিক দূর্দশার কারণে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছি। সংসারের অভাব অনটনের কারণে হোটেলে বাবাকে সহযোগিতা শুরু করি। এখন বাবার অনেকটুকু বয়স হয়েছে। বাবাকে এখনোও সহযোগিতা করি। তবে হোটেলের পাশাপাশি বিপ্লব সরকারের লেপ তোশকের দোকান রয়েছে। আমি লেখাপড়া করতে পারেনি। ছোট ছোট ছেলের দুপুরে এ টাকার বিনিময়ে খাবার দিতে পেরে ভালো লাগে।
বিপ্লব সরকারের বাবা শ্যামল সরকার বলেন, ছেলের এ কাজ প্রথমে দেখে তাকে অনেক বকাবকি করতাম। বকাবকি করেও যখন কোন কাজ হলো না, হোটেলের দায়িত্বে ছেলেকে দিয়ে দিলাম। তবে ভালো চলছে।
এ বিষয়ে আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিপ্লব সরকার ৫ টাকার বিনিময়ে দুপুরে শুধু শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার দেয় এটা শুনেছি।
আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, আমি মাঝে মধ্যে তার হোটেলে দুপুরে খেতে যায়। সেখানে স্কুলের ছেলে-মেয়েরা ভাত খাওয়ার জন্য ভিড় জমায়। কিছু দিন পর জানতে পারি ৫ টাকার বিনিময়ে ছাত্রদের খাবার দেয়া হয়।