Friday, March 29, 2024
Homeঅনুপ্রেরণাশিক্ষামূলক গল্পপিঁপড়া ও অহংকারী রাজার গল্প

পিঁপড়া ও অহংকারী রাজার গল্প

পিঁপড়া ও অহংকারী রাজার গল্প

রাজা নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, কে? কে তুই?

পিঁপড়া: রাজামশাই, আমি পিঁপড়া কথা বলছি।

রাজা: ও, তুই পিঁপড়া বলছিস? তা কী ক্ষতি করছি আমি?

পিঁপড়া: আপনি যখন এ বনে শিকার করতে আসেন, তখন আপনার ও আপনার সঙ্গীদের পায়ের নিচে পড়ে অসংখ্য পিঁপড়া মারা পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বাঁচব কীভাবে, রাজামশাই?

রাজা: আমি হলাম রাজা। শিকার করা আমার শখ। তোর মতো ছোট পিঁপড়ার জন্য কি আমি শিকার করা বন্ধ করে দেব?

পিঁপড়া: আমরা ছোট্ট বলে এত অবহেলা করবেন না, রাজামশাই। আমরা তো আপনার কোনো উপকারেও আসতে পারি।

একথা শুনে রাজা হো-হো করে হাসতে শুরু করলেন। হাসতে হাসতেই বললেন, তোরা করবি আমার উপকার? হা-হা-হা।

পিঁপড়া: তাহলে আপনার এত বড় রাজ্যে কি আমাদের একটুও দাম নেই?

রাজা: তোদের আবার কীসের দাম! তোরা এত ছোট যে, আমার কোনো উপকার কিংবা ক্ষতি কিছুই করতে পারিস না। তোরা পায়ের নিচে পড়ে মরলে আমাদের কিছুই যায়-আসে না।

পিঁপড়া: উপকার না করতে পারি, তবে ক্ষতি কিন্তু ঠিকই করতে পারি।

এ কথা বলেই পিঁপড়াটি পটাপট রাজার পায়ে কুট্টুস করে বসিয়ে দিল কামড়। রাজা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বললেন,

রাজা: এত বড় সাহস তোর। আমার পায়ে কামড় বসিয়ে দিলি? আমি কোনো শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখি না। এই নে তোর পুরস্কার।”

এই বলে রাজা পা দিয়ে পিষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেললেন পিঁপড়াটিকে। ওই পিঁপড়ার মৃত্যুতে অন্য পিঁপড়ারা খুব কষ্ট পেল। তারা রাজাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে মিটিং ডাকল। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলো- রাজাকে শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে যে, পিঁপড়া ছোট হলেও তারা হেলাফেলা করার মতো জীব নয়।

যেমন কথা তেমন কাজ। দল বেঁধে পিঁপড়ারা চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। গভীর রাত। রাজা-রানি ঘুমিয়ে আছেন। রাজা ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে হাতে-পায়ে চুলকাতে লাগলেন। অসহ্য হয়ে বাতি জ্বাললেন। দেখেন, পিঁপড়ারা দলবেধে তাঁকেই আক্রমণ করছে। সহ্য না করতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন রাজা।

রানি লাফিয়ে উঠে বললেন, কী হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন, রাজামশাই?

রাজা আঙুলে পিঁপড়ার দল দেখিয়ে বললেন, দেখ, দেখ আমার হাত-পায়ের অবস্থা! ছোট ছোট পিঁপড়ারা কত ভয়ংকরভাবে কামড়াচ্ছে। উফ! কী যন্ত্রণারে বাবা! আমাকে বাঁচাও।

রানি দুহাতে সমানে পিঁপড়া মারতে লাগলেন। একটা মারেন তো দশটা এসে কুট্টুস কুট্টুস করে কামড়ায়। রাজার সঙ্গে সঙ্গে রানিও লাফালাফি শুরু করে দিলেন। তারপর ডাকতে লাগলেন চাকর-বাকরদের। দৌড়ে এল সবাই। এসে দেখে, রাজা লাফাচ্ছেন আর সমস্ত শরীর চুলকাচ্ছেন। রানি ভয়ে পালঙ্কে পা তুলে বসে আছেন। মন্ত্রী, পাইক-পেয়াদা সবাই ছুটে এল। রাজা তাদেরকে দেখে বললেন- আমার সমস্ত শরীরে পিঁপড়ারা সমানে কামড়াচ্ছে। কুট-কুট-কুট। জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে শরীর। উফ্, আহ্।”

তারা রাজার পিঠ-পেট চুলকে দিতে লাগলেন। কিন্তু রাজা আর থামেন না। লাফ দিতে দিতে নিজের জামা খুলে ফেললেন। একটু পর পর বলতে লাগলেন, “আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সামান্য পিঁপড়ার কামড়ে এত জ্বালা, এত যন্ত্রণা! ওরে,তোরা আমাকে বাঁচা। আমাকে খেয়ে ফেলল পিঁপড়াগুলো।”

এভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি করে রাজার রাত কাটল। পরের দিন রাজদরবারে বৈঠকে বসলেন রাজা। হঠাৎ করে তিনি লাফিয়ে উঠলেন। এরপর মুখ বাঁকিয়ে, পিঠ বাঁকিয়ে, এঁকেবেঁকে চুলকাতে লাগলেন রাজা। কোনো আলাপই করতে পারছেন না। পিঁপড়ারা রাজার পকেটে, হাত ও পায়ে, কানের নিচে, জুতোর ভেতরে ছোটাছুটি করে এমনভাবে কামড়াতে লাগল যে, আর বসে থাকার উপায় নেই। চুলকাতে চুলকাতে রাজা দৌড়ে গিয়ে লাফ দিলেন বাড়ির সামনের পুকুরে।

এরপর একই ধরনের ঘটনা ঘটতে লাগল বারবার। পিঁপড়ারা কেবল রাজাকেই কামড়ায়। আর কাউকে না। রাজার এ বিপদ দেখে ডাকা হলো কবিরাজকে। কবিরাজ পরামর্শ দিল, “রাজার পোশাক পুড়িয়ে ফেলতে হবে।”

কবিরাজের হুকুমে পুড়িয়ে ফেলা হল পোশাক। নতুন পোশাক এল। কিন্তু এ পোশাক পরেও শান্তি নেই। অসংখ্য পিঁপড়া বসে আছে সব পোশাকের পরতে পরতে। পোশাক পরলেই কামড়ায় কুটুরকুটুর করে।

কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অবশেষে মন্ত্রীদের পরামর্শে রাজপ্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দেয়া হল।

হাফ ছেড়ে বাঁচলেন রাজা। আর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন,পিঁপড়া মশাইরা এবার কামড়াবে কীভাবে? সব তো পুড়িয়ে ছাই করে দিলাম। রাজার সঙ্গে মশকরা।

পিঁপড়ারা আবার আলোচনায় বসল। রাজপ্রাসাদের আগুন দেয়ার সময় কয়েক হাজার পিঁপড়া মারা যাওয়ায় তারা দুঃখ প্রকাশ করল। একই সঙ্গে তারা সিদ্ধান্ত নিল রাজার নতুন বাড়িতে গিয়ে আবার তাকে আঘাত করবে।

পিঁপড়ারা সব মরে গেছে মনে করে রাজা তার নতুন প্রাসাদে নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছেন। এমন সময় শুরু হল পিঁপড়াদের হামলা।

রাজা পিঁপড়ার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে কাপড়-জুতো খুলে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগলেন। রাজ্যে প্রচার হয়ে গেল, “রাজা পাগল হয়ে গেছেন। উদোম হয়ে পথেঘাটে ছোটাছুটি করছেন। এ পাগলরাজা দিয়ে রাজ্য চলবে না।”

রাজা বললেন, সামান্য পিঁপড়ার জন্য আমার এত বড় বদনাম? রাজাগিরি চলে যাবে আমার? আমি পাগল? এই কে আছিস- বনে আগুন ধরিয়ে দে। পিঁপড়ার বংশ ধ্বংস করে দেব আজ।

রাজারা হুকুমে কর্মচারিরা বনে আগুন ধরিয়ে দিল। মুহূর্তের পুরো বন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কিছু পশুপাখি, পিঁপড়া মারা গেল। বাকিরা বন থেকে পালিয়ে চলে লোকালয়ে। হিংস্র পশুপাখিদের দেখে রাজ্যের মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল।

রাজার পাগলামি দেখে সবাই বলল, “এবার নিশ্চিত, রাজা পাগল হয়ে গেছেন। রাজ্য বাঁচাতে হলে পাগলা-রাজাকে নির্বাসনে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।” এরপর রাজাকে এক বনে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হলো।

রাজ্য আর ক্ষমতা হারিয়ে রাজা মনের দুঃখে বনে বনে ঘোরেন আর কাঁদেন। পেটে খাবার নেই, মনটাও ভালো না। একটা গাছের নিচে বসে আছেন তিনি। এমন সময় দেখতে পেলেন, তার সামনে দিয়ে পিঁপড়ারা লাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের মুখে খাবার। রাজা পিঁপড়া দেখে ভয়ে পা তুলে বসলেন। বললেন, “হে পিঁপড়ার দল, তোরা আমাকে রাজা থেকে পথের ভিখারি করেছিস। আর আবার এখানে কেন এসেছিস?

পিঁপড়ার রানি মুখ তুলে বলল, “আমরা তো বনেই থাকি। আপনি কি সেই রাজা, যে পিঁপড়াকে ছোট বলে অবহেলা করত, আর বিনা কারণে পিঁপড়াদের পায়ে পিষে মেরে আনন্দ করত? তারপর বনে আগুন ধরিয়ে সবাইকে মারতে চেয়েছিল?”

এ কথা শুনে রাজা চুপ করে রইলেন। এ সময় পিপড়েদের রানি বলল: “আমরা তো আপনার অনেক বড় ক্ষতি করেছি। এবার করব উপকার।”

অবাক হয়ে রাজা বললেন, তোমরা আমার কী উপকার করবে, পিঁপড়া ভাই?

পিঁপড়ারা গাছ থেকে টাটকা ফল এনে দিল রাজার হাতে। ক্ষুধার্ত রাজা ফল খেলেন। আর লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললেন, “দুনিয়াতে কেউই অপ্রয়োজনে আসেনি। ছোট বলেই কেউ খাটো নয়।”

রাজা তার ভুল বুঝতে পেরে আফসোস করতে লাগলেন।

বন্ধুরা,এ গল্প থেকে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোনো জীবই ছোট কিংবা শক্তিহীন নয়। তাই কাউকেই অবহেলা করা উচিত হবে না।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments