Tuesday, August 19, 2025
Homeবাণী ও কথাঅনুবাদ গল্পটাইটাস অ্যাড্রোনিকাস - উইলিয়াম শেকসপিয়র

টাইটাস অ্যাড্রোনিকাস – উইলিয়াম শেকসপিয়র

টাইটাস অ্যাড্রোনিকাস – উইলিয়াম শেকসপিয়র

রোম সম্রাটের মৃত্যুর পর সিংহাসনের অধিকারী কে হবে তাই নিয়ে বিবাদ বেধেছে সম্রাটের দুই ছেলের মধ্যে। বড়ো ছেলে স্যাটার্নিনাস বললেন, আমি সম্রাটের বড়ো ছেলে সেহেতু সিংহাসনে বসার অধিকার একমাত্র আমারই!

সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলে উঠল। ছোটো ছেলে বাসিয়ানাস, হে রোমের জনগণ! আমি যদি কখনও আপনাদের প্রিয় হয়ে থাকি, তাহলে আপনারা আমার সিংহাসনে বসার পথকে সুগম করুন। কিন্তু তাদের কারও দাবি মেনে নিলেন না। রাজপ্রতিনিধি মার্কাস অ্যাভেড়ানিকাস। রোমের পরবতী সম্রাট হিসেবে তিনি ঘোষণা করলেন বীর যোদ্ধা টাইটাস অ্যান্ডোনিকাসের নাম। তার অভিমতকে সমর্থন করলেন সেনেটের সদস্যরা। ঘোষণা শেষ হবার কিছুক্ষণ বাদেই গথ বাহিনীকে যুদ্ধে পরাস্ত করে রোমে ফিরে এলেন টাইটাস অ্যান্ডোনিকাস। তার পেছু পেছু দুজন সৈনিক বহন করে নিয়ে এল একখানা কফিন। এরপর যুদ্ধে পরাজিত গথদের রানি ট্যামোরা ও তার তিন ছেলে অ্যালার্বাস, চিরন এবং ডিমেট্রিয়াসকে বন্দি অবস্থায় নিয়ে এলেন সৈনিকেরা।

ইশারায় কফিনটিকে দেখিয়ে টাইটাস বললেন, এই কদিনের মধ্যে রয়েছে আমার দ্বাবিংশ সন্তানের মৃতদেহ। মৃত আত্মার শান্তি কামনায় এবার টাইটাসের বড়ো ছেলে সুসিয়াস আগুনে আহুতি দিলেন গথদের রানির বড়ো ছেলে অ্যালার্বাসকে।

সেনেটরদের উদ্দেশ করে টাইটাস বললেন, মাননীয় সেনেটরগণ, আমি একজন সামান্য সৈনিক। আমি দেশবাসীর সেবা করে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। সম্রাটের বড়ো ছেলেরই সিংহাসনে বসা উচিত, এটাই আমার অভিমত।

বেশ! আপার অভিমত অনুযায়ীই কাজ হবে, বলে সেনেটরদের উদ্দেশ করে মার্কাস অ্যান্ডোনিকাস বললেন, তাহলে রোমের সিংহাসনে স্যাটার্নিনাসই বসুক।

বেজায় খুশি হয়ে স্যাটার্নিনাস বললেন টাইটাসকে, আপনি সত্যিই একজন খাঁটি দেশসেবক। আমি চাই আপনার মেয়ে ল্যাভিনিয়াকে স্ত্রীরূপে গ্ৰহণ করতে। সে হবে রোম সম্রাজ্ঞী।

প্রতিবাদ করা ছোটো রাজকুমার ব্যাসিয়ানাস বললেন, তা কী করে হবে। ল্যাভিনিয়া আমার বাগদত্তা। আমি ছাড়া ওর ওপর আর কারও অধিকার নেই, বলে ল্যাভিনিয়ার হাত ধরে সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।

টাইটাস বললেন, ব্যাসিয়ানাসের এরূপ আচরণ রীতিমতো রাজদ্রোহিতা! আমি বেঁচে থাকতে তা হতে দেব না, বলে ব্যাসিনিয়াসের পেছু নিতে যাবেন, এমন সময় তার ছোটো ছেলে মিউটিয়াস তাকে বাধা দিয়ে বলল, ল্যাভিনিয়া ব্যাসিনিয়াসের বাগদত্ত। তাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ব্যাসিনিয়াস উচিত কাজই করেছে। ছেলের কাছে বাধা পেয়ে রাগে অগ্নিশৰ্মা হয়ে উঠলেন টাইটাস। তলোয়ারের এক কোপে তিনি মেরে ফেললেন মিউটিয়াসকে।

একী করলেন আপনি? বলে উঠলেন মার্কাস অ্যান্ডোনিকাস, ব্যাসিনিয়াসের জন্য আপনি নিজের ছেলেকে মেরে ফেললেন? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে?

এবার সেনেটদের উদ্দেশ করে সম্রাট স্যাটানিনাস বললেন, এত সব কাণ্ডের পর আমার আর দরকার নেই ল্যাভিনিয়াকে। তার চেয়ে আমি বরং গথ রানি ট্যামোরাকে বিয়ে করে রোমের সম্রাজ্ঞীর আসনে বসাব। তারপর ঘাড় ধরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবী টাইটাস আর তার ছেলেদের। রোমের সাম্রাজ্ঞী হবার আনন্দে রানি ট্যামোরা নিমেষের মধ্যে ভুলে গেলেন তার পুত্ৰশোক। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি স্যাটার্নিনাসকে বললেন, তিনি যেন ব্যাসিয়ানাসকে মার্জনা করেন। এবার ট্যামোরা ও তার নিজ পারিষদদের নিয়ে জঙ্গলে শিকার করতে গেলেন স্যাটানিনাস। সম্রাটের ক্ষমা পেয়ে ল্যাভিনিয়ার সাথে ব্যাসিয়ানাসও গেলেন তাদের সাথে। অ্যারন নামে এক মুর প্রেমিক ছিল ট্যামোরার। সেও তার সাথে বন্দি হয়ে এসেছে রোমে। সে দেখল যে ভাবে ট্যামোরার বড়ো ছেলে অ্যালারব্বাসকে পুড়িয়ে মেরেছে টাইটাস, তার প্রতিশোধ নেবার সুযোগ এটাই। ট্যামোরাকে সে কথা বলে প্ৰতিশোধ নেবার চক্রান্ত করল অ্যারন।

এদিকে গভীর জঙ্গলের মাঝে এক নির্জন জায়গায় অ্যারনের সাথে ট্যামোরাকে আলোচনারত দেখে কৌতূহলী হয়ে ল্যাভিনিয়ার সাথে এগিয়ে গেলেন ব্যাসিয়ানাস। তিনি ট্যামোরাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন একজন সাধারণ পাশ্বচারের সাথে এভাবে গোপনে কথা বলা সম্রাজ্ঞীর পক্ষে অমর্যাদাকর। ল্যাভিনিয়াও সে কথায় সায় দিল। তাদের দেখে অ্যারন ইশারা করলেন ট্যামোরাকে। তাদের দুজনকে দেখিয়ে, ট্যামোরা তার ছেলেদের বললেন, দ্যাখ! এরা আমায় ভুলিয়ে-ভালিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে, আর আমি গাথ বলে যা-তা গালাগালি করছে। এখন বলছে ওরা আমার হাত-পা বেঁধে রেখে এই জঙ্গলে ফেলে রাখবে যাতে জন্তু-জানোয়ার আমায় খেয়ে নিতে পারে।

ট্যামোরার কথা শুনে খেপে গেল তার ছেলেরা। তারা ব্যাসিনিয়াকে হত্যা করে একটা গর্তের ভেতর ফেলে রেখে দিল। তারপর টানতে টানতে ল্যাভিনিয়াকে নিয়ে গেল সেখান থেকে।

জঙ্গলের মাঝে টাইটাসের দুই ছেলে কুইনটাস আর আর্টিয়াসকে দেখতে পেয়ে বদ মতলব চাপল অ্যারনের মাথায়। চিতাবাঘ শিকারের লোভ দেখিয়ে সে তাদের নিয়ে গেল সেই গর্তের ধারে, যেখানে পড়েছিল ব্যাসানিয়াসের মৃতদেহ। ঝুকে দেখতে গিয়ে পা হড়কে গর্তের ভিতর পড়ে গেল আর্টিয়াস। তখন পা টিপে টিপে সেখান থেকে সরে পড়ল অ্যারন। সে ডেকে নিয়ে সম্রাট স্যাটানিনাসকে। ইতিমধ্যে সম্রাজ্ঞী ট্যামোরাও হাজির হয়েছেন সেখানে। গর্তের ভেতর থেকে আর্টিয়াসকে টেনে তোলার পর সম্রাট জানতে পারলেন তার ভাইয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে। গর্তের ভিতর।

ইশারায় কুইনটাস আর আর্টিয়াসকে দেখিয়ে ট্যামোরা বললেন, এ নিশ্চয়ই ওই দুজনের কাজ। সেই সাথে তিনি একটা চিঠি তুলে দিলেন সম্রাটের হাতে। চিঠিটা খুলে সম্রাট দেখলেন তাতে লেখা রয়েছে ব্যাসিনিয়াসকে মেরে বনের যে কোনও একটা জায়গায় ফেলে দেবে।

চিঠিটা টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাস লিখেছেন তার এই দুই ছেলেকে—বললেন ট্যামোরা, আমি কায়দা করে চিঠিটা ওদের কাছ থেকে হাতিয়েছি। সম্রাটের আদেশে এবার রক্ষীরা বেঁধে রাখল কুইনটাস আর আর্টিয়াসকে। এরপর বনের মাঝে খোঁজাখুঁজি করে তারা ল্যাভিনিয়াকে দেখতে পেল হাত-পা বাধা, জিব কাটা অবস্থায়। আহত ল্যাভিনিয়াকে তার প্রাসাদে পৌঁছে দিলেন রাজ–প্রতিনিধি টাইটাস অ্যান্ডোনিকাস। আহত মেয়েকে এহেন অবস্থায় দেখে শিশুর মতো অঝোরে কান্দতে লাগলেন বীর যোদ্ধা অ্যাড্রোনিকাস।

ব্যাসানিয়াসকে হত্যার অপরাধে সম্রাট প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করলেন কুইনটাস আর আর্টিয়াসকে। নিজের অসহায় অবস্থার কথা বলে ছেলেদের প্রাণভিক্ষা চাইলেন টাইটাস। কিন্তু তার কথায় কান দিলেন না সম্রাট। কিছুক্ষণ বাদে অ্যারন এসে বললেন টাইটাসকে, সম্রাট বলেছেন আপনি যদি আপনার একখানা হাত কেটে সম্রাটকে দিতে পারেন তাহলে তিনি আপনার ছেলেদের প্রাণদণ্ড রুদ করে দেবেন। অ্যারিনের কথায় বিশ্বাস করে টাইটাস তার একটি হাত কেটে অ্যারনের হাতে দিয়ে দিলেন। অ্যারন সেটি নিয়ে রওনা দিলেন রাজপ্রাসাদ অভিমুখে। কিছুক্ষণ বাদে একটি থালায় সাজান কুইনটাস আর আটিয়াসের কাটামুণ্ড নিয়ে একজন জল্লাদ এল টাইটাসের সামনে। তিনি দেখলেন তার কাটা হাতটিও সাজান রয়েছে ছেলেদের কাটামুগুর পাশাপাশি। জল্লাদ বলল টাইটাসকে, এগুলো আপনাকে উপহার স্বরূপ পাঠিয়েছেন সম্রাট।

সম্রাটের কাণ্ড দেখে বেজায় ঘাবড়ে গেলেন। বড়ো ছেলে লুসিয়াসকে ডেকে তিনি বললেন, দ্যাখ! হাতে আর মোটেও সময় নেই। প্ৰাণে বাঁচতে চাও তো এইবেলা রোম ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে গথিদের দেশে আশ্রয় নাও। সেখান থেকে সৈন্য নিয়ে রোম আক্রমণ করে এর প্রতিশোধ নেবে। পিতার নির্দেশে তখনই ঘোড়ায় চড়ে রোম ছেড়ে পালিয়ে গেলেন লুসিয়াস। যাবার আগে তিনি নিজের ছেলেকে বাবার কাছে রেখে গেলেন।

দু-হাত আর জিভ কটা, কথা বলার ক্ষমতাও নেই ল্যাভিনিয়ার। টাইটাসের কথা মতো সে দাঁতে কাঠি কামড়ে ধরে ভেজা মাটির উপর লিখল—সম্রাজ্ঞী ট্যামোরার নির্দেশে তার দুই ছেলে চিরন আর ডিমিট্রিয়াস কেটে নিয়েছে তার দুহাত আর জিভ। এমন কি সম্রাজ্ঞীর প্ররোচনায় বনের মাঝে খুন হয়েছেন তার স্বামী ব্যাসিয়ানাস।

সম্রাট স্যাটানিনাস আর সম্রাজ্ঞী ট্যামোরা উভয়েই বেজায় ভয় পেয়ে গেলেন যখন তারা গুপ্তচরের মুখে শুনলেন বিশাল গথ সেনাবাহিনী নিয়ে রোম আক্রমণ করতে আসছেন টাইটাসের ছেলে লুসিয়াস। এদিকে টাইটাসের পেট থেকে লুসিয়াসের কথা বের করতে ট্যামোরা তার দুই ছেলে চিরন আর ডিমিট্রিয়াসকে মন্ত্রী সাজিয়ে টাইটাসের কাছে নিয়ে এলেন। টাইটাসকে আশ্বাস

ঐ দু-জনকে তার কাছে রেখে যান। সেই সাথে তাকে আমন্ত্রণ জানালেন তিনি যেন সম্রাটকে সাথে নিয়ে নৈশভোজে তার প্রাসাদে আসেন।

দুই ছেলেকে টাইটাসের ভরসায় রেখে দিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরে গেলেন ট্যামোরা। এরপর টাইটাসের প্রাসাদে এলেন রাজপ্রতিনিধি মার্কাস অ্যান্ডোনিকাস। ছেলে দুটিকে দেখেই তিনি তাদের শনাক্ত করলেন ট্যামোরার ছেলে চিরন আর ডিমিট্রিয়াস বলে। রাজপ্রতিনিধির কথা শুনে খুব খুশি হলেন টাইটাস। তিনি তখনই ল্যাভিনিয়াকে ডেকে এনে তাদের চোখের সামনে নিষ্ঠুরভাবে–ছুরি দিয়ে হত্যা করলেন ট্যামোরার ছেলে দু-টিকে। তারপর নিজেই রান্না করলেন ছেলে দুটির মাংস। নৈশভোজে সম্রাট স্যাটানিনাস আর সম্রাজক্ট ট্যামোরা এসে পৌঁছাবার পর তিনি তাদের সেই মাংস খাওয়ালেন। এবার তাদের সবার সামনে টাইটাস নিজ হাতে হত্যা করলেন মেয়ে ল্যাভিনিয়াকে। ট্যামোরা বাধা দিতে এলে তিনি তাকেও খুন করলেন। পরমুহূর্তে টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাসকে হত্যা করলেন সম্রাট স্যাটার্নিনাস। তখন ভোজসভায় রক্তের ছড়াছড়ি। যে যেদিকে পারে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ সব কাণ্ডের মাঝেই বিশাল বাহিনী নিয়ে হাজির হলেন টাইটাসের বড়ো ছেলে লুসিয়াস। কোমরে আঁটা খাপ থেকে তলোয়ার খুলে তিনি আমূল বসিয়ে দিলেন সম্রাটের বুকে।

এরপর জনগণের ইচ্ছানুসারে রোমের সিংহাসনে বসলেন লুসিয়াস।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments