Friday, April 26, 2024
Homeরম্য গল্পঠেলার নাম বাবাজী - মজার গল্প

ঠেলার নাম বাবাজী – মজার গল্প

'ঠেলার নাম বাবাজী' মজার গল্প

এক গ্রামীণ প্রজা জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার জরু (বিবি) সবসময় খসমের (স্বামী) জন্য দুশ্চিন্তায় থাকতো। স্বামী বাইরে গেলে না ফেরা পর্যন্ত ঘর-বাইর করতে থাকতো।

তো, জমিদারের কাছারিতে যাওয়ার সময় তার বউ পই পই করে বলে দিয়েছিল কথার্বাতা ভেবে-বুঝে বিনয়ের সঙ্গে বলো। এ কিন্তু জমিদারের কাছারি, মামাবাড়ি না। উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা বলো না। ঘাওড়ামি করো না—আমি এই সব জ্বালাযন্ত্রণা সহ্য করি—নায়েব-পেয়াদা কিন্তু করবে না। তাই আল্লা-রসুলের নাম নিয়া যাও। বাকি খাজনার সবটা দিতে পারবা না—তাই অনুনয়-বিনয় করে বলো, “আশ্বিন মাসের মধ্যেই আল্লার মর্জি সব দেনা শোধ দেবানে। নায়েব মশাই এই দয়াটুকু করেন।”

সে বউকে বলে, মেলাই লেকচার দিসনা তো? আমি মানুষ চরায়ে খাই— আমি কি কথা জানিনে নাকি? প্রজার বউ তবু বলে: প্যাঁচ মারা কথা কবা না। সিধা-শান্ত হয়া কতা কবা। কথা কওনের সুমে নায়িবির মুহের দিহে চাবা না- মাটির পালি চাবা। আর ‘আল্লার মর্জি’, ‘আল্লাহ দয়া করলি’ এই সব কথা কবা।

তো, সেই প্রজা জমিদার বাড়িতে গেছে। পথের রোদ আর পথ চলার শ্রান্তিতে ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে বলে : “বাপের জমিদারি থাকলে ঘরে বইসে টাকার ঝনঝনি শুইনে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান যায়। আর আমরা শালায় সারাদিন গতর খাটিয়ে যা রোজগার করি তার সিংহভাগ জমিদারের পেটে যায়। যাহোক, একথা জমিদারের লোকেরা কেউ শোনেনি বলে রক্ষা।

তবে নায়েবের কাছে খাজনা দিতে যেয়ে নায়েব যখন নিচু হয়ে খাজনার রসিদ লিখছে তখন সে ফিকফিক করে হেসে ফেলে। নায়েব তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। জিজ্ঞেস করে, হাসছিস যে!

সে উত্তরে বলে, এত ভারি বোঝা মাথায় করে, আমরা ধানচাল কলাই সরষে নিয়ে হাটবাজারে যাই–তবু আমাদের মাথায় চুলের কমতি নাই। নায়েব সাবের মাথায় দেহি একগাছা চুলও নাই। ঝুনা বুদ্ধিতে চুল খেয়েছে, নাকি টাকার গরমে সব চুল উইঠে গেছে!

নায়েব চিৎকার দেয়, এই কে আছিস–এই বেয়াদপ লোকটাকে ফাটকে নিয়ে রাখ। সন্ধ্যাবেলা কান ধরে ওঠবস করানো হয় তাকে। পরে বলা হয়, এখন তোকে কি করবো বল : মার দেব, নাকি ফাটকেই আটকে রাখব? সে ঝিম ধরে কিছুক্ষণ চিন্তা করে। তখন বউয়ের উপদেশের কথা মনে হয় তার। তাই বলে, আমার ঘাট হইয়ে গেছে। আল্লার মর্জি ভবিষ্যতে আর এমন হবে নানে। আমারে ছাইড়ে দেন। আমার জরু চিন্তেয় পাগল হয়ে যাইতেছে।

তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরে সে ঘরের দরজায় টোকা দেয়। তার বউ ভিতর থেকে উৎকণ্ঠিত গলায় বলে : কে, কে?

প্রজা : আল্লার মর্জি, তোমার স্বামী।

বউ : সুমতি হইছে দেখছি। মুখে আল্লার নাম ফুটছে। তয় এইখানে ‘আল্লার মর্জি তোমার স্বামী’ কওন বেপরতা।

প্রজা; ঠেলার নাম বাবাজী। তুমি পার নাই। নায়েব আল্লার মর্জি শিক্ষা দিয়া দিছে।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments