নিয়ম মানা – রম্য গল্প

'নিয়ম মানা' - রম্য গল্প

এক গ্রামীণ গৃহস্থ লোক ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে এনেছে। কিন্তু বউকে তার শাশুড়ি ঠিকমতো খেতে দেয় না। সামান্য একটু ভাত আর একটু তরকারি পাতে দিয়ে বলে, ‘বেশি করে পানি খাও, তাহলেই ক্ষুধা মরবে।

এভাবে কিছু দিন চলে। তারপর শাশুড়ি তার কৌশল একটু পাল্টায়। বউকে বলেঃ খাবার আগেই এক মগ পানি খেয়ে নিও। তাহলে ক্ষিধার কষ্টটা আরও কম হবে। এইটা হবে তোমার জন্য নিয়ম। খাবার আগে এই নিয়ম মেনে তুমি খাবে।

তো, খাওয়ার সময় হলে, শাশুড়ি বউকে বলে : যাও বউ, গোছল-আছল কইরা তোমার নিয়ম পালন কইরা আস। আমি তোমার ভাত বাড়ি।’

বউ গোসল সেরে তারপর নিয়ম পালন করে। তারপর খেতে বসে। শাশুড়ি দু’মুঠো ভাত বউয়ের পাতে বেড়ে দিয়ে বলে : দেখ, বেশি হয়ে গেল তো!’

বউ মুখবুজে ওইটুকু ভাত খেয়ে হাতমুখ ধুয়ে উঠে বলে : ‘শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। শাশুড়ি খুশি হয়। শাশুড়ি খুব ধর্মের কথা বলে।

একদিন বউয়ের বাবা আসে বেয়াই বাড়িতে। বেয়াইকে খেতে দিয়ে শাশুড়ি বউকে বলে : ‘বউমা, তোমার বাবার খাওয়া হয়ে গেল, নিয়ম পালন করে এসে তুমি খাও।’

‘নিয়ম পালন’ কথাটা শুনে বউয়ের বাপের মনে খটকা লাগে। তার মেয়ের শরীরও দেখা যায় বেশ ভেঙে গেছে। যাহোক, মেয়ের বাবা তার মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। শাশুড়ি প্রথমে রাজি না হলেও পরে বউকে বাপের বাড়িতে যেতে দেয়।

বাপ রাস্তাতেই মেয়েকে জিজ্ঞেস করে : মা, তোমার শাশুড়ি যে তোমাকে নিয়ম পালন করে খেতে বলল তার মানে কি? মেয়ে বলে : ‘ও কিছু না বাবা। বাবা মেলা চাপাচাপি করায় মেয়ে শেষে সত্য কথাই তাকে বলে। বাবা-মেয়ে বাড়ি আসার কদিন পর মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়িকে দাওয়াত দেন মেয়ের বাবা। খুশি হয়ে আসে মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি। তাদের আদর যত্ন করে খেতে বলা হয়। তারা খেতে বসবে এমন সময় মেয়ের বাবা বলেন : ‘বেয়াইন, আগে নিয়ম পালন করে এসে খেতে বসুন।’

শাশুড়ি, ব্যাপারটা বোঝেন। তাই আগে পেটভরে পানি খেয়ে এসে খেতে বসেন। সামনে প্রচুর খাবার। তারা বলে, এত খাবার কেন? ‘নিয়ম পালন করলে তো এত খাওন যায় না।’

মেয়ের বাবা বলে : আপনাদের নিয়ম পালন করে খেতে বসেছেন। এখন আমাদের নিয়মের পালা। এই সবই খেতে হবে।
মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি : পানি খেয়ে পেটততা ভরা।

মেয়ের বাবা : তা বুঝি না। খেতে না পারলে এই যে আমার হাতে লাঠি আছে তা দিয়ে মুখে খাবার গুজে দিব।

শাশুড়ির কানে পানি ঢোকে। আর সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমার কথা শোনেন, বেয়াই। আজ থেকে আমাদের নিয়ম রদ করা হলো। আপনাদের নিয়মও রদ করেন। ক্ষমা চেয়ে বলছি। শেষ পর্যন্ত সেই শর্তেই রফা!

Facebook Comment

You May Also Like

About the Author: eBooks

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.