Thursday, April 25, 2024
Homeইসলামনবীদের কাহিনীসুলায়মান (আঃ) ও গরিব চাষির গল্প

সুলায়মান (আঃ) ও গরিব চাষির গল্প

সুলায়মান (আঃ) ও গরিব চাষির গল্প

হযরত দাউদ (আ)-এর যুগের কথা। সেই সময় দামওয়ান নামক গ্রামে বাস করত এক গরিব চাষি। সে ছিল বড়ই অভাবী ও দীনহীন। কোন রকমে খেটেখুটে তার সংসার চলত। অভাবে অনটনে বেচারা চাষির জীবন ছিল দুর্বিষহ একদা চাষির ঘরে খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ক্ষুধার জ্বালায় সে কাতর হয়ে পড়ল। তাই সে খাবারের খোঁজে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তবে কোথাও এতটুকু খাবার জুটল না।।

এমন সময় হঠাৎ তার নজর পড়ল একটা লোকের ওপর। দূরে এক গাছের নিচে বসে লোকটা খুব মজা করে খাবার খাচ্ছিল। গরিব চাষি ভাবল লোকটার কাছে গিয়ে সে তার ক্ষুধার কথা বলবে। হয়তো তার দয়া হলেও হতে পারে।

তাই লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। তারপর লোকটাকে কাতরস্বরে বলল, ভাই! আমি খুব ক্ষুধার্ত। দয়া করে আমাকে একটু খাবার দেবেন কি?

লোকটি ছিল বড়ই চালাক। সে চালাকি করে বলল, দেখ ভাই! তোমাকে দেয়ার মতো তেমন কোনো খাবার আমার কাছে নেই। তবে একটা সিদ্ধ ডিম আছে। ডিমটা তোমাকে দিতে পারি। তবে এর জন্য আমার একটা শর্ত আছে। এক বছর পর ডিমের দাম তোমাকে সুদে-আসলে পরিশোধ করে দিতে হবে। শর্তে রাজি থাকলে এই ডিম আমি তোমাকে দিতে পারি। বেচারা গরিব চাষি ছিল নিরুপায়। তীব্র ক্ষুধার জ্বালায় তার পেট যেন পুড়ে যাচ্ছিল। চাষি যে আর সইতে পারছিল না। তাই সে মনে মনে ভাবল আগে তো ক্ষিধের জ্বালা মিটাই। এক বছর তো অনেক পরের ব্যাপার। একটা সিদ্ধ ডিমের দাম আর কত হবে? এই অল্প পরিমাণ অর্থ এরি মধ্যে জোগাড় হয়ে যাবে। তাই চাষি লোকটার শর্তে রাজি হয়ে গেল।

এক বছর পরের ঘটনা। ডিমওয়ালা সময়মত গিয়ে হাজির হলো গরিব চাষির বাড়িতে। সে গাঁয়ের সব লোকজনকে ডেকে এনে জড়ো করল। লোকটি সবাইকে বলল, দেখুন ভাইসব! এই চাষি আমার কাছ থেকে একটা ডিম নিয়ে খেয়েছে। শর্ত ছিল এক বছর পর সুদে-আসলে ডিমের দাম পরিশোধ করবে। আমি আজ আমার সেই পাওনা বুঝে নিতে এসেছি। দেখুন ভাইসব! লোকটা যদি সেদিন ডিম না খেত তাহলে নিশ্চয়ই ডিম থেকে একটা মুরগির বাচ্চা হতো। সেই মুরগির বাচ্চা ছ’মাস পর বিশটি ডিম দিত।

সেই বিশটি ডিম হতে আরও বিশটি বাচ্চা হতো। সেই বাচ্চাগুলোর প্রতিটি বিশটি করে ডিম দিত। সেই ডিম থেকেও আবার বাচ্চা হতো। তাহলে কম করে হলেও বছরে আমি চারশো চল্লিশটি মুরগির দাম পেতাম। আজ অন্তত চারশ চল্লিশটি মুরগির দাম চাষিকে শোধ করতে হবে। লোকটার কথা শুনে গরিব চাষির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সে তো হতবাক। কিন্তু লোকটা যে নাছোড়বান্দা। তাই চাষি কেঁদে কেঁদে লোকটার কাছে মিনতি করল এবং বলল, ভাই, আমি গরিব চাষি। আমায় মাফ করে দিন। কিন্তু চতুর লোকটি চাষির কোনো কথাই শুনল না। সে সোজা গিয়ে হযরত দাউদ (আ)-এর দরবারে নালিশ করল। তাই বিচারের জন্য চাষিকে বাদশাহর দরবারে ডাকা হলো। চাষি তার কথা বলল এবং ডিমের মূল্য সুদে-আসলে পরিশোধের কথাও অকপটে স্বীকার করল।

চাষির স্বীকারোক্তি শুনে দাউদ (আ) সহজেই তাঁর রায় ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, যেহেতু লোকটার শর্তে তুমি রাজি ছিলে, তাহলে ডিমের মূল্য তোমাকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। তোমার যেহেতু নগদ অর্থ নেই, তাই এখন থেকে তোমার বাড়িঘর, জমি-জিরাত ইত্যাদির মালিক হবে ডিমওয়ালা।

দাউদ (আ)-এর রায় শুনে গরিব চাষির দম বন্ধ হবার উপক্রম হলো। কী আর করা? বাদশাহর আদেশ। তাই জায়গা জমি, বাড়িঘর লোকটাকে বুঝিয়ে দিয়ে চাষি হয়ে পড়ল নিঃস্ব। তারপর বেশ কয়েকদিন পরের ঘটনা। হযরত সুলায়মান (আ) এক পথ ধরে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথের ধারে দেখলেন গরিব চাষি ক্ষুধার জ্বালায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। চাষির করুণ অবস্থা দেখে হযরত সুলায়মান (আ)-এর খুব মায়া হলো। তিনি ঘোড়া থেকে নেমে চাষির সেবাযত্ন করে তাকে সুস্থ করে তুললেন। সুস্থ হবার পর চাষির দুঃখের কাহিনী তিনি মন দিয়ে শুনলেন।

ডিমওয়ালার চালাকির ঘটনা শুনে হযরত সুলায়মান (আ) বিস্মিত হলেন। তিনি মনে করলেন এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার। ডিমওয়ালার প্রতারণা থেকে চাষিকে বাঁচাতে তিনি মনস্থির করলেন। তাই চট-জলদি তিনি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। চাষিকে বললেন, এক কাজ কর তুমি। কাল সকালে এক ঝুড়ি সিদ্ধ ধান নিয়ে তুমি দরবারে যাবে। সেখানে গিয়ে দরবারের চারপাশে ধানগুলো ছড়িয়ে দেবে আর বলবে, এই ধানগুলো থেকে ধান গাছ জন্মাবে। তুমি যদি মনের জোর ও সাহস নিয়ে এ কাজটি করতে পার, তাহলে তুমি তোমার জমি-জিরাত, বাড়িঘর সবই ফেরত পাবে।

গরিব চাষি হযরত সুলায়মান (আ)-এর কথামত কাজ করল। পরদিন সে সিদ্ধ ধান নিয়ে দরবারে গেল এবং এগুলো সেখানে ছড়াতে লাগল। কেউ জিজ্ঞেস করতেই চাষি অকপটে বলল, এ ধান থেকে গাছ জন্মাবে।

চাষির কাণ্ড দেখে দাউদ (আ) অবাক হলেন। তিনি লোকটার পাগলামি দেখে দুঃখবোধ করলেন। হযরত দাউদ (আ) বললেন, সিদ্ধ ধান থেকে গাছ জন্মানোর কথা কেউ কি বিশ্বাস করবে, না এমন ঘটনা কোনদিন ঘটেছে। এ কথা শুনে হযরত সুলায়মান (আ) উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, সিদ্ধ ধান থেকে যদি ধান গাছ না জন্মায়, তাহলে সিদ্ধ ডিম থেকেও বাচ্চা জন্মাতে পারে না। একটি সিদ্ধ ডিম খেয়ে চারশ চল্লিশটি মুরগির বাচ্চার দাম পরিশোধ করতে হয়েছে গরিব চাষিকে। এর ফলে এক বছর তাকে ভিখেরীর মতো পথে পথে ঘুরতে হয়েছে। হারাতে হয়েছে বাড়িঘর, জমি-জিরাত। তাই আমি এ ঘটনার পুনরায় বিচার চাই।

হযরত সুলায়মান (আ)-এর কথা শুনে দরবারের সবাই হতবাক হয়ে গেল। সবাই তার বুদ্ধির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো। এরপর হযরত দাউদ (আ)। ডিমওয়ালাকে দরবারে ডেকে পাঠলেন। তিনি চাষির জায়গা জমি ও বাড়িঘর ফেরত দেয়ার জন্যে লোকটার ওপর আদেশ জারি করলেন। বাড়িঘর জমি-জিরাত ফিরে পেয়ে গরিব চাষি যারপরনাই খুশি হলো। এদিকে হযরত সুলায়মান (আ)-এর ন্যায়বিচারের খবর মুহূর্তেই সবখানে ছড়িয়ে পড়ল।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments