Monday, September 15, 2025
Homeকিশোর গল্পঅ্যাডভেঞ্চার - আদনান মুকিত

অ্যাডভেঞ্চার – আদনান মুকিত

অ্যাডভেঞ্চার – আদনান মুকিত

আমি আগেও খেয়াল করে দেখেছি যে যখন পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়, তখন করার মতো আর কিছুই থাকে না। অথচ পরীক্ষার আগে, এমনকি পরীক্ষার সময়ও দিন-রাত শুধু ভাবতাম—ইশ্, পরীক্ষাটা শেষ হলেই কত কাজ! ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ব্যাডমিন্টনের কোর্ট করা, রনিদের জানালার কাচ ভাঙা, পিকনিক করা…আরও কত-কী! কিন্তু কিছুই হয়নি। ক্রিকেট মাঠে চলছে মাসব্যাপী পাট ও বস্ত্রমেলা। খেলা বন্ধ। ঘরে বসে যে গল্পের বই পড়ব সে উপায়ও নেই। বাসাভর্তি মেহমান। সুতরাং করার কিছু নেই। দুঃখে, অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকার কথা, অথচ আমি গলা ফুলিয়ে বসে আছি। যেহেতু করার কিছুই নেই, তাই এই অবসরে টনসিলটা ভাবল আক্রমণের এটাই সুযোগ। দেশে এত কিছু হচ্ছে, কিন্তু মরার এই গলাব্যথা কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। তাই একটু পরপর আদা আর গরম পানি দিয়ে গার্গল করা, আর বিরক্তিকর মুরগির স্যুপ খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। এমন সময় আশীর্বাদ হয়ে এল মিশুর ফোন। একটু কেশে গলাটা পরিষ্কারের ব্যর্থ চেষ্টা করে বললাম,

: হ্যালো,

: আঙ্কেল…ভালো আছেন? অনি কই?

: আছে ঘরেই। তোমার মাসুদ রানা পড়া কেমন চলছে?

: জি…মানে…তুই! অইন্যা! তোর গলা টিপে ধরব আমি! এমন কুমড়া মার্কা কণ্ঠে কথা বলছিস…আমি ভেবেছি তোর আব্বা! গলায় কী হয়েছে?

: টনসিল!

: সেই! তোর কত ভালো ভালো অসুখ হয়! কদিন আগে চিকেন পক্স হলো, বাসায় শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়লি। এখন টনসিল। কী লাক! আর আমার শুধু হালকা জ্বর ছাড়া কিছুই হয় না। আচ্ছা, বের হবি? চল লিটু মিয়ার দোকানে চা খাই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলা দরকার।

: না। মা বেরোতে দেবে না।

: আরে, বেরিয়ে পড়। মায়েদের কাজই সন্তানদের আটকে রাখা। এই বাধা আমাদের পেরোতে হবে। কবি সুকান্ত বলেছেন, বাধা আছে সত্যি, তার চেয়েও বড় তা পেরোবার শক্তি।

: এটা সুকান্ত বলে নাই। এটা একটা বিজ্ঞাপনের লাইন।

: ওই হইল। সুকান্ত বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই বিজ্ঞাপনের লাইনই লিখতেন। জলদি আয়। আমি আর জিতু গাধাটা আছি।

আমি মোটামুটি সাইজের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তৈরি হয়ে নিলাম। চা খেতে খুব যে ভালো লাগে তা নয়, কিন্তু বাসা থেকে বেরিয়ে আলোচনা করব এটা ভেবেই ভালো লাগছে। এখন মায়ের চোখ এড়িয়ে বাইরে যাওয়াটাই আসল কাজ। পা টিপে টিপে যখন একেবারে দরজার কাছে চলে এসেছি, তখনই কাকের মতো ক্যা ক্যা করে উঠল আপু। ‘অ্যাই, তুই কই যাস? আম্মু, দেখো তোমার ছেলে বাইরে যাচ্ছে।’

পৃথিবীর সব ভালো কাজে বাধা দেওয়ার জন্য বড় বোনদের পাঠানো হয়েছে। ওর সাইরেনের মতো তীক্ষ কণ্ঠটা ঠিকই দেয়াল ভেদ করে চলে গেল আম্মুর ঘরে। চশমার কাচ মুছতে মুছতে আম্মু এসে বলল,

: কোথায় যাচ্ছ?

: এই একটু বাইরে। হাওয়া খেয়ে আসি।

: একটু পর ভাত দেব। ভাত খাবে। হাওয়া খেতে হবে না।

: না…সারা দিন তো ঘরেই আছি…

: ঘরেই তো থাকবে। ঘর বানানোই হয়েছে থাকার জন্য। যাও।

: পরীক্ষা শেষ তো…

: হোক। নতুন ক্লাসের বইগুলো পড়ো। এগিয়ে থাকো।

: এহ! এগিয়ে থাকো! আমি জানি এটা একটা ফাঁদ। গতবারও এভাবেই নতুন ক্লাসের বই পড়ে ‘এগিয়ে ছিলাম’। তার আগেরবারও। কোনো লাভ হয়নি। ছুটি শেষে যখন বলব, ‘নতুন বই তো মোটামুটি পড়া হয়েই গেছে। এখন খেলতে যাই?’ মা বলবেন, ‘না। রিভিশন দাও।’ ফলে এগিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। কী আর করা, চলে এলাম নিজের ঘরে। আপুর ওপর যে পরিমাণ রাগ হচ্ছে, তা শক্তিতে পরিণত করলে কয়েক শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে যেত।

সর্বশেষ পরিস্থিতিটা জানালাম মিশুকে। আমি যে গৃহবন্দী হয়ে আছি তা জেনে নিশ্চয়ই খুব আনন্দ হচ্ছে ওর। বসে বসে টেনিস বলটা দেয়ালে ছুড়ছি আরভাবছি, দেয়ালে আপুর মুখ। কী দরকার তোর আমাকে জ্বালানোর? কিছু হলেই ‘আম্মু…দেখো তোমার ছেলে…’

হঠাৎ হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল বিশালদেহী কিছু একটা। চমকে উঠে দেখি জিতু! হাতে দুটো চকবার। ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল সে। ঠিক আমার ইস্তিরি করা কাপড়গুলোর ওপর। কিছু বলার আগেই আইসক্রিম দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে বলল,

: নে ধর।

: কেন?

: মিশু বলল, তুই নাকি ওর কাছে দুটো চকবার পাস! তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করলে তোকে দুটো চকবার দেওয়ার কথা। তাই দিল। নিয়ে এলাম।

: তোকে বলল আর নিয়ে এলি?

: আনব না? বন্ধু না আমার!

: আর আমি কী? আমার যে টনসিল, তুই জানিস না? মিশু কত বড় বাটপার, ভেবে দেখলি না একবার? ও জানে আমি খেতে পারব না। তাই তো এত দিন পর বাজির চকবার পাঠিয়েছে। ও এলে লাথি মেরে দাঁত ফেলে দিতাম আমি।

: বাহ! পৈশাচিক বুদ্ধি। দে। আমি খাচ্ছি। তোর টনসিল। চকবার খাওয়া ঠিক হবে না। সামনে বাংলাদেশের খেলা আছে। ঠিকমতো চিল্লাতে পারবি না।

আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, এই চরম স্বার্থপর, নিষ্ঠুর ছেলেগুলো আমার বন্ধু। বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আমার বিপদে তারা ঠিকই তাদের পরিচয়টা দিচ্ছে। একজন করুণ টনসিলাক্রান্ত গৃহবন্দী কিশোরের সামনে কোনো বন্ধু এভাবে দুটো চকবার খেতে পারে? আমার গলাব্যথা আরও বেড়ে গেল। জিতুটা এমন, যে যা বলবে তাই করবে। একবার ভেবেও দেখবে না কেন করছে, কার জন্য করছে। কেউ যদি বলে যা, অমুকের টাকে একটা চাটি মেরে আয়—সঙ্গে সঙ্গে ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে মেরে আসবে জিতু। এ জন্যই মিশু ওকে গাধা বলে ডাকে। পরীক্ষার হলে এই গাধাটাকে জ্যামিতি দেখাতে গিয়ে আমার ৫ নম্বর মাইনাস হয়েছে। আর সেই জিতু এইমাত্র দ্বিতীয় আইসক্রিম শেষ করে মোড়কটা মেঝেতে ফেলে আমারই ধোয়া শার্টে হাত মুছল! তারপর আমার পিঠে দুটো কিল দিয়ে ‘সকালে জায়গামতো চলে আসিস’ বলে টেনিস বলটা হাতে নিয়ে চলে গেল।

কী আশ্চর্য! আমি ভাবতেই পারছি না যে এই ছেলেগুলোর সঙ্গে আমি কাল বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছি। পালিয়ে যাওয়ার একটা যৌক্তিক কারণ আছে। এক সুন্দর সকালে মনে হলো, আমাদের জীবনে কোনো আনন্দ নেই। এমনকি ক্লাসে যে ছেলেটার নাম আনন্দ, তার জীবনটাও পাটিগণিতের মতোই নিরস! সকালে ওঠো, নাশতা খাও, পড়তে বসো, কোচিংয়ে যাও, বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে ঘুমাও। তারপর আবার উঠে কোচিংয়ে যাও, সন্ধ্যায় এসে পড়তে বসো, খাও, ঘুমাও। যদি ঘুম না আসে তাহলে পড়ো। এটা কোনো জীবন? আমাদের পাশের বাসার ধূসর ছাগলটাও এর চেয়ে আনন্দে জীবন যাপন করে। ইচ্ছে হলে ঘাস খায়, নইলে কাঁঠালপাতা। অথচ আমাদের ইচ্ছের কোনো দাম নেই। তাই আমি আর মিশু ঠিক করলাম, সকালে কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে যেদিকে ইচ্ছা চলে যাব। জিতুকে বলতেই ও রাজি। পড়ালেখা ছাড়া আর কোনো ব্যাপারেই তার অমত থাকে না কখনো। ফলে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হলো না। ঠিক সকাল ১০টায় সাইকেল নিয়ে লিটু মিয়ার দোকানে অবস্থান নেব আমরা। তারপর চা-মালাই খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে যাত্রা। ঘরে রেখে যাব আমাদের মোবাইল, মা-বাবা, আর চরম শত্রু আপুকে। কী অ্যাডভেঞ্চারাস ব্যাপার!
সকালে উঠেই খেয়ে তৈরি হয়ে নিলাম আমি। ব্যাগ গোছানোই ছিল। সাইকেলটা বের করে দুটো পাউরুটি আর একটা কলা হাতে নিয়েই ছুটলাম গেটের দিকে। প্রায় বেরিয়ে গেছি, এমন সময় ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আপু বলল, ‘কিরে? এত সকালে কই যাস তুই?’ কিছু না বলে হাসলাম শুধু। একটু পর থেকে ওর ক্যানক্যানে কণ্ঠটা আর শুনতে হবে না ভাবতেই ভালো লাগল। একটু খারাপও লাগছে, তবে বড় কিছুর জন্য এসব ছোট ব্যাপার মাথায় রাখলে চলে না। আমি প্যাডেল চাপলাম।

লিটু মিয়ার দোকানে এসে দেখি বিরক্ত ভঙ্গিতে কলা খাচ্ছে মিশু। চায়ের অর্ডার দিয়ে বললাম,

: জিতু এখনো আসেনি, তাই না?

: এসেছে।

: তাহলে গম্ভীর কেন? মনে হচ্ছে ‘কলা হই হই বিষ খাওয়াইলা’ টাইপের ব্যাপার?

: জিতু নাকি আরও এক ঘণ্টা আগেই এসেছে। ওই যে ওর সাইকেল রাখা। চায়ের অর্ডার দিয়ে মেইন রোডের দিকে গিয়েছিল চকলেট-বিস্কুট কিনতে। এখনো আসেনি।

: বলিস কী!

: হ্যাঁ। গাধা! বিস্কুট কিনতে এতক্ষণ লাগে?

: অন্য কিছু হয়নি তো?

: আরে না। ও নিশ্চিত স্টেশনের বেঞ্চে ঘুমাচ্ছে।

মিশুর কথা যে ভুল তা প্রমাণিত হয়ে গেল একটু পরেই। ১০টা পার হয়ে গেল, অথচ জিতুর খোঁজই নেই। আমরা স্টেশন, পার্কসহ আশপাশের কয়েকটা জায়গায় খুঁজলাম, কোথাও নেই সে। চিন্তার ব্যাপার। সঙ্গে ফোনও নেই। হলো কী ওর? ১১টা বেজে গেল, তবু কোনো খোঁজ না পেয়ে আমি উঠে বললাম,

: চল, ওর বাসায় যাই।

: না। ওর বাসার সামনে দুটো লাল কুকুর আছে। আমি কুকুর ভয় পাই।

: লাথি মেরে তোর ভয় ছুটিয়ে দেব। চল।

জিতুর বাসার সামনে এসে দেখি একটা কুকুরও নেই। মিশু বেশ ভাব নিয়ে কলবেল চাপল। জিতুর বড় বোন নিতু আপা এসে বললেন,

: তোরা কোত্থেকে? তোদের বন্ধু তো সকালেই বেরিয়ে গেছে।

: ও। আচ্ছা, যাই তাহলে।

: নাশতা খেয়ে যা।

: হ্যাঁ, খাওয়া যায়…

বলেই মিশু ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিল। আমি ওর শার্ট টেনে ধরলাম। চাপা গলায় বললাম, ‘লাথি খাবি কিন্তু।’ মিশু সঙ্গে সঙ্গে ‘না থাক, আমার পেট ভরা’ বলে পিছিয়ে এল।

জিতুর বাসা থেকে বেরিয়ে পুরো এলাকা চষে বেড়ালাম আমরা। জিলা স্কুল, আশপাশের সব জায়গায় খুঁজলাম জিতুকে। কোথাও না পেয়ে আবার ফিরে এলাম লিটু মিয়ার দোকানে। এসে যা দেখলাম, তাতে আমাদের চোখ কপালে উঠবে কী! কপালই চোখের কাছে নেমে এল। দোকানের বেঞ্চে বসে পা দুলিয়ে চা খাচ্ছে আমাদের জিতু! হাঁটুর কাছে ময়লা, কনুইয়ে ব্যান্ডেজ!

আমরা সাইকেল ফেলে ছুটে গেলাম! মিশু বলল,

: কিরে, কোথায় ছিলি তুই? কী হয়েছে?

: শিং মাছ ঘাই দিয়েছে!

: কী?

: হ্যাঁ। খুব ব্যথা!

: শিং মাছের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো কীভাবে?

: কেন? বাজারে।

: জিতু, সব পরিষ্কার করে বল। আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। ১০টায় যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে চলে যাওয়ার কথা আমাদের। তুই ঠিক করে বল, ঘটনা কী।

: আরে আমি বিস্কুট কিনতে গেছি। হঠাৎ শুনি পেছন থেকে কে যেন ডাকছে। তাকিয়ে দেখি জহির স্যার। হাতে খাতার বান্ডিল। স্যার বললেন,

: জিতু, হাতে সময় আছে তোর?

: জি স্যার।

: একটু বাজারটা করে দিবি? তোদের এই খাতাগুলো নিয়ে কী যে ঝামেলায় পড়েছি, সময়ই পাচ্ছি না। তুই কিছু জিনিস এগিয়ে দিবি বাবা?

: অবশ্যই স্যার।

তারপর স্যার লিস্ট ধরিয়ে দিলেন। শাকসবজি, শিং মাছ, লাউ এসব। অঙ্ক পরীক্ষাটা খারাপ হয়েছিল তো, ভাবলাম বাজার করে দিলে যদি কোনো সুবিধা হয়। আচমকা কীভাবে যেন মাছগুলো বেরিয়ে গেল। ধরতে গিয়ে খেলাম ঘাই। ভয়ে পা পিছলে পড়ে হাঁটু, কনুই গেল কেটে! কী যে ব্যথা!

মিশু হতাশ হয়ে বলল,

: তারপর তুই বাসায় বাজার দিয়ে এলি?

: হ্যাঁ। শুধু একটা শিং মাছ পলাতক। বাকি সব দিয়ে এলাম। স্যারের মা হাতে ডেটল লাগিয়ে দিলেন। নাশতাও খেলাম।

: আমাদের কথা মনে হলো না তোর?

: হয়েছিল, ভাবলাম তোরা নিশ্চয়ই নাশতা না খেয়ে বেরোবি না।

: উফ! এ জন্যই তোকে গাধা বলে ডাকি আমি! জিতু! জহির স্যার আমাদের ক্লাস নেন না। উনি বি সেকশনের ক্লাস নেন। আমাদের খাতা ওনার কাছে যায়নি।

: হায় হায়! এটা তো মাথায় আসেনি! যা-ই হোক। একটা উপকার হলো। অ্যাডভেঞ্চারও হলো। শিং মাছ যে কী ভয়ংকর…

জিতুর কথা শেষ হলো না। মিশু ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ওপর। জিতু কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দিল জিলা স্কুলের দিকে। আমার কিছু বলা উচিত, কিন্তু বললাম না। এমনিতেই আমার গলাব্যথা, তার ওপর এ ঘটনায় আমি পুরো ভাস্কর্য হয়ে গিয়েছি। অনেক চেষ্টা করে গলা দিয়ে একটাই কথা বের হলো— লিটু মামা, একটা মালাই-চা।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments