Saturday, April 20, 2024
Homeবাণী-কথাআজ পুষ্পিতার মন খারাপ - আনিসুল হক

আজ পুষ্পিতার মন খারাপ – আনিসুল হক

'আজ পুষ্পিতার মন খারাপ' আনিসুল হক

বাইরে বসন্ত। এই ঢাকা নগরীতে কংক্রিটের জঞ্জালের ফাঁকফোকরে যে কটা গাছ আজও আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নতুন সবুজ পাতা। মাঝেমধ্যে চৈতি হাওয়াও বইছে, ঝাপটে দিচ্ছে জানালার কপাট। আকাশ কী ঘন নীল! গরমটাও আজ খানিক কম। কাল রাতে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে।

ঢাকার বাতাসে আজ ধূলি-ধোঁয়াও বেশ কম।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে পুষ্পিতা। সামনে একটা কী যেন গাছ। দোতলা ছাড়িয়ে তেতলা পর্যন্ত উঠে এসেছে। হাত বাড়ালে তার পাতা ধরা যায়। মনে হয়, মসলার গাছ। পাতাটা তেজপাতার মতাে। তবে তেজপাতা নয়। দারুচিনি গাছ নাকি এটা! নাহ!

পুষ্পিতারা এ বাসায় এতদিন ধরে আছে, এই গাছটাও, অথচ পুষ্পিতা এ গাছের নাম জানে না। তবু গাছটা পুষ্পিতার খুব ভালাে বন্ধু। তার নিকটতম পড়শি।

একটা পাতায় হাত বােলাতে বােলাতে পুষ্পিতা বলল, আজ আমার মনটা খারাপ। পাতা বলল, কেন পুষ্পিতা, তােমার মন খারাপ কেন?

পুষ্পিতা মৃদুস্বরে বলল, ক্রনিয়ের জন্য মন খারাপ।

‘ক্রনিয়ে! ক্রনিয়ে কে?

হানসি ক্রনিয়ে! দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক!

তার জন্য মন খারাপ তােমার! কেন, কী হয়েছে তার?

পাতা! তুমি যে কী না! এখনাে বলছ কী হয়েছে। কী হয়নি তাই বলাে! সে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। দেখতে মনে হয়, পাথরের তৈরি মানুষ। কঠিন। সে দেখতে যেমন, খেলাতেও তেমন । মনে হতাে, প্রতিজ্ঞা দিয়ে তৈরি এক খেলােয়াড়। কেন, মনে নেই তোমার গত বিশ্বকাপের দক্ষিণ আফ্রিকার দলটিকে? ওদের খেলা দেখে মনে হতাে, পরাজয় কী ওরা জানে না। মাঠে যেন নেমেছে ১১টা অতিমানব। হয়তাে ভিনগ্রহ থেকে আসা! অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ওদের সেমিফাইনাল খেলাটার আগে মনেও হয়নি ওরা কোনাে ভুল করতে পারে!

আচ্ছা। বুঝলাম। তা তাদের অধিনায়কের কী হয়েছে?

সর্বনাশ হয়ে গেছে। ও পাতা, তুমি কি ওই গানটা শুনেছ?— নদী যদি হয় রে ভরাট কানায় কানায়, হয়ে গেলে শূন্য হঠাৎ তাকে কি মানায়?-একটা লােক এত ভালাে খেলে। নিজের খেলােয়াড়ি প্রতিভা, যােগ্যতা আর পারফরমেন্স দিয়ে সে একটু একটু করে ভরে তুলেছে তার ক্যারিয়ারের নদীটি, দিনের পর দিন—সেই শৈশবে যেদিন সে প্রথম ব্যাট ধরেছিল, সেদিন থেকে; সে স্কুলটিমে ভালাে করেছে, ক্লাব টিমে ভালাে করেছে, জাতীয় দলে ভালাে করেছে, একদিন জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছে, তারপর একেকটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে সে ভালাে করেছে—সব মিলে ভরে উঠেছে তার নদী। তারপর একদিন সকাল বেলা সে উঠে দেখল-তার নদীটি শূন্য হয়ে গেছে! এখন সেটা দেখতে কেমন লাগছে বলাে!

কিভাবে তার নদী শূন্য হয়ে গেল?

আর কীভাবে! বাজিকরদের কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে। খেলার ফল নিয়ে কিছু বাজিকর কোটি কোটি টাকা বাজি ধরে! তাদের বাজির পক্ষে তারা চায় খেলার রেজাল্ট আনতে। এ জন্য তারা খেলােয়াড়দের অনেক টাকা ঘুষ সাধে! কখনাে এরকম হতে পারে, ঘুষ খেয়ে খেলােয়াড়রা খেলা ছেড়ে দিল। রেজাল্ট অন্যরকম হয়ে গেল।

হায় হায়। তাহলে তাে সর্বনাশ। খেলার মূল সৌন্দর্যই তাে নষ্ট হয়ে গেল।

তাই তাে বলছি। কোটি কোটি লােক খেলা দেখে। খেলার জয়- পরাজয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। অথচ এটা আগে থেকেই ফিক্সড হয়ে আছে। কোটি কোটি মানুষকে বুড়াে আঙুল দেখানাে হলাে না তাতে?

ই, হলাে। এটা অনেক বড়াে ক্রাইম।

‘ক্রনিয়ের বিরুদ্ধে সেই অভিযােগ উঠেছে। ক্রনিয়ে ১০-১৫ হাজার ডলার নেয়ার কথা স্বীকারও করেছে নাকি। তাকে দল থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে। মনে কর, তার জন্য ব্যাপারটা কী দাঁড়াল। মাত্র কদিন আগে সে ছিল মহানায়ক। আর এখন রাস্তার ফকিরও তার চেয়ে সুখী। তার বউ- বাচ্চা, বাবা-মার সামনে সে মুখ দেখাবে কী করে?

হুম। বড়ই দুঃখের ব্যাপার। কাজেই তােমার কেন মন খারাপ আমি বুঝতে পারছি।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments