Monday, April 29, 2024
Homeবাণী-কথাউনুনের গল্প - সমরেশ মজুমদার

উনুনের গল্প – সমরেশ মজুমদার

সমরেশ মজুমদার

ভাতারখাকি বলে বদনামের গল্প যার গায়ে তার কাছে অনেকেই ভনভনিয়ে আসবে এ আর নতুন কথা কি! তবে কিনা একটু আড়াল আবডাল, ধরি মাছ না ছুঁই পানির চোখধারা না থাকলে গাঁয়ে বাস করা যায় না। রাত-বেরাতে কিছু ঘটলে ছেলেপুলের বাপ-মা সংসারী মানুষেরা জিভ নাড়তে পারে না, আবার দিনদুপুরে দেখা পেলেই বুকে বেড়াল আঁচড়ায়।

দৃষ্টান্ত তো ভুরিভুরি। মগরা স্টেশনের রেলের ছোটবাবু রসিয়ে হাত ধরেছিল, গেলবার থানার বড়বাবু ওকে জেরা করতে গিয়ে নিজেই জেরবার হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন ধরে পঞ্চায়েতের প্রেসিডেন্ট সাহেব বাদলা রাত হলেই ওদিকে পা বাড়ান। অবশ্যি এইসব গল্পগাছার ডানায় আর কতটা জোর, মুখ থুবড়ে একসময় পড়লই। তবে ওই যা, ছাই খুঁচিয়ে আগুন খোঁজার লোকের তো অভাব নেই পৃথিবীতে। ফরসা জামার তলায় ছেঁড়া গেঞ্জি যেমন জেনেও না জানা হয়ে থাকে। তেমনি এইসব নিয়েই দিনরাত দিব্যি কেটে যায়। মুশকিল ঘটল কয়েকটা ঘটনা।

হাত ধরার কয়েকদিনের মধ্যে রেলের ছোটবাবুই লাইন পেরোতে গিয়ে লোকালের চাকায় দু টুকরো হয়ে গেল। রক্ত আর খুচরো পয়সায় চারদিক থইথই। কদিন আগে মাঝরাত্রে যখন আকাশ ঝমঝমিয়ে নামছে তখন ওই বাড়ির সামনে পা পিছলে ছাতি উলটে পড়তে-পড়তে সন্ন্যাস রোগে মুখ বেঁকে গেল পঞ্চায়েতের প্রেসিডেন্ট সাহেবের। বাঁ-দিকটা অসাড়। দু-দুটো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দারোগাবাবুর যখন-তখন গাঁয়ে ঢোকা বন্ধ হয়ে গেল। চুল্লি জ্বলছে গনগনিয়ে কিন্তু শকুনের দেখা নেই। ভাতার মরলে যদি ভাতারখাকি তবে নাগর মরলে কি? তা একটা নয়, দু-দুটো। সন্ন্যাসে শুয়ে থাকা আর দু-টুকরো হওয়া তো এক কথাই। অতএব। ভাতারখাকি হল মরদখাকি। তল্লাটের সেরা মরদ দারোগাবাবুর প্রাণে তাই ভয় ঢুকেছে, তিনি। আসেন না, নজরানা যায় ফি-হপ্তায়। এ মন্দের ভালো। সামনে এলে যে সাতপ্যাঁচে অঙ্কটা বাড়ত তা সবাই জানে। তাই ভাতারখাকি বলো আর মরদখাকি বলো, পুরো গ্রামটাকে স্বস্তিতে রেখেছে। যে তাকে চোখ রাঙাবে এমন সাধ্যি কার?

চোখ রাঙানো সইতে বয়েই গেছে আতরবালার। এই শ্রাবণে আটাশে পড়ল সে। বাপ নাম রেখেছিল বটে! যে দ্রব্য চোখে দ্যাখেনি তার নামে নামকরণ। ভাতার বলত, আমি তোর তাই তুই আতর। মরে যাই আর কী! এখন দ্যাখো গ্রামটার চেহারা, যেন সবাই নেতিয়ে লেজ নাড়ছে পায়ের তলায়। আর যদ্দিন আছে তদ্দিন উনুন ভাঙবে না, হাঁড়ি ওলটাবে না। কথাটা সঠিক। করে বললে বলতে হয় যদ্দিন ঠমক আছে তদ্দিনই আতরের সামনে লেজ নাড়া। তারপর আর একটা আতর তৈরি হয়ে যাবে ঠিক।

চুল বাঁধতে-বাঁধতে আরশিতে মুখ দর্শন করল সে। রেলের ছোটবাবুর মনটা ভালো ছিল। যদি বলো, বুঝলে কি করে তবে তার উত্তর একটা চাল টিপলেই তা বোঝা যায়। যে পুরুষ সোজা। চোখে বুক দ্যাখে অথচ তার দৃষ্টির সামনে অস্বস্তি হয় না সে মন্দ লোক নয়। মরে যাওয়ার আগে কলকাতা থেকে রেলের ছোটবাবু এক শিশি এনে দিয়েছিল তাকে। হরিণের নাভি থেকে তৈরি আতর। দেওয়ার সময় হাত ধরে বলেছিল, এখন মাখিস না। যেদিন আমার ফ্যামিলি থাকবে না কোয়াটারে সেদিন মেখে আসিস। ওই হাত ধরাটা দেখেছিল পাঁচজনে। দু-টুকরো হওয়ার খবর পেয়ে যে কষ্ট হয়নি তা নয়, কিন্তু সে কারণেই শিশিটা খোলেনি এমন নয়। ইদানীং চিবুক বুকে। ঠেকালে কেমন মিষ্টি-মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগে। এই যে এখন, গরমকাল, দরদরিয়ে ঘাম গড়ায় কপালে গলায়, ডুব দিয়ে এসে গা মুছলেই গন্ধটা যেন জানান দেয়। কাউকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় লাগে। গল্প তো লকলক করছে প্রত্যেকের জিভে। মাঝরাতে মেয়েটা বলে, কীসের বাস মা? আতরের?

ধমকাতে হয় অকারণে, হিন্দুঘরের বেধবা, মাঝরাত্তিরে আতর মাখতে যাব কেন? কিন্তু আতর জানে কথাটা মিথ্যে নয়। একটা গন্ধ বের হয়। কোত্থেকে যে হয় তাই অজানা। ভাতার মরেছে ছয় বছরের মেয়েকে রেখে। তার গলার কাঁটা আবার অন্ধের লাঠি। মেয়ে পাশে শোয় বলে। রাতদুপুরে উটকো লোককে ঠেকানো যায়। পঞ্চায়েতের প্রেসিডেন্ট মোল্লা সাহেব অবশ্যি আসত। এসে বসে থাকত দোরগোড়ায় পিঁড়ি পেতে চুপটি করে। ঘুমন্ত মেয়েটাকে দেখত আর বলত, তোর এখন দুটো ঘর দরকার আতর। মেয়ে বড় হচ্ছে হাজার হোক!

একলা ঘরে শুয়ে কি করব? আমার ভূতের ভয় লাগে।

ভূত! আমি এলে ভূতের বাপের হিম্মত হবে ভয় দেখানোর।

আপনি তো বাদলা না হলে আসেন না।

এসেই বা কি হবে! এই তো দোরগোড়ায় বসে থাকা!

মেয়ে ছিল বলেই তো গণ্ডি পার হওয়া সম্ভব হল না এ জীবনে প্রেসিডেন্ট সাহেবের। অবশ্য এখন মরদখাকি বলে নাম ছড়াবার পর কেউ আর সখের বাগান ভাবে না, চোরাবালি বলে এড়িয়ে যায়। নইলে ওই দারোগাবাবুকে এড়িয়ে থাকা যেত? সাত বাচ্চার আধবুড়ো বাপ ধর্মের ষাঁড়ের মতো ধেয়ে এসেছিল প্রায়।

কিন্তু আল পড়ল না হয় বেনোজল ঠেকাতে, দেওয়াল উঠল চৌদিকে চোর-ডাকাত ঠেকাতে, কিন্তু তার নিজের কি হল? এ দেওয়াল যে চৌদিক গ্রাস করে তাকেই নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে না। আটাশ বছর মানে পুরু হলদে সর পড়া দুধ। টানটান সেই সরের ছাতের তলায় গনগনে আঁচে তেতে ওঠা দুধ ছটফটিয়ে মরে। একটু ফাঁক পাওয়ার সুযোগ, অমনি ফিনিক দিয়ে উঠবে। আর সেই বয়সে যার চারপাশে বদনামের লোহার দেওয়াল উঠল কোন মনসার চ্যালা তাতে গর্ত খুঁড়বে?

পান খাওয়া লালচে ঠোঁটে চিলতে হাসি ঝুলল আতরের। মরদখাকি! মন্দ কি?কিন্তু মরদ। কোথায়? চারপাশে তাকালে শুধু শেয়াল শকুন নয় নেড়ি। ওই প্রেসিডেন্ট কিংবা দারোগা মানেই তো ওই। রেলের বাবুটার গলায় নরম সুর থাকত। লোকটা বুঝে ওঠার আগেই দুম করে মরে গেল।

তা আটাশ বছর বয়সেও সত্যিকারের পিরীত তো কারও সঙ্গে হল না। ঢলানি করতে হয় গ্রামটার জন্যে, প্রথমে অবশ্যি ছিল নিজের পেট বাঁচানোর তাগিদ, সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরো গ্রামের হাঁ বন্ধ করার কারণ। মেয়ে বড় হচ্ছে। আর কদিন। তারপর তোমার মনের মানুষ এলেও মনকে চিতায় তুলতে হবে।

এখন তার অকারণে বদনাম ছড়াচ্ছে। ছড়াক যত ছড়াবে, রাতে আঁচল আলগা করে ঘুমানো যাবে। কদিন থেকে আবগারির নতুন বাবু তার দিকে তাকায় আবার তাকায় না। এরকম ক্ষেত্রে। নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলে আগুনে জল ঢেলে রাখে আতর। কিন্তু ওই মানুষটাকে দেখামাত্রই হাঁটুদুটোয় ঝি-ঝি ধরে, কানে রক্ত জমে। হারানকাকা খবর এনেছে বাবুটির নাম রতন। চাকরিতেও নতুন। স্টেশনে যাওয়ার পথে এর মধ্যে বারতিনেক মুখোমুখি হয়েছে সে। গতকাল গাঁয়ে ঢুকে যে আবগারিবাবুরা শাসিয়ে গিয়েছে তার মধ্যে রতনবাবুও ছিল। যতবার চোখাচোখি ততবার বুকের মধ্যে পাক খেয়েছে বাতাস। কিন্তু তাতে কার কি? পৃথিবীর কোন ভগবান তাকে নেবে, তার সেরকম ইচ্ছেকে নেবে এবং সেইসঙ্গে ইন্দুকেও? এইটেই তো জ্বালা। চাওয়ার মুখ যার বড় তার পাওয়ার কপাল তো এই একটুখানি।

মায়ের সঙ্গে মেয়েও তৈরি। ঘরে রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। একা-একা থাকতেও চায় না মেয়ে। বাপের স্বভাব। বাপ ভয় পেত ভূত আর পুলিশকে। বাপই নাম রেখেছিল মেয়ের। দেশের মাথা। এসেছিলেন ডায়মন্ডহারবারে। তাঁর নামেই নাম। যে মেয়েছেলেকে সারা দেশভক্তি আর ঈর্ষা। করে তাকে তো কেউ বদনাম দিতে সাহস করে না। সেই মেয়েছেলের স্বামী মরেছে অকালে তবু তো কেউ তাকে বলে না ভাতারখাকি?ইন্দুকে হতে হবে ওইরকম। হেসে ফেলল আতর। কে। কাকে খায়? ওসব খাওয়ার জিনিস হল? মরণ!

ইন্দু হাঁটছিল তার মায়ের আঁচল ধরে। এই এক বদ অভ্যেস। হাত ছাড়িয়ে আতর ঝাঁঝিয়ে উঠল, নিজের পায়ে চল। মাথা উঁচু করে হাঁট। এই এরকম। চলতে ফিরতে শুধু আঁচল ধরা! হাতটা সরিয়ে দিল ঝটকায়। মেয়ে ফ্যালফেলিয়ে তাকাল এবার মায়ের দিকে। কিন্তু তারপরেই সে মায়ের চলা নকল করার চেষ্টা করল। কিন্তু পা ফেললেই মায়ের শরীরে যে নাচন লাগে তা তো তার শরীরে হয় না। হাড়জিরজিরে শরীরের তিন জায়গায় ফেঁসে যাওয়া ফ্রকটা টেনেটুনে নেয়। ইন্দু। সকালে পান্তা খাওয়ায় পেট এখন ভারী। ইচ্ছে করেই সে মায়ের কাছ থেকে সরে-সরে।

হাঁটতে শুরু করে। কাছে থাকলে যা বোঝা যায় না, সামান্য দুরত্ব তা স্পষ্ট করে। যেমন এই মুহূর্তে ইন্দুর মনে হল এই গাঁয়ে মায়ের মতো দেখতে আর কেউ নেই।

দু-পাশেদুটো মজাল পুকুর। মজাল হলেও হাঁটু মুড়লে ওপর থেকে দেখা যায় না। মাঝখানের চওড়া ঢালু জমিটায় রাবণের চিতা জ্বলছে। আহা কি দৃশ্য! দশ হাত দূরে-দূরে দিয়ে শুরু। হয়েছিল, প্রয়োজনের চাপে এখন উনুনগুলো ঘেঁষাঘেঁষি হয়েছে। দু-দশটা নয়, বিয়াল্লিশটা, অবশ্য রোজ সবকটাতে আগুন পড়ে না। এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় চুল্লুর কারখানা এটা। জন্মইস্তক আতর এই আগুন জ্বলতে দেখেছে। তখন মাল তৈরি হত খুব যত্ন দিয়ে। মাল ফুটিয়ে মাটির হাঁড়িতে মুখ বন্ধ করে হয় মাটির তলায় নয় পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হত ঠিক তিনি হপ্তা। এতে বিষ মারত, স্বােয়াদ বাড়ত। যত জমে তত মজে। তারপর আবার আগুনে তুলে এ হাঁড়ি থেকে ও-হাঁড়িতে গরমরসের ধোঁয়া পাচার করা হত। সেই ধোঁয়া জমে-জমে যেই রস হয়ে যেত তখন অমৃত তো কোন ছাড়। যত বেশি মজবে তত মাল দামি হবে। কিন্তু এখন দিন পালটেছে। অত সময় নষ্ট করার সময় নেই কারও। পেট খাঁ-খাঁ করছে সবার। এখন ফোঁটাও ঢালো আর বেচে দাও। তবে হ্যাঁ, এই গাঁয়ের চুল্ল খেয়ে কেউ চোখ উলটেছে এমন বদনাম। দেওয়া যাবে না।

সাতসকালেই আজ পনেরোটা উনুন জ্বলছে। কোমরে হাত দিয়ে গুনল আতর। এই উনুন জ্বলা। দেখলেই তার যৌবনের কথা মনে পড়ে। ভাতারখাকি। উনুনের কাছে এলেই ভাতারের মুখ মনে পড়ে। রোগা ঢ্যাঙা মাথা মোটা লোকটা। চুল্লুর হাতটাই যা ছিল ভালো। বেচত যত খেত তার কম নয়। রাত্তিরে আতরকে প্রায়ই শবসাধনা করতে হত। পুলিশ দেখলেই চিত্তির হত ওর প্রাণ। চুল্লু বিক্রি করে এক রাত্তিরে ফেরার পথে মাঠের মাঝখানে মরে পড়ে রইল। কে মারল, কীভাবে। মরল সে-রহস্য আজও অন্ধকারে। ভাতার মরলে কাঁদতে হয় বলে কেঁদেছিল আতর, কিন্তু কান্নাটা বুক থেকে আসেনি। যা সত্যি তা বলতে ভয় পায় না সে।

বাঁদিকের বেলগাছটার গা-ঘেঁষে যে উনুন সেটাই আতরের। হারান তাতে আগুন জ্বেলেছে সাতসকালে। মাল বেচলে দিনে দশটাকা দিতে হবে এই কড়ার। আঠারো বছরের ছেলেটা খাটতে পারে খুব। তাকে দেখে বলল, আজ হাওয়া খারাপ।

আতর চোখ ছোট করল, কেন? হারু সেপাই এসে বলে গেছে উনুন না জ্বালতে আজ।

কেন?

তা জানি না।

ওপাশ থেকে শিবুকাকা এগিয়ে এল, হারু ভাঙতে চাইল না কিন্তু মন কু গাইছে বড়। একবার থানায় গিয়ে খবর করলে বড় ভালো হত।

উদাসী মুদ্রা আনল হাতে আতর, যান না, পেটের দায় তো সবার।

আমরা গেলে তো দোর থেকেই ভাগিয়ে দেবে। নইলে কি যেতাম না ভাবছ?

অনুরোধ বললে কম হবে, প্রায় কাকুতিমিনতি শুরু হয়ে গেল চারপাশ থেকে। যে পূজার যা মন্ত্র। কানাই জেঠা বলল, তুমি হলে গিয়ে মহাশক্তি, তুমি না গেলে অসুরদমন হবে কি করে? আজ বিকেলের মধ্যে মালগুলো পাচার করতে পারলে না হয় দু-দিন বিশ্রাম নেওয়া যায়, কি বলল সবাই?

চিন্তিত মুখগুলোনড়েচড়ে দ্রুত সায় দিতে লাগল। এইরকম পরিস্থিতিতে আতরের নাকের পাটা বড় কাঁপে। হাঁটুর ওপরটা ভারী হয়ে যায়। রাজেন্দ্রাণীর মতো সে তাকাল চারপাশে, একটাও। মানুষ নেই–যেন এই জীবসকলের দায়িত্ব একমাত্র তার। সে পুকুরের দিকে মুখ ফেরাল। তারপর সন্ধানী চোখে জরিপ করে বলল, জলের তলায় সাতটা আছে?

কানাই জেঠা বলল, হ্যাঁ, আজ সকালেই রেখেছি।

দু-ঘণ্টায় যা হওয়ার হয়ে গেলে সবকটাকে জলের তলায় পাঠানো হোক।

হারান মাথা নাড়ল, এতে বড় বদনাম হয়ে যাচ্ছে বাজারে। এর পরে তোক মাল নিতে চাইবে না। খদ্দের বলছে সরেশ হচ্ছে না।

সরেস! যে দেশে মেয়েছেলে নেই সে-দেশে হিজড়েও মহারানি। থুতু ফেলল আতর, মাল না গেলে তো হাওয়া চাটবে মিনসেগুলো। একদিন সরেস না পেলে চলবে। আগে হাওয়াটা বুঝে আসি। কে যাবে আমার সঙ্গে?

কেউ মুখ খুলছে না। খুলবে না জানত আতর। দারোগাবাবুর সামনে গেলে সব দু-মাসের শিশু হয়ে যায়। এবং এইটেই চাইছিল সে! হেঁকে বলল, যেতে পারি, কিন্তু উনুন প্রতি একটা করে টাকা দিতে হবে। হ্যাঁ, মনে থাকে যেন!

পারিশ্রমিকটা বড়ই ন্যায্য। যেতে আসতে তো একটা টাকাই বাস ভাড়া লেগে যায়। আপত্তি না। করতে পেরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সবাই। আতরের চোখে নির্দেশ ঘুরতেই হারান হাত পাততে লাগল উনুনে-উনুনে ঘুরে। চারপাশে এখন ম-ম করছে হাঁড়ির বাষ্পের গন্ধ। আঃ! আর তাকিয়ে দেখল তার তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে ইন্দু সেই গন্ধ নাকে টানছে। তার চোখ বড় হল, অ্যাই, খেলতে যা, এখানে কি?

আমি তোমার সঙ্গে যাব।

কোথায়?

যেখানে যাচ্ছ!

একি মেয়েরে বাবা! যেখানে যাচ্ছি সেখানে এক তান্ত্রিক বসে আছে, বাচ্চা মেয়ে পেলেই ছাগল তৈরি করে মাঠে ছেড়ে দেয়।

আর বড় মেয়ে পেলে?

হোঁচট খায় আতর, সেটা পেলে কি করে তাই দেখতে যাচ্ছি।

যদি তোমাকেও ছাগল বানায়?

কেটে মাংস খাবে। এমনিতেই তো নোলা ঝরছে। যা, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত বাড়ি যাবি না। আর খবরদার, পুকুরে নামবি না।

বারোটা টাকা পাওয়া গেল। বাকি সব ট্যাঁকখালির জমিদার। এখন এ নিয়ে কচলাকচলি করে। কোনও লাভ নেই। টাকাগুলো আঁচলে বেঁধে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে রওনা হল আতর। সিকি মাইল কাঁচা রাস্তা পার হলে তবে বাসের দেখা মেলে। অন্তত তিনজনকে কৈফিয়ত দিতে হল। এরই মধ্যে। কোথায় যাচ্ছে সাতসকালে তা জেনে যেন মানুষগুলোর স্বস্তি হচ্ছে না। একটু। নির্জনে পড়ামাত্র পেছনে সাইকেলের ঘণ্টা বাজল। সরে যেতে-যেতে দেখল আরোহী দু-পায়ে ব্রেক কষেছে, যাওয়া হচ্ছে কোথায়?

এই একটু, কাজে। আতর ঠিক বুঝতে পারছিল না তার দাঁড়ানো উচিত কিনা।

কাজটা কোনদিকে?

থানায়।

অ। তা এখনও অনেকটা হাঁটতে হবে বাস ধরতে হলে।

তাই তো হয়।

কথাটা হল কি, তোমার সঙ্গে আমার ঠিক আলাপটালাপ নেই। কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন আছে। অবশ্য ইচ্ছে হলে জবাব দেবে নইলে নয়।

আতর লোকটার দিকে তাকাল। তিরিশের গায়েই বয়স। শহরে থাকে। সেখানে নাকি বই বাঁধাই এর দোকান আছে। ইদানীং গাঁয়ে আসেই না। প্রেসিডেন্ট সাহেব বিছানায় পড়ার পর আসা যাওয়া বেড়েছে। বাপের সম্পত্তি হাতাবার সুযোগ কেউ ছাড়ে না। আতর মুখ ঘোরাল, পথে দাঁড়িয়ে তো আর জবাব দেওয়া যায় না। সময়ও নেই।

ঠিক কথা। সময় আমারও নেই। অবশ্য এক কাজ করতে পারো। আমার ক্যারিয়ারে চেপে বসো। পথাটাও কমে যাবে, কথাটাও শেষ হবে।

আমি কারও বোঝা হতে চাই না।

বোঝা মনে করলেই বোঝা। উঠে এসো, অসম্মান হবে না।

পাঁচজনে দেখলে কুগল্প রটবে।

দ্যাখো বাবা, কে কি বলল তাতে আমি থোড়াই কেয়ার করি। কারও খাই না পরি? অবশ্য নিজেরটা তুমি ভাবতে পারো।

গল্পে তো ডুবে আছি, আর কত গল্প লাগবে শরীরে! রাস্তাটাও কম নয়। আতর উঠে বসল ক্যারিয়ারে। প্যাডেল ঘুরিয়ে টাল সামলে প্রশ্ন করল, আমার নামটা জানো?

জানি।

অবশ্য বিয়ের পর যখন তুমি গাঁয়ে এলে তখন থেকেই আমি কলকাতায়।

কি প্রশ্ন ছিল? সিটের পেছনে দুটো গোল রিঙে আঙুল শক্ত করে বসেছিল আতর। ভয় হচ্ছিল শাড়ি না জড়িয়ে যায় সাইকেলের চাকায়।

বাপ কি তোমার কাছে যেত?

বুকের ভেতর ছ্যাঁকা লাগল আতরের। মোল্লা সাহেবের সুপক্ক মুখখানা মনে পড়ল।

উত্তরটা চাই। অবশ্য দিতে ইচ্ছে করলে।

তিনি দেখা করতেন। কথাটা বলামাত্র শরীরের সেই বিশেষ গন্ধটা নাকে লাগল আতরের।

ঠিক কীরকম সম্পর্ক ছিল?

উনি গল্প করতে ভালোবাসতেন। সামনে বসা লোকটা কি গন্ধটা টের পাচ্ছে?

কী গল্প? যেন স্পষ্ট নাক টানল লোকটা। মুখ ফিরিয়ে দু-পাশের গাছ দেখল।

এই সেই। কথাটা বলে যেন প্রাণপণে নিজের রোমকূপ ঢাকতে চেষ্টা করল আতর।

আর কিছু?

না। এবার যেন গন্ধটা কমছে। নিশ্বাস সরল হয়ে এল আতরের।

বাদলার রাত্রে কি তোমার ঘরে ঢুকেছিল?

না।

অ। তা সবাই বলছে তোমার জন্যেই তার শরীর পড়েছে!

পিতৃতুল্য লোকের সম্পর্কে কুকথা বলতে নেই।

পিতৃতুল্য?

নয়তো কি? আমার বয়স আর তার বয়স?

কথা বলতে-বলতে আতরের চোখ এড়াল না পথচারীদের দিকে। সবাই হাঁ হয়ে দেখছে।

তুমি যাই বলো, আমার বাপের মেয়েছেলে দোষ ছিল। যদি তোমাকে বিয়ে করত–।

আমি করতাম না।

কেন? গ্রামের প্রেসিডেন্ট। চোলাই ছাড়াই ভালো চলে।

বুড়ো-হাবড়াকে মন দেব এমন ছাতাধরা মন নাকি আমার?

ও। কিছুক্ষণ চুপচাপ চালানোর পর আবার প্রশ্ন, তাহলে যা শুনেছি তা সত্য নয়?

শহরের মানুষেরা শুনেছিলাম বুদ্ধিমান হয়।

হুঁ। বাসের রাস্তা এসে গেছে। তা থানায় কেন?

পেটের ধান্দায়।বলে নেমে পড়ল আতর। তাকে নামতে দেখে লোকটাও। আতর চারপাশে তাকাল। বাসের জন্যে অনেকেই দাঁড়িয়ে। তাদের গাঁয়েরই কেউ-কেউ। আর একটা গল্প জিভে জিভে জন্ম নিচ্ছে। নিক। সে হেসে বলল, আবার কেন, বললামই তো, মোল্লা সাহেব খুব ভালোমানুষ ছিলেন।

ছিলেন? বাপ কিন্তু এখনও মরেনি। শোনা কথা যাচাই করে নিচ্ছিলাম। তুমি কিছু মনে করো না। পেটের ধান্দায় থানায় কেন?

তোমার বাপেরও কিছু ছিল না, তোমারও না। বলতে গিয়ে থমকে গেল আতর। গাঁয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও কর্তব্যটা করেছে লোকটা? এতগুলো উনুন জ্বলে কিন্তু দারোগাবাবুর সঙ্গে তো লড়াই করতে যায়নি। তার ছেলের মুখের প্রশ্নের জবাব দেবে কেন সে?

তবে নোকটার বোধবুদ্ধি আছে। জবাব না পেয়ে হাসল। বলল, তোমার হিম্মত আছে। খুব। ভালো। তিনটে নাগাদ ফিরব। যদি আসো তো ক্যারিয়ারে চাপতে পারো। বাস দেখা যাচ্ছিল। আতর উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গেল।

ইন্দুদের দলে নয়জন। প্রায় সমবয়সি সবাই আর একটু বাড়লেই তো ওপাশের উনুনের কাজে লেগে যেতে হয়। পুকুরের উলটোদিকে ওই নয়জন উনুন সাজাচ্ছিল। খেলার উনুন। তিন। পাথরের খাঁজে কল্পিত আগুন গুঁজে এই খেলা শুরু হয়। ঠিক যেমন বড়রা করে তেমন করেই খেলা ওদের। খেলতে-খেলতে ব্যাপারটা প্রায় নিখুঁত হয়ে এসেছে। পাঁচ থেকে নয়ের মেয়েগুলোর লিকলিকে শরীর, ছেঁড়া জামা আর উদোম গায়ের ইজের পরা ছেলের দল সেই খেলায় অংশ নেয়। নকল উনুনে কল্পিত আগুন জ্বলে, পাতার হাঁড়িতে স্বপ্নের রস ফোটে। সেই পাতা পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হয় যত্ন করে। নিয়মের কোথাও ভুল নেই। অনেক দূরের সত্যিকারের উনুনগুলোর দিকে পেছন ফিরে এরা নাক টানে, আঃ কি বাস, না রে! তারপর দিনের শেষে যেযার হাঁড়ি নিয়ে শহরে চুল্লু বিক্রি করতে যাওয়ার নাম করে যখন ঘরে ফেরে। তখনই খেলা শেষ। কিছুদিন হল এই খেলায় কর্ণধার হল ইন্দু। বাকিরা বোধহয় দেখেছে ওর মায়ের প্রতাপ কীভাবে তাদের বাপকাকারা মেনে নিচ্ছে। হয়তো সেইটেই কাজ করছে ইন্দুর নেতৃত্ব মানতে।

নয়জনের দলটা জড়ো হতেই ইন্দু গালে হাত রাখল, সব্বোনাশ হয়েছে!

কচি মুখগুলো অবাক হল, কী হয়েছে রে?

মা গেছে থানায়। হারু সেপাই বলে গেছে উনুন না জ্বালতে। ইন্দু জানাল।

জ্বললে কি হবে? সবচেয়ে যে কচি তার প্রশ্ন।

জ্বাললে কি হয় জানো না? মাঝে-মাঝে ওদিকে যখন পুলিশ হামলা করে তখন কি হয় দ্যাখো না? ইন্দু ঝাঁঝিয়ে উঠল।

বড়সড় একজন বিজ্ঞের মতো ঘাড় নাড়ল, ও দ্যাখেনি। শেষবার হয়েছিল এক বছর আগে। ও তখন আসত না।

ইন্দু বলল, এলে হাঁড়ি ভাঙে, সব রস পুকুরে ঢেলে দেয়, মেয়েছেলের ওপর অত্যাচার করে। যাকে পায় তাকেই কোমরে দড়ি বেঁধে মারতে-মারতে নিয়ে যায়।

তাহলে কি হবে? আর একজনের উদ্বেগ।

মা গেছে থানায়। আমার মা তো কখনও হারে না।

কিছুক্ষণ গজর-গজর হওয়ার পর নতুন খেলাটা জন্ম নিল। নজনের মধ্যে চারজন হয়ে গেল থানার দারাগাবাবু, হারু সেপাই এবং দুই বন্দুকধারী। বাকি পাঁচজন যখন উনুন জ্বালবে রস ফোঁটাবে তখন পুলিশরা ছুটে আসবে রে-রে করে। উনুন ভাঙবে, হাঁড়ি ফাটাবে, রস ফেলবে জলে। শোনামাত্র উত্তেজনা বাড়ল শীর্ণ শরীরগুলোতে। বৈচিত্র্যে কার না আনন্দ হয়। চারজন চলে গেল পুকুরের ওপাশে ঝোঁপের আড়ালে। পাঁচজনে যখন রস ফোঁটাতে আড়চোখে সেদিকে তাকাচ্ছে তখনই হইহই করে ছুটে এল তারা। গাছের ডাল ভেঙে লাঠি বানিয়ে সেগুলো ঘোরাতে-ঘোরাতে মুখে চিৎকার ছোটাল। খুশিমুখে এই পাঁচজন অমনি সরে দাঁড়াল। যাত্রা দেখার মতো ওরা ভাঙচুর হওয়া দেখল। ইন্দু চেঁচিয়ে উঠল, এই দারোগা, তুই হাসছিস কেন? ঢ্যাঙা ছেলেটা মাথা নাড়ল, দারোগা হাসে না? সেবার দারোগাবাবু এসেছিল তোদের বাড়িতে, আমি হাসতে দেখেছি।

কথাটা শোনামাত্র মনে পড়ল দৃশ্যটা। মাকে জেরা করতে-করতে দারোগাবাবু খুব হেসেছিল। চেয়ে নিয়ে এক গ্লাস জল খেয়েছিল। কিন্তু তবু ঠিকঠাক হচ্ছে না। খেলাটা কিছুতেই জমছে না।

আতরকে দেখে দারোগাবাবুর মুখে কোনও ভাবান্তর হল না। ঘরে দুটো সেপাই আর একটা গুফো লোক দাঁড়িয়েছিল। আতর যে ঘরে ঢুকেছে তা তিনজোড়া চোখের ঘুরুনিতে বোঝা গেলেও দারোগাবাবুর কোনও বিকার হল না। শেষপর্যন্ত বাজখাঁই গলায় বিরক্তি ঝরল, কি চাই? এরা সব হুটহাট করে ঘরে ঢোকে কি করে? অ্যাই সেপাই, সেপাই? থানায় ঢোকার আগে তিরিশ। পয়সার পানে ঠোঁট লাল করেছিল আতর। দারোগার কথায় সেই লালে মোচড়। বাঁ হাত কোমরে রেখে চোখ ছোট করল সে, কথা ছিল!

কি কথা?

পাঁচজনের সামনে বলতে বললে বলতে পারি!

দারোগা চট করে গুফো লোকটাকে দেখে নিল, আপনারা একটু বাইরে যান তো ভাই। ইনফর্মার! বুঝতেই পারছেন। যাও, এঁকে নিয়ে পাঁচ মিনিট পরে এসো। শেষের নির্দেশ সেপাইদুটোকে। ঘর ফাঁকা হলে দারোগার গলায় বিরক্তি ঝরল, কি মতলব?

চেয়ারে বসার খুব লোভ হচ্ছিল আতরের। কিন্তু পায়ে কোথায় যে আটকায়, সে হাসল, আমরা তো সব ঠিকঠাক দিচ্ছি তবে আবার এ ঝামেলা কেন?

কীসের ঝামেলা?

আজ আবার হামলা হবে বলে শুনলাম!

কে বলেছে? দারোগার চোখ ছোট হয়ে এল।

মাথা নাড়ল আতর, খবর তো হাওয়ায় ভাসে। জামাই আদরে আপনাকে পুষছে গাঁয়ের লোক, তারপরেও? হারু সেপাই-এর নাম বলে ভবিষ্যতে খবর পাওয়ার পথটা বন্ধ করার মতো বোকা সে নয়।

পুষছে–কি কথার ছিরি! ভদ্রভাবে কথা বলতে পারো না?

ছোটলোকের মুখে বড়লোকের কথা কি করে আসবে?

বড্ড বাজে বকো। প্রেসিডেন্টকে কি করেছিলে?

আমরা কি কিছু করি? তেনারা নিজেরাই নিজেদের করে থাকেন।

বড্ড ঝোলাচ্ছ আমাকে। শালা রেলের ক্লার্কের সঙ্গে মাজাকি করতে পারো, আর আমার জন্যে দরজা খুলতে তোমার বুকে বাত ধরে যায়। লোকে বলছে তোমার ছায়ায় গেলে নাকি দুর্ঘটনা ঘটবে, তাই নাকি?

তাহলে আর আসবেন কেন? তবে কারও দুর্ঘটনা ঘটার আগে আমার শরীরে চাঁপার গন্ধ বের হয় এমনি-এমনি। দেখুন-দেখুন।

টেবিল ঘুরে কনুইটা সে নিয়ে গেল দারোগার নাকের সামনে। পুলকিত দারোগা নাক টেনে বলল, আঃ কি মেখেছ? আতর?

না, রক্তের গন্ধ। আজ হামলাটা বন্ধ করুন।

তখনও বোধহয় গন্ধটা শরীরে, দারোগা ঘনঘন মাথা নাড়ল, দূর, কে তোমাদের গুল মেরেছে! পুলিশ নিয়ে গাঁয়ে ঢোকার কোনও প্ল্যানই নেই। আজ রাত্রে আমি যাব একা-একা, মেয়েটাকে সরিয়ে রেখো। কি মেখেছ গো?

মদ খাওয়া ঢোল মুখের দিকে তাকিয়ে আতর বুঝতে পারছিল না লোকটা সত্যি বলছে কিনা। হারু সেপাই কি তামাশা করতে অদূর হেঁটে গেল? সে যে সন্দেহ করছে তা দারোগার নজরে পড়ল, রাতের উত্তরটা পেলাম না।

হাসল আতর, বেশ তো, আপনার বাচ্চাটাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। আমার মেয়ের সঙ্গে তখন খেলা করবে।

অ্যাঁ! চোখ বড় হয়ে গেল দারোগার, গেট আউট। গেট আউট। আমার ফ্যামিলি নিয়ে ইয়ার্কি!

আতর বাইরে বেরিয়ে এল। গুফো লোকটা তার দিকে তাকাচ্ছে। সে থানার বাইরে এসেই দেখল পাশের চায়ের দোকান থেকে সুড়ুৎ করে চলে এল হারু সেপাই, কি বলল শালা? ঠান্ডা করতে পারলে?করে লাভ নেই। কাল ওর বাবারা এসেছিল। টাকা দাও বলে খবরটা দিয়েছি। নাম বলনি তো?

না। বাবারা মানে?

ওপরতলার অফিসার। দারোগার কিছু করার নেই। গাঁয়ে গিয়ে উনুন নেভাও।

বাস ধরার আগেই কেবলরামের সঙ্গে দেখা হল। এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় চুল্লুর সাপ্লাইয়ের ডানহাত। কেবলরাম অনুযোগ করল আতরের গাঁয়ের মাল খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মালিক বলছে এইরকম চললে বাজার নষ্ট হবে। কিছুক্ষণ বকর-বকর করতে হল লোকটার সঙ্গে। কেবলরাম আরও খবর দিল, কয়েকটা চুল্লুর আড়তে নাকি এ সপ্তাহে রেইড হবে। ব্যাপারটা সামলানো যাচ্ছে না।

অতএব কিছু করার নেই। দু-ঘণ্টা দাঁড়াবার পর বাসে উঠে আতর ঠিক করল গাঁয়ে গিয়ে জানান দেবে যা হয়েছে, এবার উনুন নেভাও। দিনদুয়েক হাত-পা গুটিয়ে বসা যাক। বাস থেকে নামতেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। সে দাঁড়িয়ে আছে সাইকেলে ঠেস দিয়ে। ওকে দেখামাত্র এগিয়ে এল, এক ঘণ্টা আগেই চলে এসেছ। আমার সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না নাকি?

না-না, আমার খুব তাড়া।

ও। চলো তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।

আতর ভাবল ভালোই হল। পায়ে হেঁটে যতটা, তার সিকি সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে সাইকেলে। কিন্তু ওকি, ক্যারিয়ারে মালের বস্তা যে! দৃষ্টি লক্ষ করে সে বলল, ওসব কিনতে হল বাপের সেবার জন্যে। তুমি এই রডে উঠে বসো।

আতর চারপাশে তাকাল। বাস স্টপের দশগন্ডা মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে। সবকটা চোখ এখন ছোবল মারছে। সাহস আছে মানুষটার। সাহসী লোকদের চিরকালই পছন্দ আতরের। অতএব সে রডে চেপে বসল। দু-পাশে দেওয়ালের মতো দুটো সবল হাত হ্যান্ডেল চেপে ধরেছে। সিঁটিয়ে বসতে চেয়েছিল আতর, ধমক খেল, ও ভাবে বসলে পড়ে যাব।

পাঁই-পাঁই করে সাইকেল ছুটল। জনসাধারণ কথা বলার সুযোগটি পর্যন্ত পেল না ওই মুহূর্তে। প্যাডেল ঘোরাতে নাক টানল সে, আঃ, নামকরণ সার্থক! কি মেখেছ?

কিছু মাখিনি। এখন শরীরে শরীরের স্পর্শ হঠাৎ গায়ে কাঁটা ফোটে কেন?

যাঃ, মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি।

ওটা এমনি-এমনি বের হয় শরীর থেকে।

যাঃ!

মন ভালো হলে বের হয়। এবার হাসল আতর।

ব্রেক কষল সে। হ্যান্ডেলের ওপর আচমকা ঝুঁকে পড়তে-পড়তে নিজেকে সামলালো আতর, কি হল?

চোখ ফেরাতেই প্রশ্ন শুনল, এখন তোমার মন ভালো?

কি বলবে আতর। মুখ নামাল। আর সেই সময় গোঁ-গোঁ করতে-করতে তিনটে জিপ ধুলো উড়িয়ে খোয়া পথ অন্ধকার করে ছুটে গেল গাঁয়ের দিকে। পুলিশ।

ছটফটিয়ে উঠল আতর, তাড়াতাড়ি চালান। সর্বনাশ হয়ে গেল! পুলিশের জিপ গেল–হাঁড়ি ভাঙবে, কোমরে দড়ি পরাবে। চোখে অন্ধকার দেখল আতর।

অ। কিন্তু তুমি গিয়ে কি করবে? পুলিশ চলে যাক তারপর গাঁয়ে ফিরো।

না, না। আমি ছাড়া কেউ ওদের সামলাতে পারবে না।

একটা কথা বলি, এসব নোংরা কাজ ছেড়ে দাও।

ছেড়ে দেব? হাঁ হয়ে গেল আতর।

মাথা নাড়ল সে, আমার ওপর ভরসা করতে পারবে?

এই নির্জনে সাইকেলের রডে বসে কেঁপে উঠল আতর। দূরের ধুলোর ঝড়টা এখন মাঠের ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে। সে বলল, পরের কথা পরে, আগে আমি গাঁয়ে ফিরব।

প্যাডেল ঘোরাতে-ঘোরাতে সে নাক টানল, যাচ্ছলে! গন্ধটা নেই, কি করে হল? জবাব দিল না আতর। নিজেকে তখন শাপমুন্যি করছে সে। কেন দেরি করল অকারণ? কেবলরামের সঙ্গে কথা শেষ করে দু-দুটো ভিড় বাস কেন ছেড়ে দিল? কেন সময়টাকে তিনটের কাছাকাছি আনতে চাইছিল? এই সময় সে খেয়ালই করছিল না দুটো হাত হ্যান্ডেল ধরে রেখেও ব্যবধান কমিয়েছে। তার শরীরের অনেকটাই চালকের স্পর্শের মধ্যে। তার চোখ শুধু গাঁয়ের পরিচিত দৃশ্যগুলো খুঁজছিল। এবং তখনই চিৎকার চেঁচামেচি কানে এল যখন সাইকেল ব্রেক কষল। সে লাফিয়ে নামতে গিয়ে দেখল পায়ে ঝিঝি ধরেছে। নিজেকে সামলাবার সময় চালক বলল, আমি কাল অবধি গাঁয়ে আছি। ভেবে দ্যাখো।

নয়জোড়া চোখ ঝোঁপের আড়ালে রোগা শরীর লুকিয়ে দৃশ্যটা দেখল। তিনটে জিপ থেকে পনেরোটি পুলিশ নামল রে-রে শব্দ করে লাঠি উঁচিয়ে। কয়েকজন বন্দুক তুলল। ফটাফট হাঁড়ি ভাঙছে। চিৎকার চেঁচামেচি সমানে চলছে। কেউ-কেউ মাঠের মধ্যে নেমে পড়েছিল পালাবার জন্যে। তাদের টেনেহিঁচড়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সিঁটিয়ে ছিল নয়টি শীর্ণ শরীর। বেধড়ক মার চলছে একতরফা। কয়েকজন পুলিশ যখন নেমে এল পুকুরধারে তখনই ছুটে এল আতরবালা। চিৎকার করে দু-হাত তুলে এলোচুলে আঁচল মাটিতে লুটিয়ে সে যখন দারোগার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন আটজোড়া চোখ বন্ধ হয়ে গেল ভয়ে।

দুই পুকুরের মাঝখানের মাঠ এখন শ্মশান। ভাঙা হাঁড়ি, আধনেভা উনুনের ধোঁয়া আর রসের গন্ধ ছাড়া সেখানে একটি প্রাণের অস্তিত্ব নেই। গাঁয়ের সমস্ত মানুষ বসে আছে রাস্তার পাশে আহতদের ঘিরে। এবারে পুলিশ কারও কোমরে দড়ি পরায়নি। হাতের সুখ করার পর বলে গেছে আবার যদি উনুন জ্বলে তাহলে বাকিটুকু করবে। কোমরে দড়ি বেঁধে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের ছিলও না। যাদের মাথা ফেটেছে, হাত ভেঙেছে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে টেম্পো ডাকতে লোক ছুটেছে বাস স্টপে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর ভিড় বেড়েই চলেছে। উপুড় হয়ে শুয়েছিল আতর। তার শরীর ছেঁড়া শাড়িতে ঢেকে রাখা হয়েছিল। মাঝে-মাঝে কাঁপছে। শরীরটা। কিন্তু নিতম্বের স্ফীতি, পায়ের খোলা গোছের ওপর নজর পড়ছে দর্শকদের। এই সময় সাইকেল চালক এসে দাঁড়াল তার পাশে। পাশে বসে জিজ্ঞাসা করল, কি লাভ হল? বারণ করেছিলাম শুনলে না!

মাটিতে মুখ গুঁজে আতর শরীরের যন্ত্রণা ঢাকতে-ঢাকতে তখন অন্য একটা গন্ধ আবিষ্কারে বিভোর ছিল। পৃথিবীর শরীরের এমন গন্ধ বের হয় তার জানা ছিল না। প্রশ্ন শোনার পর সে দুলে উঠল। এবং তারপর হঠাৎ সে সশব্দে কেঁদে উঠল উপুড় হয়েই। লোকটার হাত তার পিঠে পড়ার পরও কান্নাটাকে সে থামাতে পারছিল না।

যত মানুষ মার খেয়েছিল তত মানুষই হাসপাতালে গেল না। টেম্পো আসার আগেই বেশির ভাগ উঠে গেল নিজের ঘরে। শরীরের যন্ত্রণার চাইতে হাঁড়ি ভাঙার বেদনা এখন বড় হয়ে উঠেছে। এ কেমন বিচার, প্রতি মাসে টাকা নিচ্ছ অথচ মারার সময় সেটা খেয়াল থাকছেনা? কেউ-কেউ বলল, এ দারোগার কর্ম নয়। সে এসেছিল ওপরওয়ালার চাপে বাধ্য হয়ে। তবে আতর যখন। ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন সুযোগটা হাতছাড়া করেনি এই যা। তখন অবশ্য দৃশ্যটা দেখার মতো সময় ছিল না কারও। প্রত্যেকেই জান বাঁচাতে ছুটছিল। তবে নজরে যে একেবারেই আসেনি তা নয়। আতরের শাড়ি ছিঁড়েছে, জামা টুকরো-টুকরো করেছে দারোগা। এখন কেউ বুঝতে পারছে না সে থানায় গিয়ে দারোগাকে কি বোঝাল?

এতগুলো মানুষের পেটে ভাত যায় যে কাজের জন্যে সেটাই যদি বন্ধ হয় শোনামাত্র কেউ কেউ ধমকালো, বন্ধ হতে যাবে কোন দুঃখে? কালবৈশাখী হয় বলে কি কেউ রাস্তায় বের হয় না?

গুলতানির ফাঁকেই আহতরা সরে পড়ছিল। যাদের উপায় নেই নড়নচড়নের তারাই পড়ে মাটিতে। আতরের পাশে মোল্লা সাহেবের ছেলে তখন বসে। মানুষজনের জিভে রস জমছিল। একজন জানতে চাইল, খুব চোট লেগেছে মনে হয় আতরের। অ আতর!

মোল্লা সাহেবের ছেলে বলল, চোট না পেলে কোনও মেয়েছেলে এভাবে শুয়ে থাকে?

তা বাবা, মেয়েছেলের শোওয়ার কি কোনও ভাব আছে? আমি তো আজও ঠাওর করতে পারলাম না। তা তুমি যাবে নাকি ওর সঙ্গে হাসপাতালে?

আপনারা যখন যাবেন না তখন আমাকেই যেতে হবে। আপনাদের বাঁচাতে বোকা মেয়েটা–

মোল্লা সাহেবের ছেলে কথা শেষ না করে টেম্পো দেখে উঠে দাঁড়াতে সবাই নিজেদের চোখ। চেয়ে-চেয়ে দেখল। শুয়ে থাকা মানুষদের তুলে নিয়ে যখন টেম্পো চলে গেল তখন ইন্দু পেছন পেছন ছুটছে।

ইন্দুর কান বাঁচিয়ে গুলতানিটা হচ্ছেনা। সবই শুনতে পাচ্ছে সে। মোল্লা সাহেবের ছেলে আতরের পিঠে হাত রেখেছে, টেম্পোতে উঠেছে সর্বসমক্ষে। কেউ বলল, ওদের নাকি এক। সাইকেলে আসতে দেখা গেছে। দারোগা তো হাতের সুখ মিটিয়ে নিয়েছে। আর সেটা জানার পরেও এত কাণ্ড! সন্ন্যাস রোগে বাপ পড়েছে, ছেলের এবার কি হয় তাই দ্যাখো! কুলকুচি করা জল কেউ মুখে তোলে? অবশ্য একথাও অনেকে স্বীকার করল, আতর যদি তখন ছুটে না যেত তাহলে পুলিশ সবকটাকে সদরে চালান দিত।

মানুষজন যখন যেযার ঘরে ফিরে গেল তখনও ইন্দুমাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। তার খুব রাগ হচ্ছিল মায়ের ওপর। যাওয়ার আগে মা তার সঙ্গে একটাও কথা বলে গেল না। কিন্তু মোল্লা। সাহেবের ছেলের হাতটা চেপে ধরেছিল। কেন? ওকে তো মা চেনেই না। যদিও লোকটা টেম্পোতে উঠে চিষ্কার করে তাকে বলেছিল, খুকি, ভয় পেয়ো না, তোমার মা ওষুধ নিয়ে আজ রাত্রেই ফিরে আসবে, তবু তার রাগটা শরীর জুড়ে ছিল।

মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ইন্দু দেখল দূরে তার আট খেলার সঙ্গী বসে আছে দঙ্গল পাকিয়ে। আট জোড়া চোখ দমবন্ধ করে নাটক দেখছিল এতক্ষণ। ওদের কাউকে তো টেম্পো নিয়ে যায়নি। হাসপাতালে।

আজ রাত্রে যদি মা না ফেরে তাহলে সে কার কাছে থাকবে? কি দরকার ছিল মায়ের ওভাবে ছুটে যাওয়ার?

আটজনের একজন নড়েচড়ে উঠে দাঁড়াল। এখন সব শান্ত। শুধু বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে রসের গন্ধে। পুকুরে লুকিয়ে রাখা হাঁড়িগুলো নিয়ে গেছে গ্রামের লোক পুলিশ চলে যাওয়ার পর। উনুনের আগুন নিভিয়ে দেওয়ার পরও ধোঁয়া বের হচ্ছে। হঠাৎ সেই শিশু তার ভাঙা ডালের লাঠি আকাশে উঁচিয়ে ছুটে গেল দুই পুকুরের মাঝখানে। তার মুখে জিপের ইঞ্জিনের শব্দ। কাছাকাছি পৌঁছে সেটা সরু হুঙ্কারে পরিণত হল। এবং সেই সঙ্গে এলোপাথাড়ি আঘাত করল কয়েকটা ভাঙা হাঁড়িতে, যেমন পুলিশরা করেছিল।

দৃশ্যটা দেখামাত্র আর একজন উদ্বুদ্ধ হল। এবং তারপরেই দেখা গেল পুরো দলটা পুলিশ হয়ে ভাঙা হাঁড়িকে আরও টুকরো করছে। কিন্তু এ খেলায় বেশি মজা নেই। আটজনের দলটা দুটো ভাগে আলাদা হল। চারজন চলে এল গাছের এপাশে লাঠি হাতে। তারা পুলিশ। ঢ্যাঙা ছেলেটি নেতা। অন্য চারজন ধোঁয়া বের হওয়া উনুনে ভাঙা হাঁড়ি চাপাল। এই প্রথম সত্যি-সত্যি মনে। হচ্ছে খেলাটা। হাঁড়িতে তখনও রস গড়াননা আছে। চোখেমুখে ধোঁয়া লাগায় খেলার চেহারাটা আরও আন্তরিক হল। এই সময় গাছের আড়াল থেকে জিপের ইঞ্জিনের আওয়াজ উঠল। তারপরই চারজন লাঠি আকাশে ঘুরিয়ে লাফিয়ে পড়ল, মার শালা, ধর শালা চিৎকারে। তাণ্ডবটা শুরু হওয়া মাত্র দেখা গেল মাঠ পেরিয়ে ইন্দু ছুটে আসছে। তার গলায় কাকুতিমিনতি, ভেঙে দিও না, আমাদের পেটের ভাত মেরো না, দোহাই তোমাদের।

ঢ্যাঙা ছেলেটা এই কথা শুনে বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সেইসঙ্গে অন্যরাও। ইন্দু চিৎকার করে উঠল, এই গাধা! পুলিশ তখন অমন করে তাকিয়েছিল?

লজ্জায় জিভ কাটল ঢ্যাঙা,বলল, আবার বল।

ইন্দু আবার শব্দগুলো ছুঁড়ে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল ঢ্যাঙার ওপরে। ওপাশে সঙ্গীরা হাঁড়ি ভাঙছে কিংবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। ঢ্যাঙাকে ইন্দু বলল, আমার চুলের মুঠি ধর। গালাগাল দে।

ঢ্যাঙা খপ করে ইন্দুর ঝুঁটি ধরতে গিয়ে একটা পাশ ধরে রাগী ভঙ্গিতে বলতে পারল, অ্যাই শালা!

তারপর দু-তিনবার ঝাঁকাল। এতেই হাড়জিরজিরে শরীরটায় প্রবল যন্ত্রণায় সৃষ্টি হল। তবু ইন্দু মায়ের ভঙ্গি তুলল সারা শরীরে। ছটফটিয়ে সে চিৎকার করছিল বাধা দেওয়রা জন্যে। ঢ্যাঙা। ছেলেটি আবার দিশেহারা। ইন্দু সেই অবস্থায় চাপা স্বরে বলল, আমার বুকের কাছটা ছিঁড়ে দে না। সচকিত ঢ্যাঙা দারোগাকে নকল করল, করে থেমে গেল। ফুসে উঠে ইন্দু তার হাড়সর্বস্ব পাঁজরে ঢ্যাঙার হাত নিয়ে এসে চিৎকার করে উঠল, খামচে ধর, দারোগাকে দেখিসনি? রক্ত বের করে দে!

হঠাৎ দু-হাতে মুখ ঢেকে ঢ্যাঙা ছেলেটি ডুকরে কেঁদে উঠল। তার মাথা দু-পাশেদুলছিল, না, আমি পারব না, আমি পারব না।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments