Tuesday, August 19, 2025
Homeথ্রিলার গল্পআতঙ্কের দ্বীপ - জে বি স্ট্যাম্পার

আতঙ্কের দ্বীপ – জে বি স্ট্যাম্পার

আতঙ্কের দ্বীপ – জে বি স্ট্যাম্পার

ছয়জন স্কাউট দাঁড়িয়ে আছে হ্রদের ধারে। তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরের ছোট দ্বীপগুলোর ওপর। তিন হপ্তা আগে হ্রদের তীরে ক্যাম্প করেছে ওরা। আজ রাতে ওদের চূড়ান্ত সারভাইভাল টেস্ট।

‘রেডি তো, টাই?’ ঠাট্টার সুরে বলল ফিল।

‘হ্যাঁ,’ জবাব দিল টাই। ‘আমি আগুন জ্বালাতে পারি। তাঁবুও খাটাতে জানি।’

‘ক্যাম্পিংয়ে দক্ষতা অর্জন করতে কোনো অসুবিধা হয় না,’ পাশ থেকে বলল এরিক। ‘অসুবিধা হয় যখন নিঃসঙ্গতা বুকের ওপর চেপে বসে।’

মোটা কাচের চশমার ভেতর থেকে পালা করে ফিল আর রাইসকে দেখল টাই। ওকে ভয় দেখাতে চাইছে ওরা। সব সময়ই ভয় দেখাতে চায় ওকে। কারণ, স্কাউট দলের মধ্যে টাই-ই বয়সে সবচেয়ে ছোট আর খাটো।

‘ভয়ের কিছু নেই,’ এবার মুখ খুলল মার্ক। ‘মাত্র এক রাত একা কাটাতে হবে ওই দ্বীপগুলোর একটাতে। ঝামেলা হলে সঙ্গে ইমার্জেন্সি ফ্লেয়ার আছেই।’

‘ওখানে কিছু ঘটার আশঙ্কা আছে নাকি?’ বলল ব্র্যাড।

এরিকের দৃষ্টি এখনো দ্বীপগুলোর ওপর নিবদ্ধ। সেদিকে তাকিয়েই জবাব দিল, ‘সেটা নির্ভর করছে গল্পগুলো সত্যি কি না, তার ওপর।’

‘কিসের গল্প?’ জানতে চাইল অ্যালেক্স। টাইয়ের কাছাকাছি বয়স ওর। এবারই প্রথম এসেছে স্কাউটিংয়ে।

লেক থেকে চোখ ফেরাল এরিক। মুচকি হেসে বলল, ‘শোনোনি?’

‘তুমি সব সময় টাইকে ভয় দেখানোর সুযোগ খোঁজো,’ ধমকে উঠল মার্ক। ‘এখন এসব ফালতু গল্প বলার সময় না।’

‘ফালতু গল্প না,’ নিচু গলায় বলল ফিল। ‘কাল রাতেই মি. কঙ্কলিন আর মি. অ্যান্ডারসনকে এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। গাছের আড়ালে লুকিয়ে আমি আর এরিক শুনেছি তাঁদের কথা।’

‘কী বলছিলেন ওঁরা?’ প্রশ্ন করল মার্ক।

‘বলছিলেন, ওই দ্বীপগুলোর একটাকে নিয়ে নাকি প্রাচীন কুসংস্কার আছে,’ জবাব দিল এরিক। ‘অদ্ভুত এক প্রাণী নাকি থাকে ওই দ্বীপে।’

‘প্রাণীটাকে লোকে রূপান্তরকারী বলে ডাকে,’ পাশ থেকে বলল ফিল।

‘কেন?’ জানতে চাইল অ্যালেক্স।

‘কারণ, প্রাণীটা ওয়্যারউলফের মতো। মানুষ থেকে নেকড়েতে রূপান্তরিত হতে পারে,’ এরিকের জবাব। মি. কঙ্কলিন আর মি. অ্যান্ডারসনকে এদিকে আসতে কথা বন্ধ করে দিল সে।

‘এবার যেতে হবে তোমাদের,’ বললেন মি. কনক্লিড। ‘সব জিনিসপত্র ঠিকমতো নিয়েছ?’

মাথা দুলিয়ে সায় জানাল ছেলেরা।

‘কারও কোনো প্রশ্ন আছে?’ জিজ্ঞেস করলেন মি. অ্যান্ডারসন।

অ্যালেক্স হাত তুলল। কিন্তু এরিক এমন চোখ গরম করে তাকাল যে বাধ্য হয়ে হাত নামিয়ে ফেলতে হলো ছেলেটাকে।

‘বেশ,’ বললেন মি. কঙ্কলিন। ‘তোমাদের কী কী করতে হবে আরেকবার শুনে নাও। নৌকায় করে তোমাদের ওই দ্বীপগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে। একেকজন একেক দ্বীপে রাত কাটাবে। সকাল পাঁচটা পর্যন্ত একা থাকতে হবে তোমাদের। খাবার, দেশলাই আর ফার্স্টএইড দেওয়া হয়েছে সবাইকে। আজ রাতে তাঁবুতে ঘুমাবে না কেউ, ঘুমাবে স্লিপিং ব্যাগে। এক জোড়া করে ইমার্জেন্সি ফ্লেয়ারও দেওয়া হয়েছে সবাইকে। জরুরি প্রয়োজন হলে ফ্লেয়ার জ্বালাবে। আমি আর মি. অ্যান্ডারসন আজ রাতে পালা করে জেগে থাকব। কাজেই ফ্লেয়ার জ্বললে আমরা দেখতে পাব।’

‘তবে একটা কথা, টাই,’ মি. কঙ্কলিনের কথা শেষ হলে যোগ করল এরিক। ‘ভয় পেলে কিন্তু ফ্লেয়ার জ্বালানো যাবে না।’

তার এ কথায় নার্ভাস ভঙ্গিতে হেসে উঠল সবাই।

যার যার জিনিসপত্র নিয়ে দুটো দাঁড়টানা নৌকায় উঠে পড়ল সবাই। তীব্র ঘৃণা নিয়ে এরিকের দিকে চেয়ে রইল টাই। ব্যাপারটা খেয়াল করল না এরিক।

একটা নৌকায় ফিল, মার্ক ও ব্র্যাডকে নিয়ে উঠলেন মি. অ্যান্ডারসন। অন৵ নৌকায় এরিক, অ্যালেক্স ও টাইয়ের সঙ্গে উঠলেন মি. কঙ্কলিন।

পাশাপাশি চলতে চলতে চলতে একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল নৌকা দুটো। হাত নেড়ে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিল ছেলেরা। হ্রদের বাঁ দিকের প্রথম দ্বীপের দিকে এগোলেন কঙ্কলিন। দ্বীপটা ছোট, উঁচু। মাঝখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে কতকগুলো ফারগাছ। টাই আশা করল, মি. কঙ্কলিন ওকে এই দ্বীপে নামতে বলবেন। কিন্তু ওকে হতাশ করে দিয়ে অ্যালেক্সকে নামানো হলো এ দ্বীপে।

আবার চলতে শুরু করল নৌকা। হাত নেড়ে অ্যালেক্সকে বিদায় জানাল টাই। ওর চোখে ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেল টাই। বইঠা বেয়ে পরের দ্বীপে চলে এলেন মি. কঙ্কলিন। এই দ্বীপটা আগেরটার চেয়ে বড়, গাছপালাও এখানে বেশি। একটা ক্যাম্পিং স্পট দেখতে পেল টাই গাছের ফাঁক দিয়ে। প্রথম দ্বীপের মতো নিরাপদ মনে না হলেও টাই আশা করল ওকে এ দ্বীপে নামতে বলবেন মি. কঙ্কলিন।

ওর আশা সত্যি করে দিয়ে মি. কঙ্কলিন বলে উঠলেন, ‘টাই, তুমি নামবে এখানে।’

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নিজের ব্যাগের দিকে হাত বাড়াল টাই। কিন্তু শিগগির ধাক্কা মেরে ওর হাত সরিয়ে দিল এরিক।

‘আমি এই দ্বীপে নামব, মি. কঙ্কলিন,’ চোখ গরম করে টাইয়ের দিকে চেয়ে বলল সে। ‘আমি সবার বড়। কাজেই এ দ্বীপটা আমি চাইতেই পারি।’

বিরক্ত চোখে ওকে দেখলেন মি. কঙ্কলিন। ‘টাইয়ের জন্য এই দ্বীপটাই ভালো হবে। শেষ দ্বীপটা ওর পছন্দ না-ও হতে পারে।’

ব্যাগ আর স্লিপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে এরিক গোঁয়ারের মতো বলল, ‘উঁহু, আমি এখানেই নামব।’

মি. কঙ্কলিন আর কিছু বলার আগেই লাফিয়ে হাঁটুপানিতে নেমে পড়ল সে। মি. কঙ্কলিনের ধমককে পাত্তা না দিয়েই উঠে পড়ল তীরে। তারপর ছুটল খোলা ক্যাম্পিং স্পটের দিকে।

অগত্যা তৃতীয় দ্বীপের দিকে নৌকা ঘোরালেন মি. কঙ্কলিন। ভয়ে ঘেমে উঠেছে টাই। হ্রদের ওপর ভুতুড়ে ছায়া ফেলেছে দ্বীপটি।

‘দুঃখিত, টাই,’ নরম গলায় বললেন মি. কঙ্কলিন। ‘কাজটা এরিকের উচিত হয়নি। কিন্তু এখন কিছু করারও নেই। আশা করি তুমি এই দ্বীপে ভালোই থাকবে। দরকার পড়লে ফ্লেয়ার জ্বেলো, কেমন?’

হ্রদের সবুজ পানির দিকে তাকিয়ে ভাবছে টাই, এরিককে সে কতটা ঘৃণা করে। ইচ্ছা করল মি. কঙ্কলিনকে বলে ওকে ক্যাম্পে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু তাহলে বাকিরা ওকে ভিতুর ডিম বলে খ্যাপাবে। কোনো দিন ওদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না সে।

প্রকাণ্ড দ্বীপটার পাশে চলে এল নৌকা। এখানে একা একটা রাত কাটাতে হবে টাইকে। ঘন জঙ্গল দ্বীপে, কয়েক হাতের বেশি দৃষ্টি চলে না। গল্পের সেই দ্বীপটাই এটা নয় তো, আতঙ্কিত হয়ে ভাবল টাই। এরিক হয়তো সেটা জানে। এ কারণেই জোর করে দ্বিতীয় দ্বীপে নেমে পড়েছে সে।

তীরে ভিড়ল নৌকা। টাইকে নৌকা থেকে নামতে সাহায্য করলেন মি. কঙ্কলিন। ঠান্ডা হয়ে গেছে ছেলেটার হাত। কাঁপছে একটু একটু।

‘কাল সকাল ছয়টায় নিতে আসব তোমাকে,’ বললেন মি. কঙ্কলিন। তারপর চলে গেলেন নৌকার মুখ ঘুরিয়ে।

নৌকাটাকে যতক্ষণ দেখা যায়, ঠায় দাঁড়িয়ে রইল টাই। তারপর ঘুরে তাকাল জঙ্গলের দিকে। দ্বীপ থেকে জঙ্গলে যাওয়ার কোনো রাস্তা আছে কি না খুঁজে দেখল। পেল না। ঘন ঝোপ সবখানে। ঝোপঝাড় ঠেলে মোটামুটি ফাঁকা একটা জায়গায় চলে এল টাই। জায়গাটা লম্বা ঘাসে বোঝাই।

সন্ধে নেমে আসছে। পাটে যাচ্ছে সূর্য। এখানেই ক্যাম্প করতে হবে। কিন্তু জায়গাটা পছন্দ হচ্ছে টাইয়ের। ঘন গাছপালা আর ঝোপের মধ্যে কেমন গা ছমছম করে ওঠে। সবকিছু কেমন যেন অস্বাভাবিক। লম্বা ঘাসের নিচে প্রাণীর হাড়গোড় দেখতে পেল টাই। গা গুলিয়ে উঠল ওর।

আগুন জ্বালানোর জন্য জঙ্গলে ঢুকে শুকনা ডালপাতা জোগাড়ে লেগে পড়ল টাই। আচমকা মনে হলো, ও এখানে একা নয়। অনুভূতিটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত হিম হয়ে গেল ওর। তড়িঘড়ি আর কয়েকটা ডাল কুড়িয়েই ক্যাম্পিং স্পটে ফিরে এল টাই। শুকনা লম্বা ঘাস ছিঁড়ে আগুন জ্বালাতে গিয়ে আরও কিছু হাড়গোড় দেখতে পেল ও। ওগুলো ছুড়ে ফেলে দিল দূরে। ক্যাম্প করার জন্য নতুন জায়গা খুঁজবে কি না, ভাবল। কিন্তু রাত হয়ে গেছে, এখন আর নতুন ক্যাম্পসাইট খোঁজার সময় নেই। আগুন জ্বালানো থাকলে হয়তো কোনো প্রাণী ধারেকাছে আসার সাহস পাবে না।

আগুনের দাউ দাউ শিখায় সাহস সঞ্চয় হলো টাইয়ের মনে। অগ্নিকুণ্ডের পাশে স্লিপিং ব্যাগ এনে রাখল ও। ফ্লেয়ার দুটো জায়গামতো আছে কি না, পরখ করে দেখল। তারপর চুপচাপ বসে রইল অন্ধকারে।

শুকনা ডাল পুড়ছে চড়চড় শব্দে। আগুনটা একটু উসকে দিল টাই। আরও কিছু ডালপালা জোগাড় করা উচিত ছিল। যেটুকু আছে, তা দিয়ে সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে রাখা যাবে না বোধ হয়। কিন্তু এখন ডাল কুড়াতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই মুহূর্তে আগুনের সামনে থেকে ওঠার সাহস নেই ওর।

একসময় ঘুমে দুই চোখের পাতা ভারী হয়ে এল টাইয়ের। এমন সময় ওর পেছনে, গাছের আড়ালে শব্দ হলো একটা। ঝোপ ভেঙে, পা টেনে টেনে এদিকেই আসছে কেউ। কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফ্লেয়ার বের করল টাই। ফ্লেয়ারের আলোয় হয়তো প্রাণীটা ছুটে পালাবে।

ফ্লেয়ার হাতে নিয়ে দেশলাই ধরাতে যাব, এমন সময় জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল ওটা। আঁতকে উঠল টাই, পরক্ষণেই নার্ভাস হাসি দিল। ভয়াল কোনো প্রাণী নয়, ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন স্কাউট। একে আগে কখনো দেখেনি টাই। ওর দলের সিনিয়র স্কাউটদের মতো ইউনিফর্ম ছেলেটার গায়ে।

‘আমি ভেবেছিলাম এ দ্বীপে আমি একাই আছি,’ টাইয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল আগন্তুক। ‘তুমি এখানে কী করছ?’

ফ্লেয়ার নামিয়ে রাখল টাই। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল, ‘আমিও তা-ই ভেবেছিলাম। তবে তুমি আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছ।’

‘কী ভেবেছিলে আমাকে?’ হেসে বলল ছেলেটা।

‘আ…আমি জানি না,’ বিড়বিড় করে বলল টাই।

‘যাকগে, এখানে আমাদের দুজনকে ভাগাভাগি করে থাকতে হবে।’ ব্যাগপত্র নামিয়ে রাখল ছেলেটা। ‘পুরো দ্বীপে এখানে ছাড়া আর কোথাও ক্যাম্প করার মতো জায়গা নেই। ও হ্যাঁ, আমি রজার।’

টাইও নিজের পরিচয় দিল। রজারকে জিজ্ঞেস করল, ‘আগে কখনো এ কাজ করেছ তুমি? মানে দ্বীপে একা রাত কাটিয়েছ?’

‘অনেকবার,’ জবাব দিল রজার। ‘তোমার বোধ হয় এবারই প্রথম, না?’

‘হ্যাঁ।’

হাসল রজার। আগুনের উল্টো পাশে বসল। তারপর ব্যাকপ্যাক খুলে একটা ছাল ছাড়ানো খরগোশ বের করল।

‘এটাকে কোথায় পেলে?’ বিতৃষ্ণ চোখে খরগোশটার দিকে চেয়ে বলল টাই।

‘মেরেছি,’ জানাল রজার। ‘এটা আমাদের স্পেশাল সারভাইভাল টেস্টের অংশ। তুমি শিকার করো না?’

‘না,’ জবাব দিল টাই। ‘শিকার করে মাংস খাওয়ার দরকার হয় না আমার। একটা স্যান্ডউইচ এনেছিলাম। কিন্তু ব্যাগ খুলতে গিয়ে ওটা আগুনে পড়ে গেছে।’

‘সকাল পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারবে?’ রজার বলল। একটা তীক্ষ্ণ সরু কাঠি ঢোকাল খরগোশটার শরীরে। ঝলসানোর জন্য আগুনের ওপর ধরল ওটা। ‘আমার সঙ্গে খেতে পারো।’

আগুনে ঝলসাতে থাকা প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে গা গুলিয়ে উঠল টাইয়ের। ভাবল, এর চেয়ে না খেয়ে থাকাও ভালো।

‘তোমার স্কাউট লিডাররা কোথায়?’ জানতে চাইল রজার।

‘লেকের ধারে। বেইজ ক্যাম্পে,’ জবাব দিল টাই।

‘তার মানে তুমি এখানে একা?’

‘হ্যাঁ। কিন্তু তুমি এসে পড়েছ, এখন আর একা নই।’

রজার আগুনের দিকে তাকিয়ে খরগোশটাকে ঝলসাচ্ছে। টাই দেখল, আগুনে ছেলেটার দুই চোখ জ্বলছে।

‘কী হয়েছে? ভয়ে কাঁপছ কেন?’ ওর দিকে মুখ তুলে চাইল রজার। ‘ভয় কেন পাচ্ছ?’

‘কিছু না,’ কাঁপা গলায় জবাব দিল টাই। ‘ভয় পাইনি।’

একমুহূর্ত চুপ করে থাকল রজার। তারপর নিচু গলায় বলল, ‘তুমি বোধ হয় গল্পটা শোনোনি।’

‘কোন গল্প?’ নার্ভাস গলায় জিজ্ঞেস করল টাই। আগুনের আরও কাছে ঘেঁষে বসল সে।

‘এই দ্বীপের গল্প,’ জবাব দিল রজার। অন্ধকার জঙ্গলে চোখ বুলিয়ে বলল, ‘লোকে বলে এখানে নাকি একটা ওয়্যারউলফ আছে।’

‘ও, ওটা তো স্রেফ গল্প,’ বলল টাই। শান্ত থাকার চেষ্টা করছে।

‘তোমার বোধ হয় ওয়্যারউলফে বিশ্বাস নেই,’ ফ্যাসফেসে গলায় বলল রজার। ‘তবে এসব গল্প অনেক সময় সত্যি হয়।’ হেসে উঠল সে।

টাই হাসল না। ছেলেটাকে তার ভালো লাগছে না।

‘নাও, মাংস খাও,’ ঝলসানো খরগোশের একটা রক্তাক্ত পা ছিঁড়ে টাইয়ের দিকে এগিয়ে দিল রজার।

কুঁকড়ে গেল টাই। পেট গোলাচ্ছে ওর। বমি আসছে মাংসখণ্ডটা দেখে। ঢোঁক গিলে বলল, ‘আমার খিদে নেই।’

আর সাধাসাধি করল না রজার। একাই পুরো মাংস খেয়ে হাড়টা ছুড়ে ফেলল লম্বা ঘাসের মধ্যে। টাইয়ের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু আমার খিদে এখনো যায়নি। ভীষণ খিদে।’

গা শিরশির করে উঠল টাইয়ের। নিজের অজান্তেই পিছিয়ে গেল ও। ফ্লেয়ারের সন্ধানে হাত বাড়াল। পেল না। ওদিকে দেখল মাংসের শেষ টুকরাটাও গিলে ফেলেছে রজার।

লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল রজার। মুখ তুলে তাকাল রুপার থালার মতো চাঁদের দিকে। গলার ভেতর থেকে উঠে আসছে একটা অদ্ভুত ঘর্ঘর আওয়াজ। একটু পর নেকড়ের ডাকের মতো ‘আউউউ!’ শব্দে গর্জে উঠল সে। পরিবর্তন শুরু হলো ওর চেহারায়।

সেই মুহূর্তে টাই বুঝতে পারল কিসের পাল্লায় পড়েছে ও। ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে শুরু করল সে। ছুটছে প্রাণপণে। যেমন করেই হোক পালাতে হবে। কিন্তু কয়েক কদমের বেশি যেতে পারল না। বিদ্যুৎগতিতে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রজার। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ঝকঝকে সাদা দাঁত। আকাশ কাঁপিয়ে আর্তচিৎকার করে উঠল টাই। পরক্ষণেই থেমে গেল। এক কামড়ে ওর কণ্ঠনালি ছিঁড়ে নিয়েছে ওয়্যারউলফ।

পরের দিন সকালে টাইকে নিতে এলেন মি. কঙ্কলিন। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলেন না ছেলেটাকে। শুধু লম্বা ঘাসের নিচে দেখতে পেলেন কতকগুলো রক্তমাখা হাড় পড়ে রয়েছে।

মূল গল্প: আইল্যান্ড অব ফিয়ার
রূপান্তর: মারুফ হোসেন

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments