Friday, March 29, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পমরণবাজি - ডিউক জন

মরণবাজি – ডিউক জন

মরণবাজি - ডিউক জন

সাদার ওপর বাদামি ফুটকিওয়ালা একটা ঘোড়ায় চেপে এসেছিলেন তিনি এখানে। এক বিশপ। গোড়াপত্তন করেন শহরটার।

আরও কয়েকজন ছিল ভদ্রলোকের সঙ্গে। ছোটখাটো একটা কাফেলা। পুব থেকে আসা একদল ভাগ্যান্বেষী ওরা। চোখভরা স্বপ্ন আর আশার রোদ্দুর। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে যাজকের দূরদৃষ্টি। প্রাজ্ঞ চোখে নিশ্চয় শহরটার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন তিনি।

লোকে সম্মান করত পাদরিকে। সে জন্য তাঁর প্রস্তাবিত নামে আপত্তি করেনি কেউ।

সেই থেকে শহরটার নাম অ্যাপালুসা। ছোট, কিন্তু সমৃদ্ধ এক ক্যাটল-টাউন।

নামটার কারণে প্রৌঢ়ের ঘোড়াটাও জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসে। মহাকাল লিখে রেখেছে ওটার কথা।

ফ্লিন্টের ধারণা, নিজের ঘোটকীটাকে ভালোবাসতেন পাদরি, নয়তো ছিলেন নিছক জানোয়ারপ্রেমী।

অ্যাপালুসার মেইন স্ট্রিট ধরে চলেছে ও। পেটের মধ্যে বিজাতীয় অনুভূতির চক্কর। এই শহরে আগন্তুক সে। সামনে কী আছে, কে জানে!

জাতে কোল্ট তাঁর ঘোড়াটা। রংটা গাঢ় বাদামি। ঘাড়ে সুন্দর কেশর। ক্লিপ…ক্লপ…ক্লিপ…ক্লপ…নীরব রাত্রিতে ছন্দোবদ্ধ আওয়াজ তুলেছে নালের।

সওয়ারির কুকুরটা চলেছে মহা উৎসাহ ওটার। ইউনিকর্নও ওর সঙ্গে তাল দিচ্ছে কি না, বারবার দেখছে ঘাড় ফিরিয়ে।

ইউনিকর্নের অবশ্য ইচ্ছা থাকলেও মনিবকে ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার উপায় নেই। ট্রেনিং পাওয়া তুখোড় ঘোড়া। প্রেস্টিজ আছে না একটা!

অতএব, জিব বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে আসছে মেলন নামের কুকুরটা। অবশ্য কিছুক্ষণ পর একই কাজ করছে আবারও। ভাঁড় একটা! মেলন মানে তরমুজ। তরমুজের মতোই গোলগাল ওটা।

চিড়বিড়ে গরম পড়েছে আজ। কে বলবে, প্রবল বর্ষণ হয়েছে গত রাতে! এরই মধ্যে জল-কাদা শুকিয়ে খটখট। সিলভার ডলারের মতো মস্ত এক রুপালি চাঁদ ঝুলে আছে পরিষ্কার আকাশে।

বয়স বেশি নয় নবাগতের। চব্বিশ। পাঁচ ফুট নয়ের কম নয় উচ্চতা। রংজ্বলা ক্যালিকো শার্টের নিচে টের পাওয়া যায় উঁচু কাঁধের অস্তিত্ব। আস্তিন গোটানো। থোকা থোকা পেশি লাগাম ধরা হাতে। চোয়ালে কাঠিন্য।

সাতটা বাজে। রোববারের সন্ধ্যা বলে লোকজন নেই বললেই চলে চওড়া সড়কটায়।

ছিমছাম শহর অ্যাপালুসা। স্বনির্ভর। গোটা তিরিশেক পরিবারের বড়াই করার মতো প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই রয়েছে এখানে। একটা হোটেল, একটা স্যালুন, একটা রেস্তোরাঁ…লিভারি স্ট্যাবল…মুদি, দরজি, হার্ডওয়্যার-স্টোর…ব্যাংক, গির্জা, পোস্ট অফিস, স্কুল, ডাক্তারখানা…

বালিয়াড়িময় বিস্তার শহরের একধারে। যেখানে শেষ হয়েছে ওটা, এরপর একটা খাঁড়ি। অধুনা বৃষ্টিপাতে থইথই যৌবন ওটার।

শহরের আরেক পাশে অবারিত প্রেয়ারি। ‘চির উন্নত মম শির’ ভঙ্গিতে মাথা জাগিয়ে রেখেছে ওখানে উইন্ডমিল। বাতাসের উত্থান-পতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘোরে।

হাতের বাঁ দিকে পড়ল রেস্টুরেন্টটা। ঘাড় কাত করে ডাইনিং হাউসটার মাথায় লাগানো সাইনবোর্ডটা পড়ল অশ্বারোহী।

বেনভেনিদো

কাঠের বোর্ডের রং চটে গেছে, তবে বাহারি হরফগুলো বোধগম্য। স্প্যানিশ শব্দটার মানে জানা আছে ওর: স্বাগত।

স্যাডল থেকে নামল ঘোড়সওয়ার। ঘোড়া বাঁধল হিচরেইলে। তারপর ভারবাহী জীবটার পেটে হাত বুলিয়ে দিয়ে পা রাখল কাঠের সিঁড়িতে। দুটি ধাপ পার হয়ে বুটের ছাপ আঁকল বোর্ডওয়াকে। পায়ে পায়ে অনুসরণ করছে ওকে কুকুরটা, বাধা পেল রেস্তোরাঁয় ঢুকতে গিয়ে।

‘এখানেই থাক তুই।’ নির্দেশ দিল ওর মনিব।

ব্যাপারটা পছন্দ হলো না মেলনের। ঘন ঘন লেজ নাড়ায় প্রকাশ পেল প্রবল আপত্তি। ভাবখানা: কুকুর বলে কি আমি মানুষ নই!

‘খুফ!’ প্রতিবাদ জানাল নিজের ভাষায়।

পাত্তাই দিল না ওর প্রভু। খোলা দরজাটা দিয়ে পা রাখল ভেতরে। মুখখানা করুণ করে পেছনের দুই ঠ্যাঙে ভর দিয়ে বসে রইল সারমেয়।

যথেষ্ট আলোকিত ইটিং হাউসের ভেতরটা, তবে বাইরের তুলনায় শীতল অনেকটাই। খাবারের মনোলোভা সুবাস বাতাসে।

কাউন্টারের সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো লোকটার নাম ড্যানি ট্রেজো। স্প্যানিশ। সে-ই চালায় রেস্টুরেন্টটা। পশ্চিমে থিতু হলেও ভুলে যায়নি নিজের শিকড়কে। খরিদ্দারের আগমনে সিধে হয়ে এগিয়ে গেল।

চারদিকে চোখ বোলাচ্ছে স্ট্রেঞ্জার। ফাঁকা পড়ে আছে চেয়ার-টেবিলগুলো। কাস্টমার নেই একজনও।

‘গুড ডে, সেনিয়োর।’ খসখসে গলায় অভিবাদন জানাল রেস্তোরাঁর মালিক।

চাইল ফ্লিন্ট লোকটার দিকে। দারুণ লম্বা স্প্যানিয়ার্ড। মাঝারি বয়স। চিতানো বুক থেকে ঝুলছে মলিন, সাদা অ্যাপ্রোন। লম্বাটে মুখে বিষণ্ন চোখ দুটোর ছলছলে দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে যেকোনো মুহূর্তে। বাঁ গালে একটা আঁচিল। পনিটেইল করেছে কালো চুলগুলো।

‘গুড ডে।’ বলল ও প্রত্যুত্তরে।

‘ডিনার?’

‘নাহ্।’ মাথা নাড়ল যুবক, ‘হালকা কিছু দিয়ো।’ অনেকখানি রাইড করে এসে খিদে পেয়েছে বেশ, কিন্তু যে কাজে বেরিয়েছে, তাতে পেট ভারী করলে চলবে না।

‘ডিম আর কফি হলে?’ বাতলাল ড্যানি।

‘তোফা হয়।’

মাঝামাঝি একটা টেবিল নির্বাচন করল ফ্লিন্ট। স্টেটসন হ্যাটটা খুলে রাখল ওটার ওপর।

খদ্দের আসন গ্রহণ না করা অবধি দাঁড়িয়ে রইল ল্যাটিনো। তারপর রওনা হলো কিচেন অভিমুখে।

ধূমায়িত অমলেট দেখে মনটা খুশি হয়ে উঠল ফ্লিন্টের। নিখুঁত কুসুম মাঝখানটায়। ঠিক যেন ভোরের সূর্য।

‘বাইরে আমার কুকুরটা রয়েছে।’ চামচ হাতে বলল, ‘কিছুমিছুর ব্যবস্থা করা যায় ওর জন্য?’

মাথা ঝাঁকাল স্প্যানিশ। খানিক বাদে টিনের এক বাউল হাতে দরজার দিকে যেতে দেখা গেল লোকটাকে। ফিরে এসে ঠেস দিল কাউন্টারে।

সদ্য বানানো পাউরুটিসহযোগে যতক্ষণ ডিমের সদ্ব্যবহার করল আগন্তুক, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ করল ওকে ট্রেজো।

কোমরের বেল্টে বা আজকালকার হামবড়া ছোকরাদের মতো ঊরুতে সিক্সগান ঝোলায় না ছেলেটা, অস্ত্র রাখে বগলের নিচে।

শোল্ডার-হোলস্টার কেন? ভাবল। আইনের লোক? পরিষ্কার কামানো গালের চামড়ার নিচে ঘাপটি মেরে থাকা দাড়ির সবজে আভা, মিথলজির দেবতাদের মতো ঝাঁকড়া বাদামি চুল হারকিউলিসের কথা মনে করিয়ে দিল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে। আরও একটা যুক্তি খুঁজে পেল এই তুলনার সপক্ষে। আঙুলের গাঁট। কালচে হয়ে আছে। দেখে মনে হয় বক্সিং চর্চা করে নিয়মিত।

মরণবাজি
অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ
আসলেই। বালুর বস্তার ওপর ঝাল ঝেড়ে ঝেড়ে হাতের এই অবস্থা করেছে শৌখিন তরুণটি।

খানিকটা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারল না ড্যানি ট্রেজো, যদিও মুখের ভাবে কিছুই ফুটল না। খাওয়া শেষ হয়ে এসেছে দেখে ঢুকল আবার কিচেনে। কফি এনে হাজির করল টেবিলে।

চুমুক দেওয়ার আগে মগটা নাকের নিচে ধরল যুবক। ঘ্রাণ টানল। চোখ দুটি বুজে এল আপনা-আপনি।

কফি পর্ব শেষ করে টোব্যাকো-পাউচ আর কাগজ বের করল বুকপকেট থেকে। সময় নিয়ে, যত্নের সঙ্গে সিগারেট রোল করল একটা। আরেক পকেট থেকে বেরোল দেশলাই। প্রথম টানটা দিয়ে আয়েশ করে ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করল ফ্লিন্ট, ‘কত হলো?’

পয়সা বুঝে নিয়ে যুবকের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এল ড্যানি। বোর্ডওয়াকে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছে ফ্লিন্ট, এ-ই সুযোগ, ভাবল ব্যবসায়ী। মনে অস্বস্তি রাখা পছন্দ নয় ওর। সুতরাং, জিজ্ঞেস করল, ‘থাকবে?’

‘অসুবিধে আছে?’

‘আমার নেই।’

‘অন্য কোথাও থেকে ঝামেলা আসতে পারে?’

‘শেরিফ। পোড়ো না ওর সামনে। প্রথমেই পিস্তল জমা দেওয়ার আদেশ করবে।’

‘হুম…সব শেরিফের এক ব্যারাম।’

‘তা যা বলেছ।’ পরের প্রশ্নটা করার আগে কিছুটা সময় নিল স্প্যানিশ ব্যবসায়ী। ‘তাহলে ল-ম্যান নও তুমি?’

‘মাথা খারাপ!’

আইনের সেবা করাটা পাগলামি কি না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না স্প্যানিয়ার্ড। জানতে চাইল, ‘বগলের তলে পিস্তল কেন তাহলে?’

‘ফ্যাশন।’

সমঝদারের মতো মাথা দোলাল ল্যাটিনো। ‘ড্রিফটার নাকি তুমি?’

‘উম…বলতে পারো।’

‘তবে তো একটা কাজ দরকার তোমার।’

‘আ…হ্যাঁ…আছে নাকি চাকরি? শেফের কাজও করেছি কিন্তু, মিস্টার…’

‘আমার নাম ড্যানি, ড্যানি ট্রেজো!’ গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করল সে ট্রেজো শব্দটা। ‘তোমার?’

‘ফ্লিন্ট…ফ্লিন্ট ইস্টউড।’

‘বাহ্, খাসা নাম তো! তো, যা বলছিলাম…।’ আগের প্রসঙ্গে ফিরে গেল রেস্টুরেন্ট-মালিক, ‘বাবুর্চির চাকরিতে অপচয় করার মতো চরিত্র নয় তোমার। একটু চেষ্টা করলেই কাউহ্যান্ডের কাজ পেতে পারো।’

‘আমি আগ্রহী, মিস্টার ট্রেজো।’

‘এহ! ড্যানি বলে ডাকো আমাকে।’

হাসল ইস্টউড। ‘ঠিক আছে…ড্যানি। কিছু খোঁজখবর দিয়ে উপকার করো, দোস্ত।’

‘দুটি র‌্যাঞ্চ আছে এখানে। সার্কল-এ আর সার্কল-এইচ। এইচ-টা বড়সড়। তবে আমার পরামর্শ চাইলে বলব—এ।’

‘কারণ?’

‘মানুষ ভালো মালিক।’

‘ব্যস, এ-ই?’

‘বস ভালো হলে আর কিছু লাগে নাকি?’

যুক্তিটা ফেলে দেওয়ার নয়। ‘এ-তে গিয়ে খোঁজ করতে বলছ?’

‘আলবত।’

‘তথাস্তু। রাস্তা বাতলাও।’

কীভাবে কীভাবে যেতে হবে, বুঝিয়ে দিল ড্যানি। শেষ হয়ে আসা ধূম্রশলাকাটা ফেলে দিল ফ্লিন্ট। বুট দিয়ে পিষে মারল আগুনটা।

‘ওহ-হো!’ কিছু একটা মনে পড়ায় আক্ষেপ করে উঠল ড্যানি ট্রেজো।

‘কী হলো!’

‘ভুলেই গিয়েছিলাম…।’ কুকুরটার দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা, ‘সমস্যা আছে একটা।’

‘নিশ্চয়ই কুকুর পছন্দ করে না র‌্যাঞ্চ-মালিক?’ আন্দাজ করল ইস্টউড।

‘উঁহু…মালিক না, মালিকের মেয়ে।’

‘ওহ্।’ আফসোস করল যুবক, ‘তাহলে তো আর হচ্ছে না।’

আর গড়াল না আলাপটা। প্রিয় ঘোড়ার পিঠে চাপল বক্সার। এবারের লক্ষ্য শহরের স্যালুনটা।

স্প্যানিশ লোকটা চোখের আড়াল হতেই মুচকি হাসি ফুটে উঠল ফ্লিন্টের ঠোঁটের কোণে। ঠিকই অনুমান করেছিল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। ল-ম্যানই ও, প্রোগ্রেস শহরের মার্শাল। ব্লাফ দিয়েছে স্প্যানিয়ার্ডকে।

চকিতে মনে খেলে গেল কদিন আগের ঘটনাগুলো।

পোক্ত হাতেই প্রোগ্রেসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল ও। কিন্তু…

যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। দুই দিন আগে দোজখ নেমে এসেছে এক শহর পেছনের শান্ত, নিরুপদ্রব টাউনটায়।

দিন শেষে টাকাপয়সার হিসাব মেলাচ্ছিল শহরের একমাত্র ব্যাংকটার ক্যাশিয়ার অ্যালবার্ট ডি’সুজা। বলতে গেলে একাই ছিল ও সে সময়। পাহারাদার বুড়োটা গিয়েছিল প্রকৃতির বড় ডাকটায় সাড়া দিতে।

এমন সময় ব্যাংকে ঢোকে লোকগুলো। ঢুকেই বের করে আগ্নেয়াস্ত্র।

কোনোই সুযোগ পায়নি অ্যালবার্ট। বুকে গুলির ফুটো নিয়ে বুটহিলে শেষ ঠাঁই হয়েছে হিসাবরক্ষকের।

ব্যাংকটা প্রায় সাফ করে দিয়েছে চার আউট-ল। পাসি নিয়ে বেরিয়েছিল ফ্লিন্ট। পরে ধরতে পারবে না বুঝে ফিরে আসে।

দারুণ খ্যাপা খেপেছে শহরবাসী। সবার এত কষ্টের আমানত! নিজেরাই বেরিয়ে পড়তে চাইছিল একযোগে। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শান্ত করে ওদের মার্শাল। হাজার হোক, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওকে। ওয়াদা করে: যে করেই হোক, উদ্ধার করবে টাকাগুলো।

পকেটে রাখা সিলভার ব্যাজটার অস্তিত্ব অনুভব করল মার্শাল ইস্টউড। আদতে হালকা হলেও দায়িত্ব ও কর্তব্যের বোঝা টিনের ওই ছোট্ট তারকাটা। তাই তো নিজের জীবনের পরোয়া না করে একাই বেরিয়ে পড়েছে ডাকাতের পেছনে। ট্রেইল অনুসরণ করে চলে এসেছে এ পর্যন্ত।

ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেল ও মার্টিন’স স্যালুনে। হই-হুল্লোড়ের আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। আশা করছে, এখানেই পাওয়া যাবে বদমাশগুলোকে।

এবারও একাই ঢুকল ও ভেতরে। ইন্দ্রিয় সজাগ করে বাইরে রইল কুকুরটা। অনেক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছে পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্বন্ধে।

হঠাৎ করেই থেমে গেল সমস্ত কোলাহল। মনিবের দৃঢ় স্বর শুনতে পেল মেলন আর ইউনিকর্ন। গালিগালাজের তুবড়ি ছোটাল একজন। সিক্সগান দিয়ে নোংরা মুখটা বন্ধ করে দিল মার্শাল।

ব্যস, শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি। টানটান হয়ে অপেক্ষায় রয়েছে চারপেয়ে দুটি। আচমকা ঠাস করে বাইরের দিকে খুলে গেল ব্যাট-উইং দরজার পাল্লাজোড়া।

ছুটে এসে এক লাফে স্যাডলে চড়ে বসল প্রোগ্রেসের আইন। বাঁ হাতে টাকার থলি। আরেক হাতে আছড়াল লাগামটা।

উড়ে চলল যেন ইউনিকর্ন।

জীবিত তিন দস্যু ছুটে আসছে পেছনে। মৌমাছির মতো গুঞ্জন তুলে তাড়া করছে বুলেটের ঝাঁক। এঁকেবেঁকে কোনো রকমে শরীর বাঁচাচ্ছে ল-ম্যান।

প্রাণপণ ছুটছে মরিয়া কোল্ট। প্রচণ্ড পরিশ্রমে ফেনা বেরিয়ে এসেছে মুখ দিয়ে। শেষটায় ক্ষান্ত দিল ধাওয়াকারীরা।

প্রোগ্রেসে ঢুকেই আর পারল না তেজি ঘোড়া। পড়ে গেল হুড়মুড় করে।

অনেক মানুষের উত্তেজিত স্বর চারপাশে। একটানা ঘেউ ঘেউ জুড়েছে কুকুরটা। সহসা হাহাকার করে উঠল মার্শাল। দেখতে পেয়েছে ক্ষতস্থানটা। খারাপ একটা জায়গায় বিঁধেছে বুলেটটা।

দুঃসহ যন্ত্রণা। আগুন ধরে গেছে যেন গুলি খাওয়া জায়গাটায়। রক্ত ঝরেছে প্রচুর। শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে শরীরটা।

শেষবারের মতো চোখ বুজল ইউনিকর্ন। প্রভুর জীবন বাঁচিয়েছে। আর কোনো কষ্ট নেই ওর।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments