Wednesday, August 27, 2025
Homeবাণী ও কথাঘোড়ামামার কাটলেট - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

ঘোড়ামামার কাটলেট – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

ঘোড়ামামা বললেন, এই যে পেলারাম, কী ব্যাপার?

ঘোড়ামামা মোটেই ঘোড়া নন, কিংবা কারও মামাও নন। মুখে বড় বড় দাড়ি, মাথায় লম্বা-লম্বা চুল, একটা থলে কাঁধে নিয়ে পথে-পথে ঘুরে বেড়ানো তাঁর অভ্যেস। হঠাৎ তাঁকে দেখে কাগজ কুড়ুনে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কাগজ তিনি কুড়োন না। ঘোড়ামামার ধারণা, লোকে না বুঝে রাস্তায় অনেক কাজের জিনিস ফেলে দেয়, সেগুলো কুড়িয়ে রাখলে তা দিয়ে কত কী যে হতে পারে তা বলে বোঝানো যায় না। এই ধরো, একদিন ঘোড়ামামা জুতোর একটা সুকতলা পেলেন; একমাস বাদে হয়তো খানিক চামড়া পাবেন; আরও ছমাস বাদে একটা সোল পেয়ে যেতে পারেন। এগুলো একসঙ্গে সেলাই করে নিলেই একপাটি জুতো বিনে পয়সায় তৈরি হয়ে গেল। এইভাবে আর-এক বছর খুঁজে বেড়ালে হয়তো আর-এক পাটিরও জোগাড় হয়ে যাবে। তখন একেবারে ফ্রিতে একজোড়া জুতো–আর আজকাল জুতোর যা দাম!

এ থেকে যদি ভেবে থাকো যে ঘোড়ামামার অবস্থা খারাপ, তা হলে ভুল করেছ। ঘোড়ামামা মোটেই গরিব নন। তাঁর নিজের বাড়ি আছে, একতলা-দোতলায় ভাড়াটে আছে, তারকেশ্বরে নিজেদের দেশে অনেক জমিজমা আছে। আসলে স্বভাবই এই। তাঁর বাড়ির তেতলার ঘরে উঠলেই দেখবে–দেশলাইয়ের খাপ, খালি সিগারেটের বাক্স, ছেঁড়া রিবনের টুকরো, খালি কৌটো থেকে শুরু করে ফেলে-দেওয়া তোবড়ানো সাইন বোর্ড পর্যন্ত জমানো রয়েছে। একটা সাইন বোর্ডে লেখা আছে : এখানে উত্তম চিড়া পাওয়া যায়, আর-একটাতে লেখা আছে : পাগলের মহৌষধ। শেষটা ঘোড়ামামাকে খাওয়াতে পারলে ভালো হত–কিন্তু সেটা কোথায় পাওয়া যাবে, আমাদের জানা নেই।

ঘোড়ামামার জিভে একটু দোষ আছে। প্যালারামকে বলেন পেলারাম, ব্যাপারকে বেপার, চ্যাঁচানোকে চিঁচানো–এইরকম। তাই আমাকে বললেন, এই যে পেলারাম, কী বেপার?

দাড়ির ফাঁকে ঘোড়ামামার গোটা কুড়িক দাঁত বেরিয়ে এল। আর তাই দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। ঘোড়ামামার পাল্লায় পড়ে দু-দুবার আমার হাঁড়ির হাল হয়েছে।

বললুম, ব্যাপার আর কী ঘো–বলেই সামলে নিলুম, মানে মামা, আমি ক্যাবলার জন্যে ওয়েট করছি এখানে।

কেবলা? ও মিত্তিরদের কেবলা? কেনো?

ও আমাকে কাটলেট খাওয়াবে বলেছে।

তা–কেটলেট!–ঘোড়ামামা আবার দাড়ির ফাঁকে দন্তশোভা বিকাশ করলেন : তা বেশ তো, চলো না আমার সঙ্গে। আমিই তোমায় কেটলেট খাওয়াব।

আমি বললুম, সরি ঘো–মানে মামা, একবার আপনি আমাকে ক্ষীরমোহন, চমচম, ছানার জিলিপি এইসব খাওয়াবেন বলে পটলডাঙা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত হাঁটিয়েছেন, তারপর ল্যাজে দড়ি বাঁধা একটা নেংটি ইঁদুর ধরিয়ে দিয়ে

কেনো–কী অন্যায় হয়েছে? সেই ইঁদুর বাড়িতে নিয়ে গেলে তোমার বাবা বিড়েল আনতেন–ঘোড়ামামা বলে যেতে লাগলেন :সেই বিড়েলকে দুধ খাওয়াবার জন্যে তোমার বাবা গোর পুষতেন, সেই গোরুর দুধ থেকে ক্ষীরমোহন, ছেনার জিলিপি–

আমি বাধা দিয়ে বললুম, খুব হয়েছে, আর আমার দরকার নেই। সেই নেংটি ইঁদুর নিয়ে বাড়ি গেলে বড়দা আমাকে একটা বিরাশি সিক্কার চড় বসাত, তারপর ইঁদুরটাকে টেনে একেবারে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে ফেলে দিত। ক্ষীরমোহন, ছানার জিলিপি–হুঁ। যত সব বোগাস। মাঝখান থেকে রবিবারের সকালে আমাকে পাক্কা দেড় মাইল হাঁটালেন আপনি।

আহা পেলারাম, তুমি বুঝতে পারছ না। সব কাজ প্লেন করে (মানে প্ল্যান করে) করতে হয়। চমচম, ক্ষীরমোহন ঝাঁ করে খেলেই হল? একটা এরেনজমেন্ট করতে হয় না? আজ তুমি চলো আমার সঙ্গে, নিশ্চয় তোমার কেটলেট খাওয়াব।

আবার হয় হাওড়া ব্রিজ, নয় শ্যামবাজার পর্যন্ত হাঁটাবেন তো। আর আপনার সঙ্গে সঙ্গে জুতোর সুকতলা, রাংতা, ঘুড়ির কাগজ, রাস্তার পেরেক, এই সব কুড়োতে হবে? শেষে একতাল গোবর আমার হাতে তুলে দিয়ে বলবেন–এই গোবর থেকে ঘুঁটে হবে, ঘুঁটে দিয়ে উনুন ধরানো হবে, উনুন ধরালে কড়াই চাপবে, কড়াই চাপলে তোমার মা কাটলেট ভাজবেন–চালাকি। ঘো–সরি মামা, ও-সবের মধ্যে আমি আর নেই।

তুমি মিথ্যে এফরেড হচ্ছ পেলারাম।–ঘোড়ামামা মনে ভীষণ ব্যথা পেলেন : আজ তোমার কোথাও যেতে হবে না, কিচ্ছু কুড়োতে হবে না। আমার বাড়িতে গেলেই তোমার কেটলেটের ব্যবস্থা হবে। তোমার কেবলা তো এল না–চিঁচামিচি না করে আমার সঙ্গে তুমি চলো।

ক্যাবলা যে আসবে না, সে তো বুঝতেই পারছি। বর্ধমান থেকে ওর ছোটমামা এসেছে শুনেছি, আর যুদ্ধের ফিলিম দেখানো হচ্ছে–নিশ্চয় ক্যাবলা মামার সঙ্গে সেই ফিলিম দেখতে গেছে। টেনিদা কলকাতায় নেই, বেড়াতে গেছে গোবরডাঙায় পিসিমার বাড়িতে, হাবুল সেন সেই-যে পরশু থেকে বালিগঞ্জে বড়দির বাড়ি গিয়ে বসে রয়েছে–এখনও ফেরবার নাম করছে না। পুজোর ছুটির দিনগুলোতে ভারি একা পড়ে গেছি আমি।

চলো হে পেলারাম, রাস্তায় দেঁড়িয়ে হাঁ করে থেকে আর কী করবে?–ঘোড়ামামা আবার ডাকলেন। ভাবলুম, এসপার-ওসপার যা হোক একটা হয়েই যাক। বলা তো যায় না–জুটেও যেতে পারে একটা কাটলেট–চানস নিয়ে দেখাই যাক না। আজ তো আর রাস্তায় রাস্তায় কুড়িয়ে বেড়াতে হবে না, ভয় কিসের?

ঘোড়ামামার সঙ্গেই গেলুম।

একতলা-দোতলায় ভাড়াটে, ঘোড়ামামা তেতলায় একটা ঘর আর একটুকরো বারান্দা নিয়ে থাকেন। সেই ঘরের দিকে তাকিয়েই আমার প্রায় দমবন্ধ হয়ে এল।

কী নেই সেখানে?

সারা কলকাতার যত ফেলে-দেওয়া! যত কাগজের বাক্স, কাঠের টুকরো, ক্ষয়ে-যাওয়া দাঁতের বুরুশ, ছেঁড়া জুতো, মরচে-পড়া পেরেক, এখানে উৎকৃষ্ট চিড়া পাওয়া যায়, পাগলের মহৌষধ–কিছুই আর বাকি নেই। আর স্তুপাকার কাগজের টুকরো তো আছেই, যত কাগজ কুড়নের অন্ন মেরে দিয়েছেন ঘোড়ামামা। তাকিয়েই সমস্ত মনটা আঁতকে উঠল–যেন সারা গায়ে একজিমা কুটকুট করছে, এইরকম বোধ হল আমার।

বললুম, ঘোড়া—

ঘোড়া? ঘোড়া কী?

জিভ কেটে বললুম, সরি, মামা। আমি বলছিলুম কি মামা, আপনার ওই ঘরে বসে কাটলেট খাওয়া চলবে না। ঘরটা কী বলে ইয়ে, বিষম নোংরা।

নোংরা!–ঘোড়ামামা ভীষণ আশ্চর্য হয়ে গেলেন : তুমি কী বলছ হে পেলারাম। ওই ঘরে যা জিনিস আছে তা দিয়ে আমি দেড় পাটি জুতো বানাতে পারি, ছটা ঘুড়ি তৈরি করতে পারি, টিনের কৌটোয় হাতল লাগিয়ে পাঁচটা মগ বানাতে পারি–

আমি বললুম, থাক, থাক। জুতো, ঘুড়ি কিংবা টিনের মগে আমার দরকার নেই। আমি জানতে চাই-কাটলেট কোথায়! আর সেটা আপনার ওই ঘরেই আছে কি না–মানে রাস্তা থেকে পচা-টা একটা কুড়িয়ে এসেছেন কি না।

পোচা? রাস্তার পোচা কাটলেট!–ঘোড়ামামা যেন ভীষণ ব্যথা পেলেন আবার– তুমি কি আমায় এতই ছোটলোক ভাবলে পেলারাম! তোমার জন্যে কাটলেট আসবে পাড়ার দি গ্রেট আবার খাবো রেস্টুরেন্ট থেকে–গরম-গরম–প্রাণকাড়া

শুনতে-শুনতে আমার রোমাঞ্চ হল–চোখের সামনে ঝিলিক দিয়ে গেল দি গ্রেট আবার খাবো রেস্তোরাঁর একজোড়া গরম কাটলেট। এমন যে ঘোড়ামামা–যাঁর গাল ভর্তি ঝব্বু দাড়ি আর মুখভর্তি কাঁটাল-বিচির মত দাঁত, যিনি মাসে একবারও স্নান করেন কি না সন্দেহ, দশ হাত দূর থেকেও যাঁর গায়ের চিমসে গন্ধ পাওয়া যায়; ইচ্ছে করল, দুহাতে জাপটে ধরি তাঁকে।

বললুম, ঘো–আই মিন মামা, আর দেরি কেন তা হলে? আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না–টাকা দিন, আমি এক্ষুনি, দুটো গরম কাটলেট খেয়ে আসব কথা দিচ্ছি আপনাকে। যাকে বলে, ওয়ার্ড অব অনার। ঘোড়ামামা হাসলেন।

আহা-হা, ব্যস্ত কেন পেলারাম? এসবে-এসবে, কেটলেট এসবে। কিন্তু কেটলেট খাওয়ার জন্যে রেডি হতে হবে না? খেলেই হল?

রেডি? রেডি আবার কী?–আমি উৎসাহিত হয়ে বললুম, রেডি তো আমি হয়েই রয়েছি। কাটলেট খেতে আমি ভীষণ ভালবাসি, ক্যাবলার জন্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দারুণ খিদেও পেয়েছে–পেলেই তক্ষুনি খেয়ে ফেলব–আপনি দেখে নেবেন।

আহা, সে তো দেখবই–ঘোড়ামামা আবার একমুখ দাড়ি নিয়ে হাসলেন : তার আগে একটু হাত লাগাও।

কিসে হাত লাগাব?

কেটলেটের জন্যে।

কাটলেট পেলে তক্ষুনি হাত লাগাব। এক সেকেন্ডের মধ্যেই।

দেখো, পেলারাম, একটু কোষ্টো করতে হয়, নইলে কি আর কিষ্টো মিলে? কেটলেটের জন্যেও একটু পরিশ্রম করতে হবে বই কি।–বলতে বলতে ঘোড়ামামা ঘরের ভেতর থেকে ঘড়ঘড় করে একটা পুরনো ইজিচেয়ারের ফ্রেম টেনে আনলেন :এসো, আগে এটাকে মেনেজ করি।

এ আবার কী? এটাকে কোথায় পেলেন?

মুখুজ্যেদের বাড়ির পেছনে–আস্তাকুঁড়ে।

আরে রাম রাম!–আমি নাক সিঁটকে বললুম, আপনি যে কী-একটা ঘো–আই মিন মামা–যেখান-সেখান থেকে যা-তা কুড়িয়ে আনেন।

যা-তা? যা-তা হল এটা? পুরনো কাঠ, ভারি পোক্ত জিনিস। মুখুজ্যেদের আর কী–বড়লোক, যখন যা-খুশি ফেলে দিলেই হল। কিন্তু এ-দিয়ে যখন আমি একটা ফেসটো ক্লেস ইজিচেয়ার বানাব, তখন ওই কোট-পেন্টুল-পরা ছোট মুখুজ্যেও হাঁ করে থাকবে। বুঝবে, কী জিনিস তারা ফেলে দিয়েছে।

আমি অধৈর্য হয়ে বললুম, কিন্তু কাটলেট?

আঃ–কেটলেট কাটলেট করে তুমি যে খেপে গেলে পেলারাম–ঘোড়ামামা ঘর থেকে এবার কতগুলো ভাঙা ছাতার কালো কালো, কাপড়, রাস্তায় কুড়িয়ে-পাওয়া গিট-মারা কতটা টোয়াইন সুতো আর দুটো মরচে-পড়া চট-সেলাইয়ের ছুঁচ বের করে আনলেন এসো–আগে চেয়ারটাকে বেনিয়ে ফেলি। চেয়ার হয়ে গেলেই কেটলেট বুঝেছ?

বুঝেছি গোঁজ হয়ে জবাব দিলুম আমি। অর্থাৎ আমাকে আদর করে কাটলেট খাওয়াবেন, খামকাই খাওয়াবেন–এমন পাত্তর ঘোড়ামামা নন। তার আগে, এই নড়বড়ে একটা বিচ্ছিরি ফ্রেমে এইসব ফুটোফাটা ছাতার কাপড় সেলাই করে, তাঁকে ইজিচেয়ার বানিয়ে দিতে হবে! কাটলেট হল তারই পারিশ্রমিক।

ঘোড়ামামা বললেন, তোমায় বেশি কোষ্টো করতে হবে না। দুটো পেরেক ঠুকতে হবে, একটু সিলাই করতে হবে আমার সঙ্গে ব্যস

সেলাই? বিরক্ত হয়ে বললুম, আমি কোনওদিন সেলাই করেছি নাকি? আমি কি দর্জি?

আহা–চটো কেনো পেলারাম। তুমি দর্জি হবে কেনো? কিন্তু সব কাজ তো শিখতে হয়–যাকে বলে সেলেফ-হেলেপ!–এসো, লেগে যাও।

কী আর করা–জোড়া কাটলেটের আশায় আমি লেগে গেলুম। ঠিক কথা–বিনা খাটনিতে কে আর কাকে খেতে দেয়। মনে-মনে বললুম, প্যালারাম–জাগো, রাগো এবং লাগো। তারপরে নিজের শ্রমের অন্ন–অর্থাৎ কিনা কাটলেট-খুশি হয়ে খাও।

ছেঁড়া ছাতার কাপড় দুভাঁজ করে সেলাই করা–চারটিখানি কথা নাকি! তার ওপর আবার ঘোড়ামামার গজগজানি।

আঁ–উঃ, কী হচ্ছে! অমনি করে সিলাই করে নাকি? ও তো এক্ষুনি খুলে যাবে।

ঘোঁ-ঘোঁ করে বললুম, আমি তো আর দর্জি না।

আরে দর্জি না হলে কী হয়–হেলেপ, সেলেফ-হেলেপ! এই এমনিভাবে পোটাপোট—

পোটাপোট মানে পটাপট সেলাই করতে গিয়ে খুচ করে ছুঁচের ডগা বিধে গেল বুড়ো আঙুলে।

উরেব্বাপ বলে আমি চেঁচিয়ে উঠলুম।

দেখো একবার কেণ্ডো (মানে, কাণ্ড)! আমি কি তোমায় আঙুল সেলাই করতে বলেছি নাকি? বিরক্ত হয়ে ঘোড়ামামা জানতে চাইলেন।

একত্কিউজ মি ঘোড়া–মানে মামা, আমি আর সেলাই করতে পারব না–বিদ্রোহ করে এবারে আমি বললুম, যথেষ্ট খেটেছি, এবার টাকা দিন, কাটলেট খেয়ে আসি।

অ্যাঃ, কেটলেট-কেটলেট করে এ পাগল হয়ে যাবে দেখছি।–ঘোড়ামামা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, আর একটু–এই একটুখানি। তা হলেই কেটলেট রেডি হয়ে যাবে।

আরও আধ ঘণ্টা ধস্তাধস্তি করে, আরও একবার আঙুলে ছুঁচ ফুটিয়ে, সেই অত্যাশ্চর্য ইজিচেয়ার সেলাই শেষ হল। তখন আমি বেদম হয়ে বসে পড়েছি। আঙুল টনটন করছে, ঘাড় ব্যথা করছে, সারা গা বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়ছে। সেই অবস্থায় আমি বললুম, কাটলেট?

ঘোড়ামামা হেসে বললেন, হেঁ, কেটলেট। ইজিচেয়ারে বসে কেটলেট খেতে হয়। কিন্তু কেটলেট রাখার জন্যে তো একটা টিবিল চাই। সেই টিবিল বানাতে হবে। পেলারাম, কাল থেকে রাস্তায় আমরা টিবিলের কাঠ খুঁজব। তুমিও আমার সঙ্গে সঙ্গে খুঁজবে–কেমোন? ধরো, এক বছর, দেড় বছরের মধ্যে টিবিলের কাঠ হয়ে যাবে। তারপর টিবিল তৈরি হলে—

আমি খেপে গিয়ে বললুম, থামুন–থামুন। তারপর ভাঙা প্লেটের টুকরো যোগাড় করে করে, পুটিং জুড়ে ছমাস পরে প্লেট তৈরি হবে, ভাঙা কাঁচ কুড়িয়ে আরও ছমাস পরে গ্লাস—

হেঁ-হেঁ পেলারাম, মিথ্যে চেঁচাচ্ছ কেন? কেটলেট খাওয়া কি সোজা বেপার? ধৈর্য ধরতে হয়, কত এরেনজমেন্ট করতে হয় তার জন্যে। দু বছর, তিন বছর, চার বছর–যতদিন বাদেই হোক, কেটলেট তোমায় আমি খাওয়াবই। তবে কিনা, তুমিও একটু হেলেপ করবে বুঝেচ না? এই বছর দু-তিন আমার সঙ্গে রাস্তায় একটু কুড়বে ব্যস, তার পরেই গরমাগরম কেটলেট। হেঁঃ-হেঁঃ-হেঁঃ

বলে, দিলখোলা হাসি হেসে ঘোড়ামামা সেই ইজিচেয়ারে বসে পড়লেন। এবং এবং সেই রদ্দিমাকা ছাতার কাপড়, পুরনো রাস্তায় ফ্রেম, আর আমার অনবদ্য সেলাই!!

ফড়-ফড়-ফড়ড়াৎ! খটাং!

ভাঙা ইজিচেয়ারের ফ্রেমের মধ্যে চার হাত-পা তুলে চেঁচাতে লাগলেন ঘোড়ামামা : বেজায় আটকে গিয়েছি পেলারাম-টেনে তোলো-টেনে তোলোনা

এবার আমি স্পষ্ট গলায় বললুম, না ঘোড়ামামা, না। টেনে আমি তুলব না। আপনি ওর মধ্যে হাত-পা ছুঁড়তে থাকুন–ছুঁড়তেই থাকুন। ছুঁড়তে ছুঁড়তে এক মাস, দুমাস, তিনমাস পরে আস্তে-আস্তে আপনার হাত দুটো ডানা হয়ে যাবে। তারপর আপনি আকাশে ফ্রেমসুদ্ধ উড়তে থাকবেন, উড়তেই থাকবেন, তারপর আরও দু-তিন বছর রোদে-জলে বৃষ্টিতে পুড়ে–ফ্রেমটা খসে পড়ে যাবে, তখন আপনি ফ্রি। ইজিচেয়ারের ফ্রেম থেকে বেরুনো কি সোজা কথা ঘোড়ামামা? কত ধৈর্য ধরতে হয়, কত এরেনজমেন্ট করতে হয়–কোষ্টো না করলে কি আর কিষ্টো মিলে?

এই বলে–একলাফে আমি রাস্তায় নেমে পড়লুম।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments