Wednesday, October 8, 2025
Homeবাণী ও কথাপ্রত্যাবর্তন - সোমেন চন্দ

প্রত্যাবর্তন – সোমেন চন্দ

দীর্ঘ পঁচিশটা বছর পরে।

বিকালের রোদের নীচে সরু আলোর পথ দিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে প্রশান্ত ভাবিল, দীর্ঘ পঁচিশটা বছর পরে আবার এই প্রথম সে গ্রামের দিকে পথ চলিতেছে। সেই পরিচিত পথ। সেই বুনোফুল-ঘাস-লতাপাতার গন্ধ, শুকনো পাতার স্কুপে, কোনো অদৃশ্য প্রাণীর খস খস শব্দ, হঠাৎ কখনো সারি সারি আকাশ-ছোঁয়া তালগাছের সামঞ্জস্যহীন অবস্থিতি, সেই খেয়াঘাটের নৌকা ও মাঝি। বছরের পর বছর, মুহূর্তের পর মুহূর্ত কত পরিবর্তন চলিতেছে, কত স্বেচ্ছাচারীর চোখেমুখে উল্লাস, কত ডাকাত পরের অন্নে মাথা ঠোকাঠুকি করে, অথচ এখানে তার ছোঁয়াটুকু নাই। পঁচিশ বছর আগের পুরুষরা একদিন আকাশের দিকে চাহিয়া নিরুপায়ে কাঁদিয়াছে, তার বংশধরেরা আজও কাঁদিতেছে, তাহাদের চোখমুখ ফুলিয়া গেল। আকাশে কি একটা পাখি চমৎকার ডাকিয়া গেল। কিন্তু সেদিকে চাহিতে প্রশান্তর ভয় হয়। যে আকাশের দিকে চাহিয়া তাহারা কপালে হাত ঠুকিয়াছে, সেই আকাশের দিকে প্রশান্ত তাকাইতে পারে না।

পথের একপাশে পাটখেতের ভিতর বসিয়া কয়েকটা লোক নিঃশব্দে খেত নিড়াইতেছে। হঠাৎ কখনো কোনো শহুরে চেহারার লোক দেখিলে পঁচিশ বছর বা তারও আগে তাহারা যেভাবে তাকাইত, আজও সেইভাবে তাকায়। চোখ ছোট করিয়া একজন বলিল, বাড়ি?—বাড়ি! প্রশান্ত মনে মনে একবার হাসিল। বাড়ি তাহার কোথায়! ভারতবর্ষের কোন গ্রামে বা শহরে বাড়ি?

পৌঁছিতে প্রায় সন্ধ্যা হইয়া গেল। প্রশান্ত দেখিল, একটি ঘর প্রায় ধসিয়াই গিয়াছে, আর একটা ঘরের চাল নাই, কেবল কয়েকটি খুঁটি—একটা বট গাছ। ঘরের উপর দিয়া একেবারে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছে, উঠান-ভিটা সমস্ত জঙ্গলে ভরা।

এই বাড়ি! এই বাড়ির ঠিকানাই প্রশান্ত পথের পাশের লোকদের বলিয়াও বলে নাই। পঁচিশ বছরের দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসে সে বাঁচিয়া আছে বটে কিন্তু তাহার ছোটবেলার ক্রীড়াভূমি আত্মহত্যা করিয়াছে। কৈশোরের এই প্রাঙ্গণ হইতেই সে তাড়িত, কি একটা কারণে সংসারে একটা ভীষণ অনর্থ সৃষ্টি করায় শান্তিপ্রিয় বাবার চক্ষুশূল হওয়া, আর আজ এতকাল পরে তাহাকে আমন্ত্রণ করিতে একটি প্রাণীও নাই। প্রশান্ত ভাবিল, এখনো কেউ তাহার দিকে সন্দেহের চোখে চাহিতেছে কেন? লোকগুলি কি রাতারাতি মানুষ হইয়া গেল? সন্ধ্যার ঝাপসা আলোয় দুই-একজন যদি-বা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়াছে, প্রশান্ত তাহাদের কষ্ট করিয়াও চিনিতে পারে নাই। নিশ্চয় তাহারাও তাহাকে চেনে না।

কয়েকটা চামচিকা ঝটপট তাহার মাথার উপর দিয়া উড়িয়া গেল। আশেপাশে নানা রকম কীটপতঙ্গের অবিশ্রান্ত চেঁচামেচি শশানা যায়, বন্য লতাপাতার একটা

অদ্ভুত গন্ধও নাকে আসে।

বাঁদিকের একটা রাস্তা হইতে, প্রশান্ত যে পথে চলিতেছিল, সেই পথে পড়িয়া কে একটা লোক নিজের মনে গান গাহিতে গাহিতে সামনের দিকে চলিতেছে, তাহার পরনে লুঙ্গি, কাঁধে একখানা গামছাই হইবে, হাতে একটা নিড়ানি।

প্রশান্ত একেবারেই সামনে গিয়া পড়িল, বলিল, কালু মিঞা না?

লোকটা থামিল, গানও থামিল, ভ্রূ কুঁচকাইয়া তাহার দিকে তাকাইল।

সে যে কালু মিঞা ছাড়া আর কেহই নয়, ইহাতে নিশ্চিত হইয়া প্রশান্ত একবার হাসিল।-চিনতে পারলে না?

কালুর চোখের দৃষ্টি এবার সহজ হইয়া আসিল, ঠোঁটের দুইপাশে আস্তে আস্তে হাসি ছড়াইয়া পড়িল, তাহার দিকে একবার হাত বাড়াইয়া আবার কি মনে করিয়া আস্তে গুটাইয়া তাড়াতাড়ি বলিল : বন্ধু না?

হাত ধরিতে তাহার সঙ্কোচ দেখিয়া প্রশান্ত নিজেই হাত বাড়াইয়া দিল, হাসিয়া বলিল, হ্যাঁ।

কালু আবার বলিল, বন্ধু-মশয় না?

-হ্যাঁ কালু।

বিস্ময়ে আর আনন্দে এবার তাহার হাত জড়াইয়া ধরিয়া কালু বলিল : এতকাল কই আছিলা গো, বন্ধু-মশয়? সেই কোন কালে গেলা, আর এতদিন বাদে ফিরা আইলা, একটা দুইটা দিন নাকি? আহারে, যে বুড়া বইনা গেছে দেখছি!

-আর তুমি খুব জোয়ান না?

—আমরা গেরামে থাকি, রৈদে বিষ্টিতে, ভিজে খাটি-পিটি, আমাগোর কথা ছাড়ান দাও–

প্রশান্ত চারিদিকে একবার চাহিল। এ গাঁয়ের নবীন বা প্রাচীন আর কেউ এ পথে আসিয়া পড়িলে তাহাকে দেখিয়াও দেখিবে না, অথবা চাহিলেও একটা বিশেষ করুণার দৃষ্টিতে তাকাইবে, ইহা সে চায় না। বিশেষত তাহারা যখন দেখিবে এক ঝাঁক কঙ্কালসার মানুষের মধ্যে একটি মেদবহুল মাংসল পুরুষ।

প্রশান্ত বলিল: তোমার ঘরে চলো কালু।

ঘরের চালখানা প্রায় মাটিতে নামিয়া আসিয়াছে। উঠানে একটা ছোট নারকেল গাছ।

ঘুটঘুটে অন্ধকার। একেবারে কাছে না গেলে কিছুই চোখে পড়ে না।

উপুড় হইয়া প্রশান্ত ঢুকিল দাওয়ায়। তাহাকে বসিতে একখানা সিঁড়ি দিয়া কালু আলো আনিতে চলিয়া গেল। একটু পরেই কুপি হাতে ফিরিয়া আসিল। অগ্নিশিখাকে মধ্যবর্তী করিয়া এখন সবই স্পষ্ট দেখা যাইবে। কালু প্রশান্তর দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল। অন্ধকারে অনর্গল বকিয়াছে সত্য, কিন্তু এখন বোবা হইয়া গেল।

প্রশান্ত বলিল: কালু, একী অবস্থা দেখছি।

-কী?

এদিক-ওদিক চাহিয়া প্রশান্ত বলিতে দ্বিধা বোধ করিল, বলিতে পারিল না।

কিন্তু কালু কিছুই বুঝিতে পারে নাই, এমন নয়। দুই হাঁটু একত্র করিয়া তার উপর হাত রাখিয়া সে ধীরে ধীরে বলিল : বন্ধু, তোমার ঘর ভাঙা গেছে, ধন আছে কিনা জানি না, আমার জন আছে এই একরকম, ধনের খোঁজও রাখি না, সবই নসিব, এই নসিবের খেলা।

কপালে আঙুল ঠুকিতে লাগিল কালু।

প্রশান্ত হাসিল।–হাস কেন?

প্রশান্ত আবার হাসিল, কিন্তু এবারও নিরুত্তর।

বারে মুখ টিপা-টিপা খালি হাস কেন?

কালু অধীর হইয়া উঠিল।

হাসি থামাইয়া প্রশান্ত বলিল : কি বলছিলে? নসিব, সবই নসিবের খেলা না?

-হ।

–কালু অমন কথা আর বোল না। দশজনের ভেতর নয়জন আমরা ভাল খেতে পরতে পাচ্ছিনে—কেউ না কেউ শুধু একবেলা খাচ্ছি, কারুর কোনরকমে দিন যাচ্ছে, আমাদের সকলের নসিব তাহলে খারাপ, তুমি এই মনে করো?

কালু স্তব্ধ হইয়া গেল। বাহিরের দিকে চাহিয়া কী ভাবতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে আবার হঠাৎ ডাকিয়া উঠিল: বাবা অলি, ও বাবা অলি। ডাকের সঙ্গে সঙ্গেই বাহিরের বিপুল অন্ধকার ঠেলিয়া একটি দশ-এগারো বছরের ছেলে আসিয়া হাজির হইল। খালি গা, পেট মোটা, হাত-পাগুলি সরু সরু পরনে শুধু একখানা গামছা; প্রশান্ত লক্ষ করিল, তাহার হাঁটায় কেমন একটা জড়তা; একদিকে নিবদ্ধ চোখের দৃষ্টি।

তাহার চোখে বিস্ময়ের চিহ্ন দেখিয়া কালু তাড়াতাড়ি বলিল : পোলা আমার অন্ধ, জনম হইতেই— তারপর ছেলের দিকে চাহিয়া—কিছু তামুক আইনা দে তো বাবা?ছেলে চলিয়া গেল।

প্রশান্ত বলিল, আর ছেলে নাই?

উত্তরে কালু জানাইল, আর দুই ছেলে ভিন্ন গ্রামের দুই বাবুদের বাড়িতে কাজ করে; বড়ো-ছোটো দুইজনে যথাক্রমে তিনটাকা আর আড়াই টাকা মাসে পায়।

কোনোরকমে উত্তরটা কালু মনে মনে ভাবিল, নসিব কিছুই নয়?

কিন্তু প্রশান্তর খাওয়ার ব্যবস্থা তো করিতে হইবে। ব্যবস্থা সহজেই হইল। মুড়ি চিড়া-গুড়, দুইটি পাকা আম, কিন্তু আশ্চর্য, খাওয়ার জল নাই। প্রশান্ত একরকম চেঁচাইয়া উঠিল, বারে জল কোথায়?

কালু এতটা ভাবিতে পারে নাই। তাহার কথা শুনিয়া এমনভাবে তাকাইল যেন—অর্থাৎ কুয়া সামনেই আছে, নিজ হাতে তুলিয়া খাও।

দারুণ প্রতিবাদ করিয়া প্রশান্ত বলিল : না না, ওসব না, তুমিই এনে দাও, আমার জাত মারা যাবে না, আমাদের কোনো জাত নেই।

কালু অবাক হইল। লোকটা চিরকালই এমনি, কৈশোরেও এমনি অল্পবিস্তর পাগলামি করিয়াছে, আজও সেই স্বভাব বদলায় নাই।

কিন্তু বিস্ময়ের ভাব অল্পক্ষণেই কাটিল। আবার মনে মনে সে ভাবিল, নসিব কিছুই নয়?

লোকটার কথামতো খড় দিয়া বিছানা পাতিয়া দেওয়া ছাড়া উপায় কী। কালু উপর হইতে বহু দিনের সঞ্চিত একটা নতুন কাঁথাও আনিয়া পাতিয়া দিল, বিচিত্র খড়ের বিছানায় পরম পরিতৃপ্তিতে শুইয়া প্রশান্ত ভাবিল, দীর্ঘ পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতায় মাটির শয্যাও তাহার কাছে মনোরম, সুখের সময়ে পরম অখাদ্যই শ্রেষ্ঠ খাদ্য—এখবর কালু রাখে কী!

খাওয়া-দাওয়া শেষ করিয়া একটু রাত করিয়াই কালু আবার আসিল। দাওয়ায় অনেকক্ষণ বসিয়া তামাক টানিল। ভিতরে তখনও জাগিয়া ছিল প্রশান্ত, শুইয়া শুইয়া তামাক খাওয়ার শব্দ শুনিতেছিল।

শেষে ভিতরে আসিয়া কালু আস্তে আস্তে ডাকিল, বন্ধু।

-বলো।

অন্ধকারে বিছানার পাশে বসিয়া কালু কী যেন একটু ভাবিল : তুমি আজকালও স্বদেশি কর?

প্রশান্ত মনে মনে হাসিল।সেদিন বড়ো ভুল করিয়াছিলাম বন্ধু, একলা পথ চলিয়াছিলাম। তোমাদের কথা কখনো ভাবি নাই, আজ আর সেই ভুল হইবে না। স্বদেশি করা কাকে বলে তা কালুই জানে।

প্রশান্ত কিছু না বলিয়া তাহার হাতটি শুধু ধরিল। কিছুক্ষণ চুপচাপ। চারিদিকে নিস্তব্ধ, মাঝে মাঝে কেবল নারকেল গাছে শব্দ, হাওয়ার দোলায়। এ ছাড়া টুঁ শব্দ শোনা যায় না।

প্রশান্ত বলিল : তুমি তখন বলেছিলে, আমার ঘর নাকি ভেঙেছে— কালু, বাবা-মার মৃত্যুর খবর আমি জানি, না জানলেও পঁচিশ বছর পরে ফিরে এসে তাঁদের দেখা পাওয়ার আশা করা উচিত নয়। কিন্তু আর মানুষ কোথায়? আমার পিসিমা, তার ছেলেমেয়েরা, ঠাকুরমা?

—তাঁরা! পিসীমারা তো তোমার বাবা যেই মইরা গেল তার কয়দিন পরেই চম্পট, এই শূন্যপুরীতে কে আর পইড়া থাকতে চায় কও? কিন্তু পইড়া রইল তোমার ঠাকুরমা, শূন্যি ঘর আগলাতে একা পইড়া রইল। বুড়ির শকুনির পরমায়ু, তা না অইলে আর এখানে আসিয়া কালুর গলার স্বর হঠাৎ থামিয়া গেল, যেন অন্ধকারে আস্তে আস্তে মিশিয়া গেল।

–তা না হলে কী? বল?

কালু আর কিছুতেই বলিতে চায় না, কোন ভুলে একবার আরম্ভ করিয়া হঠাৎ তাহার জিহ্বা আড়ষ্ট হইয়া গিয়াছে, প্রশান্ত অনেক পীড়াপীড়ি করিয়া তবে যা জানিতে পারিল তা সংক্ষেপে এই: বুড়ির শকুনির পরমায়ু, একথা কালু আগেই বলিয়াছে। তা না হইলে আর শূন্যগৃহে পাহারা দিতে অতগুলি বছর বাঁচিয়া থাকে! আহা মৃত্যুর সময় বুড়ি যা কষ্ট পাইয়াছে তা নাকি মর্মান্তিক। শেষের দিকে তো কেউ তাহার বাড়ির ত্রিসীমানায়ও যাইতে পারে নাই, কেউ ভুলেও তাহার কাছে গিয়া উপস্থিত হইলে সে যা-তা করিয়া গাল দিত, আর অভিশাপের তো অন্ত নাই। হয়তো মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছিল। তাই কালুও শেষ পর্যন্ত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করিয়াও আর পারে নাই। শেষে হঠাৎ একদিন শুনিল, বুড়ি মরিয়া গিয়াছে এবং বড়ো কষ্টেই নাকি মরিয়াছে। রান্নার কিছু নামাইতে গিয়া হয়তো পা-দুটি একেবারে পুড়িয়া গিয়াছিল। তাহাই পাকিয়া-ফুলিয়া একদিন জ্বর হইয়াছে এবং তারপরেই—

প্রশান্তর চোখে জল আসিল। মৃত্যুর কথা তো নয়, মানুষ মরিলেও অনেক সময় শান্তি পায় এবং অন্যকে দেয়। কিন্তু পৃথিবীর বুক হইতে শেষ নিশ্বাস গ্রহণ করিতে মৃত্যুকে লইয়া জীবনের এমন বিশ্রী কাড়াকাড়ি, যার শেষ দৃশ্য আরও নিষ্ঠুর আরও বিকট। সেই দৃশ্যের এমন তীব্র হীনতা যে চোখে জল আনিবে, এটা বিচিত্র নয়। কিছুক্ষণ পরে কালু হঠাৎ বাহিরে চলিয়া গেল, বলিল–

-বন্ধু, তুফান আইল!

–তুফান?

-হ! কী বাতাস ছাড়ছে গো! দেইখা যাও, দক্ষিণের আকাশটা কেমন লাল! লাল না, যেন আগুন?

—আগুন?

–হ বন্ধু, আগুন? কালু চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল,—সামাল তরী, সামাল মাঝি ভাই, সামাল তরী, সামাল। গাছে-গাছে শোঁ শোঁ আওয়াজ করিয়া ভীষণ হাওয়া বহিতেছে, আকাশে চিড়-চিড়ে বিদ্যুৎ আর মেঘের ডাক, ঘরের খুঁটির সঙ্গে-সঙ্গে চালখানাও কাঁপিয়া উঠিল, পৃথিবীর কাতর প্রার্থনা যেন ঝড়ের পায়ে দারুণ কুটোপুটি খাইতেছে।

প্রশান্ত জড়োসড়ো হইয়া পড়িয়া রহিল।

ঘুম ভাঙিল আবার কালুর ডাকেই। বোধহয় সকাল হইতে আর বাকি নাই। মুরগির ডাক শোনা যায়। কী আশ্চর্য, এখন আকাশ একেবারে পরিষ্কার। প্রথম রাতের ঝড়ের কথা এখন স্বপ্ন বলিয়াই মনে হয়। দূরের আকাশে মধ্য রাতের চাঁদ উঠিয়াছে। কালু বলিল, বন্ধু, মাছ ধরিতে যাই।

কেন?

–বারে, তোমারে খাওয়ামু না? তুমি আমার অতিথি।

–এমন সময়?

–বারে, এই তো সময়। রাইতে তুফানের কথা ভুইলা গেছ বুঝি?

কালু একটা গান ধরিয়া দ্রুত চলিয়া গেল।

প্রশান্ত বাহিরে আসিল। চারিদিকে ফুটফুটে জ্যোৎস্না। আর কেমন একটা ভিজা গন্ধ।

প্রশান্ত হাঁটিতে লাগিল। ঝিরঝিরে বাতাসে তাহার চোখমুখ ভিজিয়া আসিল। ভোর না হইতেই নানারকম পাখির কলরব শুরু হইয়াছে, দুইপাশে পাট খেতের সারি; পাশে ঝুঁকিয়া সরু আলের পথটিকে প্রায় ঢাকিয়া ফেলিয়াছে। কিন্তু একী?

প্রশান্ত দেখিল, সেপাইর মতো খাড়া শুধু কয়েকখানা খুঁটি। মাটির স্তূপ, গভীর জঙ্গল, বট গাছের গাম্ভীর্য, ভয়াবহ নির্জনতা, অথচ সব জ্যোৎস্নায় উজ্জ্বল।

প্রশান্তর দুই চোখ যেন বুজিয়া আসে। এই কঙ্কালের দিকে সন্ধ্যাবেলা তাকাইতে পারিয়াছিল, অথচ এখন আর তাকাইতে পারে না। বুড়ির কাতর গোঙানি কি কেউ শোনে নাই? শেয়াল কুকুর আজও ঘুরিয়া বেড়ায়!

পূর্বদিকের আকাশ কি স্বচ্ছ হইয়া আসিতেছে?

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments