Tuesday, September 9, 2025
Homeঅনুপ্রেরণাশিক্ষামূলক গল্পশিক্ষণীয় গল্প: সবকিছু জানার ভান করার পরিণতি

শিক্ষণীয় গল্প: সবকিছু জানার ভান করার পরিণতি

সাধারণত বিয়ের পর এক দুই সপ্তাহ কেটে যায় মেহমানদারিতে। মেহমান আসে কিংবা মেহমানিতে যেতে হয়। আমাদের গল্পের নতুন বৌয়ের বিয়ের পরের দুই সপ্তাহ এভাবেই আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে টেয়েই কেটে গেল। পরের সপ্তায়ও নববধূ এই বাহানা সেই অজুহাত দেখিয়ে রান্নাবান্না না করেই কাটিয়ে দিল। এদিকে স্বামীও বেচারা বুঝে উঠতে পারে নি যে তার স্ত্রী রাঁধতে জানে না। পরের সপ্তায় একদিন স্বামী কাজ থেকে ঘরে এসেই বলল: কাল রাতে আমার আব্বা-আম্মা, ভাই-বোন সবাই আসবে। তুমি তাদের জন্য চমৎকার একটা খাবার রান্না করবে। এইবার নববধূর ইচ্ছে হলো এক ফোঁটা পানি হয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে। মহা ঝামেলায় পড়ে গেল সে। স্বামীকে সে একথা বলতে পারছে না যে, সে রান্নাবান্না জানে না, আজ পর্যন্ত তার রান্না করার কোনো অভিজ্ঞতাই হয় নি। কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। বহু চিন্তা ভাবনা করল। মনে মনে এটাসেটা কত কী ভাবল। কিন্তু রান্নার কাজ তো আর ভাবনা দিয়ে হয় না, বাস্তবে জানতে হয়।

হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। বুদ্ধিটা হলো প্রতিবেশির কাছে যাবে এবং জিজ্ঞেস করবে কীভাবে রাঁধতে হয়। ভেবেছিল রান্না একটা ব্যাপার হলো নাকি। একটু নির্দেশনা নিলেই হয়ে যাবে। চিন্তা করতেই রওনা হলো প্রতিবেশির বাসার দিকে। প্রতিবেশি তো নববধূকে দেখতে পেয়ে মহা খুশি। খোশ অমাদিদ বলে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ঘরের ভেতর বসাল এবং সৌজন্যবশত বলল: কী সাহায্য করতে পারি। আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব সবই করব তোমার জন্য। নববধূ আমতা আমতা করে বলল: আমি রান্নাবান্না ভালোই করি তবে ৭/৮ জনের রান্নার কাজ এখন পর্যন্ত করি নি। সে জন্য এসেছি কী পরিমাণ জিনিসপত্র লাগবে সে ব্যাপারে একটু সহযোগিতা নিতে। যদি একটু হেলপ করেন। প্রতিবেশি জিজ্ঞেস করল: কী পাক করবেন। বধূ বলল: চেলু খোরেশ মানে ডাল দিয়ে গরুর গোশত। এই তরকারিটা শুকনো ফ্রান্স ফ্রাই সহকারে খেতে হয়।

যাই হোক, প্রতিবেশি বুঝতে পারল যে, নয়াবধূ রান্না একেবারেই জানে না। কিন্তু সেটা সে একেবারেই বুঝতে দেয় নি বধূকে। বলল: আট জনের জন্য এক কেজির মতো চাল লাগবে। প্রথমে চালগুলোকে একটা পাতিলের ভেতর ঢালতে হবে। পানিভর্তি পাতিলে চালগুলো বেশ কিছু সময় ভিজতে হবে। নববধূ সাথে সাথে বলল: হ্যাঁ! এটা তো আমি নিজেও জানতাম। প্রতিবেশি মহিলা এবার বলল: গোশতগুলোকে টুকরো টুকরো করতে হবে। এরপর ওই টুকরোগুলোকে একটা পাতিলে রান্না করতে হবে…. কথা শেষ না হতেই বধূ বলে বসলো: হ্যাঁ হ্যা! সেটা তো জানি..!

প্রতিবেশি মহিলা এবার একটু বিরক্তই হলো। মনে মনে ভাবল বধূকে বলতে যে এসব যদি জানোই তাহলে আমার কাছে এসেছো কেন? আর যদি না-ই জানো তাহলে এত ফরফর করো কেন? কেন কথা শেষ না হতেই ‘জানি…আমি তো জানি-এসব বলো কেন? কিন্তু নববধূকে কিছুই বলল না। তবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো নববধূকে এমন শিক্ষা দেবে সারাজীবনেও যেন না ভোলে!

নববধূকে উচিত শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রতিবেশি মহিলা অত্যন্ত মার্জিতভাবে, ভদ্রতার সাথে তার কথা চালিয়ে গেল। বলল: জনপ্রতি এক মুষ্টি ডাল দিতে হবে। বধূ বলল: হ্যাঁ! হ্যাঁ! এটাও আমি জানি। প্রতিবেশি মহিলা সবশেষে বলল: ঠিক আছে। পোলাও যে পাতিলে পাকাবে, ওই পাতিলের ঢাকনার ওপর বড় একটা কাঁচা ইট মানে রোদে পোড়া ইট দিয়ে চাপা দেবে যাতে ভালো করে সিদ্ধ হয়। নববধূ বলল: হ্যাঁ! জানি সেটা। কয়েকটা ইটও আছে আমাদের ঘরে।

যাই হোক, এভাবে প্রতিবেশি মহিলার নির্দেশনা যখন শেষ হলো কিংবা নববধূর ফরফরানি যখন শেষ হলো দুজনেই দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিল। প্রতিবেশির কাছ থেকে ফেরার পথে মনে মনে বধূ ভাবল আর মনে মনে হাসল এই চিন্তা করে যে, সে যে রান্না একেবারেই জানে না সেটা প্রতিবেশি একদম বুঝতে পারে নি। বাহ কী চমৎকার। রান্নার কলাকৌশলও জানা হলো আবার কাল প্রতিবেশিদের কাছে বলে বেড়াতেও পারবে না যে এই মহল্লার নববধূ রান্নাবান্না করতে জানে না। এইসব ভাবতে ভাবতে নববধূ ফিরে গেল নিজের ঘরে।

বাসায় ফিরেই বধূ তাড়াতাড়ি করে রান্নাবান্নায় হাত দিল। প্রতিবেশি মহিলা যেভাবে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল ঠিক সেভাবেই রান্না শুরু করে দিল। সবকিছু গুছিয়ে পাতিলে বসিয়ে দেয়ার পর তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে কাঁচা ইটটা ঘরের ভেতর থেকে এনে পোলাওয়ের পাতিলের ঢাকনার ওপর বসিয়ে দিল। বেশ ভারিই মনে হচ্ছিল ইটটাকে। ভাঁপ বেরুতে পারবে না এখন। নববধূ প্রশান্ত মনে অপেক্ষা করছিল সুস্বাদু রান্না দিয়ে শ্বশুর বাড়ির সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়ার জন্য।

রাতে তো মেহমানরা এসে হাজির। শ্বশুর বাড়ির মেহমান। সবচেয়ে বড় মেহমান। নববধূ তাঁদের সাদরে বরণ করে নিলেন। অভ্যর্থনা জানানোর পর সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খাবার তৈরির জন্য রান্না ঘরে যেতে গেল নববধূ। যাবার আগে স্বামীকে বলল: তুমি দস্তরখান বিছাও! আমি পোলাও আর খোরেশ নিয়ে আসছি। নববধূ এই বলে চলে গেল রান্নাঘরের দিকে আর স্বামী তার কাজ করতে লাগল। বধূ রান্না ঘরে গিয়ে পোলাওয়ের পাতিলের দিকে তাকাতেই চাখ ছানাবড়া হয়ে গেল। হায় হায়! এ কী হলো। পোলাওয়ের পাতিলের ঢাকনার ওপর দেয়া কাঁচা ইটটা আস্তে আস্তে গলে গলে কাদার ঝোলে পরিণত হয়ে গেল আর ওই ঝোল গিয়ে মিশে গেল পোলাওয়ের সাথে।

এখন কী হবে গো! জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠল নববধূ। বধূর স্বামী এবং মেহমানরা ভেবেছিল সাংঘাতিক কোনো ঘটনা বুঝি ঘটে গেছে। সবাই দৌড়ে গেল রান্নাঘরের দিকে। নববধূর মুখে কোনো কথা নেই। একেবারে নির্বাক। রান্নাঘরের এক কোণে বোকার মতো দেয়াল ঘেঁষে বসে রইল। স্বামী তার দিকে তাকাতেই বধূ আঙুল দিয়ে স্বামীকে পোলাওয়ের পাতিল দেখিয়ে দিলো। অবশেষে যা ঘটল তাহলো- সেই রাতে মেহমানরা বাধ্য হলো পোলাও ছাড়া খালি গোশতের তরকারি খেয়েই নিষ্ক্রান্ত হতে। এদিকে নববধূও স্বীকার করতে বাধ্য হলো সে আসলে রান্নাবান্না করতে জানে না। তারপর যা যা ঘটেছিল সবাইকে তা বলতে বাধ্য হলো।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments