Sunday, September 14, 2025
Homeথ্রিলার গল্পভৌতিক গল্পস্কন্ধকাটার কবলে - সৈয়দ আখতারুজ্জামান

স্কন্ধকাটার কবলে – সৈয়দ আখতারুজ্জামান

স্কন্ধকাটার কবলে – সৈয়দ আখতারুজ্জামান

আষাঢ় মাস। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে সারাদিন। ফারুক গঞ্জ থেকে তার গাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সময়টা তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হই হই করছে। মাটির রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় মাখা-মাখি। তার ভেতর পিছলা খেতে খেতে ফারুক যখন গ্রামের ধারের বিলের কাছে পৌছাল ততক্ষণে চারিদিকে ঘোর আঁধার নেমেছে।

থেকে থেকে শন শন বাতাস বইছে। চারিদিকে শুধু ব্যাঙের ডাক আর মাঝে মাঝে মেঘের গুরু গুরু ধ্বনি। ওদিকে গুরি গুরি বৃষ্টি বিরামহীন ভাবে ঝরে যাচ্ছে। এত অন্ধকারে কোথাও কোন জন-মানুষের চিহ্ন নেই।

ফারুক যদিও খুব সাহসী ছেলে তারপরও একটু দ্বন্দে পড়ে গেল। এখন তাকে বিলের মাঝের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। যে রাস্তার দুই ধারে কেবল পানি আর পানি। আসেপাশে দুই মাইলের ভেতরে কোন মানুষের বাড়ি নেই। আর এই রাস্তার কুখ্যাতিও রয়েছে প্রচুর।

এখানে নাকি প্রায়ই নির্জন দুপুরে অথবা রাতের অন্ধকারে স্কন্ধকাটা ভূত আর মেছো-পেত্নীর দেখা পাওয়া যায়। মেছো-পেত্নী তবু ভদ্র। সে মানুষকে কেবল ভয় দেখিয়েই ছেড়ে দেয়। হয়তো কোন মানুষ একা এই রাস্তা দিয়ে হাটছে হঠাত্ শুনতে পাবে কে যেন কচর-মচর করে কিছু খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে চিকন নাকি গলায় হিঁ হিঁ হিঁ করে হাসছে। আর সেই সাথে নাকে লাগবে পঁচা মাছের তিব্র বোঁটকা গন্ধ।

কিন্তু কেউ যদি কখনো স্কন্ধকাটার খপ্পরে পড়ে, যার কিনা শুধু ধড় আছে মুন্ডু গায়েব, তবে তার খবর আছে। এইতো কিছুদিন আগে ফারুকদের গ্রামের বুড়ো করিম শেখ দুপুরে এই বিলে মাছ ধরতে এসে পড়েছিল স্কন্ধকাটার কবলে। স্কন্ধকাটা তাকে কাদার ভেতর হাটু অবধি গেড়ে রেখে গিয়েছিল। পায়ের দিক থেকে হাটু পর্যন্ত নয়। মাথা থেকে হাটু পর্যন্ত। ভাগ্যিস ঐ সময় ফারুকের বন্ধু রাসেল যাচ্ছিল এই পথ দিয়ে। সে দূর থেকে পানির ওপরে শুন্যে দুটো পায়ের নড়াচড়া দেখে তারাতারি গিয়ে তুলেছিল তাকে। নইলে ঐ দিনই করিম শেখের ভবলীলা গিয়েছিল ইতি হয়ে।

ফারুক এসব ভেবে একটু ইতস্তত করে রওনা হলো।

পেত্নীর সাথে দেখা হলে তার সমস্যা নেই। দিব্যি তার সাথে গল্প করে এই পথটুকু পেরিয়ে যাবে। কিন্তু ভয় তার ঐ স্কন্ধকাটাটাকে নিয়ে। যদি ওটা দেখা দেয় তবে একা সে ওটার সাথে কি করবে ? নির্ঘাত তাকে বিলের কাদার মধ্যে পুঁতে রেখে চলে যাবে ওটা। ফারুক মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে হাটতে লাগলো। হঠাত্ বিদ্যুত্ চমকে উঠলো। আর সাথে সাথে ফারুক ভয়ে জমে গেল। কারন বিদ্যুত্ চমকের হালকা আলোয় সে দেখতে পেল একটু দূরে কে যেন রাস্তার এক পাশে এক পা আর অন্যপাশে আরেক পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সে তো পা নয় যেন তাল গাছের লম্বা গুঁড়ি। পা গুলো এতই লম্বা যে ফারুক শুধু পা দুটোই দেখতে পেল। ওপরে শরীর দেখতে পেল না। ফারুক মনে মনে ভাবলো এ স্কন্ধকাটা ছাড়া আর কেউ নয়। তাকে পায়ের তলায় পিষে মারার কুবুদ্ধি নিয়ে ব্যাটা অমন পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে যেই ঐ পায়ের তলা দিয়ে যেতে নেবে অমনি পায়ের এক চাপে তাকে থেতলে দেবে ভূতটা।
ফারুক ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে।

একবার ভাবলো পেছন ফিরে উল্টো দিকে ছুট দেবে। কিন্তু স্কন্ধকাটার যে লম্বা পা তাতে কয়েক সেকেন্ডে সে ফারুককে ধরে ফেলবে। তারপর থেতলানো তো সময়ের ব্যাপার। তাই সে ঠিক করলো মরতে হলে সে লড়াই করেই মরবে। পিছু না হটে সে বাড়ির পথে এগুবে। স্কন্ধকাটা যদি কিছু করতে আসে তাহলে সে ওটার পা জাপটে ধরে রাম কামড় বসিয়ে দেবে ।

তারপর যা থাকে কপালে। সে শুনেছে ভূতেরা নাকি মানুষের কামড় ভয় পায়। যে ভাবা সেই কাজ। ফারুক তার লুঙ্গী উপরে তুলে মালকোঁচা বাধলো। গায়ের জামা খুলে কোমড়ে জড়াল। তারপর মনে মনে দোয়া-দুরুদ পড়তে পড়তে সামনে এগিয়ে গেল।

অন্ধকারেও আবছা মতো সে দেখতে পাচ্ছিল স্কন্ধকাটার পা দুটো। হাটতে হাটতে সে যখন ওটার কাছে চলে এলো তখন ভয়ে তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। দুহাত সামনে বাগিয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে সে এগুতে লাগলো। হঠাত্ হাতে বাধলো কি যেন।

সে বুঝলো এই তো স্কন্ধকাটার পা। সে মোটেই দেরী না করে – ইয়া আলী! বলে চিত্কার করে জাপটে ধরলো সেই পা। সর্ব শক্তিতে বসিয়ে দিল এক কামড়। কিন্তু এ কি তার মুখে এমন কষ কষ লাগছে কেন? আর স্কন্ধকাটার পা টাও কেমন যেন মসৃন আবার মাঝে মাঝে খস খসে লাগছে। সে চোখ মেলে তাকালো। ভালো করে স্পর্শ করে দেখল।

হায় হায় একি ! এতো দেখি এক বিশাল কলা গাছ। মাঝখান থেকে ভেঙে যাওয়াতে সেটির মাথা রাস্তার অন্যপাশ ছুঁয়েছে। আর তাতেই মনে হচ্ছিল কে যেন রাস্তার দুধারে পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারুক নিশ্চিন্ত মনে ভাবলো – যাক বাবা, বাঁচা গেল। কলা গাছ না হয়ে সত্যিই যদি স্কন্ধকাটা হতো তবে এতক্ষণে তার অক্কা পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যেত। এই ভেবে সে হেসে উঠলো। সাথে সাথে কে যেন তার পাশ থেকে নাঁকি গলায় হেঁ হেঁ হিঁ হিঁ করে হেসে উঠলো। ফারুক ধমকে উঠলো – দূর হ পেত্নী ! তোর প্রেমিক স্কন্ধকাটার জ্বালায় বাচিনা।

তার উপরে তুই আসছস আবার তামাশা করতে! এক থাপ্পরে তোর বত্রিশ দাঁত ফালায়া দিমু। সাথে সাথে হাসি বন্ধ হয়ে গেল। আর ফারুক নিজের বাড়ির দিকে রউনা দিল।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments