ব্রিটিশ পলিসি – মজার গল্প

'ব্রিটিশ পলিসি' মজার গল্প

ব্রিটিশ আমলের ঘটনা। তখনকার এক গ্রামের তিন বন্ধুর কথা। তাদের একজন মুসলমান, একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ আর একজন নমশূদ্র। সেকালের জাতপাতের ছোঁয়াছুঁয়িহীন গ্রামবাংলার দুই ধর্মের তিন জাতের এই বন্ধুত্ব ও মিলন ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবু তাদের বন্ধুত্বের ব্যাপারে জাতপাতের সমস্যা হয়নি। কারণ, ওই যে বলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। তিনজনই ছিল ছিচকে চোর। এর গাছের ডাব, ওর বাগানের এককাদি কলা, তার ক্ষেতের তরমুজ এসব তিন ইয়ারে সুযোগ বুঝে লোপাট করে দিত।

একবার তিন বন্ধু এক লিচু বাগানে গিয়ে লিচু চুরি করে খাচ্ছিল। বাগানের মালিকের দু’জন পাহারাদারই সেদিন জরুরি কাজে অন্যত্র গেছে। মালিকই তাদের পাঠিয়েছে। তাই সেদিন রাতে নিজেই টিনের কানেস্তারা পিটিয়ে বাদুড় তাড়াচ্ছিল।

হঠাৎ সে দেখে তিন ঘণ্ডা মার্কা লোক গাছে উঠে লিচু চুরি করছে। ওরা তিনজন আর বাগানওয়ালা একা, তাই কীভাবে চোরদের শায়েস্তা করবে ভেবে পাচ্ছিল না।

তবু সে সাহস করে একখানা মোটা লাঠি আর হারিকেন নিয়ে গাছের নিচে এসে বলল, গাছে কে, নাম দেখি?
হোক না তিনজন, কিন্তু চোর তো–তাই মনের ভেতরে দুর্বলতা। তারা নেমে এলো এবং ভাবল, পালানো যাবে না। মাফটাফ চেয়ে সটকে পড়তে হবে। তাই ধীরস্থিরভাবেই মালিকের মুখোমুখি হলো তারা।

বাগান মালিক তিনজনকেই চেনে। এরা ষণ্ডামার্কা, তাও জানে। সে একা এদের সঙ্গে কুলাতে পারবে না তা বুঝতে পেরেই মনে মনে ঠিক করল, আরে ব্রিটিশ পলিসি প্রয়োগ করলেই তো কেল্লাফতে। তাই সে যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব দেখিয়ে খুশি খুশি মনে বলে, এই হইল মুছলমান, আমার জাত ভাই, আমার বাগানের দুই চাইর খান লিচু খাইবার তার হক আছে। আর ইনি বামুন ঠাকুর-হিন্দুকুল গৌরব-ইনি আমার লিচু খেয়েছেন সে আমার চৌদ্দপুরুষের পুণ্যের ফল—আমার ভাগ্যি। কিন্তু তুই বেটা, ছোটজাত নমোর বেটা নম-তুই কোন আক্কেলে আমার বাগানে ঢুকলি। এই বলে নমোকে লাঠিপেটা করে কাবু করে ফেলল। সেও মার খেয়ে তো দৌড়ে পগার পার।

ব্রাহ্মণ আর মুসলমান এখন মালিকের সঙ্গে হয় জয়’ (হ্যাঁ, হ্যা তাইত), আজ্ঞে, জি, তাই তো করছে।

এর পর মালিক ব্রাহ্মণের দিকে ঘুরে বলেঃ উনি মুসলমান। ধরতে গেলে আমার ভাই-ই। কারণ, আমাদের ধর্ম বলে এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই। কিন্তু তুই বেটা হিন্দুর পুরুত ঠাকুর, উঁচাজাত। তুই কেন এমন ছোঁচা হবি? পরের জিনিস না বলে খেয়ে তুই কেন অধর্মের কাজ করবি? এই বলে শক্ত করে দু’ঘা লাগায় ধর্মগুরুকে। সেও মার খেয়ে তো দৌড়ে পগার পার।

মুলসমান চোরটি এতক্ষণ দাঁত বের করে হে হে করছিল। গাছের মালিক এবার তাকে নিয়ে পড়ল : তুই বেটা শুধু চোরা না, আস্ত একটা বেঈমান। মহা বদমাশ। তা না হলে শালা, হারামজাদা তুই কেন ইয়ার বন্ধু নিয়া আমার বাগান পয়মাল করবি? মোনাফেক। তর হোগায় আমি তিনটা বাড়ি বেশি মারুম। এই বলে মালিক তাকে দুরমুজ করতে থাকে।

ব্রিটিশ পলিসি – ডিভাইড এন্ড রুল। ভাগ কর, শাসন কর।

You May Also Like

About the Author: Anuprerona

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.