শিক্ষামূলক গল্প: সুতা ছাড়া ঘুড়ি

সুতা ছাড়া ঘুড়ির শিক্ষামূলক গল্প

বাবা তার ছেলেকে নিয়ে গেলেন ঘুড়ি উৎসবে। অনেক ঘুড়ি উড়ছে। ছেলেরও শখ হলো ঘুড়ি ওড়াবে। বাবা লাটাই সুতা আর ঘুড়ি কিনে দিলেন। ছেলে ঘুড়ি ওড়াতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে তার ঘুড়ি আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে গেল। একটু পরেই ছেলে বলল, ‘বাবা, আমার মনে হয়, সুতা টেনে ধরে রাখার কারণে ঘুড়িটা আরও বেশি উঁচুতে উড়তে পারছে না। আমরা যদি সুতা কেটে দিই তাহলে ঘুড়িটা ছাড়া পেয়ে আরো অনেক ওপরে উঠে যেত। আমরা কি ঘুড়িটার সুতা কেটে দেব?’

ছেলের কথা শুনে বাবা ঘুড়ির সুতা কেটে দিলেন। ঘুড়িটা ওপরে উঠতে শুরু করল। দেখে ছেলেটি খুব খুশি হলো। কিন্তু একটু পরেই ঘুড়িটা গোত্তা খেতে খেতে নিচের দিকে নামা শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি পড়ে গেল একটি ভবনের ছাদে। ঘুড়ির এ অবস্থা দেখে অবাক হলো ছেলেটি। সে ঘুড়ির সুতা কেটেছিল যেন অনেক ওপরে উড়তে পারে। তা না হয়ে উল্টো এটা পড়ে গেল! সে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, আমি ভেবেছিলাম, সুতা কেটে দিলে ঘুড়িটা মুক্তভাবে আরো ওপরে উড়তে পারবে। কিন্তু এটা পড়ে গেল কেন?’

বাবা ছেলেকে বুঝিয়ে বললেন, ‘শোনো, আমরা জীবনে যে উচ্চতায় বাস করি মাঝে মাঝে মনে হয়, কিছু একটা আমাদের টেনে ধরে রেখেছে। যে কারণে আমরা আরো উঁচুতে উঠতে পারছি না। আসলে সুতা ঘুড়িকে ওপরে উড়ে যেতে আটকে রাখে না। বরং বাতাস যখন কমে যায় কিংবা বেশি হয় তখনও ঘুড়িকে ওপরে ভেসে থাকতে সাহায্য করে। তুমি সুতার মাধ্যমে ঘুড়িকে ঠিকমতো ওপরে উড়তে সাহায্য করেছিলে। কিন্ত যখনই সুতা কেটে দিলে ওটা পড়ে গেল। কারণ তখন তোমার সুতার সাহায্য ঘুড়ি পায় নি।’

ছেলেটি তার ভুল বুঝতে পারল।

শিক্ষা:
অনেকেই মনে করে, পরিবার সমাজ বা ধর্মীয় বিধান তাদেরকে পরাধীন করে রেখেছে, তারা ইচ্ছামত কিছু করতে পারছে না, ইচ্ছেমত জীবনকে উপভোগ করতে পারছে না। কিংবা আরো বেশি উন্নতি করতে পারছেন না।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ঠিকই বোঝা যায়, পরিবার সমাজ বা ধর্ম আসলে পরাধীন করে রাখার জন্য টেনে ধরে রাখে না। টেনে ধরে রাখে যাতে ভালভাবে উড়তে পারে। টেনে ধরে রাখে যাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে বা বিভ্রান্ত হয়ে না যায়। তাই সেই সুতার সম্পর্ক ছিন্ন করে সাময়িক বাতাসে ভেসে থাকা যায়। কিন্তু অল্প সময় পরেই তার পতন অনিবার্য। সব মুক্তিই মুক্তি নয়। কিছু মুক্তি বা স্বাধীনতার ফলাফল পতন।

Facebook Comment

You May Also Like